আর তা হলো, আগামী ০৮ যিলহাজ্জ্ব-১৪৪৪ হিজরী, মোতাবেক ২৭ জুন-২০২৩ খৃস্টাব্দ, ১৩ আষাঢ়-১৪৩০ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার দিবাগত রাত পবিত্র ইয়াওমুল আরাফার রাত এবং তার পরের দিনটি তথা ০৯ যিলহাজ্জ্ব-১৪৪৪ হিজরী, মোতাবেক ২৮ জুন-২০২৩ খৃস্টাব্দ, ১৪ আষাঢ়- ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, বুধবার দিনটাই হলো বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন, তথা ইয়াওমুল আরাফাহ বা আরাফার দিন।
তাই আমাদের দেশে পবিত্র ঈদ-উল আযহার আগের দিন বা ইয়াওমুল আরাফাহর দিন হলো-২৮ জুন! আর সৌদি আরবে পবিত্র হাজ্জ্বের দিন বা যিলহাজ্জ মাসের নয় তারিখ বা আরাফার দিন পালিত হবে ২৭ জুন-২০২৩ খৃস্টাব্দ, মঙ্গলবার এবং পরেরদিন বুধবার সেখানে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা ও কুরবানীর দিন পালিত হবে।
আর আমাদের দেশে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা ও পবিত্র কুরবানীর পবিত্র দিনটি হলো, ১০ যিলহাজ্জ্ব-১৪৪৪ হিজরী, মোতাবেক ২৯ জুন-২০২৩ খৃস্টাব্দ এবং ৲৫ আষাঢ়-১৪৩০ বঙ্গাব্দ, রোজ-বৃহস্পতিবার!
🔷 পবিত্র আরাফা তথা ০৯ যিলহাজ্জ্ব দিবসের গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং করণীয়ঃ
●︎ আরাফার দিন বছরের শ্রেষ্ঠতম দিন!
● এদিনেই বিশ্বনাবী (ﷺ) আরাফার ময়দানে ঐতিহাসিক বি'দায় হাজ্জ্বের ভাষণ দিয়েছিলেন!
● আরাফার দিনই হচ্ছে মূলতঃ হাজ্জ্বের দিন!
●︎ এ মহিমান্বিত দিনেই, ইসলামকে পরিপূর্ণ এবং পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে!
●︎ আরাফার দিনের রোযা পূর্বাপর দুই বছরের পা'প মোচনকারী! যারা হাজ্জ্ব করবে না, এই রোযাটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য!
● আরাফার দিবসের দু’আ হল শ্রেষ্ঠ দু’আ। রসূল (ﷺ) আরাফার দিন আকাশের দিকে দু হাত উঁচু করে দীর্ঘসময় ধরে দু’আ করেছেন!
● এ দিনে এততবেশী সংখ্যক বান্দা-বা'ন্দীকে মহান আল্লাহ তা’আলা জা'হা'ন্না'মের আ'গু'ন থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন, যা বছরের অন্য কোনদিন দেন না!
● এ দিনে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দা বা'ন্দীদের প্রতি রহমত ও ক্ষমার এ দৃশ্য দেখে, ই'ব'লি'স শ'য়'তা'ন এতোটাই ক্রোধান্বিত, লা'ঞ্ছি'ত ও অপমানিত বোধ করতে থাকে, যা আর অন্য কখনো হয় না!
●● এদিন যা করণীয়ঃ
নফল রোযা রাখা, বেশী বেশী তাকবির পাঠ করা এবং আন্তরিকভাবে দু’আ করা!
●● আরাফার দিনের বিশেষ দু’আঃ
দু'আটি বিশ্বনাবী (ﷺ) সহ সকল নবীরা পড়তেনঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
-আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক এবং অদ্বিতীয়! তাঁর কোনো শরীক নেই! রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর! আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান!
● ইয়ামুল আরাফার(০৯ যিলহাজ্জ্ব) রোযাঃ 🔰
২৭ জুন দিবাগত রাতে সাহরী খেয়ে রোযা রাখতে হবে। যা ইয়াওমুল আরাফার রোযা হিসেবে গণ্য হবে! যার ফযীলত সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
"এই রোযা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী একবছরের
গুনাহের কাফফারাহ হয়ে যাবে!"
●● তাকবীরে তাশরীকঃ
০৯ যিলহাজ্জ্ব, ২৮ জুন, বুধবার ফজর নামাযের পরে থেকে "তাকবীরে তাশরীক" শুরু হবে এবং আগামী ১৩ যিলহাজ্ব, মোতাবেক ০২ জুলাই রবিবার আসর পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে!
অর্থাৎঃ ০৯ যিলহাজ্জ্ব সকাল থেকে শুরু করে বিরতিহীন ১৩ যিলহাজ্জ্ব আসর পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার করে তাকবীর বলা সকল নারী-পুরুষের জন্য ওয়াযিব! পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজ করে এবং নারীগণ নিম্ন আওয়াজে এই তাকবীর পাঠ করবেন!
তাকবীর হলোঃ
● الله أكبر الله أكبر لاإله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد-
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ!
দ্রঃ আরাফার দিবস বলতে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ০৯ যিলহাজ্বকে বোঝানো হয়েছে। যে এলাকায় যখন চাঁদ দেখা যাবে সে অনুযায়ী হিসেব করতে হবে এবং আমল করতে হবে এবং অনুরূপ ভাবে পবিত্র কুরবানীর দিনও সেভাবেই গণ্য হবে! সৌদি আরবের চাঁদ দেখার উপর আমাদের আমল করা যাবে না!!
● পবিত্র ঈদ-উল আযহা ও পবিত্র কুরবানীর দিনঃ
১০ জিলহাজ্জ্ব, ২৯ জুন ২০২৩ খৃস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার হলো পবিত্র ঈদ-উল-আযহা ও পবিত্র কুরবানীর দিন!!
সবাইকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন ও মুবারকবাদ জানাচ্ছি! শুভ কামনা সবার জন্য!
▪تقبل الله منا ومنكم صالح الأعمال!
🌿 পবিত্র ঈদ-উল আজহারকরণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো এবং ঈদে যে ভুলগুলো সম্পর্কে অন্য পোস্টে আলোচনা করবো।
🔷 কোরবানি যাঁর জন্য ওয়াজিব, যেভাবে করতে হবে ;
ইসলামে যত বিধান আছে, তার অন্যতম হলো কোরবানি। কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এতে আছে আত্মত্যাগের মহিমা ও আর্তের সেবার গৌরব। আদি পিতা হজরত আদম (আ.)–এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল থেকে শুরু হওয়া এই কোরবানির ইতিহাস মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)–এর মহান আত্মবিসর্জনে উজ্জ্বল, যা কিয়ামত পর্যন্ত অম্লান থাকবে।
কুরবানী কার উপরওয়াজিব?
স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাঁদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদ।
কোরবানি কতদিন করা যাবে?
কোরবানি অর্থ হলো কাছে যাওয়া বা নৈকট্য অর্জন করা, ত্যাগ স্বীকার করা বা বিসর্জন দেওয়া। পরিভাষায় কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা। একটি কোরবানি হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা এবং গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাত শরিকে বা সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে।
কোরবানির পশু কে জবাই করবে?
কোরবানির পশু যেকোনো মুসলমান নারী ও পুরুষ জবাই করতে পারেন। যাঁর কোরবানি তাঁর নিজে জবাই করা উত্তম। দোয়া জানা জরুরি নয়। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করলেই হবে। এ ছাড়া অন্য দোয়া জানা থাকলে পড়া ভালো। জবাইয়ের জন্য কোনো নিয়ত নেই এবং কোরবানিদাতার নাম বলাও জরুরি নয়। যিনি কোরবানি দিচ্ছেন, তাঁর মনের ইচ্ছাই নিয়ত হিসেবে কবুল হবে। নিজে জবাই করতে না পারলে যেকোনো কাউকে দিয়ে জবাই করাতে পারেন। জবাইয়ের সময় নিজে উপস্থিত থাকতে পারলে ভালো।
কুরবানির গোশত কারা খেতে পারবে?
কোরবানির গোশত ধনী–গরিব সবাই খেতে পারেন। সুন্নাত হলো কিছু অংশ আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া, কিছু অংশ গরিব পাড়া–প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং কিছু অংশ নিজের পরিবারের জন্য রাখা। যত বেশি দেবে, তত ভালো। প্রয়োজনে সম্পূর্ণটাও রাখা যাবে। অনেকে সাত ভাগের এক ভাগ দিয়ে থাকেন, অনেকে সামান্য রেখে পুরোটাই দিয়ে দেন। ত্যাগের কোরবানির গোশত ভোগের জন্য পুঞ্জীভূত করে রাখা অনৈতিক ও অমানবিক। তবে বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য বা শখের বশে অল্প পরিমাণে রাখলে কোনো দোষ নেই।
ওয়াজিব কোরবানি ছাড়াও ছোট–বড় জীবিত–মৃত যেকোনো কারও পক্ষ থেকে যেকোনো কেউ নফল কোরবানি আদায় করতে পারেন। এতে উভয়েই সওয়াবের অধিকারী হবেন। নারী যদি সামর্থ্যবান বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তাঁর পক্ষেও কোরবানি ওয়াজিব। শিশুদের ওপর কোরবানিসহ কোনো ফরজ ওয়াজিব প্রযোজ্য নয়। হিজড়ারা মূলত নারী বা পুরুষ। তাই তঁারাও প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান হলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো কোরবানিও ওয়াজিব হবে। গরু, মহিষ বা উট অংশ হিসেবে যেভাবে ভাগে একাধিকজনের পক্ষে কোরবানি দেওয়া যায়, সেভাবে একটিকে সাতটি ধরে অংশ হারে আকিকাও দেওয়া যায়। কোরবানি ও আকিকা একসঙ্গে করতে কোনো বাধা নেই।
কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। কোরবানির কোনো বিকল্প নেই। টাকাপয়সা প্রদান, অর্থসম্পদ দান ও সদকা খয়রাতের মাধ্যমে কোরবানি আদায় হবে না। সামর্থ্যবান কোনো ব্যক্তি বিশেষ ওজরের কারণে নিজে কোরবানি সম্পাদনে সক্ষম না হলে অন্য কাউকে দিয়ে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে তা সম্পাদন করাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে পশুর মূল্য ও ব্যবস্থাপনার যাবতীয় ব্যয়ও তাঁকে বহন করতে হবে। কেউ যদি বিনা পারিশ্রমিকে করে দেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই।
যদি কেউ কোরবানির পশু কেনা, জবাই করা ও গোশত বিতরণ করা ইত্যাদি ঝামেলা এড়াতে চান, তবে বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তি-আত্মীয়স্বজন বা গ্রামের লোকজন অথবা নির্ভরযোগ্য কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা সেবা সংস্থাকে তাঁর কোরবানি সম্পাদনের দায়িত্ব দিতে পারেন।
কোরবানির পাশাপাশি অভাবী গরিব, দুঃখী, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে ঈদ আনন্দে শামিল করার জন্য বেশি বেশি আর্থিক দান–অনুদান, জামাকাপড় প্রদান এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ঈদসামগ্রী কিনে দেওয়ার মাধ্যমে আরও বেশি পুণ্য অর্জন করা যায়।
ইয়া আল্লাহ তা'আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার এবং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিপূর্ণ অনূসরণ এবং অনুকরণ করার তাওফীক দান করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবী ও কল্যাণ এবং নেক ও বরকতপূর্ণ দীর্ঘ হায়াত এবং ঝামেলা ও পেরেশানি মুক্ত সহজ, সরল, সুন্দর, সুখ, সমৃদ্ধ দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন দান করুন এব আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল এবং হিফাযত করুন(আ-মীন)।
প্রয়োজন ছিলো, জাজাকাল্লাহ
ReplyDeletePost a Comment