نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد: فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم. بسم الله الرحمن الرحيم.. ومن يتوكل على الله فهو حسبه
نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد: فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم. بسم الله الرحمن الرحيم.. ومن يتوكل على الله فهو حسبه
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর মাঝে যত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন, সমস্ত মাখলুকের জন্য রিজিক নির্ধারিত করে দিয়েছেন।কিন্তু মানুষ আজ সকল বিষয়ে কেমন যেন রব থেকে দুরে সরে গিয়েছে।এখন মানুষ আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা না করে কেমন যেন দুনিয়ার উপর নির্ভর করে।অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে কারীমে বলেন..
ومن يتوكل على الله فهو حسبه
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন.
وعلى الله فليتوكل المؤمنون
হাদিস শরীফে রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন..
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে কেউ যদি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তাহলে আল্লাহ তালা তোমাদের এমন জায়গা থেকে রিজিক দিবেন, যেভাবে তিনি পাখিদেরকে রিজিক দান করেন। কেননা পাখিরা যখন সকালবেলা নীড় ছেড়ে যায়, তখন তাদের পেটে একটি দানাও থাকে না। আর বিকালে যখন তারা নীড়ে ফিরে আসে, তখন তাদের পেটে একটি দানা রাখার মত জায়গাও থাকে না।'
তাওয়াক্কুল হল. আল্লাহ তায়ালার সাথে একটি সম্পর্কের নাম, যে ব্যক্তি এই সম্পর্ক ঠিক রাখবে। আল্লাহ তা'আলা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন।
সুতরাং আল্লাহ তালার উপর বিশ্বাস ভরসা ঠিক রাখতে হবে।
কেননা স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিশ্বাস না থাকলে, তাদের সম্পর্ক ঠিক থাকে না। ঠিক তেমনি ভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস না থাকলেও সম্পর্ক ঠিক থাকবে না।
পোষা কুকুরের উপর আমি এবং আমরা যতটুকু ভরসা রাখি, ততটুকু ভরসা আমার আল্লাহর উপর রাখিনা।সুতরাং ভাবার বিষয় হলো.আমরা আল্লাহর সাথে কতটুকু সম্পর্ক ঠিক রাখতে পেরেছি, আমরা দেখি অনেক তাদের পোষা কুকুরকে তাড়িয়ে দেয়, বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসে পরীক্ষা করে, যে সেটা ফিরে আসে কিনা?
ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন ওই আরশ থেকে ওই রুহের জগৎ থেকে, আমরা আমাদের মালিকের সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে তার কাছে ফিরে যেতে পারি কিনা? সেটা দেখার জন্য!
সুতরাং যারা আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে, আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যথেষ্ট হবেই। তবে বিশ্বাসের মতো বিশ্বাস রাখতে হবে।
তার নজির অনেক রয়েছে, যেমন...
হযরত ইউনুস (আঃ) নদীতে ঝাপ দিয়েছিলেন, আর তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করে দিয়েছিলেন। বিনা অক্সিজেন আল্লাহ তাআলা তাকে সেই এই মাছের পেট থেকে রক্ষা করেছেন।
এমনিভাবে..
হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা'আলা বললেন ا الق عصاك এটা বললেন, ওই মুহূর্তে যখন নাকি চতুর্দিকে সাপ, লাঠিটাও যদি ফেলে দেয়, তাহলে তার কাছে কিছুই থাকে না। ওই সময় তিনি লাঠি ফেলে দিলেন। সেটা সাপ হয়ে সব সাপ গুলো খেয়ে ফেললেন।নল নদীতেও পিছনে ফেরাউনের বাহিনী. ওই সময় হাতের লাঠিটা ফেলে দিতে বললেন, তিনি ফেলে দিলেন। ১২ টা রাস্তা হয়ে গেল।
এমনিভাবে..
হযরত মূসা আলাইহিস সালামের জামানায় তীহ ময়দানে একবার বালুকাময় ভূমিতে তৃষ্ণানার কারণে সকলেই মুসা আলাইহি সাল্লামের কাছে আসলো, পানির জন্য। ওই সময় আল্লাহ তা'আলা মূসা (আঃ) কে বললেন.. الق عصاك একটা মাত্র লাটি, যদিও পাথরের সাথে আঘাত করা হয়, তাহলে ভেঙ্গে যাবে, যদি লাঠি টাও থাকতো তাহলে গর্ত করে পানি বের করা যেত। ওই সময় তিনি আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে লাঠি দিয়ে পাথরের আঘাত করলেন। আল্লাহ তা'আলা বনি ইসরাইলের জন্য ১২টি পানির ছিদ্র খুলে দিলেন, আল্লাহর উপর ভরসা করার কারণে।
এমনিভাবে...
এক যুদ্ধে কোন এক সাহাবী লুঙ্গি পরে খালি গায়ে যুদ্ধ করতে ছিলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি যুদ্ধের জিনিসপত্র পরিধান করেননি কেন? শত্রুদের তীর আপনার গায়ে লাগবে! সে জবাব দিল আমি তো মরার জন্যই এখানে এসেছি। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি, তিনি আমার জন্য যথেষ্ট।
হযরত আমর ইবনে আস قادسيه এর যুদ্ধে যখন সমুদ্র কিনারে পৌঁছলেন. তখন ভাবলেন!
সমুদ্রের ঐ পাশে কোন মানুষ যদি থাকে তার কাছেও আমরা দ্বীনের দাওয়াত পাঠাতে সমুদ্র পার হব, যদিও পার হওয়ার মতো কিছু নেই।
কিন্তু তারপরেও তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি কবিরা গুনাহগার আছে, সবাই বলল না। তখন তিনি তাদের সবাইকে নিয়ে ঘোড়া দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলেন, সকলেই নদী পার হয়ে গেল। ওই পার যাওয়ার পর সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন! তোমাদের কারো কিছু হারিয়েছে কিনা?
এক সাহাবী বলল! আমার একটি পেয়ালা হারিয়েছে, আর একজন বলল. আরে ভাই! তুমি ঘোড়াসহ শুকনা শরিলে আসছো এটাই তো বেশি? পিয়ালার চিন্তা করো কেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি। তিনি আমার সবকিছু হেফাজত করবেন। হযরত আমর বিন আস (রাঃ)সমুদ্রকে ঘোষণা দেওয়ার আগেই পেয়ালা তার সামনে উপস্থিত হয়ে যায়।
সুতরাং বোঝা গেল, আল্লাহর উপর ভরসা করা অনেক বড় বিষয়! যে তাদের ঘোড়ার পায়ের ক্ষুর পর্যন্ত ভেজে নাই। তাও আবার পানির উপর দিয়ে এসেছে।
হযরত মুসা (আঃ)কে তো পানির মাঝে রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মাটির রাস্তা দিয়ে এসে গেছে।
কিন্তু এই উম্মতের বৈশিষ্ট্য হলো. এই যে পানির উপর দিয়ে তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা পার করিয়েছেন।
সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসা করার মানে এই নয়, যে হাত গুটিয়ে বসে থাকা আর আল্লাহ রিজিক দিবেন? এটা হল ফাজলামি ছাড়া আর কিছু না।
তাওয়াক্কুল হল! ৭ হাত পাইপ মাটিতে গাড়তে হবে। তারপর পানির জন্য আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করতে হবে। ডাবের পাইপ দিয়ে মাটিতে লাগিয়ে চুষলে তাওয়াক্কুল হবে না। ফাজলামি হবে?
অসুস্থ হলে আল্লাহ তা'আলা শেফা দান করেন, এটা বিশ্বাস রাখতে হবে টাকা নয়!
واذا مرضت فهو يشفي
হযরত আলী( রাঃ) ফাতেমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি খেতে মন চায়? ফাতেমা বলল. আমার আনার খেতে মন চায়, আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পকেটে একটি মাত্র দিনার ছিল. সেটা দিয়ে বাজার থেকে ছোট্ট একটি আনার কিনলেন। আসার সময় এক ভিক্ষুক চাওয়ায়, তাকে তিনি এটা দিয়ে দিলেন। বাড়িতে মুখ কালো করে ফিরে আসলেন। ফাতেমা বললেন মুখ কালো করার কিছু নেই, তুমি আমাকে আনার না দিয়ে যদি এসে বলতে যে ভিক্ষুককে দিয়েছি তাহলে আমাকে দেওয়ার চেয়ে বেশি খুশি হতাম।
অতঃপর সালমান ফারসি এক ঝুরি আনার নিয়ে আসলেন, এতে নয়টি আনার ছিল আলী (রাঃ)কে দিলেন তিনি দেখলেন ৯ টি আনার। জিজ্ঞাসা করলেন এটা কি আমার জন্য? সালমান বললেন রাসুল তোমার জন্য এটা পাঠিয়েছেন। আলী বললেন এটা আমার জন্য নয়, কারণ আমার বিশ্বাস আছে যে আল্লাহ তাআলা আমাকে একটি পরিবর্তে দশটি দিবেন, নয়টি দিবেন না!
সালমান বললেন এটা তোমাকো জন্য তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য একটি আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম।
হযরত মারিয়াম আঃ এর গর্ভে যখন ঈসা (আঃ) আসলেন, তখন তিনি ঘর থেকে বের হন না মানুষ লজ্জা দিবে এই ভয়ে। তখন আল্লাহ তা'আলা খাবার খাওয়ার জন্য বলেন খেজুর গাছের ঝাঁকিয়ে দাও এমন শুকনা গাছ। যেটা ধাক্কা দিতে ১০-১২ জন লোক লাগে। যদি অন্য কোন গাছ হতো তাহলে কথা ছিল, যে পাতা পড়বে? কিন্তু এমন শক্ত গাছ ঝাঁকি দিলেন তো তাজা খেজুর বের হয়ে আসলো। এটা আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করার কারণেই হয়েছে।
তবে বান্দার চেষ্টা করতে হবে কারণ আল্লাহ তা'আলা চাইলে কুদরতি ভাবে খেজুর দিতে পারতেন কিন্তু দেননি।
কারণ বান্দার চেষ্টা শেষ হলে আল্লাহ তা'আলা দান করেন, তার সামর্থ্য ছিল গাছ ঝাকি দেওয়া, সে দিয়েছে। বাকি খেজুর দেওয়ার কাজ আল্লাহ তা'আলা সম্পন্ন করেছেন। সুবহানাল্লাহ.....
আমাদের সবাইকে সবকিছুতেই আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করার তৌফিক দান করুন, আমিন!
إرسال تعليق