الحمد لله الذي وفقنا للشركه في هذه الحفله
والصلاه والسلام على محمد بن عبد الله اما بعد: فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم.. ظهر الفساد في البر والبحر بما كسبت ايدي الناس.
وقال النبي صلى الله عليه وسلم.. ألجهاد ماض إلي يوم القيامه
মুসলিম জাতির উত্থান ও পতনের ইতিহাস অতি দীর্ঘ এবং ঘটনাবহুল। মুসলমানদের জীবনের সকল দিক, বিশেষভাবে রাজনীতি, অর্থনীতি, জ্ঞানচর্চা, সমরনীতি ধর্মপালন ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। উত্থান পতনের ইতিকাহিনী জানলে মুসলমানদের বর্তমান সমস্যাবলী বোঝা সহজ হয়ে আসবে। যারা ইসলামের সেবা করতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই উচিত মুসলমানদের অতীত সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করা। এখানে কেবল এই উম্মাহর (জাতির) উন্নতি ও অবনতির কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
চলুন,আমরা মুসলিম জাতির উন্নতি সম্পর্কে জেনে নেই,
মুসলিম জাতির উন্নতি: ইসলামের আবির্ভাব এবং দ্রুত বিস্তার মানবজাতির ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব, বিস্ময়কর ঘটনা যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ইচ্ছাশক্তি এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে একটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও কিভাবে সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দ্রুত উন্নতির উচ্চপর্যায়ে পৌঁছতে পারে। ইসলামের আবির্ভাবের প্রাক্কালে আরবের অবস্থা কি রকম শোচনীয় ছিল তা মোটামুটি সবারই জানা আছে।
ওই সময় আরবরা শুধু চরম দরিদ্রই ছিল না, ছিল সকলদিক দিয়েই অধঃপতিত। মূল কারণ ভৌগোলিক।
আরবের প্রায় সবটাই বৃষ্টিপাতহীন ধূসর মরুভূমি যেখানে কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদনের সুযোগ খুবই সীমিত। যেসব স্থানে কিছু কিছু পানি আছে জনবসতি কেবল সেগুলোতেই সীমাবদ্ধ। নিজেদের প্রয়োজন মেটাবার মত খাদ্য ও অন্যান্য বস্তু উৎপাদনের সুযোগই তাদের ছিল না। তাই প্রায় সবার জীবিকা ছিল আঞ্চলিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। দক্ষিণের ইয়েমেন অঞ্চল এবং উত্তরের ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে পণ্য আনা নেয়াই ছিল তাদের প্রধান বাণিজ্য। মক্কাবাসীদের রোজগারের অন্যতম উৎস ছিল মক্কায় তীর্থযাত্রীদের আসা-যাওয়া। স্থানীয় উৎপাদিত দ্রব্যের মধ্যে ছিল কিছু খেজুর আঙুর ইত্যাদি ফল এবং পশুজাত বস্তু। স্বাভাবিক কারণেই অধিকাংশ লোক কষ্টেসৃষ্টে কোনোমতে জীবন ধারণ করতো। দারিদ্র যে নানাপ্রকারের দুর্নীতিও অনাচারের জন্ম দেয় তা চিরসত্য। অত্যাচার, লুণ্ঠন, চুরি, ডাকাতি, বেশ্যাবৃত্তি, প্রতারণা ছিল তাদের সমাজের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। আরবরা সব সময় গোত্রে বিভক্ত ছিল। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ লেগেই থাকত। খাবার দিতে পারবে না বলে গরিব লোকেরা নিজেদের কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলত এবং মারার পদ্ধতি ছিল জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা।
৬১০ খ্রিস্টাব্দে নবুয়ত লাভের পর নবী মুহাম্মদ (সা.) ধর্ম প্রচার শুরু করলেন। একজন দু’জন করে লোকজন তার ধর্ম গ্রহণ করতে লাগল। ক্রমে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে মক্কার নেতারা তার বিরোধিতা শুরু করে এবং নানাভাবে তাকে হয়রানি করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে, ফলে তাকে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করতে হয়। ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে তিনি পরকালের পুরস্কার ও শাস্তির কথা, মূর্তিপূজার অসারতার কথা, ইসলাম অনুসরণ করলে দুনিয়াতে ও আখেরাতে কি কি উপকার হবে সেসব কথা মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করতেন।
নবুয়ত লাভের পর নবী করিম (সা.) তেইশ বছর জীবিত ছিলেন, এর মধ্যে তের বছর কেটেছে মক্কায়, দশ বছর মদীনায়। এই দশ বছরে মুসলমানদের ছোট বড় ৭৮টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল, যার মধ্যে ২৮টিতে নবী করিম (সা.) স্বয়ং নেতৃত্ব দান করেছেন। ইসলাম ধর্ম যদি শুধু নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, জিকির ইত্যাদি ব্যক্তিগত ইবাদতের ধর্ম হতো তাহলে নবী করিম (সা.) কে নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করতে হতো না, তাকে যুদ্ধও করতে হতো না। তিনি এসব যুদ্ধ করেছেন আল্লাহর নির্দেশে এবং আল্লাহর জমিনে ইসলামের সকল বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে।
এ যুগের মুসলমানদের মধ্যে যারা এসব যুদ্ধের কারণে বিধর্মীদের কাছে লজ্জাবোধ করেন এবং মুখ কাঁচুমাচু করে বলতে চান এগুলো ছিল আত্মরক্ষামূলক, তারা সর্বাংশে সত্যবাদী নন। তবে অনেক যুদ্ধ যে আত্মরক্ষামূলক ছিল এ কথাও সত্য। পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহই মুসলমানদেরকে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নির্দেশ পালন না করলে কঠোর শাস্তি এবং পালন করলে মহাপুরস্কারের সংবাদ জানিয়েছেন।
কোনো বিধর্মী যখন ইসলাম গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে নবী করিম (সা.)-এর কাছে আসত, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে কলমা না পড়িয়ে, মুসলমান হবে কিনা ভেবে দেখার জন্য সময় দিতেন। কারণ চাপে পড়ে কিংবা আবেগতাড়িত হয়ে গ্রহণ করার জিনিস ইসলাম নয়। নবী করিম (সা.)-এর আমলে এবং তৎপরবর্তী সময়ে আরবে এবং আশপাশের এইসব এলাকায়, তথা পৃথিবীর সর্বত্র সামন্তবাদ অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। সব এলাকার সাধারণ মানুষ সামন্ত প্রভুদের শোষণ ও অত্যাচারে যে জর্জরিত ছিল তা সবারই জানা। এর উল্লেখ আছে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসা ৭৫ আয়াতে।
وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَالۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا ۚ وَاجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا (٧٥)
অর্থঃ আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’
ইসলামের ইতিহাস যারা অল্পস্বল্পও পড়েছেন তারা অবশ্যই জানেন যে, ইসলাম প্রচার শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে যারা এ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই ছিলেন গরিব, অসহায়, শোষিত, নির্যাতীত ও অবহেলিত শ্রেণির লোক।
এ ধর্ম যে তাদের জন্য কল্যাণজনক তা তারা বুঝতে ভুল করেননি।
ইসলাম গ্রহণ করার কারণে হযরত বেলাল (রাঃ) আম্মার, খোবায়েব (রা.) গণ চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা এ ধর্ম ত্যাগ করেননি।দুঃখের বিষয়, এখন থেকে প্রায় দেড়হাজার বছর পূর্বে আরবের বঞ্চিত, মুর্খ লোকেরা ইসলামের মধ্যে নিজেদের যে কল্যাণ ও মর্যাদা দেখতে পেয়েছিল, বর্তমানের শিক্ষিত, বুদ্ধিমান (এরাও বঞ্চিত) মুসলমানরা তা দেখতে পায় না। একেই বলে চোখ থাকতে অন্ধ। ওই সময়ে কায়েমী স্বার্থবাদী কাফেররা ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বাধাদান করতো। বর্তমানে কায়েমী স্বার্থবাদী তথাকথিত মুসলমান সমাজপতিরা ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়। তখন মুসলমানদের ব্যক্তিগত ইবাদত যথা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি নিয়ে যেমন কাফেররা মাথা ঘামায়নি বর্তমানের তাগুতরাও ব্যক্তিগত ইবাদত নিয়ে মাথা ঘামায় না। এজন্য এরা ইসলামী আন্দোলনে বাধা দেয়, কিন্তু তবলিগ জামাতের কাজে আপত্তি করে না।
যাই হোক, বহু কষ্টের বিনিময়ে নবী করিম (সা.) শেষ পর্যন্ত মদীনাকে কেন্দ্র করে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেছিলেন, যেখানে আল্লাহর ধর্ম সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নবী করিম (সা.)-এর মৃত্যুর সময় আরবের অধিকাংশ লোক ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেছিল।
নবী করিম (সা.) এর মৃত্যুর পর আরবের বাইরে ইসলামের প্রসার ও মুসলমানদের রাজ্য বিস্তার শুরু হয়। প্রথম দিকে রাজ্য বিস্তার হয়েছিল ঝড়ের গতিতে। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নবী করিম (সা.) এর মৃত্যু হয়। এর ১২বছরের মধ্যে খলিফা ওমর (রা.) এর মৃত্যুর সময় ইসলামী রাষ্ট্রের সীমা উত্তরে ককেশাস পর্বতমালা, পূর্বে ইরানের পূর্বাংশ এবং পশ্চিমে আলজেরিয়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল, সম্পূর্ণ আরব উপদ্বীপ ও পশ্চিম এশিয়া। বর্তমানে তুরস্কের পূর্বাংশ সহ আজারবাইজান, ইরানের পশ্চিমাংশ, সম্পূর্ণ মিশর, লিবিয়া তিউনিসিয়া এবং আলজেরিয়ার উত্তরাংশ এ রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।
মুসলিম জাতির ইতিহাসে মুসলমানরা শুধু ধর্ম বিস্তার আর রাজ্য জয়ই করেনি- জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, বীজগণিত, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়ে তারা আধুনিক বিজ্ঞানের জনক। ইউরোপীয় রেনেসাঁর পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানরা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে ছিল। কালক্রমে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং অন্যান্য কারণে এই জ্ঞানচচার পশ্চাদপদতা সবারই জানা। মধ্যযুগে এক সময় মুসলমানরা ব্যাপকভাবে দর্শনশাস্ত্রের চর্চা করেছিল। একাজ করতে গিয়ে অনেকেই বিজাতীয় দর্শনে প্রভাবিত হয়ে নিজের ধর্ম বিকৃত করেছে।
মুসলমানদের সমস্যা হচ্ছে, তারা তাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কোনটা নিয়েই মাথা ঘামায় না। অথচ ইউরোপের খ্রিস্টানরা মুসলমানদের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করে। বর্তমানের মুসলমান সম্বন্ধে বলার মত ভালো কোনো কথা নেই।
চলুন,এবার মুসলিম জাতির অধঃপতন সম্পর্কে জেনে নেই!
মুসলিম জাতি অধঃপতন: ইসলাম ধর্ম পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিল মাত্র ৪০ বছর। এর মধ্যে নবী করিম (সা.)-এর জীবনের শেষ দশ বছর এবং প্রথম চার খলিফার আমলের ৩০ বছর। এর পর থেকেই পতনের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং এখনও পর্যন্ত তা অব্যাহত।
বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলাম নামে যে জিনিসের অনুসরণ করা হয় তা প্রকৃত ও পূর্ণ ইসলাম নয়। ইসলাম বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সার্বিক অধঃপতন ঘটেছে। ধর্মীয় ও জাগতিক উভয় দিক দিয়েই তারা এখন চরমভাবে অধঃপতিত। মুসলমানদের পতনের বহু কারণের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হচ্ছে- ধর্মবিদ্রোহ, ধর্ম বিকৃতি, খেলাফত উৎখাত, দলাদলি, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবহেলা এবং ধর্ম পরিত্যাগ।
মুসলিম জাতির ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যায়, মুসলমানরা ছিল শ্রেষ্ঠ জাতি, আল্লাহর কাছে সবচে সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য জাতি। মুসলমানরা বীরের জাতি, বিজয়ী জাতি। একসময় বিশ্বের বড় বড় সকল পরাশক্তি মুসলমানদের শক্তির কাছে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, মুসলিম উম্মাহ বিজয়ী নয়! আজ পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মুসলিম উম্মাহ নির্যাতিত-নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, পরাজিত। এর কারণ কী? বীরের জাতির এমন অধঃপতন কী করে হল? যে জাতির নাম শুনলে কাফেররা থরথর করে কাঁপত, আজ তারাই কেন কাফেরদের ভয়ে কাঁপে? আজ তারাই কেন কাফেরদের হাতে মার খায়? কেন লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, পরাজিত হয়?
মুসলিম জাতির এসবের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল—
আল্লাহ তাআলার কিছু অলঙ্ঘনীয় অপরিবর্তনীয় মূলনীতি রয়েছে। আল্লাহ তাআলার একটা মূলনীতি হল,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَنۡصُرُوا اللّٰهَ یَنۡصُرۡکُمۡ وَ یُثَبِّتۡ اَقۡدَامَکُمۡ ﴿۷﴾
“যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করে দেবেন।” [সুরা মুহাম্মাদ : ৭]
আল্লাহকে সাহায্য করার অর্থ হল তাঁর দীনের সাহায্য করা, তাঁর শরিয়ত বাস্তবায়ন করা, তাঁর দীন কায়েমের জন্য সংগ্রাম করা। আজ মুসলমানরা ইসলাম থেকে দূরে সরে গিয়েছে, শরিয়ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহকে সাহায্য করছে না। এমতাবস্থায় এই জাতিকে আল্লাহ কেন সাহায্য করবেন? কীভাবে তাদের বিজয় আসবে?
আজ মুসলমানদের কাছে ইসলামের কোনো মূল্য নেই। মুসলমানরা আজ খেলোয়াড়দের নাম জানে, নায়ক-নায়িকাদের নাম বলতে পারে, গান মুখস্থ করে, কিন্তু সাহাবিদের নাম জানে না, তাঁদের সংগ্রামের কাহিনি জানে না, কুরআনের দুয়েকটা সুরা মুখস্থ বলতে পারে না!
আজ যে ব্যক্তি ইসলামের পক্ষে কথা বলে, তাকে যথাসম্ভব রাখঢাক করে, ভেবেচিন্তে কথা বলতে হয়। কিন্তু যে পাপাচার ও অবাধ্যতার পক্ষে কথা বলে, তাকে কোনো রাখঢাক করতে হয় না; সে সরাসরি তার পাপাচারের পক্ষে কথা বলে। যে জাতির পাপাচারীরা পাপাচার ও ঘৃণ্য কাজের পক্ষে কথা বলতে ভয় পায় না কিন্তু আলেমরা সত্য কথা বলতে ভয় পান, সে জাতিকে আল্লাহ তাআলা কেন সাহায্য করবেন?! আল্লাহ তাআলা বলেন,
ظَهَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَهُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ ﴿۴۱﴾
“মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি ওদেরকে আস্বাদন করানো হয়। যাতে ওরা (সৎপথে) ফিরে আসে।” [সুরা রুম : ৪১]
দ্বিতীয় কারণ: মুসলিম জাতির আজ ভ্রাতৃপ্রেমের অভাব।
মুসলমানরা একে অপরের ভাই। এমনকি সারাজীবন দেখা না হওয়া বিশ্বের এক প্রান্তের মুসলমানও অন্য প্রান্তের মুসলমানের ভাই৷
আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ﴿۱۰﴾
“মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই; সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃগণের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।” [সুরা হুজুরাত : ১০]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “মুসলমান মুসলমানের ভাই। তাই তোমরা পরস্পরকে হিংসা করো না, ঈর্ষান্বিত হয়ো না, কারও পেছনে লাগবে না; এবং তোমরা এক আল্লাহর দাস হয়ে যাও এবং হয়ে যাও একে অপরের ভাই।”
তৃতীয় কারণ: পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
ভ্রাতৃপ্রেম না থাকারই চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। যুগে যুগে মুসলমানরা কাফেরদের হাতে মার খাওয়ার ও পরাজিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নিজেদের মধ্যে দ্বন্ধ-সংঘাত, বিভেদ-বিভাজন। মুসলিম বিশ্বের প্রায় সবকটা দেশই একটা অন্যটার সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। এমতাবস্থায় উদাহরণত আজ ফিলিস্তিনে কাফেরদের হামলা হলে সিরিয়া ফিলিস্তিনের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না বা আসবে না। তেমনিভাবে ইরাকে আক্রমণ হলে ইরান বা কুয়েত তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় তাদের শক্তি হ্রাস পেয়েছে। তাই কাফেররা তাদের ওপর অনায়াসে হামলা করছে।
চতুর্থ কারণ: মুসলিম জাতি আজ বিলাসিতা ও দুনিয়ায় মজে যাওয়া।
তত্ত্বগতভাবে মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী এবং আল্লাহর কাছে দুনিয়ার কোনো মূল্য নেই।
باب مَا جَاءَ فِي هَوَانِ الدُّنْيَا عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ " . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ .
“দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহর কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য হত, তাহলে তিনি কোনো কাফিরকে এক ঢোকও পানি পান করতে দিতেন না।” [সুনানে তিরমিজি : ২৩২০; মিশকাতুল মাসাবিহ : ৪৯৫০]
মুসলমানরা তত্ত্বগতভাবে এগুলো জানলেও তাদের বাস্তব জীবনের কর্মকাণ্ড এর বিপরীত। বর্তমানে মুসলমানরা বিলাসিতা ও দুনিয়ায় মজে গিয়েছে। যেন দুনিয়াই সবকিছু, দুনিয়ার জন্যই সবকিছু। আজ অনেক মুসলমান খাবারটা জুটাতে পারে না, তবুও তার সিগারেট ছাড়া চলে না! সন্তানাদির পোশাক কিনতে পারে না, তবুও সে ইন্টারনেট আর ক্যাফেটেরিয়ায় টাকা খরচ করে! বিলাসিতার চিত্র দেখলে মনে হয় মুসলমানদের যেন দুনিয়াই সব, যেন তাদেরকে মারা যেতে হবে না, যেন আখিরাত বলে কিছু নেই!! অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ ؕ وَ اِنۡ تُصِبۡهُمۡ حَسَنَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا هٰذِهٖ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡهُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا هٰذِهٖ مِنۡ عِنۡدِکَ ؕ قُلۡ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ ؕ فَمَالِ هٰۤؤُلَآءِ الۡقَوۡمِ لَا یَکَادُوۡنَ یَفۡقَهُوۡنَ حَدِیۡثًا ﴿۷۸﴾
“তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।” [সুরা নিসা : ৭৮]
পঞ্চম কারণ: জিহাদ বর্জন করা।
দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক ঝুঁকে পড়া ও বিলাসিতায় খুব বেশি ডুবে যাওয়ার ফলে মুসলমানরা জিহাদ ছেড়ে দিয়েছে। তারা আল্লাহর দেওয়া সংগ্রামের পথ ছেড়ে তথাকথিত শান্তির পথ বেছে নিয়েছে। অথচ এটা শান্তি নয়; এটা আত্মসমর্পণ, এটা বশ্যতা। যে কারণে দেখা যায়, মুসলমানরা সংগ্রাম করতে চাইলেই এই শান্তি বিঘ্নিত হয়ে যায়, কিন্তু কাফেররা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করলেও শান্তি বজায় থাকে!! মুসলমানরা কাফেরদের তথাকথিত শান্তির ফাঁদে পড়ে কাতরায়। অথচ কাফেররা সর্বাবস্থায়ই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে এবং থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ لَا یَزَالُوۡنَ یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ حَتّٰی یَرُدُّوۡکُمۡ عَنۡ دِیۡنِکُمۡ اِنِ اسۡتَطَاعُوۡا ؕ
“আর তারা সবসময় তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে না দেয়, যদি তারা সক্ষম হয়।” [সুরা বাকারাহ : ২১৭]
এমনিভাবে মুসনাদে আহমাদের রিওয়ায়াতে এসেছে, “দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং যুদ্ধ-জিহাদকে অপছন্দ করা।” [মুসনাদে আহমাদ : ৮৭১৩]
ষষ্ঠ কারণ: জিহাদ ও লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে অবহেলা।
বর্তমান মুসলমানরা নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তথা জিহাদ যেমন ছেড়ে দিয়েছে, তেমনি এর প্রস্তুতিও ছেড়ে দিয়েছে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ ﴿۶۰﴾
“তোমরা তাদের (মোকাবিলার) জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সুসজ্জিত অশ্ব প্রস্তুত রাখ। এ দিয়ে তোমরা আল্লাহর শত্রু তথা তোমাদের শত্রুকে সন্ত্রস্ত করবে এবং এ ছাড়া অন্যদেরকে, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে, তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অত্যাচার করা হবে না।” [সুরা আনফাল : ৬০]
আজ মুসলমানরা গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকাদের পেছনে টাকা ঢালছে, খেলাধুলা ও অনর্থক হাসিতামাশায় টাকা খরচ করছে; কিন্তু যুদ্ধের প্রস্তুতি ছেড়ে দিয়েছে, বিজয়ের উপায়-উপকরণ গ্রহণ করছে না। ইতিহাস অধ্যয়নে আমরা দেখতে পাই, যে যুগেই মুসলমানরা লড়াইয়ের প্রস্তুতির ব্যাপারে অবহেলা করেছে, সে যুগেই তারা শত্রুর মার খেয়েছে। এটা আল্লাহ তাআলার একটা রীতি— যে চেষ্টা-সাধনা করে, আল্লাহ তার চেষ্টা-সাধনাকে বিফল করেন না। যে শক্তির উপাদান সঞ্চয় করে, বিজয়ের উপায়-উপকরণ গ্রহণ করে, আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন। “
مَنۡ کَانَ یُرِیۡدُ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتَهَا نُوَفِّ اِلَیۡهِمۡ اَعۡمَالَهُمۡ فِیۡهَا وَ هُمۡ فِیۡهَا لَا یُبۡخَسُوۡنَ ﴿۱۵﴾
যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেওয়া হবে না।” [সুরা হুদ : ১৫]
সপ্তম কারণ: যোগ্য ও আদর্শবান নেতৃত্বের অভাব।
আজ মুসলমানদের আদর্শবান কোনো নেতা নেই। এমন কেউ নেই, যার ডাকে পুরো মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হবে। বর্তমান মুসলমানদের প্রায় সব নেতাই মুনাফিক, পথভ্রষ্ট, দূর্নীতিগ্রস্ত, আদর্শহীন ও জালেম। আল্লাহ তাআলার একটা নিয়ম হল— মুনাফিক ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের হাতে উম্মাহর বিজয় আসে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ لَا یُصۡلِحُ عَمَلَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿۸۱﴾
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কাজ সার্থক করেন না।” [সুরা ইউনুস : ৮১]
আদর্শবান নেতা ছাড়া মুসলমানদেরকে যতই ওয়াজ-নসিহত করা হোক, যতই যুদ্ধ ও বীরত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হোক, কোনো লাভ হবে না। আদর্শবান, যোগ্য লোকের হাতে ক্ষমতা অর্পণ না করাটা কিয়ামতের আলামত। যোগ্যতা না দেখে শুধু ঘুষ আর মামু-খালুর সহায়তায় ক্ষমতাসীন করা, নেতৃত্ব প্রদান করা মুসলমানদের ধ্বংসের অন্যতম কারণ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ بَيْنَمَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي مَجْلِسٍ يُحَدِّثُ الْقَوْمَ جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ مَتَى السَّاعَةُ فَمَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُحَدِّثُ، فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ سَمِعَ مَا قَالَ، فَكَرِهَ مَا قَالَ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ لَمْ يَسْمَعْ، حَتَّى إِذَا قَضَى حَدِيثَهُ قَالَ " أَيْنَ ـ أُرَاهُ ـ السَّائِلُ عَنِ السَّاعَةِ ". قَالَ هَا أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ " فَإِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ ". قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا قَالَ " إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ ".
উক্ত হাদিসের সারকথা হলো.
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “এক গ্রাম্য সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিয়ামত কখন হবে?’ জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বললেন, ‘যখন আমানত নষ্ট করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।’ সাহাবি জানতে চাইলেন, ‘কীভাবে আমানত বিনষ্ট হবে?’ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যখন অনুপযুক্ত লোকের কাছে নেতৃত্ব অর্পণ করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।” [সহিহ বুখারি : ৫৯]
যখন দায়িত্বগুলো এমনসব লোককে দেওয়া হবে, যারা যোগ্যও না, আমানতদারও না; কেবল কারও মাধ্যমে, আত্মীয়তার সম্পর্কের ভিত্তিতে কিংবা ঘুষের মাধ্যমে সেই পদে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকে, তবে জেনে রেখো, বিজয় অনেক দূরে। [কিসসাতুত তাতার, ড. রাগিব সারজানি : ৩৫৭]
আষ্টম কারণ: শত্রুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব।
বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে এই ব্যাধিটা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলমানরা আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা তথা আল্লাহর জন্যই বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্যই শত্রুতা—এই গুরুত্বপূর্ণ আকিদা ভুলে গিয়েছে। আজ তারা নিজেদের শত্রুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে। শান্তিচুক্তির নামে ইহুদি-খ্রিস্টানদের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে।অথচ আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡیَهُوۡدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوۡلِیَآءَ ۘؔ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّهُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاِنَّهٗ مِنۡهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۵۱﴾
হে মুমিনরা, তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে নিশ্চয়ই তাদেরই একজন। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৫১)
নবম কারণ: যথাযথ শুরাব্যবস্থা না থাকা।
মুসলমানদের শাসন পরিচালনার অন্যতম মানদণ্ড শুরা পরিষদ। শুরাব্যবস্থা ছাড়া এক নায়কতন্ত্র কায়েম করা ইসলামী শরিয়ত বিরোধী। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল (সা.)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আর কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
দশম কারণ: হতাশা ও মনোবলহীনতা।
এগুলো মুসলমানদের অধঃপতিত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত হওয়ার মৌলিক কয়েকটি কারণ। এগুলো মুসলিম উম্মাহর ব্যাধি।
এই কারণগুলোর প্রতিকারই বিজয়ের পথ, অধঃপতন থেকে উত্তরণের পথ। এগুলোর বাস্তবিক চিকিৎসা করতে হবে।
আমাদের ওপর আবশ্যক হল, এগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করা, নিজেদের মধ্যে সমস্যাগুলো আছে বলে বিশ্বাস করা, এগুলোর প্রতিকারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা এবং বিশ্বের বুকে মুসলিম উম্মাহর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের শক্তি ব্যয় করা।
Post a Comment