সারা জাগানো ইসলামিক উপন্যাস “বিষন্নতা” (পর্ব-০৩)


রেহানা কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর বুঝতে পারলো এখন ওর মাথা ব্যাথা টা কিছুটা কমেছে,

কষ্ট হলেও,,ওঠলো,গোছল করে নিলো যাতে ওর ক্লান্তি টা দুর হয়,অযু করে নামায আদায় করতে শুরু করে দিলো,,কাযা করতে হবে ওকে,,আসরের চার রাকাত ফরজ, মাগরিবের তিন রাকার ফরজ। তারপর এশারের সালাত,,আজ ওর অনেক গুলো আমল মিস হয়ে গেলো,অনেক গুলো,,

রাত 10 টা 15...

গত পর্বগুলো যারা পড়েননি, এখনি পড়ে নিন, 
পর্ব ০১ /link/button/green পর্ব ০২ /link/button

টিভি দেখছে,,,রহমান সাহেব,, কোথায় জানি একটা বেরুলো.. এই সুযোগ রেহানাকে খাবার দিয়ে আসার,,

সাজেদা বেগমঃ রিমি,,এই নে যা,,তোর বাবা আসার আগেই রেহানাকে খাবার টা দিয়ে আয়,,

রিমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,

ঠিক তখন ই রহমান সাহেব চলে আসলেন,,

-এগুলো কি,,খাবার কেনো বাড়া হয়েছে?? রেহানাকে দেওয়ার জন্য?? ওর জন্য কোনো খাবার দিবে না কেউ.. কি বলেগিয়েছিলাম শুনতে পাও নি,,

-শুনেন না,,এমনিই মেয়েটা অসুস্থ খাবার না খেলে তো আরো অসুস্থ হয়ে যাবে,,

-তা আমার দেখার বিষয় না,,এতো বড় একটা ঘটনা ঘটানোর পর ও ওকে নিয়ে ভাবতে বলছো,,একটার পর একটা, একটার পর একটা ঝামেলা ঘটিয়েই যাচ্ছে তোমার মেয়ে,,

এই বলে খাবারের প্লেট টা রিমির হাত থেকে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো নিচে..

আর নিজের ঘরে চলে গেলো... রেহানার নামায শেষ ওর খুব খিদে পেয়েছে,,খিদের কারণে শরীর কাপছে..

রিমি ঘরে ঢুকলো.. 

আপু,,তোমার জ্ঞান ফিরেছে,,,?? এই নাও,,বাবা সমস্ত খাবার নিচে ফেলে দিয়েছে,,,,তুমি এই বিস্কুট টা খেয়ে নাও,,মা দিয়েছে,,সাথে এই দুধ টাও...

নাও নাও,,জলদি জলদি খেয়ে নাও তো,,বাবা জানতে পারলে আবার এগুলোও খেতে দিবে না..

রেহানা,দুধের গ্লাস টা আর বিস্কুট এর প্যাকেট টা হাতে নিলো...

বসে পড়লো পড়ার চেয়ারে,,,পড়ার টেবিল এর উপর গ্লাস আর প্যাকেট টা রাখলো..

রিমি,,আমি উপরে চলে আসার পর কি হয়েছিলো ??

কিছুই হয় নি,,তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো,, তুমি অসুস্থ রাত অনেক হয়ে গেছে,,

রিমি.. আমার দিকে তাকা,,সত্যি করে বল কি হয়েছে,,

তুমি শুনে কি করবে আপু,সব তো তোমার জন্যই হয়েছে,,

(কিছু টা শব্দ করে রেহানা কান্না করছে...) 

রিমি বলছে,কি আর হবে তারা অপমান করে চলে গেছে,,হাজার টা কথা শুনিয়ে,,তাদের আওয়াজে পাড়া প্রতিবেশিরা চলে আসে,,আর তারপর বুঝতেই পারছো কি হয়েছে,,

--আর বাবা?? বাবার তো প্রেশার ওঠে গিয়েছিল.. আমি আর মা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম.. অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো

কি!!!,,বাবার প্রেশার ওঠেছিল..হুম.. 

(ইয়া আল্লাহ,,, ইয়া মালিক,,তুমিই তো শেফা দান কারী তুমি আমার বাবাকে সুস্থ করে দাও,,বাবার প্রেশার ওঠলে তো মারাত্মক অবস্থা হয়ে যায়,,কেনো এমন হচ্ছে আল্লাহ,, ইয়া জাব্বার,,আপনি সব ঠিক করে দিন ইয়া আল্লাহ সব ঠিক করে দিন,আমিন)

নাও,তুমি এবার খেয়ে নাও যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে,,, তুমি যেদিন থেকে সেকুলার পড়াশুনা করবে না বলে ডিছিশন জানালে,,সেই দিন থেকেই তো বাড়িতে একটা না একটা ঝামেলা হচ্ছেই.. 

পরিক্ষার মাত্র 3 মাস বাকি ছিলো.. তুমি পরিক্ষাটা দিলে না কেনো আপু?? বাবা ছোটবেলা থেকে তোমার এই পড়ালেখার পেছনে কত কষ্ট করেছে আর তুমি Hsc টা দিলে না আপু??

আমার অতো জ্ঞান নেই ইসলাম এর ব্যাপারে কিন্তু তুমি বাবার স্বপ্ন টাকে কষ্ট গুলোকে এভাবে ব্যর্থ করে দিলে?? এটা কি ইসলামে জায়েয?

রেহানা কিছু বলছে না,,চুপ করে শুধু কান্না করছে.. রেহানা জানে এখন কেউ ওকে বুঝবে না,,আর বুঝানোর মতো মেন্টালিটিতে ও এখন নেই..

শুধু আছে চোখের জল,,আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস,, তিনিই পারেন সব ঠিক করে দিতে..

সাজেদা বেগমঃ আপনি খাবার খাবেন না,,খাবার খেয়ে ঔষুধ টা খেয়ে নিন নয়তো আবার অসুস্থ হয়ে যাবেন।

-ঔষুধ টা দাও.. খাবার খেয়ে নিন আগে...

যা বলছি তাই করো ঔষধ টা দাও..

সাজেদা বেগম মনে মনে বলছেন.. আমি কি আর কিছুই বুঝি না?? মেয়ে খায় নি বলে,, নিজেও খাচ্ছে না.মেয়েকে কষ্ট দিয়ে. নিজেও কষ্টের মধ্যে আছে...কিন্তু কাউকে কিচ্ছু বুজতে দিচ্ছে না,, রাত 3 টা বেজে 5 মিনিট... 

রেহানা ঘুম থেকে ওঠেছে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে,,মোবাইল এর লাইট জালিয়ে সব কাজ করলো,,তাহাজ্জুদ ও পড়ে নিলো আর কান্না করে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলো..

রেহানা,,রোযা রাখার সিদ্ধান্ত নিলো...

তাই মোবাইল এর লাইট দিয়ে,,সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো,,সামান্য কিছু খাবার পেলেই ওটা দিয়েই রোযা রাখবে..

একি মা বাবার ঘরে এখনো লাইট জলছে তারমানে কি বাবা সারারাত ঘুমোয় নি,কারণ না ঘুমালেই শুধুমাত্র লাইটা জালিয়ে রাখে বাবা..

ও দেখতে পেলো,,কোনো খাবার নেই,,তাই ফ্রিজ খুললো.. মেহমান রা মিষ্টি নিয়ে এসেছিল বোধ হয়,,সে গুলোই বাটিতে করে রাখা আছে,,

ঠিক তখনো রেহানার বাবা এসে লাইট জালালো..

এখানে কি করছো তুমি?? খাবার খেতে এসেছো এই বাড়ির কোনো খাবার তোমার জন্য নয়,,

এই বলে ফ্রিজ এর রাখা মিষ্টি গুলো ময়লার বালতিতে ফেলে দিলো...

রেহানা বাবার আচরণ দেখে ভয় পেয়ে ফুফিয়ে কান্না করছে..

বাবা ঘরে চলে গেলো আর দরজা দিয়ে দিলো,,রেহানা কিছুক্ষণ বসে কান্না করলো,আর এক গ্লাস পানি খেয়ে রোযা রাখলো..

রেহানা রুমে আসার পর একটা মেসেজ আসলো ওর ফোনে ও দেখে...আরেকটা অপরিচিত নাম্বার, কেউ একজন প্রতিদিন নতুন নতুন নাম্বার দিকে ওকে ডিস্টার্ব করছে,রেহানা ধরেই নেয়,,এটা হয়তো জীবন। 

মেসেজে লেখা, ভালোবাসি তোমায়.......কষ্ট পেয়ো না তুমি সব ঠিক হয়ে যাবে...অপেক্ষা করো প্রিয়া...


আজ রেহানার মনটা ভালো নেই তাই মেসেজ টা দেখার পরও কোনো রিয়াক্ট করলো না,,

সুন্দর করে ব্লকলিস্টে নাম্বার টা দিয়ে দিলো,,

রেহানা ব্লক লিস্ট দেখছে আর মুচকি হাসছে,,আর মনে মনে বলছে--

এই নিয়ে 9 টা নাম্বার ব্লক লিস্টে রাখলাম,,এতো গুলো নাম্বার মানুষ কি করে যে জোগাড় করে,,কতটা সময় মানুষ শুধু শুধু আজেবাঝে কাজে নষ্ট করে,,

নামায, কোরআন শরীফ পড়া শেষ করে রেহানা বিছানায় শুয়ে পড়লো,,,রেহানা ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ওর ঘুম আসছে না,রেহানা আরোহীকে খুব মিস করছে,,আরোহী হলো রেহানার বেস্ট ফ্রেন্ড.. আরোহীর লাইফেও উথাল পাথাল চলছে,,রেহানা সেটা জানে,,রেহানার এই ভোর বেলা ওকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছে,,রেহানার বলতে ইচ্ছে করছে,,আমি তোকে জড়িয়ে ধরে কাদতে চাই আরোহী,,কাদতে চাই..

আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,বাবার ভালোবাসা আমি হারিয়ে ফেললাম,,সঠিক ইসলাম উপস্থাপন করতে পারলাম না আরোহী,,আমি ব্যার্থ হয়ে গেলাম আরোহী আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম,,

অবশেষে অনেক ভাবার পর,,আরোহীর নাম্বারে কল করলো রেহানা,,অনেক বার ট্রাই করলো,,কিন্তু ফোন রিসিভ করলো না,,আবারও ট্রাই করছে রেহানা কিন্তু ফোন বেজেই চলেছে রিসিভ করছে না।

রেহানার চিন্তা হতে লাগলো,,না জানি কোন বিপদে পড়েছে আরোহী, কারণ আরোহী কখনো অকারণে রেহানার ফোন রিসিভ করা ছাড়া থাকতে পারবেই না

কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলে,রেহানা ঘুমের দোয়া পড়ে চোখ বন্ধ করে নিল..

রেহানার ঘুম আসছে না,,রেহানার পুরোনো সব স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে,ওর মনে পড়ছে সেই দিনের কথা যেদিন ও প্রথম নাম করা বড় এক স্কুলে ভর্তি হলো ক্লাস নাইন এ..

আর প্রথম দিন কিভাবে ওর আরোহীর সাথে পরিচয় হলো সে সব কথা,,

রেহানা ভাবছে..

প্রথম দিন,,বাবা নতুন স্কুল ড্রেস বানিয়ে দিয়েছে,,রেহানা সেটা পড়ে আয়নার সামনে এসে লাফালাফি করছে,,বাবা এসে,,রেহানার দু পাশে বেনী করে দিচ্ছে,,আর সাজেদা বেগম বলছে...

ইস বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে,,এই দিকে কয় টা বাজতে চললো,সে খেয়াল আছে কি কারো,,আপনারা একটু জলদি জলদি করুন,,না হলে তো লেট করে ফেলবেন,আমি রিমিকে প্রাইভেটে নিয়ে গেলাম,,খাবার রাখা আছে,, 

রেহানা একটু পর আবার ভাবছে,,(মানে পুরোনো স্মৃতি কল্পনা করছে)

বাবার সাথে রিক্সায় বসে রিমি স্কুলে যাচ্ছে,,তখন তার ইসলাম সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই,,শুধু জানে রেহানা একজন মুসলমান আল্লাহ তার রব,আর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আমাদের নবী ও রসুল,,আর রেহানা ওই রবের একজন বান্দা..

ব্যাস এইটুকুই,,আর কোনো ধারণা তার নেই..

বাবার সাথে অনেক গল্প করছে রেহানা রিক্সায় বসে,হাসছে,,,অনেক প্রশ্ন করছে,,

রেহানা জেএসসাইট গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল,,তখন বাবা তার কি যে খুশি হয়েছিল,,পুরো মহল্লার লোককে মিষ্টি খাওয়ায়,,পরিচিত নিম্নবিত্ত যারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের এনে সে পেট ভরে খাওয়িয়ে ছিল,,

রেহানার বাবা আর যাই হোক,,খুব মুক্ত মনের মানুষ কোনো কৃপনতা নেই তার, ঠিক এই একই শিক্ষা রেহানাও পেয়েছে..

(রেহানা আরো বেশি করে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছে)

রেহানা বাবাকে বিদায় জানিয়ে,,স্কুল গেইট এ ঢুকলো,,অনেক গুলো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে,,গেটের সামনে ফোচকা, ঝালমুড়ির দোকান,অনেক গুলো ছোট ছোট দোকান সব স্টুডেন্ট এ ভরে আছে,,অনেক শোরগোল হচ্ছে,নতুন নতুন পরিবেশে ওর খুব ভয় হচ্ছে,,শরীরে রোমাঞ্চ আর ভয় কাটা দিয়ে উঠছে,,

ঠিক তখন একটা ছেলে ওর দিকে দৌড়িয়ে আসছে এই ধাক্কা লাগলো বলে,,কিন্তু না ছেলেটা ঠিক টাইমে নিজের পায়ের ব্রেক টা কষতে পারলো,,রেহানা ছেলেটার দিকে না তাকিয়েই মাথা নিচু করে চলে গেলো,,স্কুল এর দিকে..

ক্লাসে ঢুকলো রেহানা,,সব মুখ ওর কাছে নতুন,,পিছনে ওর কিছুটা গা ঘেষে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,রেহানা ক্লাসরুমে ঢুকলে তবেই ছেলেটা ঢুকতে পারবে,, রেহানা পিছনে তাকালো ছেলেকে দেখে চমকে গেলো,,রেহানা দেখতে পেলো গেটে যে ছেলেটা ওর সাথে ধাক্কা খেতে লাগছিল,,সেই ছেলেটাই,,

ও ছেলেটা কে না দেখলেও,,হাতের ঘড়িটা ঠিক ই দেখেছিল,,লাল রঙ এর সেই একই ডিজাইনের ঘড়িটা,,তাই রেহানার চিনতে অসুদিধা হলো না,,ও তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে পড়লো আর সামনের বেঞ্চে পা লেগে কিছুটা হোচট খেলো রেহানা এইটা দেখে কিছু মেয়ে হেসে দিলো,,আর সেই ছেলেটা মুছকি হাসলো... 

হঠাৎ করে এসব ভাবতে ভাবতে রেহানার গায়ে কাটা দিয়ে ওঠলো আর চোখের কোনে জল বেরিয়ে আসলো রেহানার ,আর রেহানা মনে মনে বললো,,ইয়া আল্লাহ আগে কতো অবুঝ আর মুর্খ ছিলাম,,বেপর্দা হয়ে কিভাবে চলাফেরা করতাম,,আর কত ঘটনা দুর্ঘটনা পাপ ওর সাথে ঘটেছে,,এতো আবেগী পাপের হিসাব রেহানা কি করে দিবে?? এই কথা ভাবছে আর কান্না করছে,,

আবার ভাবনা শুরু করলো রেহানা... 

রেহানা দুই চোখ দিয়ে ক্লাস রুম টাকে দেখছে,,

কোথাও বসার জায়গা খুজে পাচ্ছে না,,একটা জায়গা খালি পেলো রেহানা ,, কিন্তু বেঞ্চে বসে থাকা মেয়েটি নিজের ব্যাগ সেখানে দিয়ে দিল,আর বললো,,এইখানে আমার বেস্টি বসবে,so find another place,, ok???হুমহ...

রেহানার কাছে ব্যাপার টা কষ্ট দায়ক আর অপমান জনক মনে হয়েছে,,

হঠাৎ রেহানা দেখতে পেলো,,পেছনের শেষ বেঞ্চ টা খালি,,শুধু একটা মেয়ে জানালার পাশে বসে আছে,,কানে এয়ার ফোন,গান শুনছে হয়তো,,রেহানা ভাবছে,,স্কুলে এসব করতে দেয় কি..

রেহানা দ্রুত পায়ে হেটে সেখানে যেয়ে নিজের ব্যাগ টা রেখে দিল.. আর ধীরে ধীরে বসে পড়লো,,


রেহানার বসা দেখে,,মেয়েটা কান থেকে এয়ার ফোন খুলে, দাঁড়িয়ে পড়লো আর রেহানার ব্যাগ টা নিয়ে ক্লাসরুমের মেঝের ধুলোতে ফেলে দিলো,,এটা দেখে সবাই তাকিয়ে আছে,,

মেয়েটি বলছে,,তোমার সাহস কি করে হলো আমার সাথে বসার?? পুরো স্কুল জানে আমি সব সময় একা বসি... সো লিভ...(রেহানার গায়ে জোরে ধাক্কা দিল)

তখন পেছন থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে রেহানাকে ধরলো আর ওই মেয়ে টিকে বললো,,

জীম,,এটা কি করলি,,

জীম কথায় পাত্তা না দিয়ে কানে এয়ার ফোন দিয়ে আবার বসে জানালার দিকে তাকিয়ে গান শুনতে শুরু করে দিলো..


রেহানা নিজেকে সামলিয়ে নিজের ভারসাম্য ঠিক করে নিল..

তারপর মেয়েটি বললো তোমার লাগে নিতো, রেহানা বললো না,,ধন্যবাদ।

তারপর ব্যাগ তুলে দিলো মেয়েটি,, মেয়েটি রেহানাকে ব্যাগ টি দিলো আর বললো আমার কাজিন এর ব্যবহার এর জন্য আমি খুব ই দুঃখিত।

By the way,,তুমি কি এই স্কুলে নতুন??

আর আমি আরোহী, তোমার নাম কি???

রেহানাঃ আমার নাম রেহানা....

আরোহীঃ তুমি এই স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছো তাই না?

রেহানাঃ হুম...

আরোহীঃ ভর্তি পরিক্ষায় তোমার রোল কত হয়েছে?

- 01.....

ও আচ্ছা তুমিই সেই ইসতিয়াক রেহানা,,যে ভর্তি পরিক্ষায় টপ করেছো তাই না?

আমার তো তাহলে একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট এর সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেলো.. কি বলো..

রেহানাঃ একদমই নয়,,,ভর্তি পরিক্ষায় ভালো করলেই কেউ ব্রিলিয়ান্ট হয় নাকি?

আরোহীঃ চলো আমার সাথে বসবে.. তারপর গল্প করি..

রেহানাঃ হুম আর তোমার রোল কত?

আরোহীঃ আমার রোল 5..

রেহানাঃ বাহ,, এই স্কুলে রোল 5 মানে তো বিরাট ব্যাপার.. 

(এভাবেই কথায় কথায় তাদের দুজনের বন্ধুত্ব হয়ে গেলো)

রেহানার প্রথম ফ্রেন্ড শিপ এর কথা মনে করে চোখে জল এসে গেলো ওর.. আর মনে মনে বলে ওঠলো আমরা একটা মুহূর্ত একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারতাম না,,বাড়িতে আসলে স্কুলে চলে যেতে মনে হতো,,শুধুমাত্র আরোহীর জন্য.. কত ভালোবাসি আমরা একে অপরকে,,আজ কত গুলো সময় পার হয়ে গেলো,,দুজন দুজন কে সামনাসামনি দেখি নি..

(ইয়া আল্লাহ আমার আরোহী কে তুমি ভালো রেখো,,কঠিন অবস্থা ওর জন্য সহজ করে দিও)

রেহানা ভাবনা থেকে নিজেকে বের করে নিলো,রিমি ঘুমোচ্ছে,,আজ রেহানা ওকে নামায পড়ার জন্য বলার সাহস পর্যন্ত পায় নি কারণ রেহানা জানে,, রিমি তার কোনো কথায় গ্রাহ্য করবে না,

সকাল হয়ে গেছে বাইরে পাখি ডাকছে,,না জানি কি সুন্দর পরিবেশ,,রেহানা,,রুম থেকে বের হয়ে,,সিড়ি বেয়ে ছাদে পৌছলো.. 

ছাদের বেঞ্চিটাই গিয়ে রেহানা বসলো,,

আর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,,কিছু বাস্তব সম্মত কথা,,

রেহানাঃ এখন আমি কি করবো?? আমি তো সেকুলার পড়া শোনা করবো না,হাফেজী আলেমা হওয়ার স্বপ্ন আমার,কিন্তু পরিবার সেটা করতে দিবে না,,আমি কি করবো,,আমার বয়স টি বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠেছে,,কিন্তু পরিবার ওই বাঝে ছেলেটার সাথে বিয়ে দিবে বলেছে,,জীবন আমার জীবন সংগী হতে পারে না,আমি একজন বাঝে মানুষ কে নিজের জীবনে জায়গা দিতে পারি না,ইয়া আল্লাহ যে মুর্খ তোমাকে ভালোবাসে না, মুনাফেক,এবং আখলাকে যামিমাহ এর অন্তর্ভুক্ত আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না, আল্লাহ পারবো না..

ইয়া আল্লাহ আমার এতো বিষন্ন কেনো লাগছে,,আর পারছি না,,এতো কষ্ট কেনো আল্লাহ,, অনেক গুলো বিপদ পেরিয়ে আজ এই পর্যায়ে আসার পর ও কষ্ট আর বিষন্নতা আমাকে আটকে রেখেছে,,মাঝে মাঝে আমার শুধু মনে হয় আমি বোধ হয় ঈমান হারা হয়ে গেছি,,কাল যেমন নামায কাযা হয়ে গেছে ঠিক সেইরকম,,করে আমার আমল গুলো কমে যাচ্ছে,,

ইয়া আল্লাহ তুমি তো সবই দেখছো.. আমি কোনো কুল কিনারা খুজে পাচ্ছি না আল্লাহ,, আমি জানি তুমি আমাকে পরিক্ষা করছো.. আমাকে মাফ করো আল্লাহ,, আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি,আর পারছি না,,আমাকে সহায়তা করো..এই বলে রেহানার সালাতুত দোহা নামাজ আদায়ের ইচ্ছে হলো,,ও আসবাবপত্র রাখার রুমে চলে গেলো.. কারণ এখন রিমির ওঠার টাইম,,আর ওঠেই স্কুলে যাওয়ার জন্য ছুটবে,সাজ গোছ,,নানান কিছু।

তাই শান্তি তে নামায আদায় করতে হলে রেহানাকে ওই রুমেই যেতে হবে।

এক সপ্তাহ পরে..

বিকেল বেলা রেহানা নিজের ঘরে বসে,,,ইংরেজি গ্রামারের কিছু নোট করছে..

আজও রেহানা রোজা রেখেছে,আজ রেহানার মন টা ভিষণ ভালো,,

ভালো থাকবেই না কেনো,,আল্লাহ যে ওর দোয়া কবুল করে নিয়েছে,,আল্লাহ যে ওকে সহায়তা করেছে,,

আর ওর দোয়া এমনি এমনিই কবুল হয় নি,,এই দুইদিনে সে তাহাজ্জুদ থেকে শুরু করে সকল ছোট ছোট নফল ইবাদত করেছে,,

হাজার অপমান ঝারি শোনেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের বাবা মার সেবা করেছে,,

হ্যাঁ, রেহানার দোয়া কবুল হয়েছে আজ রেহানার বাবা সম্পুর্ন সুস্থ। কাজে বের হতে পেরেছে তার বাবা,

আজ রেহানার আর বিষন্ন লাগছে না,আল্লাহ তার বোনা ফুল গাছটাই কতগুলো সুন্দর ফুল দিয়েছেন,মন খারাপ হলেই রেহানা দৌড়ে ফুলগাছটার কাছে চলে যায়,আর আল্লাহর অশেষ রহমতের কথা গাছটা রেহানাকে বার বার মনে করিয়ে দেয়,,হয়তো রেহানার প্রবল ধৈর্য্যশক্তির কারণে আল্লাহ তার দোয়া গুলো কবুল করে নিয়েছেন

সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহ তায়ালা রেহানাকে একটা উত্তম সমাধান ও বের করে দিয়েছে তা হলো,,নিজের জ্ঞান কে কাজে লাগাও,,

রেহানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও প্রাইভেট পড়াবে আর সেইখান থেকে আয় করা টাকা দিয়ে ওর নিজের খরচ চালিয়ে হিফজ কোর্সে ভর্তি হবে,,আর রেহানা আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত দোয়া করছে তার জন্য যদি বিয়ে কল্যাণকর হয়,খুব দ্রুতই যেনো একজন ঈমানদার, উত্তম আখলাকের অধিকারী মানুষ টির সাথে তার দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করিয়ে দেন...আর ওর পরিবারকে যেনো হেদায়েত দেয় আল্লাহ... 


রেহানা মনোযোগ দিয়ে নোট করছে,ঠিক সেই সময় রিমি স্কুল ড্রেস পড়া রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো.. এবং কাদতে কাদতে ব্যাগ টা ছুড়ে ফেললো বিছানায় আর গোছল খানায় ঢুকে গেলো..রিমি রেহানাকে খেয়াল করেনি,,

রেহানা ওর এমন টা করা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো,রিমির মুখ লাল হয়েছিল,,চোখ ফুলে আছে,,

আর সকালে তো রিমি গোছল করে গিয়েছে তাহলে হঠাৎ করে ওর কি হলো, এসেই গোছল করছে কেনো??

কিছুক্ষণ পর..... 


রিমির কান্নার আওয়াজ আসছে বাথরুম থেকে,,

রেহানা খুব টেনশন করতে শুরু করলো আর রিমি কে বার বার ডাকতে লাগলো..

রিমি,,কি হয়েছে?? রিমি,,এই রিমি?? কান্না করতেছিস কেনো?? রিমি......

অনেকক্ষন পর রিমি বাথরুম থেকে বের হলো.. রেহানা দৌড়ে গেলো ওর কাছে...


কিরে কি হয়েছে??

,,,রেহানা খেয়াল করলো ওর চোখ মুখ সব লাল হয়ে আছে,,কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে তা স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে,,রিমি কিছু না বলে কাথা মুরু দিয়ে শুয়ে পড়লো...

রেহানা রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে রিমির পাশে বসলো..

রেহানাঃ জানিস রিমি,,জীবন টা না অদ্ভুত,, আর খুবই রহস্যময় তাই না??

কখনো কি উপলব্ধি করেছিস??

আসলে জীবন টা উপভোগ করার জন্য নয়,,জীবন টা উপলব্ধি করার জন্য,,। 


এই কথা বলেই রেহানা তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে রিমিকে কাথার উপর দিয়ে জড়িয়ে ধরলো..

আর বললো,,কি হয়েছে আমার বোনটার??

রিমি রেহানাকে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিল..

রেহানার কুনুই পড়ার টেবিলের সাথে জোরে আঘাত পেলো। রেহানা ব্যাথায় ওহ করে ওঠলো...

রিমিঃ আপু তুমি এসব কি শুরু করেছো বলোতো?? তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি ক্লান্ত স্কুল থেকে ঘেমে এসেছি তাই গোছল করেছি,দেখতে পাচ্ছো না কত গরম ছিল আজ..আমি এখন ঘুমাবো.. তুমি যাও এইখান থেকে,,


রেহানা রিমির লাল হয়ে যাওয়া গাল টায় হাত দিলো,,আর সামান্য ঘষতে ঘষতে রিমির চোখের দিকে তাকালো...

রিমি নিজের চোখটা নিচের দিকে নামিয়ে ফেললো আর আমতা আমতা করে বললো..তুমি জানো না আমার এলার্জি আছে,,আজ এলার্জিতে সারা শরীর এর এই অ অবস্থা,,আআমি এখন ঘুমোতে চাই আপু,প্লিজ ডিস্টার্ব করো না,এখন,তুমি এই রুম থেকে চলে যাও,প্লিজ।

রেহানা পুরো বিষয় টাকে উপলব্ধি করতে পারলো,, রেহানার মনে এখন অনেক কিছু চলছে,অনেক ভাবনা।

রেহানা রিমিকে আর কিছু না বলে রুমের বাইরে চলে গেলো।

ছোটবেলা থেকেই রিমি অবাধ্য,, কারো কথা শুনে না কিন্তু শুধুমাত্র বাবাকে ভয় পায় আর অনেক ভালোওবাসে।

রিমির আর রাহানার সম্পর্ক ছিল,,মধুর মিষ্টি দুইটি বোনের সম্পর্ক,, খুনশুটি আর ভালোবাসায় ভরপুর।

কিন্তু বিগত দুই বছর যাবত রিমি রেহানাকে দেখতে পারে না,

কারণ রিমি মনে করে রেহানা যে ডিছিশন নিয়েছে তা ভুল।

রেহানার সব কিছুই ভুল। রিমি রেহানার একটা উপদেশ ও পছন্দ করে না। ঘৃনা করে..

কারণ রেহানা রিমি কে বেপর্দা হয়ে চলতে দিতে চায় না,চাচাতো ভাইদের সাথে মিশতে দিতে চায় না,সাজতে দিতে মানা করে,,রিমির কাছে রেহানার সব কথাই বন্ধিশালার মতো লাগে।

রিমি মনে করে রেহানার চিন্তাভাবনা,,নারীবাদী কথা বার্তার বিপরীত। 

পুরোনো দিনে যেমন মেয়েরা ঘরে বন্ধি থাকতো,তাদের কোনো ইচ্ছা বা মুল্য সমাজে ছিল না,,ঠিক সেইরকম সমাজের মতো চিন্তা ভাবনা রেহানা করে...

ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে রেহানা আর রিমির মাঝে দুরত্ব দিন দিন বেড়েই গিয়েছে..

রিমির কাছে এই দুই বছর নানা অপমান,অসম্মান মুলক কথা আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য ছাড়া রেহানা আর কিচ্ছু পায় নি।


যাই হোক,,রেহানা সাজেদা বেগম কে রিমির ব্যাপারে আর কিছুই জানায় নি...

রাত্রি বেলা নামায শেষ করে আর কোরআন তেলাওয়াত করে রেহানা রিমির জন্য খাবার আর এলার্জির ঔষধ নিয়ে এসেছে।

রেহানা এসে দেখে রিমি জ্বরে কাপছে.. হাত দিয়ে দেখে রিমির প্রচন্ড জ্বর এসেছে।


রেহানা দ্রুত তার মাকে ডেকে আনে আর বাবাকে ফোন করে ঔষুধ নিয়ে আসতে বলে।

হঠাৎ করেই রেহানার বুক টা কেমন যেনো করতে থাকে,,একটা অজানা ভয় রেহানার অন্তর টাকে নাড়া দিয়ে ওঠছে,,


রাত 12 টা বাজে,,রেহানা রিমির পাশে বসে জ্বল পট্টি দিচ্ছে। একটু পর পর গা মুছে দিচ্ছে,,হঠাৎ করেই রিমির ফোনে এক সাথে কত গুলো মেসেজ আসে।

রেহানার বুকটা ভয়ে কেপে ওঠে,,

রেহানা ভাবছে,, আমার এমন কেনো লাগছে?? আমার কি,, মেসেজ গুলো পড়ে দেখা উচিত।


রেহানা কখনো কারো অনুমতি ছাড়া কারো কোনো জিনিস ধরে না,,অনেক সময় ধরে রেহানা শুধু ভাবছে যে ও কি করবে।

রেহানাঃ ইয়া আল্লাহ,, আমার কি মেসেজ গুলো দেখা উচিত? কি হয়েছে রিমির?? ওর ফোনটা চেক করলেই হয়তো সব জানতে পারবো...সব রহস্যের সমাধান হয়তো এর মাধ্যমেই হবে।


রেহানা ফোনটা ধরতে যাচ্ছে ঠিক তখনই রেহানা ভাবলো আগে তাহাজ্জুদ নামায টা পড়ে আল্লাহর কাছে কল্যাণ কর কিছু চেয়ে নিই,,আল্লাহর কাছে দোয়া করে নিই।

তারপর বাকি কাজ করি।

তারপর রেহানা তাহাজ্জুদ নামায পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে দোয়া করে নিল,,রিমির জন্য এবং সবার জন্য। 


এবার রেহানা সাহস করে,, আল্লাহর নাম নিয়ে রিমির ফোনটা হাতে নিলো,,দেখতে পেলো ডাটা অন করা...

নোটিফিকেশন এসেছে,,একটা আইডি থেকে 5টা ভিডিও সেন্ড করা হয়েছে,,

রেহানা ভিডিও লেখা দেখে, ভয়ে ওর হাত কাপতে লাগলো.. দোয়া পড়তে পড়তে রেহানা আইডিটাতে ঢুকলো...

রেহানা দেখতে পেলো......

চলবে ইন শা আল্লাহ 

গল্পটি পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু..

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন