মধ্য ফেব্রুয়ারীর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।
০১] ভালোবাসা দিবস কি?
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নির্দিষ্ট ধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস! যার সাথে মুসলিম সমাজের কোন সম্পর্ক নেই! আর মুসলিমদের যার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তা পালন করা, তাতে সহযোগিতা করা, তাতে সমর্থন জানানো ও তাতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, হারাম এবং কবিরা গুনাহ!
এই দিনটার সঠিক নাম হলো, যেটা সবাই আমরা জানি, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে! সাধু বা বাবা ভ্যালেন্টাইন দিবস।[১] স্বভাবতই এটা একটা নির্দিষ্ট ধর্মের ধমীর্য় দিবস। এটা কোনো সেকুলার আনন্দের দিবস নয়! পহেলা বৈশাখের মতো কোনো সেকুলার দিবসও নয় এটা! এটা দু র্গা পূজা, ল ক্ষ্মী পূজা, কা লি পূজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, এই ধরণেরই, হিন্দু—মুসলিমদের যেমন বিভিন্ন দিবস আছে, এটা ওই ধরণেরই একটি খ্রি স্ট ধ র্মে র ধমীর্য় দিবস
●▪রেফারেন্সঃ [১]. ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস প্রাচীন রোমানদের উৎসব ‘লুপারক্যালিয়া উৎসব’কে ‘সাধুভ্যালেন্টাইন দিবস’ ঘোষণা করেন। (ব্রিটানিকা) (...At the end of 5th century, Pope Gelasius 1 replaced Lupercalia with st. Valentine’s Day … ww.britannica.com/topic/Valentines-Day). প্রসঙ্গত, খ্রি স্টা ন জগতে সাধু—পাদরিদের স্মরণে এ ধরণের আরও দিবস প্রচলিত আছে। যেমনঃ ২৩ এপ্রিল—সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর—সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট—সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর—সেন্ট আল সেইন্টম ডে, ১৭ মার্চ—সেন্ট প্যাট্রিক ডে। আবার সাধু ভ্যালেন্টাইন দিবসটা যে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে, এটা ক্যাথলিক গির্জা কর্তৃক নিধার্রিত। অন্যদিকে অর্থোডক্স গির্জা কর্তৃক নির্দিষ্ট দিনটি হল ৭ জুলাই।
-----(উইকিপিডিয়া।)সলামের দৃষ্টিতে বা ইসলামী শরিয়াতে ১৪-ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনের ব্যপারে কোন বিধান নেই। যা আছে তা হচ্ছে, কুসংস্কার,মিথ্যা, বানোয়াট, মানব রচিত আইন। আর, ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট দিন নেই! প্রতিটা দিন, প্রতিটা সময় এবং প্রতিটা মূহুর্ত তথা বছরের ৩৬৫ দিনই সবার ভালোবাসা থাকতে হয়। ভালোবাসা না থাকলে সে কিসের মানব!
●● বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনের ব্যপারে উঠে পড়ে লেগে থাকে ই হু দি-খ্রি স্টা নে রা,অ-মুসলিমেরা। কোন মুসলমানের সন্তান বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করতে পারে না। যারা এসব মিথ্যা দিবস পালন করে বা সামনে পালন করবে, বুঝতে হবে তাদের মাঝে পবিত্র কুরআন- হাদীসের কোন জ্ঞান নেই। তারা কুরআন-হাদীস বুঝে না।
●● এসব দিবস পালন করতে গিয়ে বেহায়াপনা এবং নির্লজ্জতা ছাঁড়া আর কিছুই হয় না!,এর ফলে যুবক -যুবতীর চরিত্র ধ্বংস করে, সমাজে ফাসাদ সৃষ্টি হয় ও গজব বয়ে আনে এই ধরণের অপকর্মে।
●● ভালোবাসা নামের শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালোবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ ছরিয়ে গেছেন। তরুণ-তরুণীর সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা এবং ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ, মহান আল্লাহ তা'আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।
●● পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন বলেনঃ
আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায় আর আল্লাহ্ ফাসাদ সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না।
-----(সূরা আল-মায়িদাহঃ ৬৪).
●● নৈতিক অবক্ষায় দাবানলের মতো চড়িয়ে যাচ্ছে নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা। আজকের সমমাজে জাতীয় ভাবে তা স্বীকৃতি লাভ করছে। যাদের কারণে মুসলিম ও ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটছে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য মহান আল্লাহ তা'আলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
●● আল্লাহপাক রব্বুল আ'লামীন আরো বলেনঃ,
-------"যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া এবং আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।"
-----(সূরা আন-নূরঃ ১৯)
●● অ মু স লি ম দের অনুকরণে এসব দিবস পালিত হয়। যা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এগুলি স্রেফ জাহেলিয়াত এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি মাত্র।
●● রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
-------"যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।"
-----(আবূদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়)।
●● এসব দিবস পালনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং সময়েরও অপচয় হয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
-------"অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।"
-----(সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৭)।
●● এসব অনুষ্ঠান সমাজে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রসারের অন্যতম মাধ্যম। আর আল্লাহ পাক প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতার নিকটবর্তী হ’তে নিষেধ করেছেন।
-----(সূরা আন‘আমঃ ৬/১৫১)।
●● এর ফলে যেমন যিনা-ভ্যাবিচার বেড়ে যাচ্ছে, নারী নির্যাতন এবং হত্যাকান্ড পর্যন্ত সংঘটিত হচ্ছে। অতএব এসব থেকে প্রতিটি মুসলিমকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
●● মহান আল্লাহ আমাদেরকে নামধারী মুসলিম নয়, বরং প্রকৃত মুসলিম হয়ে চলার তাওফীক দান করুন (আ-মীন)।
এদিনে যা ঘটে/ঘটছেঃ
দেশের সর্বাঙ্গনে চলছে এই "ভ্যালেন্টাইন ডে অফার!" আসলে এটা কি তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটানোর জন্য করছেন! নাকি অন্য কোন চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে এমন করছেন?
●●▪এই প্রশ্ন থাকবে তাদের নিকট.. "যারা এই দিনে এধরণের অফার দিচ্ছেন!"
●● অফার আগে শুধু মার্কেটে দিত দেখতাম। এখন দেখতে পাচ্ছি এই দিবস উপলক্ষে ৭-১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বিভিন্ন মেডিসিন কোম্পানিগুলোও অফার চালু করেছে! তারা কোন মেডিসিনের উপর এই অফার দেন
আশা করি আমরা সবাই জানি এবং বুঝি!
●▪তারাই আবার আমাদের দেশের শীর্ষ স্থানীয় জ্ঞানী হিসেবে নিজেদের কে দাবী করেন এবং তারাই টকশোতে দাবী করেন, আমরা শান্তি ও সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র এবং সমাজ চাই!
●▪অথচঃ তারা এই স্লোগানের নিচে লালন করে
মনের কুবাসনা পূরণের নানা চিন্তাধারা! আর সেইসব চিন্তাধারার বহির্প্রকাশ ঘটে.. তাদের কাজের এধরণের মাধ্যমে...! তারা সমাজের যুবকদেরকে অশৃঙ্খল এবং অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য সকল অফার চালু করে দেয়!
অবৈধ কাজ করার জন্য সকল পণ্য সূলভ করে দেয়... যেন সবাই এমন অশৃঙ্খল/অশান্তি সৃষ্টির কাজে সহজে শরীক হতে পারে!
●● এদিনটিকে ঘিরে আরও জঘন্য একটি প্রথা চালু হয়েছে! এই দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসাবে "কাপোল দের" জন্য বিশেষ অফার দেওয়া হয়! যেখানে তাদের জন্য সকল খারাপ কাজ করার সুব্যবস্হা হিসাবে দেওয়া হয় এমন রুম, যেখানে তারা অবাধ মেলামেশায় জড়িত হতে পারে!
অথচ যারা হরাম কাজ করে, আর যারা তাতে সাহায্য সহযোগিতা করে.. তারা সবাই সমান গুনাহের ভাগিদার হয়!
●● অশ্লীলতার এমন অবাধ প্রচারণায় আপনি কিভাবে সমাজকে নিরাপদ রাখবেন? যারা এমন প্রচারণায় লিপ্ত, তাদেরকেই আপনি সমাজ এবং সংস্কৃতির রক্ষক ভেবে বসে আছেন! তাদেরকেই আপনি কালচারাল মডেল হিসেবে বিশ্বাস করছেন! অথচ আমাদের রব তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
-------"যারা চায় যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লিলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।"
-----(সূরা নুরঃ ১৯)
●▪এই দিন উপলক্ষে হাজারো ফুলের দোকানের নবসৃষ্ট হয়! যেই দোকানগুলো বছরের অন্য কোনদিন খুঁজেও পাওয়া যায় না! ফুল পবিত্র একটা জিনিস! কিন্তু এইদিন তা অপবিত্র কাজে ব্যবহার করা হয়!!!
●● একটা কথা মনে রাখবেনঃ
-------"যে কাজ হারাম.. সেই কাজ করার যেই উপকরণ আছে, সেই কাজের কারণে ভাল উপকরণগুলোও সেই হারাম হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়!"
●● "ভ্যালেন্টাইন ডে" বা "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" এটি একটি ই হু দি এবং খ্রি স্টা ন দের তৈরী প্রথা মাত্র! আর কোন মুসলমান বি ধ র্মী দের তৈরি কিংবা বি ধ র্মী দের পালনীয় কোন অনুষ্ঠান করা বা তাতে অংশগ্রহণ করা বা তাতে সম্মতি জানানো বা তাতে সাহায্য-সহযোগীতা করতে বা তার অনুকরণ ও অনুসরণ করতে পারেন না! কেননা, আল্লাহর হাবীব সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে বলেছেনঃ
-------"যে যেই জাতীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে সেই জাতীর অন্তর্ভুক্ত!"
●●▪অতএব সাবধান!!! 🔴
আমরা মুসলমান! আমাদের সবার জন্য অনুকরণ এবং অনুস্মরণ যোগ্য বিষয় হলো; প্রিয় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আদর্শ বা সূন্নাত!
🔴 বিবাহের পূর্বে বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম করা ইসলামে সম্পূর্ণ রূপে হারাম! 🔴
●▪তাহলে বিবাহিত যারা আছেন তারা হয়তো বলতে পারেন, "আমাদের জন্য তো প্রেমকরা বৈধ! আমরা কি এই দিবস পালন করতে পারব?"
■■ তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হলোঃ
■▪প্রেম কি একদিনের জন্য নির্দিষ্ট?
■▪তা এই দিন কেন নির্দিষ্ট করলেন?
●▪এটাতো আমার-আপনার মত একজন মানুষ এই তারিখটিকে নির্দিষ্ট করেছে!
●▪আপনি কেন অন্যের নির্দিষ্ট করা দিনে নিজের স্ত্রীর সাথে প্রেম বিনিময় করবেন!
●▪স্ত্রীতো প্রতিটি দিন আপনার প্রেম-ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য এবং আপনার ভালোবাসাটাও তাঁর জন্য প্রতিটি মুহূর্তে পাওয়া একান্ত কাম্য!!!
🔴🔴 ভ্যালেন্টাই ডে পালন করা সম্পূর্ণ হারাম! 🔴🔴
●▪অতএব, হে যুবক-যুবতী ভাই ও বোনেরা! সাবধান! সাবধান! সাবধান!! 🔴
●● আমরা যারা এতোদিন না জেনে এই দিবস পালন করেছি, আল্লাহ তা'আলার নিকট তওবা করি আজ ও এক্ষুণি এবং আল্লাহর নিকট দৃঢ় অঙ্গিকারবদ্ধ হই যে, আমরা আর কখনো এমন কোন কাজ করবো না ইন শা আল্লাহ!!!
ভালব কোনো দিবসকে আমরা গ্রহণ করব না বর্জন করব, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রধানত দুটো বিষয় বিবেচনা করা উচিৎ। যথাঃ
●● এক] দিবসটার সাথে ধর্মীয় কোনো চেতনা জড়িত আছে কিনা। জড়িত থাকলে তা ইসলামের বিরুদ্ধে নাকি পক্ষে। পক্ষে হলে তার প্রমাণ স্বয়ং রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর সাহাবী(রাঃ) গণের থেকে আছে কিনা।
●● দুই] দিবসটি পালনে ইসলাম বিরোধী কিছু হচ্ছে কিনা। হলে সেটা কোন পর্যায়ের।
●●▪তেমনি ভালবাসা দিবস গ্রহণ-বর্জন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দু'টি বিষয় বিবেচনায় আনা যেতে পারে। যথাঃ
●● প্রথম বিষয়ঃ
দিবসটির সাথে ধর্মীয় কোন চেতনা জড়িত কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখি, দিবসটি জনৈক খ্রি স্টা ন সাধুর স্মরণে পালন করা হয়ে থাকে! যার ব্যাপারে কথিত আছে যে, তিনি কারাবন্দী থাকা অবস্থায় একটি মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করায় তার বিপুল পরিমাণ জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তৎকালীন খৃ স্টা ন রাজা তাকে হত্যা করেন। সেই থেকে তাকে স্মরণ করে এই ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করা হয়!
●▪যদিও পরবর্তীতে এতে বিভিন্ন ধরণের নষ্টামি যোগ হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার এই দিনটি পালন নিষিদ্ধ করে। পরে আবার অনেকটা করপোরেট জায়গা থেকেই বলা যায়, দিনটি পুনরায় জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। বর্তমানে দিনটিকে কেন্দ্র করে চলে বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য!
●● দ্বিতীয় বিষয়ঃ
দিবসটি পালনে ইসলাম বিরোধী কিছু হয় কিনা?
●▪আমরা জানি বর্তমানে এ দিবসটিকে কেন্দ্র করে যেসব বিষয় চলে, তার কোনোটিই ইসলাম সমর্থন করে না!
●▪ভালবাসা আদান-প্রদানের নামে তরুণ-তরুণীর সাক্ষাত, সম্মিলন, কথোপকথন, কনসার্ট, মদ্যপান ও এমনকি অবৈধ সংস্পর্শ – কী হয় না দিনটিকে কেন্দ্র করে! এ দিনটিতে অনেকে তাদের অবৈধ প্রেম নিবেদন করে! অনেকে অবৈধ উপায়ে নিজের সতীত্ব নষ্ট করার জন্য দিনটি নির্ধারণ করে! এছাড়া উন্নত ক্লাবগুলোতে আরো কী চলে, তা না-ইবা বলা হলো!
■■ আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
-------“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।”
-----(সূরা আল-ইসরাঃ ৩২)
●● ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার অর্থ হলো, কাজটির ভূমিকায় যা কিছু হয় সবকিছু। কথা বলা, সাক্ষাৎ করা, সম্মিলন, কনসার্ট, নাচানাচি, গান সবই এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, সবই যিনায় প্রলুব্ধকারী। তাই মহান আল্লাহ এই সবগুলো থেকেই আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। আর আল্লাহর নিষেধ মানেই হারাম। কবীরা গুনাহ।
●▪কাজেই হারাম ও কবিরা গুনাহকে অবহেলা করে এগুলোতে অর্থাৎ ব্যভিচারে প্রলুব্ধকারী বিষয়গুলিতে অংশগ্রহণ করা পবিত্র ঈমান নষ্টের কারণ হতে পারে! যা সম্পূর্ণ তাওহীদের পরিপন্থী তো বটেই। আল্লাহকে এক ইলাহ হিসেবে স্বীকার করে নেয়ার অর্থ তাঁকেই একমাত্র বিধানদাতা হিসেবে স্বীকার করে নেয়া এবং তাঁর যে কোনো বিধান বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়া।
●▪কেউ যদি বিষয়টিকে অবহেলা করে, তাহলে তা কু ফ রী হিসেবে গণ্য হবে। তেমনি কেউ এতে অংশ না নিলে বা অপছন্দ করার কারণে যদি তাকে ঠাট্টার কেন্দ্রবিন্দু বানানো হয়, তাহলেও তা কু ফ রী হবে। কেউ এসবে অংশ নিলে, তাকে সমর্থন করাটাও কু ফ রী হবে। একজন মুসলিম নিশ্চয়ই কু ফ রী কাজ পছন্দ করতে পারেন না!
●▪অবশ্য দিবসটির পেছনে যে ভালবাসার বাণী রয়েছে, তা বৈধ উপায়ে হলে তাতে ইসলামের কোনো আপত্তি নেই! বরং ইসলামের পুরো সিস্টেমটাই হচ্ছে ভালবাসা ও দয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সে ভালবাসা এক দিনের নয়, নয় এক বছরের! সে ভালবাসা হলো সারা জীবনের জন্য! সে ভালবাসা পবিত্রতম ভালোবাসা! যার স্থায়িত্ব কেয়ামত অবধি বরং তার চেয়েও বেশি!!
■■ এ দিবস পালন সম্পর্কে ফতোয়াঃ
●● ০১] ইমাম আয-যাহাবী রহি’মাহুল্লাহ বলেছেনঃ -------"যদি খ্রি স্টা ন দের অথবা ই হু দী রা কোন উৎসব উদযাপন করে, তাহলে সেটা শুধুমাত্র তাদের উৎসব। যেমনিভাবে কোন মুসলমানের জন্য উচিত নয় যে, সে ই হু দী বা খ্রি স্টা ন দের ধর্ম বা তাদের কোন উপাসনায় যোগ দিবে। একইভাবে কোন মুসলমানের উচিত নয় তাদের কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করা।”
-----(তাশাব্বুহ আল-খাসীস বি আহলে আল-খামীস, মাজাল্লাত আল-হিকমাহঃ ৪/১৯৩।)
■■▪একথা সকলেরই জানা যে, "ভ্যালেন্টাই ডে" বা বাংলায় "ভালোবাসা দিবস" নামক এই অসভ্যতা এবং নোংরামী সর্বপ্রথম খ্রি স্টা ন রা চালু করেছিলো। আর বর্তমানে তা চরিত্রহীন নারী এবং পুরুষদের মাঝে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে!
■■ ০২] সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির আলেমদের কাছে ভ্যালেন্টাইন দিবস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তাঁরা বলেনঃ
-------"ভ্যালেন্টাইন ডে হচ্ছে মু শ রি ক এবং খ্রি স্টা ন দের হলিডে সমূহের অন্যতম। কোন মুসলিম ব্যক্তি যে, আল্লাহ এবং ক্বিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা করা, এই দিনকে সমর্থন করা বা কোনভাবে স্বীকৃতি দেওয়া বা তাতে সাহায্য ও সহযোগিতা করা এবং এই দিন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করা জায়েজ নয়।”
-----(স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়াঃ ২/২৬৩)।
■■ ০৩] শায়খ মুহাম্মদ ইবনে সালিহ আল-উসায়মিন রহি’মাহুল্লাহ বলেছেনঃ
-------“ভালোবাসা দিবস পালন করা বেশ কয়েকটি কারণে নাজায়েজ। যথাঃ
■▪০১) এটা একটা নব-আবিষ্কৃত উৎসব, ইসলামে যার কোন ভিত্তি নেই।
■▪০২) এটা পুরুষ কিংবা নারীদেরকে অন্যের প্রতি ইশক এবং আসক্তিকে উস্কানি দেয়।
■▪০৩) এটা অন্তরকে বোকা লোকদের কার্যকলাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে উৎসাহিত করে, যা সকল সালফে সালেহীনদের মানহাজ (জীবন ও কর্মনীতির) বিপরীত।
■■ শেষ কথাঃ
কথিত ভ্যালেন্টাইন দিবস উদযাপনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এমন কোন কাজ করা কোন মুসলমানের জন্য জায়েজ নয়। যা সম্পূর্ণ হারাম এবং স্পষ্ট কু ফ রী হিসেবে গণ্য এবং কবিরা গুনাহ! সেটা খাবার, পানীয়, পোশাক বা গিফট আদান-প্রদান এমন কোন কিছুই জায়েজ নয়। মুসলমানদের উচিৎ তাদের দ্বীনকে নিয়ে গর্বিত হওয়া এবং এমন দুর্বল চরিত্রের কোন ব্যক্তি না হওয়া, যে কিনা যদু মধুর মতো যেকোন ব্যক্তিকেই অন্ধভাবে অনুকরণ অনুসরণ করে! মুসলমানদের জন্য একমাত্র অনুকরণ এবং অনুসরণ হচ্ছে বিশ্ব নাবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সকল সাহাবা(রাঃ) গণ এবং সালফে সালেহীন(রহঃ) গণ!
■▪আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন প্রত্যেক মুসলমানকে প্রকাশ্য এবং গোপন এমন সমস্ত লোভ-লালসা থেকে হেফাযত করেন এবং আমাদেরকে সঠিক পথ দেখান(আ-মীন)।
-----(মাজমু ফাতাওয়া আল-শায়খ ইবনে উসায়মিনঃ ১৬/১৯৯)।।
■▪মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল এবং হিফাযত করুন(আ-মীন)।।
_______________________________
إرسال تعليق