পবিত্র কা'বা শরীফ এবং মসজিদুল হারামের উল্লেখযোগ্য এবং প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যের সারবস্তু এখানে তুলে ধরা হলো।
পবিত্র কা'বা ঘরের অভ্যন্তরের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ও নয়নাভিরাম দৃশ্যে মহান আল্লাহর পাকের ভালবাসার নিদর্শন দেখা যায়! সুবহানাল্লাহ! আল্লাহু আকবার!!
..قال الله تعالى في كتابه الكريم وفرقانه المجيد
إِنّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدً لِّلْعَالَمِينَ🔸فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
মহান আল্লাহ তা'আলা আল-কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেনঃ "নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম মানবজাতির জন্য যেই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তা বাক্কায় (মক্কার পূর্ব নাম) অবস্থিত আছে। এটা হিদায়াত এবং বরকতের বা সম্মানজনক স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বহুবিধ নিদর্শন রয়েছে। এরমধ্যে যে প্রবেশ করবে, সেই নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সুতরাং(যে ব্যক্তি) আল্লাহর ঘরে বা বায়তুল্লাহ শরীফে যাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করবে, তাদের উপর সেখানে যাওয়া ফরজ করা হয়েছে। যে-ই ভুল করে অস্বীকার করবে, তাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তা'আলা সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য মুখাপেক্ষী নন।” [সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬-৯৭]
পবিত্র কা'বা শরীফ এবং মসজিদুল হারাম এর উল্লেখযোগ্য কিছু বিবরণঃ
(০১) পবিত্র কা'বা ঘরের ভেতরে কোনো ধরণের ইলেকট্রিক লাইট নেই।
(০২) এই ঘরের মেঝে এবং ওয়াল পৃথিবীর সর্বশ্রষ্ঠ মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মিত। যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
(০৩) এই ঘরের কোনো জানালা নাই। এর চারপাশ একদম আটক করা।
(০৪) পবিত্র কাবা ঘরের একটি মাত্র দরজা আছে।
(০৫) পবিত্র কা'বা ঘরের ছাদে ১২৭ সে.মি লম্বা ও ১০৪ সে.মি. প্রস্থের একটি ভেন্টিলেটার আছে। যেটি দিয়ে সূর্যের আলো ভেতরে প্রবেশ করে। এটি একটি কাঁচ দিয়ে সব সময়ই ঢাকা থাকে।
(০৬) যখন পবিত্র কা'বা ঘরের ভেতর পরিস্কার করা হয় তখন এই কাঁচটি খোলা হয়।
(০৭) কা'বা শরীফের মধ্যে দুটি সিলিং রয়েছে।
(০৮) এর ভেতরের দেয়ালগুলো সবুজ ভেলভেটের পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে এবং এই পর্দাগুলো প্রতি তিন বছর পর পর পরিবর্তন করা হয়।
(০৯) এর সিলিংকে তিনটি কাঠের পিলার ধরে রেখেছে। প্রতিটি পিলারের ব্যাস ৪৪ সে.মি.।
(১০) পবিত্র কা'বা শরীফ পরিস্কার করার জন্যে এর দরজা বছরে দু'বার খোলা হয়। পবিত্র রমজান এর ১৫ দিন আগে এবং হজ্জ্বে বায়তুল্লাহর ১৫ দিন আগে।
(১১) পরিস্কারের পরে মেঝে এবং দেয়াল সাদা কাপড় ও উত্তম টিসু দিয়ে মোছা হয়।
(১২) এরপর দেয়ালগুলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত এবং ভালো পারফিউম দিয়ে সুগন্ধযুক্ত করা হয়।
(১৩) পবিত্র কা'বা শরীফের কালো কাপড়ের আবরণটি (কিশওয়া) প্রতি বছর জিলহজ্জ মাসে পবিত্র হজ্জ্বে বায়তুল্লাহর আগে পরিবর্তন করা হয়।
(১৪) পবিত্র কাবা শরীফের দরজার চাবি বনী শায়বা নামক এক গোত্রের কাছে থাকে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তাঁদের কাছেই থাকবে বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন।
(১৫) মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এই চাবি এই তাঁর নিজের হাতে এই গোত্রের
কাছে দিয়েছিলেন। যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তাঁদের কাছেই থাকবে। এখনোও তা সযত্নে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
(১৬) পবিত্র কা'বা শরীফের দরজার চাবিতেই কলেমা তাইয়েবা লেখা আছে। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ দায়িত্বে তৈরী করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহু আকবার!
(১৭) পবিত্র কা'বা শরীফ পরিস্কার করার কাজের জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী,প্রতিনিধি, কুটনীতিক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কে আমন্ত্রণ ও অভিবাদন জানানো হয়।
(১৮) পবিত্র মক্কা মুকাররমা মহানগরের সম্মানিত গভর্নর তাঁদেরকে পবিত্র কা'বা শরীফের ভেতরে নিয়ে যান এবং
(১৯) তাঁরা সবাই মিলে পবিত্র জমজম কূপের পানি এবং গোলাপ জল দিয়ে পবিত্র কা'বা শরীফের ভিতর পরিস্কার করেন!
(২০) মাকামে ইবরাহীম(আঃ) প্রতিদিন সকালে ও রাতে পরিষ্কার করতে হয়। কেননা, এর চারপাশে তাওয়াফ করা হয়। এজন্যই পবিত্র কা'বা শরীফের স্হাপনা মহান আরশের ছায়ার মতো মনে হয়। মাকামে ইবরাহীমে হযরত ইবরাহীম(আঃ)-এর পায়ের ছাপের চিহ্ন দেখা যায়।
(২১) পবিত্র কা'বা শরীফের চারপাশে ঘেরা (যেখানে নামায আদায় ও তাওয়াফ করা হয়) এটাই মসজিদুল হারাম। এখানেই যে কোন দিকে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে বা কা'বা শরীফের দিকে মুখ করে সালাত বা নামাজ আদায় করা যায়। এজন্যই মক্কা মুকাররমার কেবলা পবিত্র কা'বা শরীফ। এখানে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দিকে দাঁড়িয়ে কেবলা নির্ধারণ করতে হয়। পবিত্র কা'বা শরীফ সামনে রেখে এবং এর বাইরে সবাই চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে গেলেই হলো তার কিবলা।
(২২) পবিত্র কা'বা শরীফ ও মসজিদুল হারামের ▪প্রধান ইমাম ও খতীব শায়খ আবদুর রহমান সুদাইস (হাঃআঃ) সহ ৮ জন ইমাম নিযুক্ত আছেন।¤মুয়াজ্জিন আছেন ১০ জন।▪খাদেম হিসেবে আছেন ২০৮০ জন। ▪এছাড়াও রয়েছেন, মাইক, সাউন্ড বক্স, ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিশিয়ান ইঞ্জিনিয়ারের লোকজন। কর্মরত আছেন প্রায় ছয় হাজারের কাছাকাছি বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সহযোগীবৃন্দ।
(২৩) বিশাল আয়তন হচ্ছে পবিত্র কা'বা শরীফ ও মসজিদুল হারামের। এতে প্রায় ১২,০০০ লাইট, ৫,০০০ ফ্যান এবং সার্বক্ষণিক এয়ারকুলারের ব্যবস্হা ইত্যাদি।
(২৪) পবিত্র কা'বা শরীফ ও মসজিদুল হারামের পশ্চিম দিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ও সর্ববৃহৎ ঘড়ি "মক্কা ক্লক টাওয়ার!" যা ১৬ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে রাতে এবং ৮ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে দিনে দেখা যায়। সমুজ্জ্বল আলোর সৌন্দর্যতম বিকিরণ দৃশ্য দেখে মন ভরে যায়।
(২৫) পবিত্র কা'বা শরীফ ও মসজিদুল হারামের ইমামগণের পদমর্যাদা হচ্ছে প্রতিমন্ত্রী এবং খতীবের পদমর্যাদা হচ্ছে একজন পূর্ণ মন্ত্রীর।
(২৬) এটি সৌদি আরব সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় আট কোটি ডলার খরচ হচ্ছে এর বৃহত্তর কনস্ট্রাকশন সেক্টরে। একাজের জন্য ৫০০ লোকজন কর্মরত রয়েছেন।
(২৭) পবিত্র কা'বা শরীফের পূর্ব পাশে আছে জমজম কূপের পানি। এটার মধ্যেও মহান আল্লাহ তা'আলার অপূর্ব সুন্দর নিদর্শন দেখা যায়। লক্ষ লক্ষ ব্যারেল পানি উত্তোলন করে মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববী শরীফের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে এবং জারের মাধ্যমে মানবজাতিকে এ পবিত্র পানি সরবরাহের ব্যবস্হা রয়েছে। যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করেন সহায়তাকারীরা।
(২৮)মক্কা মুকাররমার মধ্যে প্রায় ৩,০০০ হোটেল/মোটেল রয়েছে।
(২৯) পবিত্র মসজিদুল হারামের প্রধানত আটটি গেইট রয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে এর সর্বমোট ১০০ গেইট রয়েছে। এর মধ্যে▪বাদশাহ আবদুল আজীজ, ▪বাদশাহ ফয়সাল এবং▪বাদশাহ ফাহাদ, এতিনটি গেইট সবচেয়ে বড় এবং এতিনটি গেইট দিয়েই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ/মুসল্লী প্রবেশ করে থাকেন।
(৩০) পবিত্র কা'বা শরীফ ও মসজিদুল হারামে ঢুকতে হবে ইন শা আল্লাহ এবং তা বাবুস সালাম দিয়ে। এটা দিয়ে প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবিস্মরণীয় সূন্নাত আদায় হবে।
(৩১) পবিত্র কা'বা শরীফ সার্বক্ষণিকভাব তাওয়াফ করা হয় বা যায়। শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য জামা'আতের সময় বিরতি থাকে এবং নামাজ শেষ হবার সাথে সাথে আবারও একই ভাবে আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করা যায় বা শুরু হয়।
আল'হামদুলিল্লাহ! পবিত্র কা'বা ঘর এবং পবিত্র মসজিদুল হারাম এর গুরুত্বপূর্ন কিছু তথ্য সংগ্রহ করে তা পাঠকদের জানার জন্য তুলে ধরলাম। এরজন্য আপনাদের সবার কাছে আন্তরিক দু'আ কামনা করছি।
إرسال تعليق