রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন ব্যক্তির দোষ গোপন করলো, সে যেন জীবন্ত পুঁতে ফেলা কোনো কন্যাকে কবর থেকে উঠিয়ে জীবন দান করলো।’’
[ইমাম হাকিম, আল-মুসতাদরাকঃ ৪/৪২৬; ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহঃ ২/২৭৫; হাদিসটি সহিহ]
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহঃ ২৪৪২; ইমাম মুসলিম, আস-সহিহঃ ৫৮]
চিন্তা করে দেখুন! আমরা এমন কে আছি, যার কোনো গুনাহ নেই? আল্লাহ্ যদি আমাদের গুনাহগুলো প্রকাশ করে দেন, আমরা কি সমাজে স্বাভাবিকভাবে আর চলাফেরা করতে পারবো? আর এসব গুনাহ যদি হাশরের ময়দানে পৃথিবীর সকল মানুষের সামনে তিনি উন্মোচন করে দেন, তবে অবস্থাটা কী হবে? আল্লাহর কত দয়া যে, তিনি আমাদের সব গুনাহগুলোকে সেদিন ঢেকে রাখবেন, যদি আমরা মানুষের গুনাহ এবং তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো এই দুনিয়াতে ঢেকে রাখি! আল্লাহু আকবার! সুব'হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।
কারো মাঝে কোন দোষ পেলে কী করণীয়?
০১) যদি কেউ গোপনে গুনাহ করে, যে গুনাহের ফলে সে একাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়—অন্যরা হয় না—সেই গোনাহের কথা কারো কাছে বলা জায়েয নেই। তাকে গোপনে এ ব্যাপারে সংশোধন করতে হবে। যেমনঃ কেউ বিবাহবহির্ভূত হারাম সম্পর্কে থাকে; সে এটিকে গোপন রাখে, কাউকে জানায় না। এমন ক্ষেত্রে তার এই গোপন গুনাহের কথা বাইরে বলে বেড়ানো যাবে না। বরং তাকে পার্সোনালি সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।
০২) যদি কারো গুনাহ দ্বারা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেটির প্রতিবাদ করতে হবে। যেমনঃ প্রকাশ্যে গান-বাদ্য বাজানো, প্রকাশ্যে মদ্যপান করা, প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ও পাপাচার করে বেড়ানো ইত্যাদি। এগুলোর প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করতে হবে। কারণ এগুলো দ্বারা সমাজের ক্ষতি হয়, সমাজের লোকেরা পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার মোটিভেশান পায়। তাই এটির বিরোধিতা প্রকাশ্যেই করতে হবে!!
দোষ গোপন রাখার এ আমলটি মহান আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। অন্যের দোষ গোপন রাখা ওয়াজিব। যে কারণে দোষ গোপনকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে পাবেন অনেক বড় প্রতিদান। কী প্রতিদান সেটি। এ সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই বা কী বলেছেন?
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-
لا يَستُرُ عبدٌ عبدًا في الدنيا إلا سَتَره الله يوم القيامة
‘দুনিয়াতে যদি কোনো বান্দা অপর কোনো বান্দার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে তবে কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার দোষ-ত্রটি গোপন রাখবেন।’ (মুসলিম)
মানুষের জন্য কত বড় চমৎকার ঘোষণা ও পুরস্কার এটি। যখন কোনো মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের কোনো অপরাধ-অন্যায় দেখে, তবে তার ওপর ওয়াজিব হলো তা গোপন রাখা। অন্য মানুষের কাছে তা প্রচার না করা। কারণ কারো দোষ-ত্রুটি অন্য কারো কাছে বলে বেড়ানো একটি অশ্লীল কর্ম প্রচার করার অন্তর্ভুক্ত।
পক্ষান্তরে-
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এই দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার কাজটি করবে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই কেয়ামতের দিন তাকে বিনিময় দান করবেন। তার দোষ-ত্রুটিগুলো গোপন করবেন এবং সব মানুষের সামনে তাকে অপমান করবেন না। মুমিন মুসলমানের জন্য এর চেয়ে বড় প্রতিদান আর কী হতে পারে!
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কারো কোনো দোষ-ত্রুটি দেখলেই তা গোপন রাখা। একজনের কাছ্যে অন্য জনের দোষ-ত্রুটি বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকা। তবেই হাদিসের ঘোষণায় আশা করা যায়, মহান আল্লাহ ওই বান্দার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। মানুষের সামনে অপমান থেকে মুক্তি দেবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে পরস্পরের দোষ-ত্রুটি বলে বেড়ানো থেকে হেফাজত করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। পরকালে নিজেদের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ হওয়া এবং অপমান হওয়া থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।
إرسال تعليق