বিষয়ঃ মুসাফির ও কসরের সালাত
প্রশ্ন ১) 'কসর নামায কি... ?""সফরে ৪ রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাযকে ২ রাকআত কসর (সংক্ষেপ) করে পড়া সুন্নত ।''
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ
যখন তোমরা কোন দেশ সফর কর, তখন নামাযে কিছুটা হ্রাস করলে তোমাদের কোন গোনাহ নেই।(সুরা নিসা -১০১)
🔰 প্রশ্ন-২)পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে সব ওয়াক্ত কি সালাত কসর করবে... ?
জি না শুধু জোহর আসর ও এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ কে দুই রাকাত করে পড়বে।
অর্থাৎ মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ এবং ফজরের দুই রাকাত ফরজ আদায় করতে হবে
এগুলোর কোন কসর নেই,,
🔰 প্রশ্ন -৩) কতটুকু দূরে গেলে নামাজ কসর করে পড়তে হবে...
কুরআন কারীমে উপর্যুক্ত আয়াতে বা কোন হাদীসে সেই সফরের কোন নির্দিষ্ট পরিমাপ বা দূরত্ব উল্লেখ হয়নি,
তবে হযরত ইবনে আব্বাস ও ইবনে উমার (রাঃ) ৪৮ মাইল দূরে গিয়ে কসর করতেন এবং রোযা রাখতেন না। (বুখারী)
আরো পোস্ট পড়ুন
- বিবাহিতা মেয়ের উপর তার পিতা-মাতার খেদমত করা আবশ্যক কি না?
- হস্তমৈথুনে আসক্ত থেকে এর বেড়িয়ে আসুন, এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানুন!
✍️আরেকটু সহজ ভাষায়।
তিন দিন বা তার সমপরিমাণ দূরত্বের অধিক সফর করলে কেউ মুসাফির হিসাবে গণ্য হবে।
তিন দিনের দূরত্বকে ফুকাহায়ে কেরাম ৪৮ মাইল অর্থাৎ ৭৮ কিলোমিটার সমপরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। তাই বর্তমানে কেউ ৭৮ কিলোমিটার বা সমপরিমাণ দূরত্বে সফর করলে সে শরয়ী মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।
🔰 প্রশ্ন ৪) এ কসরের নামাজ কত দিন পরবো ... ?
অর্থাৎ চার রাকাত ফরজ নামাজকে দুই রাকাত করে কতদিন পর্যন্ত পড়তে হবে ?
🔹কসরের সময়…
কসর এর কোন নির্দিষ্ট সময় হাদিসের মধ্যে সুস্পষ্ট আসেনি,,
তবে ওলামায়ে কেরামের মতে ১৫ দিন কিংবা ১৯ দিন সফরে নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হবে।
✍️ সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত ✅
সফরে গিয়ে নির্দিষ্ট দিন থাকার নিয়ত না হলে, বরং কাজ শেষ হলেই ফিরে আসার নিয়ত হলে
অথবা পথে কোন বাধা পড়লে যতদিন ঐ কাজ না হবে অথবা বাধা দূর না হবে ততদিন সফরে কসর করা চলবে।
(ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪০৬-৪০৭)
এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত অর্থাৎ কোন দিন নির্দিষ্ট না করে যতক্ষণ না তার কাজ শেষ হয় ততক্ষণ সে কসরের নামাজ আদায় করবে।
নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হল...
🔸মহানবী (ﷺ) এক সফরে ১৯ দিন ছিলেন এবং তাতে নামায কসর করেছেন। (বুখারী ১০৮০নং)
🔹হযরত আনাস (রাঃ) শাম দেশে ২ বছর ছিলেন এবং ২ বছরই নামায কসর করে পড়েছেন। (মালেক, মুঅত্তা ৩/৪৮৮, ফিকহুস সুন্নাহ্ ১/২৮৬)
🔹হযরত আব্দুল্লাহ বিন ইবনে উমার (রাঃ) পথে বরফ থাকার ফলে আযারবাইজানে ৬ মাস আটক ছিলেন এবং তাতে কসর করে নামায পড়েছিলেন। (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ২/৪৩৩৯, বায়হাকী ৩/১৫২)
🔰 প্রশ্ন ৫) যারা ভাড়া গাড়ি চালায়,,
তারা তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, তারা কি নামাজ কসর করে পড়তে হবে.?🔹যারা ভাড়া গাড়ি চালায়, প্রত্যহ্ বাস, ট্রেন বা প্লেন চালায় তারাও মুসাফির।
🔸তাদের জন্যও নামায কসর করা লাগবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২২/১০৩)
🔰 প্রশ্ন ৬ ) এখন আমাদের মনে অনেকে প্রশ্ন জাগতে পারে... !
অনেকেই বলতে পারেন সফরে চার রাকাত নামাজে ২ রাকাত না পড়ে ৪ রাকাত পড়া যাবে কিনা... ?এর উত্তর,একজন মুমিন সব ক্ষেত্রে রাসুল সাঃ এর আদর্শ অনুসরণ করবে... !
রাসুল সাঃ যেখানে যেভাবে নামাজ আদায় করেছেন সেখানে সেই ভাবে নামাজ আদায় করা বরকতম,
সুতরাং সফরে নামাজ দুই করে রাকাত পড়াই উত্তম।
📌রাসুল (সা) সফরে সব সময় নামাজ আদায় করতেন,,
নামাজ দুই রাকাত করে পড়তেন''👇👇👇মহানবী (ﷺ) প্রত্যেক সফরেই কসর করে নামায পড়েছেন এবং কোন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা এ কথা প্রমাণিত নেই যে, তিনি কোন সফরে নামায পূর্ণ করে পড়েছেন।
🔸হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি নবী (ﷺ), আবূ বাক্র, উমার ও উসমান (রাঃ)-এর সাথে সফরে থেকেছি। কিন্তু কখনো দেখি নি যে, তাঁরা ২ রাকআতের বেশী নামায পড়েছেন।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৩৩৮নং)
✍️️সুতরাং একজন মুসলিমের উচিত সফরে মুসাফির অবস্থায় নামাজ ২ রাকাত পড়া
উপরের সবগুলো পোস্ট থেকে আমরা যা জানতে পারলাম-
১) সফরে মুসাফির অবস্থায় ৪ রাকাত ফরজ নামাজকে দুই রাকাত করে পড়তে হবে
২) শুধু যোহর আসর এশা এই নামাজগুলোতে কসর করতে হবে ,, মাগরিব ও ফজর নামাজের কসর করতে হবে না
৩) সফরের দূরত্ব সুনির্দিষ্ট নয়, তিন দিনের দূরত্ব ৪৮ মাইল,, তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে কেউ গেলে সে মুসাফির হয়ে যাবে
৪) মুসাফিরের নামাজ ১৫ দিন কিংবা 19 দিন পর্যন্ত দুই রাকাত করে পড়া যাবে । এরপর থেকে সম্পূর্ণ নামাজ আগের মত আদায় করতে হবে।
"তবে বিশুদ্ধ এই যে কাজ করার জন্য সফরে গিয়েছে সে কাজ যতক্ষণ না পর্যন্ত শেষ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে এবং সফরের মধ্যে যদি কোন বাঁধা পড়ে যতদিন লাগে ততদিন নামাজ কসর করবে''
৫) যারা ভাড়া গাড়ি চালায় তারাও মুসাফির হয়ে যাবে এবং তাদেরকে নামাজ কসর করতে হবে
ধন্যবাদ পোস্টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য!
إرسال تعليق