আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম এর ফযীলত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মাস'আলা



●● ০১] আযানের জবাব দেবার নিয়ম  এবং এর ফযীলতঃ

●● প্রশ্নঃ আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয় এবং আযানের জবাব দিলে কি কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে?

■■ উত্তরঃ 

] আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়ঃ

মুয়াজ্জিন আযানে যা যা বলবে তার সাথে সাথে তাই বলতে হবে, শুধুমাত্র হাইয়্যা আ’লাস সালাহ ও হাইয়্যা আ’লাল ফালাহ বললে জবাবে সেটা না বলে বলতে হবে “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ”।

_______________

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

এটা হচ্ছে আযানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি। আযানের জবাব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি সূন্নাহ।

_______________

■▪বিঃদ্রঃ ফযরের আযানে আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম ও জামাতের ইকামাতের সময় ক্বাদকা মাতিস সালাহ – এই দুইটি বাক্যের জবাবে এইগুলোই বলতে হবে। অন্য কিছু বলতে এমন কোনো কিছু সহীহ হাদীসে নাই, তাই যা আছে তাই বলাটাই উত্তম।

_______________

■▪“আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম” এর জবাবে “সাদাক্বতা ওয়া বারারতা” বলার কোনো ভিত্তি নেই! 

-----(মিরআ’ত ২/৩৬৩, হা/৬৬২)। তবে বললে কোন ক্ষতিও নেই!

_______________

■▪“ক্বাদকা মাতিস সালাহ” এর জবাবে “আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা” বলা সম্পর্কে আবুদাউদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।

-------আবু দাউদ হা/৫২৮, শায়খ আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১। তবে এটা বললেও সমস্যা নেই!

_______________    

খ] আযানের জবাব দিলে কি কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে?

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ 

-------“যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে আযানের জবাব দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়!" 

-----সহীহ মুসলিমঃ ৩৮৫।

_______________

●▪সুবহা’নাল্লাহ! শুধুমাত্র আযানের জবাব দিলেই জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহু আকবার!


●▪মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যেই এতো সহজে করা যায় এমন একটা আমল হেলাফেলা করে বাদ দেওয়া ঠিক হবে না! আর এর জন্যতো আলাদা কোনো দু'আও মুখস্থ করা লাগছে না! শুধু মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে অন্তরে বিশ্বাস এবং খেয়াল রেখে কথাগুলো বললেই হবে ইন শা আল্লাহ!

_______________

■▪আমরা চেষ্টা করলে আজকে থেকেই এই আমল করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি ইন শা’ আল্লাহ।

●● ০২] অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মাস'আলাঃ

●▪ক) একদিকে মুয়াজ্জিন নামাযের আযান দিচ্ছেন, অন্যদিকে আপনার বাবা আপনাকে ডাকছেন! এখন মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আগে মসজিদে যাবেন, নাকি বাবা কী জন্য ডাকছেন সেটা শুনে আসবেন?

-------বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহকে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেনঃ

-----“আগে বাবার ডাকে সাড়া দিবে।”


●▪খ) মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ

-------"আপনি নামায (নফল) পড়াবস্থায় যদি আপনার বাবা ডাক দেন, তাহলে নামায ভেঙ্গে তার ডাকে সাড়া দিবেন।” 


●▪গ) ইয়াকুব আল-আজলী বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবি রাবাহ রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেনঃ 

-------"বৃষ্টির দিনে আমার মা আমাকে মসজিদে গিয়ে জামা'আতের সাথে নামায পড়তে নিষেধ করেন। তিনি আমাকে বাড়িতে নামায পড়তে বলেন। এখন আমি কার কথা শুনবো? ফরয নামাজ পড়ার জন্য আমি কি মসজিদে যাবো, নাকি মায়ের কথামতো বাসায় নামাজ পড়বো?"

-------আতা ইবনে আবি রাবাহ(রহঃ) জবাব দেনঃ

“তুমি তোমার মায়ের কথামতো বৃষ্টির দিন বাসায় নামায পড়ো।” 


●▪ঘ) একজন মা তার সন্তানকে ওয়াদা করানঃ

-------"সে শুধুমাত্র ফরয-ওয়াজিব নামায পড়বে, আর রমাদ্বান মাসের রোযা রাখবে। এছাড়া কোনো নামায পড়বে না, কোনো রোজাও রাখবে না। এমন অবস্থায় সে কি তার মায়ের ওয়াদা পালন করবে? নাকি ওয়াদা ভঙ্গ করবে?"

-------বিষয়টি আতা ইবনে আবি রাবাহ(রহঃ)কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ

“সে তার মায়ের ওয়াদা পালন করবে।”


● ঙ) রাতের বেলা খাবারের টেবিলে খাবার রেডি করে মা-বাবা আমাদেরকে ডাকতে থাকেন। আর আমরা বলি, একটু পর আসছি। তখন আমরা কী করি? আমরা তখন মোবাইল টিপি বা পড়ালেখা করি!


-------হিশাম ইবনে হাসান রাহিমাহুল্লাহ আল-হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করেনঃ "তিনি যখন রাতে কুরআন তিলাওয়াত করেন, তার মা তখন খাবার রেডি করে তাঁকে ডাকতে থাকেন। এমন অবস্থায় তিনি বিড়ম্বনায় পড়ে যান। মন চায় কুরআন তেলাওয়াত করতে, ঐদিকে তাঁর মা তাঁকে ডাকছেন! এমতাবস্হায় তিনি কী করবেন?"


-------আল-হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে পরামর্শ দেন যেঃ

“তুমি তোমার মায়ের ডাকে খেতে বসবে। মাকে সন্তুষ্ট করা আমার কাছে নফল হজ্জ্বের চেয়েও প্রিয়।” 


● চ) এক সাহাবী(রাঃ) নিজের মা-বাবাকে কাঁদিয়ে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হিজরত করে তাঁর বাইয়াত গ্রহণ করতে চাইলেন! কিন্তু রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শুনলেন, লোকটি তাঁর মা-বাবাকে কান্নারত অবস্থায় ফেলে রেখে এসেছেন, তখন তিনি বললেনঃ

-------“তুমি তাদের কাছে ফিরে যাও। তাদেরকে যেভাবে কাঁদিয়েছো, সেভাবে গিয়ে হাসাও।” 

-----[সুনানে আবু দাউদঃ ২৫২৮] 

সূত্রঃ

আল্লাম ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহর "আল-বিররুল ওয়ালিদাইন" বই থেকে অনূদিত।।


মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন (আ-মীন)।।

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন