বিপদ-আপদ ও মসিবতের সময় পাঠ করার জন্য কতিপয় অতি গুরুত্বপূর্ণ দু'আ এবং এর আমল।

মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, ‘‌নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-সম্পদ-প্রাণ ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ-আপদ আসে; তখন তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই ফিরে যাব।' (সুরা বাকারা: আয়াত ১৫৫-১৫৬)

মানুষের জীবনে অনেক সময় বিপদ-আপদ এসে পড়ে। এসব বিপদ-আপদ মুমিনের জন্য যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, আবার অবাধ্যদের জন্য আজাবের কারণও বটে। এসব বিপদাপদ থেকে বেঁচে থাকতে তিন আমলের উপদেশ দিয়েছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাহলো-দান সদকা করা, ইস্তিগফার পড়া, দুরুদ শরিফের আমল করা। 

তাই বিপদে কিংবা সমস্যায় পড়লে মুমিন মুসলমানের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মহান আল্লাহ তাআলার উপর আস্থা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে উল্লেখিত আমলের পাশাপাশি এসব দোয়ার যথাযথ আমলেই সম্ভব বিপদমুক্ত হওয়া। বিপদ ও সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য মুমিনের বিশেষ কার্যকরী দোয়া হচ্ছে-

সুরা আল-ফাতেহা…

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ - مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ - إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ - اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ - صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

এ সুরাটির বিশেষ একাধিক নাম হলো- আল-কাফিয়া বা যথেষ্টকারী, আশ-শাফিয়া বা আরোগ্যকারী। এটি আল্লাহর গুণ-প্রশংসার সুরা হওয়ায় এ সুরার আমলের দ্বারা ঝাঁড়-ফুক করাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

●● ০১) উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি প্রিয় নাবী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, "মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে সে যদি এই দু'আ পাঠ করে- আল্লাহ তা'আলা তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।

ﺇﻧﺎ ﻟﻠﻪ ﻭﺇﻧﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺭﺍﺟﻌﻮﻥ ، ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺃﺟﺮﻧﻲ ﻓﻲ ﻣﺼﻴﺒﺘﻲ ،ﻭﺍﺧﻠﻒ ﻟﻲ ﺧﻴﺮﺍ ﻣﻨﻬﺎ

দু'আঃ ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসিবাতী ওয়া আখলিফ-লী খইরম মিনহা। 

অর্থঃ আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভালো কিছু দান করুন। -(সহিহ মুসলিম) 

●● ০২) ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় এই দু'আটি পাঠ করতেনঃ

ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺭَﺏُّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺭَﺏُّ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕِ ﻭَﺭَﺏُّ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﺭَﺏُّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢِ

দু'আঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আ'যীমুল হাকীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুল আ'রশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি- ওয়া রব্বুল আ'রশিল কারীম।

অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু। -(সহীহ বুখারীঃ ৬৩৪৬)

●● ০৩) হযরত উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেনঃ "যে ব্যক্তি নিচের দু'আটি প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কিছুই তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সুননে আবু দাউদ, সহীহ)

ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّ ﻣَﻊَ ﺍﺳْﻤِﻪِ ﺷَﻲْﺀٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﻟَﺎ

ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﺴَّﻤِﻴﻊُ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ 

দু'আঃ বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়া-দুররু মায়া'সমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়াহুয়াস সামিউ'ল আ'লিম।

অর্থঃ আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি, যাঁর নামের বারাকাতে আকাশ ও পৃথিবীর কোনকিছুই কোন অনিষ্ট সাধন করতে পারে না; তিনি সর্বশ্রোতা, তিনি সর্বজ্ঞানসম্পন্ন। 

●● ০৪) বেশী বেশী এই দোয়াটি পড়া৷ এতে কঠিন কাজ সহজ হয় 

 ﺣَﺴْﺒِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻵ ﺇﻟَﻪَ ﺇﻟّﺎ ﻫُﻮَ، ﻋَﻠَﻴْﻪَ ﺛَﻮَﻛَّﻠﺖُ، ﻭَﻫُﻮَ ﺭَﺏُّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ 

দু'আঃ হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আ'লাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আ'যীম।

অর্থঃ আমার জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট! যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি একমাত্র তাঁর উপরই ভরসা করলাম। আর তিনি আরশে আ'যিমের অধিকারী। -(সুরা তাওবাহঃ ১২৯)

●● যে ব্যাক্তি প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় উপরের আয়াতটি সাতবার পড়বে, দুনিয়া ও আখিরাতের সকল চিন্তা ভাবনার জন্য আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন। (আবু দাউদ, সহীহ-আলবানী)।

●● ০৫) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "যখন কোন মুসলিম কোন সমস্যায় এই দু‘আর মাধ্যমে তার পালনকর্তাকে আহবান করে, যা ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে গিয়ে করেছিলেন, তখন আল্লাহ তার আহবানে সাড়া দেন। -(সূরা আম্বিয়াঃ ৮৭; আহমাদ, তিরমিযী,মিশকাতঃ ২২৯২, ‘দু‘আ সমূহ’অধ্যায়ঃ ৯,‘আল্লাহর নাম সমূহ’ অনুচ্ছেদঃ ২)

ﻵ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺇِﻧِّﻲْ ﻛُﻨْﺖُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴْﻦَ

দু'আঃ ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়া-লিমীন’। 

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি মহা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির দু‘আঃ 

-(1) «لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ».

০১] দু'আঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ‘আযীমূল হালীম। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম। লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু রব্বুস সামা-ওয়া-তি ওয়া রব্বুল আরদ্বি ওয়া রব্বুল ‘আরশিল কারীম)।

অর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি মহান ও সহিষ্ণু। ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি মহান আরশের রব্ব। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি আসমানসমূহের রব্ব, যমীনের রব্ব এবং সম্মানিত আরশের রব্ব।”[১]

(2) «اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو، فَلاَ تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ».

০২] দু'আঃ আল্লা-হুম্মা রহ্‌মাতাকা আরজু ফালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন, ওয়া আসলিহ্ লী শা’নি কুল্লাহু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।

●অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতেরই আশা করি। তাই আপনি এক নিমেষের জন্যও আমাকে আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না। আপনি আমার সার্বিক বিষয়াদি সংশোধন করে দিন। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[২]

(3) «لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظّالِمِينَ».

০৩] দু'আঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায-যা-লিমীন।

অর্থঃ “আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র-মহান, নিশ্চয় আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত।” [৩]

(4) «اللَّهُ اللَّهُ رَبِّي لاَ أُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً».

০৪] দু'আঃ আল্লাহু আল্লাহুর রব্বী লা উশরিকু বিহী শাই’আন।

অর্থঃ আল্লাহ! আল্লাহ! (তিনি) আমার রব্ব! আমি তাঁর সাথে কোনো কিছু শরীক করি না।” [৪]

ফুট নোটঃ

▪[১] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৭/১৫৪, নং ৬৩৪৫; মুসলিম ৪/২০৯২, নং ২৭৩০। 

▪[২] আবূ দাউদ, ৪/৩২৪, নং ৫০৯০; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদ গ্রন্থে ৩/৯৫৯ এটাকে হাসান হাদীস বলেছেন। 

▪[৩] তিরমিযী ৫/৫২৯, নং ৩৫০৫; হাকেম এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন, যাহাবী সেটা সমর্থন করেছেন, ১/৫০৫। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৬৮। 

▪[৪] হাদীসটি সংকলন করেছেন, আবূদাউদ, ২/৮৭, নং ১৫২৫; ইবন মাজাহ্‌, নং ৩৮৮২। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্‌, ২/৩৩৫।।

Post a Comment

أحدث أقدم
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন