আরবি চান্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস হলো রজব। রজব মাসের পূর্ণ নাম হলোঃ "আর রজব আল মুরাজজাব" কিংবা "রজবুল মুরাজ্জাব!" রজব শব্দের অর্থ হলোঃ "সম্ভ্রান্ত", "প্রাচুর্যময়" ঐবং "মহান!" আর "মুরাজ্জাব" এর অর্থঃ ‘"সম্মানিত!" সুতরাং "রজবে মুরাজ্জাব" এর অর্থ হলোঃ "প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস!" হারাম তথা সম্মানিত এবং সব ধরণের যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ মাসগুলোর অন্যতম হলো এই রজব। চারটি মাসকে হারাম মাস হিসেবে ধরা হয়! এগুলো হলো, পরপর তিনমাস!▪︎জিলকদ,▪︎জিলহজ, মহররম এবং রজব!
●● রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ --"আল্লাহ তা'আলা আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই বৎসর হয় বারো মাসে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো “রজব মুদার”, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী। -(মুসলিম)
■ "মুদার" উভয়বিধ বা বহুবিধ কল্যাণের সম্মিলন। রজব ও শা'বান হলো জোড়া মাস। রজব ও শাবান মাসদ্বয়কে একত্রে রজোবান বা রজোবাইন, অর্থাৎঃ "রজবদ্বয়" বলা হয়। রমযানের আগে এ দুই মাস আমল ও সাধনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী ও সবিশেষ উর্বর।
■ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম রজব এবং শা'বান মাসব্যাপী এ দু'আটি বেশী বেশী পরিমাণে পড়তেন!
-------"আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শা'বান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান!" অর্থঃ "হে আল্লাহ! রজব মাস ও শা'বান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমযান মাস আমাদের নসিব করুন।" --(বুখারি ও মুসলিম)।
● উম্মে সালমা(রাঃ) বলেনঃ
---"নাবী কারীম সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোযা পালন করতেন শা'বান মাসে, অতঃপর রজব মাসে!" হজরত আয়েশা সিদ্দিকা(রাঃ) বলেনঃ
---"যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নাবীজি সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।" কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, "নাবীজি সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এ রজব মাসে ১০টি রোযা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোযা রাখতেন এবং রমযান মাসে ৩০টি(চাঁদের হিসেব মতো ২৯ বা ৩০টি) রোযা রাখতেন!" -(দারিমি)
● রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ -"রজব হলো আল্লাহর মাস, শা'বান হলো আমার (নাবীজি সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাস এবং রমযান হলো আমার উম্মতের মাস।"
-----(তিরমিজি)
■ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
---"যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) খেত চাষ দিল না এবং শা'বান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) খেত আগাছামুক্ত করল না; সে রমযান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।" --(বায়হাকি)
■ রজব মাসের বিশেষ আমল হলোঃ
এ মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখা। বিশেষত প্রতি সপ্তাহের সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং মাসের ১, ১০; ১৩, ১৪, ১৫; ২০, ২৭ ও ২৯/৩০ তারিখ রোযা রাখা। অধিক হারে নফল নামায পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামায, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন এর নামায, তাহিয়্যাতুল অজু এবং দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি নামায আদায় করা।
■ এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরও আমল হলোঃ
অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা; কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া! যাঁরা জানেন তাঁদের জন্য সহিহ্-শুদ্ধ করা এবং অর্থসহ শেখা! বেশী বেশী দান-সাদকাহ করা(সাধ্যমতো) এবং অন্যান্য সব নেক আমল বেশী বেশী করে করা! বেশী বেশী করে তাওবা-ইস্তিগফার করা, দরূদ শরীফ পাঠ করা এবং মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'হাত তুলে রোনাজারি করে দু'আ করা!
● হজরত সালমান ফারসি(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামায পড়তে হয়। হজরত উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
-"অতি মহান চারটি রাত হলোঃ রজব মাসের প্রথম রাত, শা'বান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শব-ই বরাত), শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমযানের ঈদের রাত) এবং জিলহাজ্জ্ব মাসের দশম রাত(ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের রাত)!"
● অন্য বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছেঃ
----"রজবের প্রথম রাত বছরের পাঁচটি বরকতময় রাতের মধ্যে একটি। এর প্রথম দিনের রোযারও মহান ফযীলত রয়েছে!"
■ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেনঃ-"জান্নাতে একটি নহর আছে, যেটাকে রজব বলা হয়, সেটার পানি দুধের চেয়ে অধিক সাদা, আর মধুর চেয়েও বেশী মিষ্টি। যে কেউ রজব মাসে একটি রোযা রাখবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে এ নহর থেকে পানি পান করাবেন।"
■ হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رضي الله عنه হতে বর্ণিত। নাবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেনঃ
--"রজবের প্রথম দিনের রোযা তিন বছরের (গুনাহের) কাফফারা। আর দ্বিতীয় দিনের রোযা দুই বছরের এবং তৃতীয় দিনের রোযা এক বছরের (গুনাহের) কাফফারা স্বরূপ। অতঃপর প্রত্যেক দিনের রোযা এক মাসের (গুনাহের) কাফফারা স্বরূপ।"
-----(আল জামিউস সগীর: পৃষ্টা-৩১১, হাদিস নং- ৫০৫১)
● এ মাসের ২৭ তারিখে রয়েছে পবিত্র শব-ই মেরাজ।(এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে নীচে উল্লেখ করা হয়েছে) ২৭শে রজবের রোযারও অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমনঃ হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী(رضي الله عنه)হতে বর্ণিত। প্রিয় নাবী(ﷺ) ইরশাদ করেনঃ
--"রজবে একটি দিন ও একটি রাত রয়েছে। যে এ দিন রোযা রাখবে, আর রাত জেগে ইবাদাত করবে, তবে সে যেন ১০০ বছরের রোযা রাখল এবং ১০০ বছরের রাত জেগে ইবাদত করল, আর তা হচ্ছে রজবের ২৭ তারিখ।"
-----(শুয়াবুল ঈমান, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭৪, হাদিসঃ ৩৮১১)
■ রজব ও শা'বান মাস পবিত্র রমযানের আগমনী বার্তাস্বরূপ। অত্যধিক ফযীলত এবং মর্যাদার কারণে রজব ও শা'বান মাসজুড়ে প্রিয় নাবি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু'আটি বেশি বেশি পড়তেন। যাতে রজব ও শাবান মাসের বরকত ও পবিত্র রমযান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধির আবেদন ফুটে উঠেছে।
▪হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ
-------"রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসের শুরু থেকেই নিম্নোক্ত দু'আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ
اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
●▪উচ্চারণঃ
-------"আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।"
●▪অর্থঃ
-------"হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব এবং শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমযান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন।"
-----(তাবারানিঃ ৩৯৩৯)
■ রজব মাসের বিশেষ দিবস হিসেবে আমাদের দেশে যার প্রচলন আছে তা হলো-শব-ই-মে’রাজ! যার শাব্দিক অর্থ হলোঃ উর্ধ গমন! পরিভাষায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত রাতের ভ্রমণকে ইসরা ও তথা হতে সিদরাতুল মুনতাহা ও তদুর্ধ্ব পর্যন্ত ভ্রমণকে মে’রাজ বলা হয়। ইসরা ও মে’রাজের ঘটনা সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ
-------"পবিত্র মহান স্বত্ত্বা যিনি রাত্রিবেলায় তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন এবং যার আশপাশ কে আমি বরকতময় করেছি! এটা এজন্য যে, যাতে আমি তাঁকে আমার নিদের্শনাবলী দেখাতে পারি।"
-----(সুরা বনীইসরাঈলঃ ১)
হাদীসের আলোকে মে’রাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনাঃ
-"একদা রাতে প্রিয় নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মে হানী(রাঃ) এর ঘরে শুয়ে ছিলেন। প্রিয় নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর অর্ধনিদ্রা অবস্থায় হযরত জিব্রাইল(আঃ) অন্যান্য ফেরেস্তাসহ অবতরণ করেন এবং নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে হারামে নিয়ে যান। নাবীজী সল্লাল্লাম তখন হাতিমে কাবায় ঘুমিয়ে পড়েন। হযরত জীব্রাইল ও মিকাইল(আঅঃ) নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম কে জমজম কুপের পার্শ্বে নিয়ে সীনামুবারক বিদীর্ণ করে অন্তরাত্মা বের করে পবিত্র জমজমের পানিতে ধুয়ে ইলম এবং হিকমতের দ্বারা পরিপূর্ণ করে স্বর্ণের তশতরিতে রাখেন। অতঃপর তা পুনরায় তাঁর বক্ষে স্থাপন করেন। এরপর তাঁকে(ঘুম থেকে তুলে) বোরাক নামক আতি দ্রুত এক বাহনে করে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। অতঃপর সেখান থেকে আসমানে নিয়ে যান। প্রথম আসমানের নিকট গিয়ে হযরত জীব্রাইল(আঃ) দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেস্তাগণ(দরজা খুলে) অভিবাদন জানিয়ে নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম কে বরণ করে নেন এবং এভাবেই একে একে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। সপ্তম আকাশ থেকে প্রিয় নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম আরেকটি অতি দ্রুত গতির রফ রফ নামক বাহনের মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহা এবং পবিত্র ও মহিমান্বিত আরশে আযীমে গমন করেন। সেখানে অনেক আশ্চর্য এবং বিষ্ময়কর জিনিস প্রত্যক্ষ করেন। জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন।
পরিশেষে আল্লাহর দিদার ও কালাম লাভে ধন্য হন এবং মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে হাদিয়া স্বরূপ দৈনিক ওয়াক্ত নামাযের বিধান নিয়ে জমিনের দিকে প্রতাবর্তন করেন। পথিমধ্যে হযরত মুসা(অঃ) এর পরামর্শক্রমে পরপর কয়েকবার আল্লাহর নিকট গিয়ে নামাযের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। অবশেষে ৫ ওয়াক্ত নামায (যাতে ৫০ ওয়াক্তের সওয়াব পাওয়া যাবে) এর বিধান নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস হয়ে আবার পবিত্র মক্কায় ফিরে আসেন।"
-----(বুখারী শরীফ, সিরাতে ইবনে হিসাম)
● উল্লেখ্য যেঃ প্রিয় নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর মে’রাজ সশরীরে সংঘটিত হয়েছিল। স্বপ্ন যোগে নয়!!
■■ মে’রাজের শিক্ষা এবং নছিহতঃ
মে’রাজের রাতে প্রিয় নাবী রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়!▪︎ক) এ উম্মতের যে কোনো ব্যক্তি যদি শিরক মুক্ত সামান্য ঈমান নিয়েও আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে চিরকাল আযাব দিবেন না, বরং তাকে একদিন অবশ্যই স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং পরবর্তিতে আরামে রাখবেন।▪︎খ) প্রতিদিন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা। যে ব্যক্তি এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে ৫০ ওয়াক্ত নামাযের সওয়াব দিবেন এবং নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং▪︎গ) সুরায়ে বাকারার শেষ দু'আয়াত! যার মধ্যে এই উম্মতের প্রতি মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ রহমত, মাগফিরাত, দয়া ও অনুগ্রহ এবং কা ফি র দের মোকাবিলায় সাহায্য ও সফলতার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তাছাড়া এ আয়াত দু'টি রাতেরবেলা ঘুমানোর পূর্বে পড়লে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
অর্থাৎ তাহাজ্জদের সওয়াব সহ সমস্ত বিপদ আপদ থেকে সে ব্যক্তি হিফাযতে থাকেন। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী হলো এই যেঃ
-------"প্রাথমিকভাবে এ তিনটি বিষয়কে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া এবং সঠিক ও সুন্দরভাবে তা হাসিল করা।" আর বর্জনীয় বিষয় হলোঃ
-------"মে’রাজ সম্পর্কিত প্রচলিত অন্যান্য সকল প্রকার বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকা!"
■■ মেরাজ সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ঃ
মি‘রাজ আরবী উরুজ শব্দ থেকে নির্গত! যার অর্থঃ ঊর্ধ্বে গমন করা। আর মি‘রাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বে আরোহণের বাহন। মি‘রাজের ঘটনা কখন সংঘটিত হয়েছিলো এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে নির্ভর যোগ্য সূত্রে শুধুমাত্র এতটুকুই পাওয়া যায় যে, মি‘রাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এর মাস এবং দিন তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল নেই!(এ বিষয়ে পরের একটা পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করা হবে
/হয়েছে ইন শা আল্লাহ! যদিও সাধারণ জনগণের মাঝে প্রসিদ্ধ হলো রজব মাসের ২৭ তম তারিখে ত সংঘটিত হয়েছিল।
-----(আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ এবং শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহঃ খন্ড- ৮ পৃঃ ১৮/১৯)
■■ হুযুর সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি‘রাজ জাগ্রত অবস্থায় এবং স্বশরীরে হয়েছিল। তবে এছাড়া অন্যান্য অনেক অনেক সময় হুযুরের স্বাপ্নিক মি‘রাজও হয়েছে। যার বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে। তথাপি কতিপয় লোক রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বশরীরের পবিত্র মি‘রাজকে কিছু মিথ্যা, ভ্রান্ত যুক্তি তর্কের মাধ্যমে অস্বীকার করার চেষ্টা করে। যা আদৌ ঠিক নয়। মূলত প্রসিদ্ধ মি‘রাজ তাঁর স্বশরীরে হওয়ার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত ও অনেক সহীহ হাদীস সহ বিভিন্ন দলিল রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
■▪︎০১] রূহানী মি‘রাজ কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়! বরং শারীরিক মি‘রাজই হলো আশ্চর্যের বিষয়। এদিকে ইংগিত করে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত ঘটনার বর্ণনার শুরু করেছেন "সুব'হানা" শব্দ দিয়ে। তাছাড়া উক্ত আয়াতে "বি আবদিহী" অর্থাৎঃ নিজের বান্দাকে শব্দ রয়েছে। যা মি‘রাজ স্বশরীরে হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
■▪︎০২] মি‘রাজ যদি স্বাপ্নিক হত তাহলে কেউ মুরতাদ হতো না। কারণ স্বপ্নের কোনো কিছুকে কেউ অস্বীকার করে না।
■▪︎০৩] স্বশরীরে মি‘রাজ হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে। অতএব প্রসিদ্ধ মি‘রাজকে রূহানী বা স্বাপ্নিক বলে ব্যক্ত করার কোন অবকাশ নেই।
-----(শরহে যুরকানীঃ ৮/১৩৮)
■ শবে মি‘রাজ সম্পর্কিত বর্জনীয় বিষয়সমূহঃ
মি‘রাজের ঘটনা কোন বছর এবং কোন মাসের ও কোন তারিখে এবং কোন রাতে সংঘটিত হয়েছিল তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে অনেক মতভেদ রয়েছে এবং এ রাতটি পৃথিবীর ইতিহাসে একবারই এসেছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো মি‘রাজ সংঘটিত হবে না।
সুতরাং কোন একটা তারিখ কে চূড়ান্ত মনে করা এবং অন্যান্য তারিখ গুলিকে ভুল বলা যাবে না। অর্থাৎং সঠিক এবং পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলা যায় না যে, কোন তারিখের কোন রাতে মি‘রাজের ঘটনা ঘটেছিল! শব-ই মি‘রাজের ইবাদত বন্দেগীর ব্যাপারে কোন ফযীলতও কুরআন হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। সুতরাং সম্ভাব্য এই দিনে রোযা রাখা এবং শব-ই কদরের মত এরাতকে ফযীলতপূর্ণ মনে করা, রাতে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল হওয়া ও দিনে রোযা রাখা, সরকারীভাবে শব-ই মি‘রাজ পালনের উদ্যোগ নেওয়া এবং এই রাত্রকে উদ্দেশ্য করে মসজিদে ভীড় জমানো, মসজিদে আলোকসজ্জা করা, রাত্র জাগরণ করা এবং বাড়ী বাড়ী বিশেষ মীলাদ পড়া, প্রচার মাধ্যমে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা, পত্রপত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধন প্রকাশ করা, শবে মি‘রাজ উপলক্ষে হালুয়া রুটির আয়োজন করা ইত্যাদি কোনো কাজের কোনটাই সহীহ নয়। শব-ই মি‘রাজ যদি শব-ই বরাত কিংবা শব-ই কদরের মত অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ কোন ইবাদতের রাত হতো, তাহলে তার দিন তারিখ ও মাস সংরক্ষিত থাকতো। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে কোন হাদীস বর্ণিত হতো।
সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ)গণের কোন না কোন আমল পাওয়া যেতো। অথচ এ বিষয়ে কুরআন হাদীসে কোন আমলের কথা বর্ণিত নেই। অতএব বৎসরের অন্যান্য দিন ও রাতের মতোই স্বাভাবিক ইবাদত বন্দেগী করাই আমাদের এ দিনের কর্তব্য। এর বাইরে সব ধরণের কাজ থেকে সকল মুসলিমনর-নারীর কে বিরত থাকতে হবে!!
-----(সূরায়ে মায়েদাঃ ৩, বুখারীঃ ২৬৯৭, মুসলিমঃ ৫৯৬)
●● শেষ কথাঃ
রজব ও শা'বান মাস হলো পবিত্র রমযান মাসের প্রস্তুতি মূলক মাস। এ প্রস্তুতি হলো, শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক! অর্থাৎঃ সার্বিক বা সামগ্রিক। রমযান মাসে যেহেতু ইবাদতের সময়সূচি পরিবর্তন হবে, তাই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং রমযান মাসের শেষ দশকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ করা এবং শব-ই কদর খোঁজার বিষয় রয়েছে, তাই আগে থেকেই সকল মুসলিম নর-নারীর তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে!
●▪︎রজব এবং শা'বান মাসের বেশী বেশী নেক আমল করা ও পাপ বর্জনের মাধ্যমে রমযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য বেশী বেশী করে তাওবা এবং ইস্তিগফার করতে হবে। মোহমুক্তি এবং পাপ পরিহার করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সমাজের মধ্যের একে অন্যকে সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে হবে। রমযান মাসে যেন ইবাদতের পরিবেশ রক্ষা হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। সব শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজের চাপ কমাতে হবে। দান-খয়রাতের পরিমাণ যতটা সম্ভব বাড়াতে হবে। রমযানে গরিব মানুষরা যেন ভালোভাবে সাহ্রি এবং ইফতার করতে পারে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। সর্বপরি বেশী বেশী করে দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে এবং মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রকার কল্যাণ ও কামিয়াবির জন্য নিজের, নিজের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়াপড়শি সহ মুসলিম উম্মাহর সবার জন্য সুখ, শান্তি, খুশী, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির জন্য দু'আ করতে হবে! এসব বিষয়ে আমল করা এবং এসবের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা পবিত্র রজব এবং শা'বান মাসের অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ সব আমল! আর এর বাইরে সব ধরণের বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক সকল মু'মিন মুসলমানের জন্য!!
︎ইয়া আল্লাহ তা'আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন (আ-মীন)।।
إرسال تعليق