বিতর্ক না করে চুপ থাকা এবং ধৈর্য ধারণ করার ফজিলত



বিতর্ক করা এবং চুপ থাকার ফযীলত ও উপকার!

●● বিতর্কের উদ্দেশ্যে হোক একমাত্র মহান আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা ও কোন বিষয়ের সমাধান করা এবং চুপ থাকার ফযীলত বা উপকারিতা!!

■ ইয়াযিদ ইবনু কুমাইত(রহঃ) বলেনঃ

একদা জনৈক ব্যক্তি ইমামে আযম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর সাথে একটি মাস'আলা নিয়ে বিতর্ক করছিল। বিতর্কের একপর্যায়ে ই ব্যক্তি আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহকে লক্ষ্য করে বলেনঃ আল্লাহকে ভয় করুন!"

কথাটি শোনামাত্রই তিনি(ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ একদম স্তব্ধ হয়ে যান। ভয়ে কেঁপে ওঠেন। তাঁর শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। তিনি মাথা নিচু করে বলেনঃ

প্রিয় ভাই!আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আজ তোমার মতো মানুষদের বড় অভাব। এখন কেউ কাউকে এভাবে সতর্ক করে না! বিতর্কের সময় নিজের ইলম জাহির করতে গিয়ে কারো অনিচ্ছা সত্ত্বেও গর্ববোধ এসে গেলে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না! অবশ্য আমি কেবলমাত্র আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার ভয়ে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই এসব বিষয়ে বিতর্ক করি। নইলে আমিও এসব থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতাম!"


■■ শিক্ষাঃ

সব মু'মিন মুসলমানদের উচিত সর্বাবস্থায়ই সব ধরণের বিতর্ক এড়িয়ে চলা! আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে হলে, তা হবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক এর সন্তষ্টি অর্জন করার জন্য! এর বাইরে সব ধরণের বিতর্ক থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখা কর্তব্য!!

▪সূত্রঃ মানাকিবুল ইমাম আবি হানিফা, যকারদারি, পৃষ্ঠাঃ ৩৫১।।

বিতর্কের উদ্দেশ্যে হোক কোন বিষয়ের সমাধান করা!!

■■ ইয়াহইয়া ইবনু শাইবান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ একবার ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ তাঁর

পুত্র হাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহকে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে বিতর্ক করতে দেখে ভীষণ বিরক্ত হন। তৎক্ষণাৎ তাকে বিতর্ক করতে বারণ করেন। 

তখন হাম্মাদ(রহঃ) আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেনঃ "আব্বাজান! আপনিও তো একসময় এ বিষয়ে বিতর্ক করতেন!" উত্তরে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ "আমরা যখন বিতর্ক করতাম, তখন এ ভয়ে অস্থির থাকতাম যে, প্রতিপক্ষ ভাইয়ের সামনে প্রমাণ উপস্থাপনে সামান্য অসংগতি প্রকাশ পেলে হয়তো সে সঠিক পথ হতে বিচ্যুত হয়ে যাবে!

■▪তিনি আরো বলেনঃ আর তোমরা আজকাল বিতর্ক করো প্রতিপক্ষকে ভুল প্রমাণ করতে এবং তাকে পথভ্রষ্ট আখ্যা দিতে! পরিণামে তোমরা তাদের পথভ্রষ্ট বানিয়েই ছাড়ো! কিন্তু তোমরা ভুলে যাও যে, মৌলিক আকিদা তথা বিশ্বাসে কাউকে ভ্রষ্ট প্রমাণ করা মানেই হলো, তাকে কা*ফি*র আখ্যা দেওয়া! আর যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে কা*ফি*র আখ্যা দেয়, সে নিজেই তখন কা*ফি*র হয়ে যায়!"

■■ শিক্ষাঃ

এর দ্বারা প্রমাণ হলো যে, যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করা হয়, তখন সঠিক সমাধান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিতর্ক করা যাবে। কিন্তু এরজন্য সঠিক প্রমাণ হাজির বা উপস্থাপন করা জরুরী। অন্যথায় অযথা সব ধরণের বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে হবে।

■▪সূত্রঃ মানাকিবুল ইমাম আবি হানিফাঃ ইবনুল বাযযাযি, খন্ডঃ ১; পৃষ্ঠাঃ ১২১।।

চুপ থাকার ফযীলত/উপকারিতাঃ

চুপ থাকা মানে দুনিয়াবী সকল প্রকার অপ্রয়োজনোয় এবং সব বাজে কথা থেকে চুপ থাকা। জবান সবসময় জিকির-ফিকিরে রাখা। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বেশী চুপ থাকতেন। মুখ দিয়ে বের হওয়া কথাটা হয় সওয়াব হবে না হয় গুনাহ হবে!

 আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার কাজে সচেতন পাহারাদার তার নিকটে রয়েছে। (সূরা কাহাফঃ ১৮)

🔰 চুপ থাকা এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে

সূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্ল বর্ণিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ হাদীসঃ

০১] "যে আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর ঈমান রাখে; তাঁর উচিত ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা।" (বুখারী শরীফ)

০২] "যে চুপ থেকেছে, সে নাজাত পেয়েছে।"(তিরমিজী শরীফ)

০৩] "যে মানুষ তার জবান ও যৌন জীবনের জামীন হতে পারে, আমি তার জান্নাতের জামীন হবো।(বুখারী শরীফ)

০৪] "যে নিরাপদ থাকতে চায়, তার চুপ থাকা অতি জরুরী।" (মুসনাদ আবী ইয়া`লা)

০৫] "জিহবা মানুষের অধিকাংশ পাপের মূল।"

০৬] "চুপ থাকা একতা ইবাদত। চুপ থাকা হলো আলেমের সৌন্দর্য। আর জাহেলের পর্দা।" (জামেউস সগীর)

০৭] চুপ থাকা আখলুক সমূহের সরদার।" (মুসনাদুল ফিরদাউস)

০৮] "তোমার ওপর নেকীর কথা বলা ছাড়া(বাকি সময়ে) বেশি চুপ থাকা জরুরী করে নাও। কারণ, এটি শয়তানকে তোমার নিকট থেকে দূর করে দেবে। আর ইসলামের কাজে তোমার সহায়তাকারী হবে।" (ইবনে হিব্বান)

০৯] "হিকমতের ১০টি অংশ আছে। এর ৯টি অংশ একাকীতে। আর ১টি অংশ চুপ থাকাতে আছে।" (মুসনাদুল ফিরদাউস)

১০] "হক কথা বলা ছাড়া চুপ থাক। তাহলে এর কারণে তুমি শয়তানের ওপর জয়ী হবে।"

(ক) চুপ থাকা যা ইবাদতের খুঁটি।

(খ) আল্লাহ এর নিকট মিনতি। 

(গ) দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি এবং

(ঘ) অল্পে তুষ্টি।

■ হজরত সুলায়মান(আঃ) বলেনঃ "যদি কথা বলা রৌপ্য হয়, তাহলে চুপ থাকা হলো স্বর্ণ!"

 হজরত দাউদ(আঃ) বলেনঃ "আমি কথা বলে অনেক বার লজ্জিত হয়েছি! কিন্তূ চুপ থেকে কখনো লজ্জিত হইনি।"

■ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক(রহঃ) বলেনঃ "যদি আল্লাহর কাজ করার কথা বলা রূপা হয়, তাহলে তাঁর নাফরমানীমূলক কথাবার্তা থেকে চুপ থাকা হলো সোনা!"

■ হজরত সুফিয়ান সওরী(রহঃ) বলেনঃ "দীর্ঘ সময় চুপ থাকা ইবাদতের ভান্ডার।"

তিনি আরো বলেনঃ "ইবাদতের শুরু চুপ থাকা। অতঃপর ইলম হাসিল করা। এরপর তা মনে রাখা। তারপর তার ওপর আমল করা। সবশেষে তা শেয়ার করা।"


■ পূর্বের যামানার নেক লোকেরা অনেক কম কথা বলতেন।

■ নারীর সৌন্দর্য লজ্জা! আর বুদ্ধিমানের সৌন্দর্য হল চুপ থাকা।

■ চুপ থাকা নেক লোকদের দু'আ ও ভদ্রতার ভিত্তি।

■ চুপ থাকার সবচেয়ে ছোট ফায়দা/উপকার হলোঃ 

-------"নিরাপদে থাকা।" আর কথা বলা মানুষের ছোট লোকসান হলোঃ "লজ্জিত হওয়া!"

আদবের ৪টি ভালো দিক হলোঃ 

(১) তওবা করা। (২) নফসের বিপরীতে কাজ করা। (৩) চুপ থাকা এবং (৪) একাকী থাকা।

মুমিনের ৪টি ভালো দিক হলোঃ

(১) চুপ থাকা। (২)মিথ্যা বর্জনকরা। 

(৩) পরহেজগারীতে ইখলাস এবং

 (৪)রিয়া থেকে বেঁচে থাকা।

মানে রাখার মতো কিছু নসীহা

■ অসংযত জিহ্বা সকল ইবাদত বন্দেগী নষ্ট করে দেয়!

 চুপ থাকা উত্তম পরহেজগারী এবং এর কারণে গুনাহ কম হয়।

■ গীবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য চুপ থাকা অত্যন্ত জরুরি!

■ আগে পরিমাপ করতে হবে, তারপর কথা বলতে হবে এবং যবানের কৃপণতা করাই সবচেয়ে ভালো।

■ সব কথার জবাব হয় না! আর অপছন্দীয় কথার জবাব তো চুপ থাকা।

মুত্তাকী ও পরহেজগার মানুষ নিজের জবানের হেফাযত করার কারণে কথা বলা থেকে বেঁচে থাকে! যদিও সে সঠিক কথা বলতে পারে।"

 ● ইয়া আল্লাহ তা‘আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার ও মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন!  আমিন 


1 تعليقات

إرسال تعليق

أحدث أقدم
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন