০১] হযরত জিবরাইল(আঃ) এর বলা একটি ঘটনা!!
একবার হযরত জিবরাঈল(আঃ) প্রিয় নাবী কারীম সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। ঘটনাটি হচ্ছেঃ
"এক ব্যক্তি পাহাড়ের উচ্চ চূড়ায় পাঁচশ বছর ধরে আল্লাহ পাকের ইবাদতে মশগুল ছিল। ঐ পাহাড়ের চারদিক লবণাক্ত পানি দ্বারা বেষ্টিত ছিল। আল্লাহ তা'আলা তাঁর জন্য পাহাড়ের অভ্যন্তরে সুপেয় পানির ঝর্ণা এবং একটি আনার গাছের সৃষ্টি করেন।
প্রতিদিন সেই ব্যক্তি আনার ফল খেত এবং পানি পান করত। আর পানি দিয়ে অযূ করত। সে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা'আলার কাছে এই দু'আ করলঃ "হে আল্লাহ্! আমার দেহ থেকে রূহ যেন সাজদারত অবস্থায় কবয করার ব্যবস্থা করা হয়।"
মহান আল্লাহ্ তা'আলা তার এই দু'আ কবুল করেন।
হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ আমি আসমানে আসা যাওয়ার সময় তাঁকে সবসময় সাজদারত দেখতাম। কি'আমতের দিন আল্লাহ্ তা'আলা তার সম্পর্কে বলবেনঃ "আমার এই বান্দাকে আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও। ঐ ব্যক্তি বলবে না! বরং আমার আ'মলের বরকতে!"
তখন নির্দেশ আসবেঃ "আমার নিয়ামতের বিপরীতে তার কৃত আমল পরিমাপ কর। পরিমাপ করে দেখা যাবে, পাঁচশ বছরের ইবাদাত খতম হয়ে গেছে একটিমাত্র চোখের নি'আমতের বিনিময়ে!"
তখন আল্লাহ্ পাক নির্দেশ দিবেনঃ "আমার বান্দাকে জা|হান্না|মে নিয়ে যাও। ফিরেশতারা তখন তাকে নিয়ে রওয়ানা হবে। কিছুদূর যাওয়ার পর ঐ ব্যক্তি আরয করবে, হে আল্লাহ্! আমাকে তোমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও। নির্দেশ আসবে তাকে ফিরত নিয়ে আস।"
আল্লাহ্ পাকের নিকট ফিরিয়ে আনার পর তাকে নিচের প্রশ্নগুলো করা হবে আর জবাবে সে বলবেঃ-
■▪তোমাকে কে সৃষ্টি করেছেন?
●▪আল্লাহ, আপনি।
■▪এই কাজটা তোমার আ'মল না আমার রহমতের বরকতে হয়েছে?
●▪আপনার রহমতের বরকতে!
■▪তোমাকে পাঁচশ বছর ইবাদাত করার শক্তি এবং তাওফীক কে দিয়েছে?
●▪হে আল্লাহ্! আপনি!
■▪সমুদ্রের মাঝে পাহাড়ের উপর তোমাকে কে পৌঁছিয়েছে? লবণাক্ত পানির মাঝে সুপেয় পানির ব্যবস্থা কে করেছে? আনার গাছ কে সৃষ্টি করেছে এবং তোমার আর্জি/ দরখাস্ত মুতাবেক সাজদার মাঝে কে তোমার রূহ কবয করার ব্যবস্থা করেছে?
●▪হে পরওয়ারদিগার! আপনি!
তখন ইরশাদ হবেঃ এই সব কিছু আমার রহমতে হয়েছে এবং আমার রহমতেই তোমাকে জান্নাতে দাখিল করছি।
▪ সূত্রঃ রওজাতুস সালেহীনঃ ২/৫৩,৫৪!!
২] শয়তানের সৃষ্টি ছিল মানুষের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।
ইবলীসকে আল্লাহ মানুষের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ সৃষ্টি করেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার হায়াত দীর্ঘ করে দেন। মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ করার জন্য এবং তাকে ধোঁকা দেওয়াই শয়তানের একমাত্র কাজ!
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ "সে (শয়তান) মানুষকে বলে, কুফরী কর! কিন্তু যখন সে কু|ফরী করে, তখন শ|য়তান বলে, আমি তোমার থেকে মুক্ত! আমি বিশ্বপ্রভু আল্লাহ্কে ভয় করি!"-(সূরা হাশরঃ ১৬)
অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ "অন্যদিকে যুগে যুগে নাবী-রসূল ও কিতাব পাঠিয়ে আল্লাহ মানুষকে সত্য পথ প্রদর্শনের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখেন!" -(সূরা বারাকাঃ ২১৩)
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ "আদম(আঃ) থেকে শুরু করে শেষ নাবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামকে পর্যন্ত এক লক্ষ চবিবশ হাযার পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন!" (আহমাদ, ত্বাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭ ‘ক্বি|য়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টির সূচনা ও নাবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ।)
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেনঃ "বর্তমানে সর্বশেষ এলাহীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের ধারক ও বাহক মুসলিম ওলামায়ে কেরাম শেষ নাবীর ‘ওয়ারিছ’ হিসাবে গণ্য!"-(তিরমিযী, আহমাদ, আবুদাঊদ মিশকাত হা/২১২ ‘ইল্ম’ অধ্যায়।)
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ "আল্লাহ প্রেরিত অহীর বিধান সমূহ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন!" -(মায়েদাহঃ ৫/৬৭)।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ "পৃথিবীর চূড়ান্ত ধ্বংস তথা ক্বিয়ামতের অব্যবহিত কাল পূর্ব পর্যন্ত এই নিয়ম জারি থাকবে। শেষ নাবীর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পৃথিবীর এমন কোন বস্তি ও ঝুপড়ি ঘরও থাকবে না, যেখানে আল্লাহ ইসলামের বাণী পৌঁছে দেবেন না! (আহমাদ, মিশকাত হা/৪২ ‘ঈমান’ অধ্যায়।)
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "এতদসত্ত্বেও অবশেষে পৃথিবীতে যখন ‘আল্লাহ’ বলার মত কোন লোক থাকবে না, অর্থাৎ প্রকৃত তাওহীদের অনুসারী কোন মুমিন বাকী থাকবে না, তখন আল্লাহর হুকুমে প্রলয় ঘনিয়ে আসবে এবং ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।" -(মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫১৬ ‘ফিতান’ অধ্যায়।)
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ মানুষের দেহগুলি সব মৃত্যুর পরে মাটিতে মিশে যাবে। কিন্তু রূহগুলি স্ব স্ব ভাল বা মন্দ আমল অনুযায়ী ‘ইল্লীন’ অথবা ‘সিজ্জীনে’ অবস্থান করবে।"(#সূরা মুত্বাফফেফীনঃ ৭, ১৮)।
অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ -"যা ক্বিয়ামতের পরপরই আল্লাহর হুকুমে স্ব স্ব দেহে পুনঃপ্রবেশ করবে।" (সূরা ফাজরঃ ২৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ "এবং চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশের জন্য সকল মানুষ সশরীরে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দরবারে নীত হবে।"(সূরা মুত্বাফফেফীনঃ ৪-৬)।
মানুষের ঠিকানা হ’ল চারটি!
▪০১] আলমে আরওয়াহা। এই দুনিয়াতে আসার আগে আমাদের রূহ যেখানে ছিলো তার নাম আলমে আরওয়াহা। বা রূহের জগত।
▪০২] দারুদ দুনিয়া। অর্থাৎ যেখানে আমরা এখন বসবাস করছি। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এখানে বসবাসের সময়।
▪০৩] আলমে বরযখ। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে কবরের জগত। এখানে দুটি ভাগ রয়েছে! যথাঃ
ক) ইল্লীনঃ মৃত্যুর পরে মু'মিন মুসলমান গণের রূহ এখানেই শান্তি ও আরামের সাথে থাকবে কি|য়ামত পর্যন্ত।
খ) সিজ্জীনঃ মৃত্যুর পরে কা|ফির-মু|শরিক তথা সকল বিধর্মী এবং গুনাহগার মুসলমানের রূহ এখানে আ|যাবের মধ্যে থাকবে কি|য়ামত পর্যন্ত।
▪০৪] দারুল ক্বারার। অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন, শেষ বিচার শেষে জান্নাত বা জা|হান্না|মের চিরস্থায়ী ঠিকানা।
অতএব এই পৃথিবী হল সকল মানুষের জন্য সাময়িক পরীক্ষাগার মাত্র! জান্নাত থেকে নেমে আসা মানুষেরা এই পরীক্ষাস্থলে পরীক্ষা শেষে সুন্দর ফলাফল লাভের মাধ্যমেই পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে, অথবা ব্যর্থকাম হয়ে কঠিন জা|হান্না|মে নিক্ষিপ্ত হবে। অতঃপর সেখানেই হবে তাদের সর্বশেষ যাত্রাবিরতি এবং সেটাই হবে তাদের চূড়ান্ত এবং চিরস্থায়ী ঠিকানা।
আল্লাহ বলেনঃ "মাটি থেকেই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি। ঐ মাটিতেই তোমাদের ফিরিয়ে নেব। অতঃপর ঐ মাটি থেকেই আমরা তোমাদেরকে পুনরায় বের করে আনব।" -(সূরা ত্বোয়াহা! ২০/৫৫)
"অতঃপর বিচার শেষে কা|ফির|দেরকে হাঁকিয়ে নেওয়া হবে জা|হান্না|মের দিকে এবং মুত্তাক্বীদের নেওয়া হবে জান্নাতে।" -(সূরা যুমারঃ ৬৯-৭৩)।
"এভাবেই সেদিন যা|লিম তার প্রাপ্য শা|স্তি ভোগ করবে এবং মযলূম তার যথাযথ প্রতিদান পেয়ে ধন্য হবে। সেদিন কারু প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না।" (সূরা বাক্বারাহঃ ২৮১)
● ০৩] তাদেরকে বলে দিও....
❒ কাল হাশরের মাঠে বাবা-মা-ভাই-বোন-স্ত্রী-সন্তান কেউ কাউকে চিনবে না!
❒ আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত থাকা অবস্থায়ও মৃ|ত্যু চলে আসতে পারে!
❒ দুনিয়ার এই জীবন কি|আমত পর্যন্ত দীর্ঘ হলেও তা একদিন শেষ হয়ে যাবে!
❒ দুনিয়ার জীবনের কষ্ট সর্বোচ্চ মাত্র ৬০/৭০ বছর। কিন্ত আখিরাতের জীবন অনন্তকাল!
❒ দুনিয়ার জীবন বেহুদা খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়!
❒ মৃত্যু অনিবার্য, সুতরাং তা যেন হয় আল্লাহরই পথে!
❒ ইসলাম বিজয়ী হওয়ার জন্য দুনিয়াতে এসেছে এবং বিজয়ী হয়েই থাকবে!
❒ আমরা কখনোই পরাজিত হই না। হয়তো জিতি নয়তো ম|রি (শহীদ হই)!
❒ জা|হান্না|মের অধিবাসী বেশিরভাগই নারীরা!
❒ দাজ্জালের বেশি অনুসারী হবে নারীরা!
❒ জা|হান্না|মের আ|গুন দুনিয়ার আ|গুনের চেয়ে ৬৯ গুণ বেশি শক্তিশালী!"
❒ জা|হান্না|ম দুনিয়ার সাধারণ কোন জেলখানার মতো নয়! সেখানের কষ্ট মানুষের অনুমানেরও বাইরে!
❒ শহীদদের কোনো মৃত্যু কষ্ট নেই। সামান্য পিপড়ার কামড়ের অনুভূতি!
❒ শহীদরা মৃত্যুর পর থেকেই জান্নাতের নি'আমত ভোগ করতে থাকবেন!
❒ শহীদের রুহ সবুজ পাখিদের ভেতর দিয়ে দেয়া হবে। কি|আমত পর্যন্ত তারা জান্নাতের বাগানে ঘুরে বেড়াবে!
❒ জান্নাতে প্রথম পা রাখতেই সকলেই দুনিয়ার সব কষ্ট ভুলে যাবেন!
❒ কারাগার কারো জন্য লাশ কাটা ঘর, জা|হান্নাম। আর কারো জন্য জান্নাত, নাবী ইউসূফের পাঠশালা!
❒ কখনও ঝড়ে যেও না। আল্লাহর হুকুমের উপর শক্ত হয়ে জমে থেকো। যদিও হাতে জ্ব|লন্ত আঙ্গার রাখার মত হয়!
❒ যে জীবন ফড়িঙের, যে জীবন জোনাকি পোকার, সে জীবন যেন তাদের না হয়!!
● ইয়া আল্লাহ পাক! আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং পরিপূর্ণ ভাবে সঠিক পথে চলার তাওফীক দিন
Post a Comment