দাওয়াত ও তাবলীগ এর বিশেষ বয়ান
দাওয়াত অর্থঃ আহবান করা,ডাকা
তাবলীগ অর্থঃ প্রচার করা,প্রসার করা
পারিভাষিক অর্থঃ পথ ভূলা মানুষদেরকে আল্লাহ তাআলার দিকে আহবান করা এবং দ্বীন ইসলামকে প্রচার প্রসার করা।
দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য হলো ২টি
(১) الدعوة الى الله (২) الدعوة الى الاسلام
🔹الدعوة الى الله সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন
وادع الى ربك ولا تكونن من المشركين
তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান কর এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না । (সূরা কাসাস ৮৭)
🔸الدعوة الى الاسلام সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন:
فلذلك فادع واستقم كما امرت
আপনি এই দিন ইসলামের দিকে আহবান করুন এবং উহাতে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকুন (সুরা শুরা ১৫)
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র এরশাদ করেন।
يا ايها الرسول بلغ ما انزل اليك من ربك وان لم تفعل فما بلغت رسالته
হে রাসুল তোমার প্রভুর নিকট হতে তোমার প্রতি যাহা নাজিল হয়েছে তাহা প্রচার করো ,যদি না কর তবে তুমি তাহার বার্তা প্রচার করলে না (শুরা মায়েদা ৬৭ )
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছন
بلغوا عني ولواية
আমার পক্ষ হইতে একটি বাণী হইলেও প্রচার করো
দাওয়াত ও তাবলীগের লক্ষ্য উদ্দেশ্যঃ
উভয় জগতে মানুষের কল্যাণ, এবং আখেরাতে চিরস্থায়ী জীবনের মুক্তি
🔰 কোরআনের আলোকে দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য ৩ টি
এক. মানুষকে ভ্রান্ত ও অন্ধকার থেকে হেদায়াত ও আলোর পথে আনা
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
الله ولي الذين امنواو يخرجهم من الظلمات الى النور
যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক তিনি তাদেরকে অন্ধকার হইতে বাহির করে আলোর দিকে আনেন (সুরা বাকারা ২৫৭)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
كتاب انزلناه اليك لتخرج الناس من الظلمات الى النور
ইহা এমন এক কিতাব যা আমি আপনার উপর নাজিল করেছি যাতে আপনি মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনতে পারেন।(সূরা ইব্রাহীম ১)
দুই. মানুষের বিশ্বাস কর্ম সঠিক এবং বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণারূপে করে দেব। (সূরা ফুরকান,২৩)
তিন. মানুষদেরকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতের পথে ফিরিয়ে আনা
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের মধ্যে বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, (সূরাঃ তাহরীম,৬)
সম্মানিত পাঠক!
দুনিয়া চিরস্থায়ী নয় প্রতিটা বস্তু ধ্বংসশীল তেমনিভাবে দুনিয়াও,আমরা একদিন ছিলাম না একদিন থাকবওনা! দুনিয়া আমাদের অস্থায়ী ঠিকানা।
রাসূলের কারীম সাঃ বলেন.
الدنيا مزرعة الاخرة দুনিয়া হলো আখেরাতের ফসল স্বরূপ
দুনিয়াতে আপনি যে কাজেই করবেন এর প্রতিদান আখেরাতে পাবেন তাই দুনিয়াকে চিরস্থায়ী ঠিকানা মনে করে আখেরাতকে ভুলে যাবেন না!
আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে তুচ্ছ বলেছেন,
وَمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ ۚ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত। (সূরা আনকাবুত,৬৪)
প্রতিটা জিনিসরে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে তেমনিভাবে এই দুনিয়াকে আল্লাহতালা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا فِي أَنْفُسِهِمْ ۗ مَا خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُسَمًّى ۗ
তারা কি তাদের মনে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথরূপে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। (সূরাঃ রূম ৮)
প্রিয় পাঠক!
দুনিয়ার চিরস্থায়ী ঠিকানা নয়! একজন ঈমানদার দুনিয়ার প্রেমে পড়ে তার চিরস্থায়ী ঠিকানা আখেরাতকে কখনোই ভুলে যেতে পারে না। মুমিন ব্যক্তি সর্বদা এই দুনিয়াতে একজন পথিকের ন্যায় জীবন যাপন করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন
الدنيا سجن المؤمن وجنه الكافر
দুনিয়া মুমিনদের জন্য জেলখানার ন্যায় আর কাফের মুশরিকদের জন্য বেহেশতের ন্যায়।
আজ আপনি দুনিয়াকে জেলখানা মনে করে জীবন পরিচালনা করুন পরকাল আপনার জন্য আল্লাহ তায়ালা বেহেশতে বানিয়ে রেখেছেন।
দুনিয়ার মোহে পড়ে কখনোই নিজের সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যাবেন না
🔰 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমার উম্মতের উপর এমন একটা সময় আসবে যে তারা পাঁচটি জিনিসকে ভালোবাসায় পাঁচটি জিনিস কে ভুলে যাবে।
يحبون الدنيا وينسون الاخره
ويحبون المال وينسون الحساب
ويحبون الخلق و لا ينسون الخالق
ويحبون الذنوب وينسون التوبه
ويحبون القصور وينسون المقبرة
🔹মানুষ দুনিয়াকে ভালবাসবে এবং আখেরাতকে ভুলে যাবে।
🔸সম্পদ কে ভালবাসবে এবং হিসাবের দিনকে ভুলে যাবে
🔹সৃষ্টিকে ভালোবেসে তার স্বাসটাকে ভুলে যাবে
🔸গুনাহকে ভালবাসবে এবং তাওবা কে ভুলে যাবে
🔹প্রাসাদ কি ভালবাসবে কবরস্থান কে ভুলে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন আমীন!
লেখকঃ মিজানুর রহমান সোহাগ
জামিয়া মদিনাতুল উলুম আমিন বাজার
إرسال تعليق