"বিশ্ব হিজাব দিবস!" ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এ ধরণের দিবস পালন করা, ইসলামের সাথে মস্করার শামীল!!

০১]] হিজাব দিবস এবং ইসলামঃ

সুব'হানাল্লাহ! ১ ফ্রেব্রুয়ারী নাকি "বিশ্ব হিজাব দিবস!" ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এ ধরণের দিবস পালন করা, ইসলামের সাথে মস্করার শামীল!!

■■ অনেক মুসলিম বলেনঃ 

-------"এভাবে ইসলাম নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে ক্ষতি কি? অমুসলিমেরা হিজাব সম্পর্কে জানবে, আগ্রহী হবে। একদিন যদি তারা হিজাব করে, তাহলে মন্দ কী?" 


■▪কিন্তু বাস্তব বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন! কেননা, হিজাব ইসলামী শরিয়াহ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি সব মুসলমানদের জন্য পালন করা বাধ্যতামূলক।


■■ ওয়াল্লাহি! যদি এই "হিজাব ডে" আমাদের দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য "উত্তম" কিছু হতো, তাহলে তা অবশ্যই নাবীজি ﷺ সেটার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু নাবীজি কি তা করেছিলেন? আবু বকর আর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম হিজাব দিবস করেছেন? সাহাবীরা কখনও হিজাব দিবস, ইসলাম দিবস করেছেন?


■■ সাহাবীরা ছিলেন হাতে-গোণা ক'জন মুসলিম। সারা বিশ্বে অমুসলিমদের ছড়াছড়ি। কোথাও তাঁরা তো ইসলাম শেখানোর জন্য হিজাব-ডের মতো কোন দিবস আবিষ্কার করে বসেননি!


■■ ইসলামের শ্রেষ্ঠ যুগ হলো সাহাবী(রাঃ) গণের যুগ! তাঁদের ঈমান ছিল সবচাইতে বেশি, তাঁদের জ্ঞান ছিল সবচাইতে গভীর এবং তাঁদের ইসলামের বুঝ ছিল সবচাইতে সঠিক। কিন্তু তারা কেউ "ইসলামের ভালোর" জন্য হিজাব দিবস করেন নাই। আজকের মুসলিমদের ইজ্জত এতো কমে গেছে, যে দ্বীন ইসলামের বিধানকে তারা অমুসলিমদের হাসি-তামাশার বস্তু হতে দেখেও খুশি হয়ে পড়ছে!


■■ ওয়াল্লাহি! ইসলামের কোন বিধান প্রচার-প্রসারের জন্য আল্লাহর বিধানকে মানুষের ইচ্ছার অধীন করে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। যারা মুসলিম, তাদের ওপর অটোমেটিকালি হিজাব ফরয। তারা কেন মাত্র একদিনের জন্য হিজাব পরবে? আর যারা কা ফি র, তাদেরকে একদিন হিজাব পরে পরদিন খুলে ফেলবে এ কাজ আমরা কীভাবে সহ্য করতে পারি? ক'দিন পর কা ফি র রা যদি বলবেঃ

-------"আমরা শুধুমাত্র এক দিনের জন্য মুসলিম হবো!" সেটাতেও কি আমরা মুসলিমরা সন্তুষ্ট হয়ে পড়ব?! "একদিনের জন্য মুসলিম হলে ক্ষতি কি?"


■■ আল্লাহ আমাদের মাফ করুক। দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসার হবে ইজ্জতের সাথে। সাহাবীরা যেভাবে করেছেন ঠিক সেভাবে। তারা দেশের পর দেশ বিজিত করেছেন। এরপরে জনসমক্ষে পবিত্র ইসলামের কথা বলেছেন। আর তখন স্থানীয় বাসিন্দারা সহজাতভাবেই বিজয়ী দলের দিকে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছেন! যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি, তারাও আল্লাহর আইনকে সর্বোচ্চ মেনে নিয়ে জিযিয়া প্রদান করেছেন।


■■ আল্লাহর দ্বীন কোন দিবসের কাছেই ঠেকা নয়! আমরা মুসলিমরা অমুসলিমদেরকে দাওয়া দিয়ে দিয়ে ইসলামের দিকে আহবান করি এবং করবো। আমরা অমুসলিমদেরকে নাবীজি সল্লাল্লাহ আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পন্থায় ইসলামের দিকে আহবান করবো। হিজাব সম্পর্কে জানার জন্য আমরা সকল অমুসলিমকে আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু পশ্চিমাদের "দিবস কনসেপ্ট" ধার করে ইসলাম কে জানাতে হবে এই মশকরা থেকে দূরে থাকতে চাই। সকল মুসলিম ভাই-বোনদেরকে বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য অনুরোধ করছি।!


             ●● ০২]] দেহের এবং মনের পর্দাঃ

দেহের পর্দা সম্পর্কে সকলে বুঝতে পারলেও মনের পর্দা সম্পর্কে কেবলমাত্র মুত্তাকী নারীরাই বোঝেন! আর তাই তারা দু'টোই পালন করে থাকেন!!


■■ তাঁরা গায়রে মাহরামের সাথে চোখে চোখ রেখে হাসেন না, অহেতুক বাক্যালাপ করেন না। প্রয়োজনীয় কথাও অতীব সংক্ষেপে শেষ করেন। তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, নিজেদের প্রয়োজনগুলো মেয়েদের দ্বারাই পূরণ করতে! "মেয়েরা হিং সু টে" অজুহাতে ছেলেদের ভিড়ে হারিয়ে যান না! কাজিন, ক্লাসমেট, স্বামীর ভাই, সেলেব্রিটি, দোকানী, বই প্রকাশক, যাই বলুন, পরপুরুষ মাত্রই তারা সমান ভাবে দেখেন! এটা মুত্তাকী নারীদের কথাই বলছি!


■▪এমন পর্দা তাঁরা ফেসবুকেও মেনে চলেন। তাঁদের পোস্টের ভাষা হয় সংযত, যাতে পরপুরুষ বিমোহিত না হয়! তাই তাঁরা সবাই সেলেব্রিটি নন! গ্রুপে গ্রুপে তাঁদের সমাগম তেমন একটা দেখবেন না। তাঁরা কোন পোস্টে ভাইদের সাথে কমেন্টে মেতে উঠে না! লাভ রিয়েক্ট বা লাভ ইমো দিতেও দেখবেন না তাঁদের কাউকে! ইনবক্সে বা ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দ্বীনের নামে আড্ডাবাজীতেও তাঁরা জড়ান না!


■▪তাঁদেরকে দেখবেন না হিজাব-নিকাব পড়া ছবি আপলোড দিতে; প্রোফাইল পিকচার কিংবা স্টোরি ইমেইজেও তাঁদের পাবেন না! তাঁরা সদাই পর্দানশীন অবস্থাতেই থাকেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদেরকেই প্রকৃত পর্দানশীন মনে করি।


■▪তাঁরা কোন বন্দী নন এবং যন্ত্রও নন! বরং তাঁরা ভয় করেন। ভয় করেন আল্লাহকে অন্তরের অন্তস্থঃতল থেকে! ফাতওয়ার সাথে খাপে খাপে মিলিয়ে নয়, বরং পর্দা করে তাকওয়ার তাগিদে। লোক দেখানো উদ্দেশ্য নেই তাঁদের মধ্যে! তাঁদের দৃষ্টি থাকে অবনত রাস্তায়! মন থাকে সদা সতর্ক নিজর ঘরের মধ্যেও! এমনকি ফেসবুকেও তাঁরা সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন।


■■ আমি আপনাদের কাউকেই চিনি না! কিন্তু আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই আপনাদেরকে চিনেন। আপনাদের কোন সাহায্যে আমি হয়ত আপনাদের কারো পাশেই দাঁড়াতে পারব না! কিন্তু মহান আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই আপনাদের পাশে থাকবেন! যে ভালোবাসার পবিত্র বন্ধন আপনারা পর্দার সাথে জুড়ে নিয়েছেন, সেই পবিত্র ভালোবাসাই যেন আপনাদেরকে খাদিজা(রাঃ), আয়িশাহ(রাঃ) ও ফাতিমা(রাঃ)দের সাথে হাশরে একত্র করেন--এই দু'আই করি আপনাদের সবার জন্য!


■▪সালাম সেইসব মা-বোন আপাদের জন্য! যাঁরা পর্দাকে প্রকৃত অর্থে বুঝেছেন এবং নিজ সন্তানকেও সেই শিক্ষা দিচ্ছেন! আল্লাহ তা'আলা আপনাদের ও আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও কমিয়াবী দান করুন এবং ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন(আ-মীন ইয়া রব্বাল আ'লামীন)।। 

 ●● ০৩]] উঁচু করে খোঁপা করে পর্দা করা সম্পূর্ণ  নিষেধ.... নিষেধ.... এবং নিষেধ!!

🔺 অনেক মুসলিমাহ বর্তমানে জেনে কিংবা না জেনে নিজের অজান্তেই অথবা ব্যাপারটিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে প্রচলিত হিজাব পরার স্টাইলটি গ্রহণ করছেন! 

🔺 কিন্তু, আপনি কি জানেন হে মুসলিম বোন! যারা উটের কুঁজের মত উঁচু করে খোপা বাঁধবেন, হাদীসের আলোকে তারা অভিশপ্ত! ️তাদের জন্য স্বয়ং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন!

-----[সহিহ মুসলিম এ আছে, জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণঃ ৬৯৩০]

📕 রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

-------"আমার উম্মতের শেষ যামানায় এমন কিছু নারী আসবে, যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ! তাদের মাথার উপরে থাকবে খোরাসানি (লম্বা-গলা বিশিষ্ট) উটের কুঁজের মত (অর্থাৎ তারা নিজেদের চুলের সাথে অন্য কাপড় বা পাগড়ী বেঁধে মাথাকে বড় করে ফুটিয়ে তুলবে)। তোমরা তাদেরকে লানত কর। কেননা, তারা লানতের উপযুক্ত!” 


🔺 অন্য এক রেওয়ায়েতে এর বর্ধিত অংশ হচ্ছেঃ

-----"তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতের সুবাসও পাবে না; যদিও জান্নাতের সুবাস এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।"

-----[সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস]


■■ অর্থাৎ-মহিলাদের মাথার চুল কোন ভাবেই উঁচু করে বেঁধে বাইরে বের বের হওয়া যাবে না! এটাই হচ্ছে ইসলামী শরিয়তের নির্দেশ!!


■▪︎ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং পরিপূর্ণ ভাবে সঠিক পথে চলার তাওফীক দিন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও কামিয়াবী এবং নেক ও বরকতপূর্ণ হায়াত দান করুন(আমীন)।।

লিখেছেন, মুহাম্মাদ মীযানুর রাহমান

Post a Comment

أحدث أقدم
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন