নাবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের নিবেদিত সঙ্গী-সাথীগণ অর্থাৎ সাহাবিগণ হচ্ছেন দ্বীন ইসলামের চেইন বা সূত্র। যদি মূলসূত্রই নিন্দনীয়, কলুষিত ও অভিশপ্ত হয়, তাহলে সূত্র দ্বারা প্রচারিত দ্বীন নিন্দনীয়, কলুষিত ও মন্দ হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। আর এমনটি হলে সম্পূর্ণ ইসলাম প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য। ফল স্বরূপ –নাউযুবিল্লাহ!- ইসলাম কলুষিত, কুরআন-সুন্নাহ দাগদার, নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যর্থ ইত্যাদি ইত্যাদি।
বর্তমান মুসলিম সমাজে এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছে, যারা নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাথীদের গালাগালি করে, তাঁদের মন্দ বলে এবং তাঁদের অভিশাপ দেয়। নিঃসন্দেহে এটি ইসলামের শত্রুদের একটি গোপন চক্রান্ত ও গভীর ষড়যন্ত্র। তারা সরাসরি প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামকে মন্দ বলার দুঃসাহস দেখাতে না পেরে ইসলামের মূলসূত্র এবং ইসলামের নিষ্ঠাবান প্রচারকদের টার্গেট করেছে।
আল্লাহ তা'আলা রহম করুন ইমাম মালেকের প্রতি। তিনি অতি সত্য বলেছেনঃ "এরা এমন গোষ্ঠী যারা স্বয়ং নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামকে দুর্নাম করতে চায়! কিন্তু তা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা তাঁর সাহাবীদের দুর্নাম করে ও তাঁদের অপবাদ দেয়, যেন বলা হয় যে, তিনি খারাপ লোক ছিলেন। যদি তিনি সৎ ব্যক্তি হতেন, তাহলে তাঁর সাথীরাও সৎ হত।" -[আস্ স্বরিম আল মাসলূল, ইবনু তায়মিয়া/৫৮০]
এখান থেকে সাহাবিদের গালাগালি করার ঋই বিষয়টির ভয়াবহতা অনুমান করা যেতে পারে ও এই মন্দ স্বভাবের পরিণাম আঁচ করা যেতে পারে। বিষয়টি এতই স্পর্শকাতর যে, এর কারণে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পবিত্র ধর্ম ইসলাম প্রশ্নের কাঠগড়ায় চলে আসে, ইসলামের বুনিয়াদে কুঠারাঘাত করা হয় এবং সম্পূর্ণ ইসলাম সন্দিহান হয়ে পড়ে।
আলোচ্য প্রবন্ধটিতে সাহাবিগণের সততা ও বিশ্বস্ততা এবং তাঁদের মান-মর্যাদা প্রথমে কুরআন হতে অতঃপর সহীহ সূন্নাহ হতে অতঃপর সালাফদের উক্তি হতে বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর তাদের প্রতি অপবাদ এবং নিন্দাবাদের কুপ্রভাব কতখানি সুদূরপ্রসারী তারও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পরিশেষে সাহাবিদের গালমন্দ করার শারঈ বিধানও উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি পাঠকগণ উপকৃত হবেন এবং আমার এই শ্রম সার্থক হবে। আল্লাহ যেন এই নেক আমল কবুল করেন এবং আখিরাতে নাজাতের কারণ করেন। আ-মjj
و ماتوفيقي إلا بالله و عليه الثقة والتكلان
●● আদর্শবান ইসলামে গালাগালির অবকাশ নেইঃ
সাহাবিগণের মান-সম্মান, সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক তাঁদের সত্যায়ন সম্বন্ধে আলোকপাত করার পূর্বে গালাগালি করা সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান এবং সাহাবিদের গালমন্দ করার ভয়াবহ পরিণাম স্পষ্ট করা সঙ্গত মনে করছি, যেন আমরা আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাই এবং বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধা হয়।
ইসলাম একটি সুসভ্য ও আদর্শবান জীবন ব্যবস্থার নাম। সুরুচিসম্পন্ন মার্জিত আচরণ এই দ্বীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলাম প্রতিপক্ষ ও শত্রুর সাথেও ভদ্রতা ও সদাচরণের আদেশ দেয় এবং গালাগালি করা থেকে কঠিন ভাবে নিষেধ করে। গালমন্দ করা এই স্বচ্ছ ধর্মের স্বভাব নয়! তাই পবিত্র ইসলামের অনুসারী কেউ কখনো এ ধরণের কোন নোংরা স্বভাবের হতে পারে না এবং এই অসৎ আচরণকে স্বীকৃতি জানাতে পারে না।
হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ "মুমিন ব্যক্তি অপবাদ দাতা, অভিশাপ দাতা, অশ্লীল এবং মন্দভাষী হতে পারে না।’’
[বুখারী, আদাবুল মুফরাদঃ ১/১১৬ তিরমিযী, বির ও স্বিলা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: অভিসম্পাত করা নং ১৯৭৭]
গালাগালি করা মুমিনের প্রতীক নয় আর না দ্বীন ইসলামের নিয়ম! কারণ এই স্বভাবের পরিণাম ভয়াবহ। তাই তা থেকে নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর ভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেনঃ “মুমিনকে অভিসম্পাত করা হত্যা তুল্য’’। -[আহমাদঃ ১৫৭৯০]
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফা|সেকী কাজ। আর তার সাথে লড়াই করা কু|ফুরী কাজ” [বুখারী-মুসলিম]
ইসলাম স্পষ্ট ভাষায় অমুসলিমদের দেব-দেবীকেও গালি দিতে নিষেধ করেছে; কারণ এর প্রতিক্রিয়া আরও ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেনঃ "তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের আহ্বান করে, তাদের তোমরা গালি দিবে না। কেননা, তারা শত্রুতা|স্বরূপ এবং অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকেও গালি দিবে।" -[সূরা আনআমঃ ১০৮]
মুমিন কেবল উত্তম কথা বলে! কারণ মহান আল্লাহ তাদের সবসময় উত্তম ও উৎকৃষ্ট বলার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমার বান্দাদের বল, তারা যেন উত্তম কথা বলে। নিশ্চয়ই শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।" -[সূরা ইসরাঃ৫৩]
মুমিন সাধারণ কোন লোককেই গালমন্দ করতে পারে না। আর যদি সাধারণ লোকদের ক্ষেত্রেই এমন নিষেধাজ্ঞা হয়, তাহলে মর্যাদাবান ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে তা কিরূপ হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। অতঃপর গালাগালির লক্ষ্য যদি ঐ সম্প্রদায় হয়, যাঁদের স্বয়ং মহান আল্লাহ ভালবাসেন এবং নিজ কিতাবে মহান আল্লাহ যাঁদের প্রশংসা করেছেন, যাঁদের তিনি তাঁর নাবীর সাহচর্যের জন্য নির্বাচন করেছেন, যাঁদের দ্বারা দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসার লাভ করেছে, তাহলে এমন আচরণ কতখানি জঘন্য এবং ন্যক্কারজনক হতে পারে তা সকলে অনুমান করতে সক্ষম। তাদের গালমন্দ করা কেবল পাপকাজ নয়; বরং অপরাধও বটে।
●● সাহাবিগণ ন্যায়পরায়ণ, মহান আল্লাহর সাক্ষীঃ
সাহাবিগণের –রিযওয়ানুল্লাহি আ'লাইহিম- গর্বের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, মহান আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর নাবীর সাহচর্যের জন্য নির্বাচন করেছেন এবং তাঁদের বর্ণনা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে কি|য়াম|ত পর্যন্ত শাশ্বত রেখেছেন। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নাবী এবং নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গীগণের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ
-"মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আ'লাইইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল; আর তাঁর সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল! আপনি তাঁদের রুকু ও সাজদায় অবনত অবস্থায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করতে দেখবেন। তাঁদের মুখমণ্ডলে সাজদার চিহ্ন থাকবে, তাওরাতে তাদের বর্ণনা এইরূপ এবং ইঞ্জিলেও! তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারা গাছের মত, যা নির্গত করে কিশলয়, অতঃপর তাকে শক্ত করে এবং তা পুষ্ট হয় ও দৃঢ়ভাবে কাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে যায়; যা চাষিদের মুগ্ধ করে। যেন অবিশ্বাসীদের অন্তরজ্বালা সৃষ্টি হয়। ওদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।" [সূরা ফাতহঃ ২৯]
এই পবিত্র আয়াতের প্রত্যেকটি অংশ সাহাবায়ে কেরামের মাহাত্ম্য, ফযীলত, ক্ষমা এবং তাদেঁর মহান প্রতিদান লাভের কথাকে সুস্পষ্ট করে। এরপরও সাহাবিদের দৃঢ় ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা এবং তাঁদের গালমন্দ করা কিভাবে বৈধ হতে পারে এবং কিভাবে এই মন্দ আচরণের দাবীদার ইসলামের গণ্ডীতে থাকতে পারে?
মহান আল্লাহ ইসলামে অগ্রগামী সেই সমস্ত মুহাজির এবং আনসার এবং কে|য়াম|ত পর্যন্ত একনিষ্ঠতার সাথে তাঁদের অনুসারীদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দেন এবং তাঁদের জন্য এমন প্রতিদান ও অনুকম্পার প্রতিশ্রুতি দেন, যা নয়ন দ্বারা কেউ অবলোকন করে নি, কর্ণ দ্বারা কেউ শ্রবণ করে নি! আর না কারো অন্তরে তার কল্পনা উদয় হয়েছে। তিনি বলেনঃ "আর যেসব মুহাজির ও আনসার (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাঁদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও তাতে সন্তুষ্ট। তিনি তাঁদের জন্য এমন উদ্যানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীমালা প্রবহিত, যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, এ হচ্ছে বিরাট সফলতা।" -[সূরা তাওবাঃ ১০০]
“আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট’’ বাক্যটির অর্থ হলো, আল্লাহ তা'আলা তাঁদের সৎকর্ম গ্রহণ করেছেন, মানুষ হিসাবে তাদের কৃত ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তিনি তাঁদের উপর অসন্তুষ্ট নন। যদি তা না হতো, তাহলে উক্ত আয়াতে তাঁদেঁর জন্য জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতের সুসংবাদ দেওয়া হল কেন? এই আয়াত দ্বারা এটাও জানা গেল যে, আল্লাহর এই সন্তুষ্টি সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী নয়, বরং চিরস্থায়ী। যদি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কেরামগণের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত, যেমন এক ভ্রান্ত ফেরকার বিশ্বাস, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাদেঁর জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন না। এ থেকে এও প্রমাণিত হয় যে, যখন আল্লাহ তা'আলা তাঁদের সমস্ত ত্রুটি মার্জনা করে দিয়েছেন, তখন তাঁদের সমালোচনা করা, তাঁদের ভুল-ত্রুটি বর্ণনা করা কোনও মুসলিমের উচিৎ নয়। বস্তুতঃ এটাও জানা গেল যে, তাঁদের ভালবাসা এবং তাঁদেঁর পদাঙ্ক অনুসরণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কারণ। আর তাঁদের প্রতি শ|ত্রুতা, বি|দ্বেষ ও ঘৃ|ণা পোষণ করা আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। [তাফসীর আহসানুল বায়ানঃ ৩৯৩]
মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ (এ সম্পদ) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য, যাঁরা নিজের ঘর-বাড়ী ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত হয়েছে; তাঁরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সাহায্য করে। তাঁরাই তো সত্যাশ্রয়ী। আর তাঁদের (মুহাজিরদের আগমনের) পূর্বে যারা এ নগরীতে বসবাস করেছে এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে, তার জন্য তাঁরা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না, বরং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাঁরা তাঁদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। আর যাদেরকে নিজ আত্মার কার্পণ্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তাঁরাই সফলকাম। যারা তাঁদের পরে এসেছে তারা বলে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদের ক্ষমা করুন এবং মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিং|সা বিদ্বেষ রাখো না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি অতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু। -[সূরা হাশরঃ ৮-১০]
মহান আল্লাহ এই আয়াতে ‘মালে ফাই’ কোথায় ব্যয় করা হবে তার সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অনুরূপ মুহাজির সাহাবীদের ফযীলত, তাঁদের ঐকান্তিকতা এবং তাঁদের সততা বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর সাহাবিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেও তাঁদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা, তাঁদের কে গালমন্দ করা এবং তাঁদের ব্যাপারে অন্তরে বি|দ্বেষ রাখা আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ নয় কি?
মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ "যারা ঈমান এনেছে, হিজরত (দ্বীনের জন্য স্বদেশত্যাগ) করেছে, আল্লাহর পথে যি|হাদ করেছে এবং যারা (মুমিনদের) আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে তারাই প্রকৃত মুমিন। তাঁদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। [সূরা আনফালঃ ৫২]
যাদের মহান আল্লাহ প্রকৃত মুমিন বলেছেন এবং তাঁদের ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁদের গালমন্দ করা জঘন্য আচরণ ছাড়া আর কি হতে পারে! তিনি আরও বলেনঃ "আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তাঁরা বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়আত গ্রহণ করল। তাঁদের অন্তরে যা ছিল, সে সম্বন্ধে তিনি অবগত ছিলেন; তাঁদের প্রতি তিনি অবতীর্ণ করলেন প্রশান্তি এবং তাঁদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।"-[সূরা ফাতহঃ ১৮]
উক্ত আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন বাইয়াতে রিযওয়ানে অংশগ্রহণকারীদের মুমিন আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট তথা রাযি-খুশীর সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ কর্তৃক ঈমান এবং সন্তুষ্টি প্রাপ্ত লোকদের গালমন্দ করা কখনই মুমিনের আচরণ হতে পারে না। কারণ মুমিন তাই ভালবাসে যা তার রব ভালবাসেন। আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন আরও বলেনঃ "আল্লাহ ক্ষমা করলেন নাবীকে এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে; যাঁরা সংকট মুহূর্তে নাবীর অনুগামী হয়েছিল, এমন কি যখন তাঁদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বাঁকা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তারপর আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমা করলেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁদের প্রতি বড় স্নেহশীল, পরম করুণাময়।" -[সূরা তাওবাঃ ১১৭]
‘সংকট মুহূর্ত’ বলতে তাবুক যু|দ্ধের অভিযানকে বুঝানো হয়েছে। গ্রীষ্মকাল, দূরের সফর, অল্প সম্বল এবং ফসল কাটার সময় এই অভিযান সংঘটিত হওয়ায় এই অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের ‘জায়শুল উসরাহ’ বা সংকটকালের সেনা বলা হয়। মহান আল্লাহ এই যু|দ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর দয়াময় আল্লাহ যাঁদের কে ক্ষমা করেন, তাঁদের কেউ গালমন্দ করতে পারে না। মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ -"তোমরাই শ্রেষ্ঠতম জাতি। মানব মণ্ডলীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর আল্লাহকে বিশ্বাস করবে।" [সূরা আল ইমরানঃ ১১০]
‘তোমরাই শ্রেষ্ঠতম জাতি’ এই সম্বোধনটি দ্বারা যদিও সকল মুসলিম জাতিকে বুঝানো হয়েছে! কিন্তু সেই জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম সাহাবিগণই পরিগণিত হওয়ার বেশী অধিকার রাখেন। তাই আল্লাহ যাঁদের শ্রেষ্ঠতম বলেছেন, তাদের কে গালি-গালাজ করা অর্থাৎ তাদের নিকৃষ্ট বলা, যা এই পবিত্র আয়াতের মর্মের স্পষ্ট বিপরীত অবস্থান।
●● সাহাবাগণের মান-মর্যাদা এবং সততা প্রমাণে নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ
সাহাবগণের মান-মর্যাদা, সততা ও বিশ্বস্ততা এবং তাঁদের গালমন্দ ও সমালোচনা না করার বিষয়ে হাদীসে বহু স্বহীহ হাদীস বিদ্যমান। আমরা এই প্রবন্ধে তারই সামান্য বর্ণনা দেয়ার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত, নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন "তোমরা আমার সাহাবাদের গালি দিবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ খরচ করে দেয়, তবুও (সওয়াবের দিক দিয়ে) তাঁদের এক অঞ্জলি বা অর্ধ অঞ্জলি খরচের মত হতে পারে না।’’ -[বুখারী, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, নং ৩৬৭৩ এবং মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা নং ২৫৪০]
উল্লেখিত হাদীসটিতে যেমন সাহাবাগণের মর্যাদা বর্ণনা হয়েছে, তেমন স্পষ্টভাবে তাঁদের গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। ত্বাবারানী তাঁর আল কাবীর গ্রন্থে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ "যে ব্যক্তি আমার সাথীদের গালি দিবে, তার প্রতি আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং সকল লোকের অভিশাপ হবে।"(ত্বাবারানী, আল কাবীরঃ ১০/২৮৯ নং ১২৫৯১;) সিলসিলা স্বহীহা নং ২৩৪০]
ইমরান বিন হুসাইন(রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠদের যুগ আমার যুগ! অতঃপর তার পরের যুগ; অতঃপর তার পরের যুগ। (ইমরান (রাঃ) বলেনঃ আমার স্মরণ নেই তিনি তাঁর যুগের পর দুই যুগ না তিন যুগ উল্লেখ করেছিলেন), তারপর এমন যুগ আসবে যে সময় লোকেরা নিজে সাক্ষী দিবে অথচ তাকে সাক্ষীর জন্য তলব করা হবে না, খেয়ানত করবে আমানত রক্ষা করবে না, মানত করবে কিন্তু তা পূরণ করবে না এবং তাদের মাঝে মেদবহুল (মোটা শরীর) প্রকাশ পাবে।“ -[সহীহ আলবুখারী নং ২৫০৮ এবং ৬০৬৪: সুনান বায়হাক্বী কুবরা নং ২০১৭৫]
এই হাদীসে প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর যুগের উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলেছেন; যে যুগে সকল অবস্থানকারীগণ নিঃসন্দেহে তাঁর সাহাবাগণ ছিলেন। তাই তাঁরা নাবীর উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর। আর শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায় সম্মানের পাত্র, কোন গালির পাত্র নয়! বরং তাঁদের শানে গালি একবারে অসমীচীন। নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ "আনসার সাহাবীদের ভালবাসা ঈমানের নিদর্শন এবং আনসার সাহাবদের ঘৃ|ণা করা মু|নাফি|কের নিদর্শন।" [সহীহ বুখারী নং ১৬; স্বহীহ মুসলিম নং ১০৮]
আনসার সাহাবা যাঁরা মক্কা থেকে হিজরতকারী সকল সাহাবিগণকে মদিনায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাঁরা ঈমান ও নেফাক পরিচয়ের মানদণ্ড। যারা তাদের ভালবাসে তারা মুমিন এবং এই ভালবাসা তাদের ঈমানের লক্ষণ। আর যারা তাদের ঘৃ|ণা করে তারা মু|নাফি|ক! আর এই ঘৃ|ণা তাদের নেফাকের লক্ষণ। হাদীসটি খুবই স্পষ্ট যে, যাঁদের ভালবাসা ঈমানের লক্ষণ তাঁদের গা|লিগা|লাজ করা স্পষ্ট
মু|নাফি|কির আলামত, যা ঈমান বিধ্বংসকারী ঘৃ|ণিত অপরাধ। নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ-“লোকদের উপর এমন সময় আসবে, তখন তাদের একদল যি|হাদে লিপ্ত থাকবে। তারপর তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হবে, তোমাদের মাঝে এমন কেউ আছেন কি, যিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রত্যক্ষ করেছেন? তাঁরা বলবে, হ্যাঁ! তাঁরা তখন বিজয়ী হবে। তারপর মানুষের মাঝখান থেকে একদল যি|হাদ করতে থাকবে। তাদের প্রশ্ন করা হবে, তোমাদের মাঝে এমন কোন লোক আছেন কি, যিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবিগণকে প্রত্যক্ষ করেছেন? তারা তখন বলে উঠবে, জি হ্যাঁ! তখন তাঁরা জয়ী হবে। অতঃপর অপর একটি দল যু|দ্ধ করতে থাকবে। তখন তাঁদের প্রশ্ন করা হবে, তোমাদের মাঝে এমন কেউ কি আছেন, যিনি সাহাবীদের সাহচর্য অর্জনকারী অর্থাৎ তাবিঈকে প্রত্যক্ষ করেছেন? তখন লোকেরা বলবে, জি হ্যাঁ! তখন তাদের বিজয় হবে!" -[সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সাহাবাগণের ফযিলত, নং ৬৩৬১]
উল্লেখিত হাদীসটিতে সাহাবা ও তাবেঈনদের মর্যাদা এবং করামত বর্ণনা হয়েছে। তাঁদের উপস্থিতিতে ইসলাম জয় লাভ করেছে এবং অভিযান সফল হয়েছে। আর এমন মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে গালাগালি করা অর্থাৎ তাঁদের অসম্মান করা, যা কোন মুমিনের কাজ হতে পারে না।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ প্রমাণ করে যে, নিঃসন্দেহে সাহাবাগণ সৎ ও ন্যায়পরায়ণ; কারণ উপরোক্ত হাদীছে তাদের প্রশংসা এবং ফযীলত বর্ণনা হয়েছে যা তাঁদের সততা ও নিষ্কলুষতার দলীল।
●● সাহাবাদিগকে গালমন্দকারীদের বক্তব্য খন্ডনে সালাফদের মূল্যবান উক্তিঃ
ইসলামের সূত্র ন্যায়পরায়ণ সাহাবিদের সম্বন্ধে যারা কটূক্তি করে ও অপবাদ দেয়, তাদের ব্যাপারে আমাদের বিচক্ষণ সালাফগণ বহু মূল্যবান কথা বলেছেন। কারণ তাঁরা এর
ভ|য়াবহ পরিণাম বুঝতেন এবং এসব অপবাদ যে দ্বীনের মৌলিক বিধানের বিপরীত তাও তারা জানতেন। আমরা এ পর্বে তাদের সেই মূল্যবান উক্তি সমূহের অল্প কিছুটা উল্লেখ করবো ইন শা আল্লাহ তা’আলা।
■ ০১[ ইমাম মালিক(রহঃ) বলেনঃ‘ এরা এমন গোষ্ঠী যারা স্বয়ং প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামকে দুর্নাম করার ইচ্ছা রাখে! কিন্তু তা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা তাঁর সাহাবীদের দুর্নাম করে এবং তাদের অপবাদ দেয়, যেন বলা হয় যে, সে মন্দ ছিল। যদি তিনি সৎ ব্যক্তি হতেন, তাহলে তাঁর সাথীরাও সৎ হত!"-[আস্ স্বরিম আল মাসলূল, ইবনু তাইমিয়াঃ ৫৮০]
■ ০২[ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল(রাহঃ) বলেনঃ যদি কোনও ব্যক্তিকে দেখ সে কোনও সাহাবীর দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করছে, তাহলে তার ইসলামে সন্দেহ আছে!" [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনু কাছীরঃ ৮/১৪২]
■ ০৩] আবু যুরআহ আর রাযী(রাহঃ) বলেনঃ "যদি কোনও ব্যক্তিকে দেখ সে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীদের মধ্যে কারো দোষ বর্ণনা করছে, তাহলে জেনে নিও সে ইসলাম শ|ত্রু না|স্তিক। কারণ আমাদের নিকট রসূল সত্য এবং আল কুরআন সত্য। আর এই কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর সাহাবাগণ। (অর্থাৎ তাঁরা ইসলামের সূত্র ও সাক্ষী) ইসলাম এর শ|ত্রুরা আমাদের সাক্ষীদের অভিযুক্ত করতে চায়, যেন কিতাব এবং সুন্নাহ বানচাল হয়ে যায়। প্রকৃতার্থে তারাই হল অভিযুক্ত। আর তারা হচ্ছে না|স্তিক!" -[আল কিফায়া, খতীব বাগদাদীঃ পৃ: ৯৭]
■ ০৪] আবু আব্দুর রাহমান নাসাঈ(রাহঃ) কে আল্লাহর রসূলের সাহাবী মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ "ইসলামের উপমা একটি দরজাযুক্ত ঘরের ন্যায়। আর ইসলামের দরজা হচ্ছে সাহাবাগণ। তাই যে সাহাবীকে কষ্ট দেয়, তার উদ্দেশ্য ইসলাম। ঐ ব্যক্তির মত যে দরজা ঠকঠকায়; কারণ তার উদ্দেশ্য ঘরে প্রবেশ করা।" তিনি বলেনঃ "তাই যে মুয়াবিয়াকে উদ্দেশ্য করে, আসলে তার উদ্দেশ্য সাহাবাগণ!' [তাহযিবুল কামালঃ ১/৩৩৯/ বুগইয়াতুর রাগিব পৃ: ১২৯]
■ ০৫] উমার বিন আব্দুল আযীয(রহঃ)কে সে সব যু|দ্ধের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যা সাহাবিদের মাঝে সংঘটিত হয়। তিনি বলেনঃ "সে রক্ত থেকে আল্লাহ আমার হাত পবিত্র রেখেছেন, তাই আমার জিহ্বাকে তা থেকে পবিত্র রাখা উচিৎ হবে না কি? আল্লাহর রসূলের সাথীদের উপমা চোখের মত। আর চোখের ঔষধ হচ্ছে, তা স্পর্শ না করা!" [আল জামি লি আহকামিল কুরআন, কুরতুবীঃ ১৬/১২২]
■ ০৬] ইমাম ত্বহাবী(রাহঃ) বলেনঃ "তাঁদেরকে ভালবাসা (অর্থাৎ সাহাবিদের ভালবাসা) দ্বীন ও ঈমানের অংশ এবং তাদের ঘৃ|ণা করা কু|ফর এবং মু|নাফে কি ও সীমালঙ্ঘন।" -[শারহুত্ ত্বাহাবিয়াঃ ৫২৮]
■ ০৭] শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) সাহাবিদের মাঝে সংঘটিত বিভিন্ন বিবাদ সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতি বিষয়ে এই ভাবে বর্ণনা দেনঃ "তারা সাহাবিদের মাঝে সংঘটিত বিবাদ সম্পর্কে নীরবতা পালন করে এবং বলে: তাদের দোষ-ত্রুটি সংক্রান্ত বর্ণিত বর্ণনাগুলির মধ্যে কিছু এমন বর্ণনা রয়েছে যা, মিথ্যা ও জাল! আর কিছু এমন রয়েছে যা বিকৃত ও পরিবর্তিত। এ বিষয়ে সঠিক মত হচ্ছে, তারা সে সব বিষয়ে মা’যুর। হয় এমন ইজতিহাদকারী যাদের সিদ্ধান্ত সঠিক, কিংবা এমন ইজতিহাদকারী যাদের সিদ্ধান্ত ভুল!" -[শারহুল আক্বীদা আল ওয়াসেত্বিয়া, মুহাম্মদ খলীল হার্রাসঃ পৃ: ১৭৩]
■ ০৮] আবু আব্দুল্লাহ ইবনু বাত্তাহ(রহঃ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদা বর্ণনা করার সময় বলেনঃ "এরপর আল্লাহর রাসূলের সাহাবিদের মাঝে যে সব বিবাদ হয়, আমরা সে সব বিষয়ে নিরব থাকি। তারা এমন সম্প্রদায় যারা নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সকল অভিযানে উপস্থিত থেকেছেন এবং মর্যাদার ক্ষেত্রে সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন; কারণ আল্লাহ তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাদের তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছেন ও তাঁদের ভালবাসার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে বলেছেন। আর এটা তিনি তাঁর নাবীর মুখে ফরয করেছেন; অথচ তিনি জানেন যে, তাঁরা আপসে ল|ড়াই করবে। তাদের মর্যাদা এ কারণে সকলের ঊর্ধ্বে যে, তাঁদের ইচ্ছাকৃত ভুল ও তাদের আপসের মধ্যে সংঘটিত সকল কলহ-বিবাদ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।" [কিতাবুশ্ শারহ ওয়াল ইবানাহ আলা উসূলিস সুন্নাহ ওয়াদ্দিয়ানাহ,ইবনু বাত্তাহঃ পৃ: ২৬৮]
●● সাহাবীদেরকে গালমন্দ করার ভয়াবহ পরিণামঃ
এটা প্রমাণিত যে, নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে মিথ্যা বলা সাধারণ মিথ্যা বলার মত নয়। ঠিক তেমনি সাহাবিদের গালিগালাজ করা সাধারণ লোককে গালমন্দ করার মত নয়! বরং এর ভয়াবহতা ও পরিণাম অনেক সুদূরপ্রসারী। সাহাবিদের গালমন্দকারী বিভিন্ন দল, যেমনঃ শি|য়া-রা|ফেযী সম্প্রদায় সামান্য কিছু সাহাবী ব্যতীত বাকি সকল সাহাবিদের কা|ফির-মুরতাদ বলে কিংবা ফা|সেক বলে কিংবা তাঁদের সততায় প্রশ্ন তোলে ও অপবাদ দেয়। তাঁদের সম্বন্ধে এরকম যে কোনও বিশ্বাসই ভয়াবহ। আমরা এ পর্বে তারই কিছুটা বর্ণনা করার প্রয়াস পাবো ইন শা আল্লাহ।
■ ০১] অধিকাংশ সাহাবী(রাঃ) কে কা|ফির কিংবা মু|রতাদ মনে করা অথবা তাদের অধিকাংশকে ফাসেক মনে করার পরিণাম হচ্ছে কুরআন ও সুন্নায় সন্দেহ পোষণ করা! কারণ বর্ণনাকারী দোষনীয় হলে বর্ণনাও দোষযুক্ত হবে। ফলে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, আমরা কিভাবে ঐ গ্রন্থের প্রতি ভরসা করতে পারি, যে গ্রন্থকে ফাসেক ও মুরতাদরা বর্ণনা করেছে। হয়তঃ একারণে কতিপয় পথভ্রষ্ট ও বিদআতিদের দেখা গেছে তারা সাহাবিদের গালি দেয়। তারা স্পষ্টভাবে বলেঃ "আল কুরআন অক্ষত নয়; বরং তা বিকৃত।" আর অনেকে এ বিশ্বাস প্রকাশ না করে গোপন রাখে। এ মন্তব্য হাদীসের ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রযোজ্য। কারণ সাহাবাগণ অসৎ কিংবা অভিযুক্ত হলে হাদীসের সনদ অভিযুক্ত হয়ে পড়বে! ফলে সম্পূর্ণ হাদীস ভাণ্ডার অগ্রহণীয় হয়ে যাবে।
■ ০২] এই ভ্রান্ত মতকে কিছুক্ষণের জন্য মান্যতা প্রদান করলে এর পরিণাম স্বরূপ একথা বলা বৈধ হবে যে, নাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের এই উম্মত মন্দ উম্মত এবং এই উম্মতের প্রথম যুগের লোকেরা মন্দ প্রকৃতির ছিল। আর স্বর্ণ যুগের সাধারণ লোকেরা কা|ফির বা ফাসেক ছিল এবং সেটা ছিল মন্দ শতাব্দী। আরো কত ঘৃণিত মন্তব্য যা তাদের মুখে উচ্চারিত হয়!!
★ চলবে ইন শা আল্লাহ... আগামী পর্বে সমাপ্ত !
●● ইয়া আল্লাহ তা'আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল ও হিফাযত করুন(আ-মীন)।
Post a Comment