আপনার ভবিষ্যৎ বাড়িটা কোথায় বানাবেন? চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন.

 


■■ আপনার ভবিষ্যত বাড়িটা কোথায় বানাবেন চিন্তা   

  করুন এবং সঠিক ও নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন!!


■■ এমন জায়গায় বাড়িটা বানালে হতো না, যেখানে মরণ তো নেই নেইই... ঘুমই নেই! আর সেটা নিজে না বানিয়ে এমন কাউকে বানানোর দায়িত্বটা দিলে হতো না, যে সমস্ত কিছুর সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা!


■■ না বোধহয়! সবার চিন্তা তো আর এক হয় না! আপনি কি জানেন, জান্নাতে চারজন সম্মানিত নারী আছেন! জি! মাত্র চারজন! আর এই চারজন নারী দুনিয়ার মাঝে সমস্ত নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সম্মানিত! আর তাই তাঁরা জান্নাতেও সর্ব সম্মানিত! 

আর সেই চারজন নারী হলেনঃ

০১] আসিয়া বিনতি মুজাহিম(আঃ)। যিনি ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন!

০২] হযরত মরিয়ম(আঃ)। যিনি হযরত ঈসা(আঃ) এর মাতা।

০৩] হযরত খাদিজা (রাঃ)। যিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ছিলেন এবং 

০৪] হযরত ফাতিমা(রাঃ)। যিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা এবং হযরত আলী (রাঃ) এর স্ত্রী এবং হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) এর মাতা! যাদের সবাইকেই আপনারা হয়তো ভালো করেই চেনেন?


■■ এর মধ্যে আজ আমরা হযরত আসিয়া (আঃ) সম্পর্কে আলোচনা করবো। যাঁর সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআন মাজিদে আলোচনা করেছেন!


■■ মুসা আলাইহিস সালাম-এর সময়কার ফেরাউন এর নাম তো আমরা সকলেই কম বেশী অবগত! এই ফেরাউন মূলত কারো নাম নয়! বনী ইসরাই যুগের ধর্ম যাজক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের উপাধি ছিলোঃ "ফেরাউন!" পরবর্তীতে বনী ইসরাইলিরা যখন তাদেে রাজ্য শাসনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেললো তখন, যারা ঐ অঞ্চলের রাজা হতো তাদেরকে ফেরাউন বলে সম্বোধন করা হতো।


■■ ফেরাউনদের পরিচয় ইতিহাস খুঁজলে আমরা যা পাই, তা হলোঃ

● আমালেকা জাতির রাজার খেতাব ছিল ফেরাউন।

● মিশরের অধিবাসী কিবতীদের রাজার খেতাবও ছিল ফেরাউন। 

● আল্লাহর নাবী হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সময়ের (কিবতীদের শাসক) ফিরাউনের নাম নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। যেমনঃ


■▪০১. হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এমন এক ফেরাউনের আমলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন-- যিনি রামেসিস ও পিথম নগরী নির্মাণ করেন। সে-ই হচ্ছেন দ্বিতীয় রামেসিস।

■▪০২. কেউ কেউ বলেন, হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মাদায়েনে অবস্থানকালে ক্ষমতাসীন ফেরাউনের (অর্থাৎ দ্বিতীয় রামেসিসের) মৃত্যু ঘটে এবং হযরত মুসা (আঃ) এর জীবনের পরবর্তী ঘটনাবলী সংঘটিত হয় দ্বিতীয় রামেসিসের উত্তরাধিকারী মারনেপতাহর রাজত্বকালে।

■▪০৩. কেউ কেউ বলেন, হজরত মুসা আলাইহিস সালামের যুগের ফেরাউনের নাম ছিল ওলীদ ইবনে মাসআব ইবনে রাইয়ান। তার বয়স হয়েছিল চারশত বছরেরও অধিক। আর হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের যুগের ফেরাউনের নাম ছিল রাইয়ান। এ দুই ফেরাউনের মধ্যে ৪০০ বছর সময়ের ব্যবধান ছিল।


■■ সুতরাং ফেরাউনদের নাম যাই হোক, তৎকালীন শাসকদের খেতাব ছিল ফেরাউন। ইতিহাসে এ সকল শাসকরা ফেরাউন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। আর এদের মধ্যে সর্বশেষ ফেরাউনের লাশ এখনো বিনা প্রক্রিয়ায় আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার সব মানুষের জন্য নির্দশন স্বরূপ অবিকল সংরক্ষণ করেছেন। যা মিসরের মিউজিয়ামে রয়েছে।


■■ আসিয়াহ বিনত মুজাহিম (আঃ) ছিলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম-এর সময়কার সেই জালিম ফেরাউনের স্ত্রী। যেই জালিম ফেরাউন নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করতেন। এরকম একজন ভয়াবহ জালিমের স্ত্রী ছিলেন-- আসিয়াহ বিনত মুজাহিম (আঃ)। সম্মানিত এই নারীর ঘটনা আমাদের প্রত্যেক মুসলিম বোনদের জানা জরুরী! কি রকম এক জালিমের সংসারে থেকে নিজেকে তিনি জান্নাতের সম্মানিত নারীদের মধ্যে একজন নারী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সুব'হানাল্লাহ!


■■ আসিয়াহ বিনত মুজাহিম (আঃ) এমন একজন নারী ছিলেন, যার কাছে পৃথিবীতে আনন্দ এবং ফুর্তি, উচ্চাভিলাশ, ভোগ-উপভোগের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই ছিল! আরামদায়ক জীবন, ধন-সম্পদ, প্রাচুর্য-অভিজাত্য, ধনী ও প্রভাবশালী স্বামী, ক্ষমতা, দাস-দাসী, খাদেম এবং ক্ষমতা কি ছিলো না তাঁর(?)! ইতিহাস খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, পূরো পৃথিবীর সব সুখ শান্তির জন্য প্রয়োজনীয় যা যা আছে তার সবই ছিলো তাঁর কাছে!!


■■ কিন্তু ঈমানের স্বার্থে, নিজেকে পরকালীন কঠিন জাহান্নামের আযাবের গহ্বর থেকে বাঁচানো এবং মহান আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলা-এর সন্তুষ্টি জন্য তিনি এর সব কিছুই পরিত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাদন্দে পরেননি!


■■ তিনি বাস করতেন সে সময়ের-সর্বোৎকৃষ্ট প্রাসাদে! কিন্তু তারপরও তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'আলার কাছে দু'আ করেছিলেন এইভাবে। যা মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেনঃ


■▪এবার নিজেই চিন্তা করুন, আপনার জন্য ঘরটা কোথায় বানাবেন??!

■▪– দুনিয়ায়? নাকি জান্নাতে?!!

■ ০২]] জান্নাতে খেজুর গাছ রোপন করার 

       আমল এবং যাদের অনেক বড় ঋণের বোঝা

             আছে, তাদের জন্য দুটো হাদীস এবং

                       দুটো দু'আ/আমলঃ

  ●● জান্নাতে খেজুর গাছ রোপন করার আমলঃ ●●

■■ জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 

যে লোক (একবার) বলে “সুব'হানাল্লাহিল আযম ওয়াবিহামদিহী” তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়। (সহীহ রাওযুন নায়ীরঃ ২৪৩, সহীহাহঃ ৬৪)


■■ আবূ ঈসা(রহঃ)বলেনঃ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র আবূ যুবাইর(রহঃ) এর বরাতে জাবির (রাযিঃ) হতে অবগত হয়েছি।

-----(গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]

অধ্যায়ঃ ৪৫/ দু'আসমূহ (كتاب الدعوات عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৬৪)


   ●● ঋণ মুক্তির আমলঃ যাদের অনেক বেশি ঋণ 

    রয়েছে, তাদের জন্য দুটি হাদীস এবং দুটি দু'আঃ


■▪০১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ

-------একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি বড় দুশ্চিন্তায় আছি, আমার ঘাড়ে ঋণ চেপে আছে। (এ কথা শুনে) তিনি (সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ 'আমি কি তোমাকে এমন একটি কালাম (বাক্য) বলে দেবো না, যা পড়লে আল্লাহ তোমার চিন্তা দূর করবেন ও ঋণ পরিশোধ করবেন।' সে বললো, হ্যাঁ! নিশ্চয়ই বলুন, হে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি(রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়বে,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ .

-------"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিত দাইনি ওয়া ক্বহরির রিজাল।" 

▪অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি চাই। আশ্রয় চাই অপারগতা এবং অলসতা এবং কৃপণতা ও কাপুরুষতা হতে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের কঠোরতা হতে।


■▪সে বললোঃ "পরিশেষে আমি তা-ই করলাম। আর আল্লাহ পাক আমার দুশ্চিন্তা দূর করে দিলেন এবং ঋণও পরিশোধ করে দিলেন।"

-----(সুনানে আবূ দাঊদঃ ১৫৫৫)


■▪০২] আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ 

-------"একদিন তাঁর কাছে একজন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস) এসে বললো, আমি আমার কিতাবাতের (মুনিবের সাথে সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের) মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না, আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে তিনি [আলী (রাঃ)] বললেনঃ আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছেন?(এ দু‘আর মাধ্যমে) যদি তোমার ওপর বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝাও থাকে, আল্লাহ তা পরিশোধ করে দেবেন। তুমি পড়বেঃ

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

-------"আল্ল-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন্ হারা-মিকা, ওয়া আগ্‌নিনী বিফাযলিকা ‘আম্মান্ সিওয়াক’।"

▪অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হালাল [জিনিসের] সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং আপনি আপনার রহমতের মাধ্যমে আমাকে পরমুখাপেক্ষী হতে রক্ষা করুন। 

-------[তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৬৩, বায়হাক্বী- দা‘ওয়াতুল কাবীর]।


■▪ইয়া আল্লাহ তা'আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে দেনা ও ঋণ মুক্ত কল্যাণকর জীবন এবং নেক ও বরকতপূর্ণ দীর্ঘ ও সুস্থ্য জীবন দান করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন(আ-মীন)।।

লেখকঃ মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান

মডারেটর = ফেসবুক গ্রুপ (আখলাখ)





1 Comments

  1. সুন্দর লেখনী, জাযাকাল্লাহ

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন