নামাজ ত্যাগকারীর উপর মহান আল্লাহ তা'আলা ১৫টি আযাব নির্দিষ্ট করে রেখেছেন

 

নামায ত্যাগ করলে বা রীতিমত আদায় না করলে তার উপর মহান আল্লাহ তা'আলা ১৫টি আযাব নির্দিষ্ট করে রেখেছেন! যা চার অবস্থায় তার উপর নাযিল বা পতিত হবে। যথাঃ 

● [ক] দুনিয়াতে ৬টি।

● [খ] মৃত্যুর সময় ৩টি।

● [গ] কবরের মধ্যে ৩টি এবং

● [ঘ] হাশরের মাঠে ৩টি।।


(ক) দুনিয়াতে ৬টি আযাব হলোঃ

▪ ০১। বেনামাযীর হায়াত কমে যাবে।।

▪ ০২। বেনামাযীর জীবনে বরকত হবে না বা থাকবে না।।

▪ ০৩। বেনামাযীর চেহারার সৌন্দর্য্য থাকবে না বা কমে যাবে।।

▪ ০৪। বেনামাযীর কোন দু'আ কবুল হবে না বা আল্লাহ তা‘আলা কবুল করবেন না। 

▪ ০৫। বেনামাযীর সব নেকী বরবাদ হবে বা কোন নেকী থাকবে না বা তাতে কোন উপকার হবে না এবং 

▪ ০৬। বেনামাযীর নিকট হতে সকল রহমতের ফিরেশতা ভেগে যাবে এবং এক সময় ইসলাম হতে খারিজ হয়ে যাবে।


(খ) মৃত্যুর সময় ৩টি আযাব হলোঃ

● ০১। বেনামাযীর মৃত্যুর সময় অপমানিত, লাঞ্চিত ও শিদ্দাত (অতিকষ্ট) দিয়ে জান বের করা হবে।।

● ০২। বেনামাযী ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যাবে এবং

● ৩। বেনামাযীর মৃত্যুর সময় এত পিপাসা হবে যে, মনে চাইবে ৭ দরিয়ার পানিও যদি মুখে ঢেলে দেওয়া তবুও বুঝি পিপাসা যাবে না বা কমবে না।।


(গ) কবরের মধ্যে ৩টি আযাব হলোঃ

০১। বেনামাযীর কবর চেপে এসে তাকে পিষতে থাকবে। এতে তার এক পাজরের হাড়েঁর সাথে অন্য পাশের হাঁড় মিশে যাবে।।

০২। বেনামাযীর কবরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে এবং 

০৩। বেনামাযীর কবরে বিরাট বিরাট সাপ এসে ভরে যাবে। যারা তাকে অনবরত দংশন করতে থাকবে এবং এক ফেরেশতা এসে জোরে জোরে আগুনের গুর্জ বা হাতুড়ি মারতে থাকবে।।

(ঘ) হাশরের মাঠে তিনটি আযাব হলোঃ

● বেনামাযীকে আল্লাহ পাক গযবের সাথে ডাকবেন এবং বিরাট এক সাপ এসঃ তার খোঁজ করতে থাকবে।

● ত্রিশ হাজার বৎসরের পুলছিরাতের রাস্তা তার জন্য হিরার চেয়ে ধারাল, চুলের চেয়ে চিকন এবং আমাবশ্যার রাত্রের চেয়েও অন্ধকার হবে এবং উক্ত বেনামাযী যখন সেই পুলের উপরে পা রাখবে, সংগে সংগে পা কেটে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে এবং জাহান্নামে পতিত হবে এবং 

● বেনামাযীর জন্য আল্লাহ তা'আলা “ওয়াইল” নামজ দোজখ ঠিক করে রেছেন। যেখানে ফিরেশতা কেয়ামতের দিন তাকে ঐ দোজখে ফেলে দেবেন ৭০ গজ জিঞ্জিরে বেঁধে এবং তাকে বহুত আযাব দেওয়া হবে।।

নামায না পড়ার জন্য বিভিন্ন মানুষের কিছু অজুহাত এবং তার জবাব এবং ফলাফল জাহান্নাম! যেমনঃ

■দুনিয়ার বেনামাযী বাদশাহকে বলা হবেঃ কেন নামায পড় নাই?"

●জবাবে সে বলবেঃ ব্যস্ততার জন্য সময় পাই নাই!

▪বলা হবেঃ 

সুলাইমান(আঃ) সারা বিশ্বের রাজত্ব পেয়েও কোন দিন নামায ত্যাগ করেননি! তুমি মিথ্যা ওজর করছ! হে ফেরেশতারা! ওকে জাহান্নামে নিয়া যাও!"

রোগী বলবেঃ

রোগের জ্বালায় নামায পড়তে পারি নাই!" 

▪বলা হবেঃ আইয়ুব(আঃ)কে ১৮ বৎসর পোকায় খেয়েছে! তবুও সে নামায ছাড়েনি! মিথ্যাবাদীকে জাহান্নামে ফেলে দাও!"

আর একজনে বলবেঃ সন্তান অনেক ছিল, তাদের সেবায় ব্যস্ত ছিলাম!

বলা হবেঃ ইয়াকুব(আঃ) এর ছেলে মেয়ে তোমার চেয়েও বেশি ছিল। ইউসুফে(আঃ)র জন্য কাঁদতে কাদঁতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা ইয়াকুব(আঃ)। তবুও তাঁরা কেউই নামায ছাড়েনি। মিথ্যাবাদীকে জাহান্নামে নাও!"

●▪বেনামাযী এক স্ত্রী লোককে হাজির করা হবে। সে বলবেঃ 

স্বামীর কাজের চাপে তার ভয়ে নামায পড়তে পারিনি!

বলা হবেঃ ফেরাউনের বিবি আছিয়া(আঃ)র স্বামী অনেক বড় জালিম না তোমার স্বামী বড় জালিম? জালিমের বিবি হয়েও আছিয়া(আঃ) নামায ছাড়েনি! তুমি মিথ্যা ওজর করছ! হে ফেরেশতারা! ওকে জাহান্নাম নিক্ষেপ কর!"

■ আমাদের নাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

বেনামাযীর দু'হাত জিঞ্জির দ্বারা বাঁধা হবে। অতঃপর ফেরেশতাগণ তার মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠে আঘাত মারতে থাকবে। তখন বেহেশত তাকে ডেকে বলবেঃ 'ওহে আল্লাহর শত্রু! আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নাই! আমিও তোমার নই এবং তুমি আমার নও!' তখন দোজখ তাকে ডেকে বলবেঃ 'আস! আস! আমার নিকটে আস! আমি তোমার এবং তুমি আমার।

🔰 হাদীসে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ 

-------"জাহান্নামে “লমলম” নামে একটি জায়গা আছে। দেখতে উটের গর্দ্দানের মত দেখায় এবং এক মাসের পথের ন্যায় দীর্ঘ্য, ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সাপ দ্বারা ঐ জায়গাটা পরিপূর্ণ। সেখানে বেনামাযীদেরকে ফেলে দেওয়া হবে। লক্ষ লক্ষ ভয়ঙ্কর সাপগুলো সেখানে বেনামাযীদেরকে পেঁচ দিয়া ধরে মনের আনন্দে দংশন করতে থাকবে!"

হে আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ পাকের কাছে পানাহ চান এবং পিছনের বাদ পরা নামায এর কাজা আদায় করুন।

■অন্য এক হাদীসে হুজুর সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ 

-------দোজখের মধ্যে “জুব্বুল হুযুন” নামে বিরাট আকারের একটি ময়দান আছে। উহা শুধু বিচ্ছু দ্বারা পরিপূর্ণ। এক একটি বিচ্ছু খচ্চরের মত উঁচু ও মোটা। বেনামাজীদেরকে দংশন করার জন্যই উহাদিগকে সৃষ্টি করা হয়েছে!"

বেনামাযীর হুকুমঃ

প্রশ্নঃ বেনামাযী স্বামীর সাথে মুসলিম নামাযী স্ত্রীর বসবাস করার বিধান কি? তাদের কয়েকজন সন্তানও আছে। বেনামাযীর সাথে মেয়ে বিবাহ দেয়ার বিধান কি?

উত্তরঃ কোন নারী যদি এমন লোককে বিবাহ করে, যে সালাত আদায় করে না, জামাআতের সাথেও না, কিংবা বাড়ীতে একাকিও না। তার বিবাহ বিশুদ্ধ নয়! কেননা সালাত পরিত্যাগকারী কাফের। যেমনটি আল্লাহর সম্মানিত কিতাব, পবিত্র সৌন্নাত ও সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ) গণের উক্তি সমূহ একথাটি প্রমাণ করে। আবদুল্লাহ্‌ বিন শাক্বীক্ব বলেনঃ

كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ

নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ সালাত ছালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না।” কাফেরের জন্য কোন মুসলিম নারী বৈধ নয়! 

আল্লাহ্‌ বলেনঃ

فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ

“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)

■ বিবাহের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর যদি স্বামী সালাত পরিত্যাগ করা শুরু করে, তবে তওবা করে ইসলামে ফিরে না আসলে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। 

■▪কতক বিদ্বান বলেছেনঃ বিবাহ ভঙ্গের বিষয়টি ঈদ্দতের সাথে সম্পৃক্ত। যদি ঈদ্দত পার হয়ে যায় তারপর সে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসে, তবে নতুন চুক্তি করে আবার উক্ত স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে।

উক্ত মহিলার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, বেনামাযী স্বামী থেকে আলাদা থাকবে। তাকে মেলামেশা করতে দিবে না- যতক্ষণ না সে তওবা করে সালাত আদায় করে। যদিও তাদের সন্তান থাকে। কেননা এ অবস্থায় পিতার কোন অধিকার নেই সন্তানদের প্রতিপালনের।

■এ উপলক্ষে আমি মুসলিম ভাইদেরকে সতর্ক করছি ও নসীহত করছিঃ 

তারা যেন কোন বেনামাযীর সাথে মেয়েদের বিবাহ সম্পন্ন না করেন। কেননা, বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক! এক্ষেত্রে তারা যেন নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর সাথে কোন আপোষ না করেন।" (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত আছেন)।

■▪সূত্রঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম

■▪অধ্যায়ঃ সালাত

▪শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল -উসাইমীন(রহঃ)।।

মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার এবং সালাত আদায় করার ও কায়েম করার তাওফীক দান করুন। 

এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল এবং হিফাযত করুন (আ-মীন)

লেখকঃ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান 

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন