হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (রহঃ) এর মূল্যবান দশটি উপদেশ বাণীঃ
একদিন ইবরাহীম ইবনে আদহাম(রহঃ) বসরা শহরের একটি বাজারের পাশ দিয়ে অন্য কোথাও যাচ্ছিলেন! লোকজন তাঁর পাশে সমবেত হয়ে জিজ্ঞাসা করলঃ
"হে আবু ইসহাক! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কুরআনে বলেনঃ 'আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো' কিন্তু আমরা অনেক প্রার্থনা করার পরেও আমাদের দু'আ কবুল হচ্ছে না!"
তখন তিনি বললেনঃ "ওহে বসরার অধিবাসীগণ! দশটি ব্যাপারে তোমাদের অন্তর মরে গেছে! যার কারণে তোমাদের কোন দু'আ কবুল হচ্ছে না! সেগুলো হলোঃ
০১) তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তাঁর প্রদত্ত কর্তব্যসমূহ পালন কর না!!
০২) তোমরা কুরআন পড়। কিন্তু সে অনুযায়ী আমল কর না!!
০৩) তোমরা দাবী কর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসো। কিন্তু তাঁর সুন্নাহকে পরিত্যাগ কর!!
০৪) তোমরা সবাই নিজেদেরকে শয়তানের শত্রু হিসেবে দাবী কর। কিন্তু তোমরা তার পদাংক অনুসরণ কর!!
০৫) তোমরা জান্নাতে যেতে উদগ্রীব। কিন্তু তার জন্য পরিশ্রম কর না!!
০৬) তোমরা জাহান্নামের ভয়ে আতঙ্কিত। কিন্তু পাপের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তার নিকটবর্তী হচ্ছো!!
০৭) তোমরা স্বীকার কর মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর না!!
০৮) তোমরা সর্বদা অন্যের দোষ বের করতে সচেষ্ট। কিন্তু নিজের দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে উদাসীন!!
০৯) তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ উপভোগ কর। কিন্তু তার জন্য শুকরিয়া আদায় কর না!!
১০) তোমরা মৃতদেহের দাফন সম্পন্ন করার পর তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর না!
আমাদেরও কি ভেবে দেখা উচিৎ নয় যে, আমাদের অন্তর এসব ব্যাপারে মরে গেছে কিনা!
ইব্রাহিম বিন আদহাম কে ছিলেন?
ইব্রাহিম বিন আদহাম রহঃ মাজার, সুর ওমান |
হযরত ইব্রাহিম আদহাম (রহঃ) প্রথম জীবনে বলখের বাদশাহ ছিলেন। পরে সর্বস্ব ত্যাগ করে তারেকে দুনিয়া হন। তিনি খোদা ভক্ত সত্যনিষ্ঠ কঠোর এবং সর্বজনপ্রিয় সাধক বুযুর্গ ছিলেন। তিনি ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) -এর সাথে প্রায়ই সাক্ষাত করতেন। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) বলিয়াছেন ” ইব্রাহিম আদহাম সেই যুগের জ্ঞানী ও বিদ্বান ব্যাক্তিগনের জ্ঞ্যান ও বিদ্যার চাবি স্বরুপছিলেন”
বাণী চিরন্তন, ডক্টর বিলাল ফিলিপস (রহঃ) এর অসাধারণ কিছু উক্তি/উপদেশ মূলক কথা/বানী!!
০১] আপনার দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিণত করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলা-ই রাখেন। তাই তাঁর কাছেই প্রার্থনা করুন।
০২] নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা, তাঁকে নিরবে ডেকে যাওয়া বান্দাদের হতাশ করেন না।
০৩] কখনো কখনো মানুষ আপনাকে বয়কট করবে, দূরে সরিয়ে দিবে, তবে এগুলোকে পার্সোনালি নিয়ে ভেঙ্গে পড়বেন না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা, হয়তো ওদের দিক থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে, তাঁর নিজের দিকেই আপনাকে ডাকছেন।
০৪] যে বিষয়ে মনে খটকা লাগে, সে বিষয়টা যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
০৫] এমন কারো সঙ্গী হোন, যে আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
০৬] যদি কেউ আপনার প্রভুর আনুগত্য পছন্দ না করে, তবে আপনারও তাকে পছন্দ করার কোন যুক্তি বা কারণ নেই।
০৭] যখন পৃথিবীর কেউ আপনাকে বুঝতে চেষ্টা করে না, তখন এতটুকু মনে রাখুন আল্লাহ্ আপনাকে বুঝেন।
০৮] নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে প্রতিটা বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। কেননা আপনার জন্য কোনটি কল্যাণকর তা তিনিই ভালো জানেন।
০৯] আপনি যদি চান আল্লাহ্ আপনার সবগুলো পছন্দনীয় কাজ গ্রহণ করুন, তাহলে আপনি আল্লাহর পছন্দনীয় কাজগুলোই করতে থাকুন।
১০] দ্বীন ও দুনিয়া একসাথে অর্জন করতে কুরআন ও সুন্নাহ্ ব্যতীত অন্য কোন পথ নেই। যদিও মনে হবে দুনিয়া অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে।
১১] অন্যকে দাওয়াত দিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাবেন না। কারণ পরিবর্তন নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয়।
১২] আপনার পাপগুলো, মহান আল্লাহর দয়া, করুণা ও মেহেরবানির থেকে বড় নয়।
১৩] আপনি যদি আপনার মূল্য সঠিকভাবে বুঝতেন, তাহলে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ কর্মে লিপ্ত হতেন না।
১৪] সত্যিকার বন্ধুরাই জান্নাতে একে অপরের প্রতিবেশী হতে চায়।
১৫] কখনো কখনো আল্লাহ তা'আলা আমাদের ভোগান্তিতে ফেলেন শুধু এজন্যই যে, আমরা যেন শুধুমাত্র তাকেই স্মরণ করি।
১৬] আল্লাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা যতই বৃদ্ধি পেতে থাকবে, দুনিয়ার প্রতি আপনার ভালোবাসা ততোই কমতে থাকবে।
১৭] আপনি যেদিন উপলব্ধি করবেন ইসলামের জন্য কী বিশাল পরিমাণ কাজ করা প্রয়োজন, অথচ তেমন কিছুই করা হয়নি এবং এখন এগুলো করার জন্য হাতে কতটা কম সময় রয়েছে! সেদিন বুঝতে পারবেন ছুটির দিন কাটানোর মতো কোন সময় নেই।
১৮] আজ আপনি যে ছেলে/মেয়েটার সাথে হারাম সম্পর্কে লিপ্ত আছেন, বিচারদিবসে সে-ই আপনার বিরুদ্ধে কঠিন সাক্ষ্য দিবে।
১৯] কেউ আপনার নিকট থেকে দূরে চলে যাওয়াতে অধিক চিন্তিত হবেন না। কারণ তা আল্লাহরই পরিকল্পনা ছিল।
২০] ভালোবাসা এবং দয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়। আর তা বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খুব ফুটে উঠে। তারা একে অপরকে ভালোবাসে, দয়া করে এবং নিরাপত্তা দেয়।
২১] মুসলিম হওয়া মানে আপনার কোন সমস্যা থাকবে না এমনটা নয়! তবে এর জন্য আপনার সাথে থাকবে সকল সমস্যার সমাধান দেওয়ার একমাত্র উৎস এবং মালিক মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তা'আলা।
২২] দুঃখজনক কোন বিষয়ে আমাদেরকে সহজে মানিয়ে নিতে বিষয়টিকে এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যে, আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করতেই এমনটা করেছেন।
২৩] কেউ আপনার থেকে দূরে চলে যাওয়াতে কোন ধরণের চিন্তিত হবেন না। কারণ তা আল্লাহরই পরিকল্পনা ছিল এবং এর ফলে তিনি আরো উত্তম কাউকে অবশ্যই দান করবেন।
২৪] একজন মুসলিম স্বামীর প্রথম কর্তব্য হলো, তার স্ত্রীকে ইসলামিক পথের নির্দেশনা দেয়া। আর একসাথে জ্ঞান অর্জন করতে কুরআন ও সুন্নাহ্ ব্যতীত অন্য কোন পথ নেই। যদিও মনে হবে দুনিয়া অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে।
২৫] অন্যকে দাওয়াত দিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাবেন না। কারণ পরিবর্তন নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয়। আর নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে ঠিক না করে অন্যেকে দাওয়াত দিয়ে কোন লাভ নেই।
২৬] আমরা যা শিখছি তা যদি আমাদের বিশ্বাসের উপর কোন প্রভাব ফেলতে না পারে এবং আমাদেরকে মহান আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যেতে না পারে ও আমাদের বিশ্বাসকে আরো মজবুত করতে না পারে, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের উদ্দেশ্যে কিংবা নিয়্যাতে ভুল আছে।
২৭] আমরা কখনোই এতোটা ব্যস্ত নই যে, আমাদেরকে সালাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ছেড়ে দিতে হবে! এটা কেবল আমদের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে।
২৮] আমাদের কাজগুলোর মধ্যে ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধগুলোই উত্তম ও প্রশংসাযোগ্য।
২৯] স্বচ্ছ হৃদয় হচ্ছে অন্যকে ক্ষমা করতে পারা হৃদয়। তাই অন্যকে ক্ষমা করুন এবং অন্য কারো ক্ষতি করার ইচ্ছা পরিহার করুন। আর তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করুন।
৩০] আপনার বন্ধুরাই কিন্তু আপনার জানাজার সালাতে প্রথম কাতারে দাঁড়াবে। তাই এখন থেকেই বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন।
৩১] সৌভাগ্যবান বাবা-মা তারাই, যাদের অনুপস্থিতিতেও তাদের জন্য সন্তানেরা দু'আ করে।
৩২] আপনি যদি আজ থেকেও চিন্তা করেন যে আপনার সকল কর্ম আল্লাহ্ তা'আলা দেখছেন, তবে দেখবেন আপনার জীবনে একটু একটু করে হলেও অনেক উন্নতি হচ্ছে।
৩৩] একাকীত্ব সবসময়ই একটু বিরক্তিকর মনে হয়। তবে যে তাঁর প্রভু মহান আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করে, সে কখনো একাকীত্ব অনুভব করে না।
৩৪] আল্লাহর দয়া নিয়ে কখনোই সন্দেহ প্রকাশ করবেন না। তিনি এক নিমিষেই যেকোন বিপদ থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারেন।
৩৫] আপনার জন্য সবচেয়ে উত্তম স্থান হলো কারো দু'আয় আপনি উপস্থিত থাকতে পারা। কারণ সে আপনার ব্যাপারে আল্লাহর সাথে কথা বলছে, আর আল্লাহ্ হলো সর্বোত্তম শ্রবণকারী।
৩৬] সফল লোকদের ঠোটে যে দুটি জিনিস সবসময়ই থাকে তা হলো-▪হাসি ও▪নীরবতা। কারণ এক টুকরো হাসি অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়। আবার একটু নীরবতা অনেক সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
৩৭] আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে গিয়ে আমরা কখনোই দরিদ্র হয়ে যাবো না।
৩৮] যেখানে আল্লাহ্ তা'আলা থামিয়ে দিয়েছেন সেখানে কারো প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। আর এটাই আনুগত্য।
৩৯] আল্লাহর দ্বীন সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে মেনে চলার মধ্যেই আল্লাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রমাণ হবে।
৪০] সে কিছুই হারায়নি, যে তার সবকিছু আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছে।
৪১] কি চমৎকার একটি সম্পর্ক- আমরা আল্লাহ্ তা'আলা কে স্মরণ করলে তিনিও আমাদের স্মরণ করেন।
৪২] জীবনটা একটি যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে পবিত্র জান্নাত অর্জন করাই মূল লক্ষ্য। তাই আপনার চিরশত্রু শয়তানের বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করে চলুন।
৪৩] আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তা'আলার সাহায্য সবসময়ই আমাদের সাথে ছিল, আছে এবং থাকবে। প্রয়োজন শুধু চেয়ে নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা।
ডঃ বিলাল ফিলিপ্স কে?
ড.আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপ্স ৬ জানুয়ারী ১৯৪৬ সালে জ্যামাইকায় একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বড় হন কানাডায়। তার পূর্বের নাম ছিল ডেনিস ব্র্যাডলি ফিলিপস। তিনি কাতারে বসবাস করতেন।
ইসলাম গ্রহণ:
১৯৭১ সালে তাঁর এক কম্যুনিস্ট বন্ধু ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে ইসলামই মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ সমাধান উপস্থাপন করে, এতে রয়েছে সমাজবাদী এবং পুঁজিবাদী দর্শনের ভাল দিকগুলোর সমন্বয়। ছয়মাসের পড়াশুনা এবং আলোচনা-পর্যালোচনার পর তিনি ১৯৭২ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর একবছর পর তিনি মদীনার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন।
তিনি একজন কানাডীয় সালাফি মুসলিম শিক্ষক, বক্তা, লেখক এবং ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য যিনি কাতারে বসবাস করেন।
তিনি ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সালাফি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল পিস টিভিতে বক্তব্য রাখেন।
তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া
●● ইয়া আল্লাহ তা'আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার ও মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ ও কামিয়াবী দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন(আ-মীন)।
إرسال تعليق