পবিত্র কুরআন-হাদীস এবং ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর কতিপয় মূল্যবান বাণী!

 

০১) আল-কুরআনের বাণী!

মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ ফরমানঃ

"তাওবাহ করে ফিরে আসলে মহান আল্লাহ তা'আলা পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে তা পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।" (সূরা ফুরকানঃ আয়াত-৭০)।

"আমি কেন আল্লাহর ইবাদত করবো না, তিনিই তো আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর নিকটেই আমাকে ফিরে যেতে হবে।" (সূরা ইয়াসিনঃ আঘাত নম্বর-২২)। 

"তুমি কোন কাজ সম্পর্কে একথা বলো না যে, অবশ্যই আমি একাজ আগামীকাল করবো। বরং বলো, ইন শা আল্লাহ(আল্লাহ চাহেন তো) করবো।"(সূরা কাহাফঃ -২৩ ও ২৪)।

০২) আল-হাদীসের বাণী!

প্রিয় নাবী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমানঃ

"ইবলিশ তার রব'কে বলেছেঃ 'আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের শপথ! আমি বনি আদমের পথভ্রষ্ট করতেই থাকবো, যতক্ষণ তাদের মধ্যে রূহ/প্রাণ থাকবে!' 

(জবাবে) আল্লাহ বলেনঃ 'আমার বড়ত্বের ও ইজ্জতের শপথ! আমি তাদেকরকে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করতে থাকবো, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাওবাহ(ইস্তিগফার) করবে।'" (সহীহ হাদীসে কুদসী। হাদীস নং-৩২)।

"সূরা ফাতিহা পাঠ করে যে বান্দা আল্লাহর কাছে রোগের শেফা বা রোগ থেকে আরোগ্য/মুক্তি চাইবে, আল্লাহ তার(ঐ) বান্দাকে ওই রোগ থেকে শেফা বা আরোগ্য দান করবেন।" (নাসায়ীঃ হাদীস নং-৩১৯)।

শরীরে কোথাও ব্যথা অনুভব করলে ব্যথার স্থানে হাত রেখে তিনবার বলুনঃ بسم الله (বিসমিল্লাহ), 

এরপর সাতবার বলুনঃ

 اعوذ بالله وقدرته من شر ما أجد واحاذر (আ'উযুবিল্লাহি ওয়া ক্বুদর-তিহী মা- আজিদু ওয়া উ- হাজি

অর্থাৎঃ আমি যে ব্যথা অনুভব করছি এবং এর ফলে যে আশংকা করছি তা থেকে আল্লাহ্‌র এবং তাঁর কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

▪আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "এই আমলের বরকতে আল্লাহ আপনাকে ব্যথামুক্ত করে দেবেন।" (মুসলিমঃ ৪/১৭২৮, ২২০২)।

"তোমরা সালামের প্রশার বাড়াও, আত্মীয়তার বন্ধনকে দৃঢ় করে, খাদ্য দান করে, লোকের প্রগাঢ় ঘুমের সময় রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় কর। ফলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"

-----(বুলুগুল মারামঃ ১৫৩১)।

"আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 'আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখো না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। আর যদি সে কোন নেকি করার ইচ্ছা করে, কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে, তাহলে তার জন্য তা দশ গুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত (বৃদ্ধি করে) লিখ।'"

(বুখারী ও মুসলিমঃ হাদীসে কুদসী নং-১)।

"একজন মা তার সন্তানের উপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তার চেয়ে বেশি দয়ালু।"

-----(বুখারীঃ ৫৯৯৯)।

"আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 

'হে আদম সন্তান! যখন তুমি আমাকে ডাকবে ও আমার ক্ষমার আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করবো, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন; আমি কোন পরোয়া করি না।

হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো; আমি কোন পরোয়া করি না।

হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ পাপ নিয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো, কিন্তু আমার সঙ্গে কাউকে শরীক না করে থাকো, তাহলে পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে আমি তোমার নিকট উপস্থিত হবো।'" (তিরমিজীঃ ৩৫৪০, হাসান সূত্রে)।

"যখন দুনিয়ার কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেই, তখন জান্নাতে ঐ স্বামীর জন্য নির্ধারিত হুর বলতে থাকেনঃ 'হে নারী! তুমি তোমার স্বামীকে কষ্ট দিও না, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন, তোমার স্বামী তো তোমার কাছে কয়েকদিনের জন্য মেহমান মাত্র, অচিরেই তোমার স্বামী তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন।"

(তিরমিজীঃ ১১৭৪)।

গুনাহ মাফের দু'আঃ

 لا إله الا الله والله اكبر ولا حول ولا قوة الا بالله 

(লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা-হাওলা ওয়া-লা ক্বুওওতা ইল্লা বিল্লাহ)।▪রাসূল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি উপরোক্ত দু'আ বলবে(পাঠ করবে) তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়; যদিও তা সাগরের ফেনারাশির ন্যায় বেশি হয়।"

-----(আবু দাউদঃ ৩৪৪০, হাসান)।।

০৩ ) হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) বাণী! তিনি বলেছেনঃ 

"যার মধ্যে ছয়টি গুণ থাকবে, সে এমন কোন রাস্তায় পা রাখবে না বা যাবে না, যা তাকে জান্নাত থেকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। সেই ছয়টি গুণ হলোঃ

●▪০১৷ আল্লাহ্কে চেনা এবং তার আদেশ মেনে চলা।

●▪০২৷ শয়তান সম্পর্কে জানা এবং তাঁকে অমান্য করা।

●▪০৩৷ সত্য জানা এবং তার অনুসরণ করা।

●▪০৪৷ মিথ্যা সম্পর্কে জানা এবং তা থেকে দুরে থাকা।

●▪০৫৷ দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে জানা এবং তা এড়িয়ে চলা এবং

●▪০৬৷ আখিরাত সম্পর্কে জানা এবং তা অনুসন্ধান করা।

-----(ইহইয়াউ উলূমিদ্দিন, খন্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২২১)


●● এর প্রেক্ষিতে ফুজাইল ইবনু ইয়াজ(রহঃ)-এর এই  

জ্ঞানগর্ভ উক্তিটি অনুধাবন করা সম্ভব! তিনি বলেছেনঃ

-------"দুনিয়ার জীবনে প্রবেশ করা সহজ; কিন্তু এর থেকে বের হওয়া খুব কঠিন।"

-----(ইহইয়াউ উলূমিদ্দিন, খন্ড:৩ ; পৃষ্ঠা:২২৪)

সত্য-ই! দুনিয়া থেকে আখিরাত, এই যাত্রায় শরীর থেকে রূহ বের হয়ে আসা ও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার মতো ভীষণ কঠিন দুটি মূহুর্তও এর অন্তর্ভূক্ত।

যদিও মৃত্যুকালিন অব্স্থা অনেকের সহজ হয়ে থাকে; তবুও বাস্তবতা হলো, 

"মৃত্যুর ক্ষণ আদৌ সহজ কোন ব্যাপার নয়। সুতরাং আমাদেরকে আখিরাতমুখি লোকদের একজন হওয়ায় চেষ্টা করতে হবে ও দুনিয়ালোভীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আর স্মরণ রাখতে হবে, দুনিয়ার মরীচিকার পেছনে ছোটা এবং ধন-সম্পদ আহরণের এই প্রতিযোগিতা মানুষকে শুধু বিষন্ন এবং দিশেহারাই করে থাকে।"

০৪) ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর অমূল্য বাণী! তিনি বলেনঃ

চার বস্তু শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে!! যথাঃ

১. গোশত খাওয়া।

২.সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়া।

৩. অধিক গোসল।

৪. সুতার কাপড় পরিধান করা।

চার বস্তু দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে!! যথাঃ

১. খানায়ে কা'বার সামনে বসা।

২. ঘুমানোর পূর্বে সুরমা ব্যবহার করা।

৩. সবুজ প্রকৃতি দেখা।

৪. পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় বসা।

চার বস্তু বিবেক বৃদ্ধি করে!! যথাঃ

১. অনর্থক কথা-বার্তা ত্যাগ করা।

২. দাত পরিস্কার রাখা।

৩. নেককারদের মজলিশে বসা।

৪. উলামাদের শংস্পর্শ অবলম্ভন করা।

চার বস্তু রিযিক বৃদ্ধি করে!! যথাঃ

১.  তাহাজ্জুদ।

২. অধিক পরিমাণ এস্তেগফার।

৩. অধিক পরিমাণ সদকা।

৪. অধিক পরিমাণ যিকির!!


ইয়া আল্লাহ তা'আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন(আ-মীন)।।

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন