الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى اما بعد.. فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم.. وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ
وَقَالَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ" .
হযরত ওমর (রাঃ) এর মতের উপর কোরআনে করিমের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে, তার মধ্যে থেকে হয়রত উমর (রা) এর মতের উপর এই আয়াতটি ও নাযিল হয়ছে, এবং নাযিলের কারণঃ
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ ۖ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
বাংলা অনুবাদঃ তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৩৩)
জাহেলী যুগে মানুষ পর্দাহীন অবস্থায় চলাচল করতো, ইসলাম ধর্ম আসার পর ওমর (রাঃ) বললেন, আমার কাছে এটা ভালো লাগেনা, যে নবীদের স্ত্রীদের কে সবাই দেখবে? তখন এই আয়াত রাতে নাযিল হয়।
পরের দিন এক মহিলা সাহাবী মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করতে যায় পর্দাহীন অবস্থায়, সে পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার ব্যাপারে জানতো না। সে মহিলা সাহাবীয়া গিয়ে দেখে মহিলারা পর্দার ভিতর কাপড় মুড়ি দিয়ে বসে আছে, তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন তাদের শরীর ঢেকে রাখার কারণ সম্পর্কে? তখন মহিলারা বলল তুমি কি জানো না,যে গতরাতে পর্দার বিধান নাযিল হয়েছে? সে মহিলা বলল না আমি জানিনা।
তখন মহিলা চিন্তায় পড়ল সে তো পর্দাহীন অবস্থায় আছে বাড়িতে কিভাবে যাবে? তখন তার ছোট একটি ছেলের মাধ্যমে বাড়ি থেকে একটি চাদর আনে, সেই চাদর পরিধান করে তিনি বাড়িতে গেলেন।
বাড়ি যাওয়ার পর তার স্বামী তাকে বললেন এত দেরি হল কেন? আবার চাদর বাড়ি থেকে নিয়ে পড়ে তারপর আসলে, এর কারণ কি?
তখন মহিলা তার স্বামীকে বলল গতরাতে পর্দার বিধান নাযিল হয়েছে, স্বামী বলল তুমি তো জানতে না, সুতরাং বাড়িতে এসে পর্দা শুরু করতে, মহিলা বলল যেখানে আল্লাহর আদেশ হয়েছে, সেখানে আমি আল্লাহর বিধান না মেনে আমার এক পা সামনে আগানো কে ভয় পাচ্ছিলাম।
এটার নাম হল পর্দা। আল্লাহু আকবার
রাসূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যার চারকন্যা হয় অথবা চার বোন থাকে, আর সে যদি নিজে তাদের লালন-পালন করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন জান্নাতে তার মাঝে আর আমার মাঝে দুই আঙ্গুলের পার্থক্য থাকবে।সুবহানাল্লাহ
এটা ওই সময় বলেছেন যখন নাকি কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাদের অবস্থা এই হতো যে কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী....
يَتَوَارَىٰ مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ ۚ أَيُمْسِكُهُ عَلَىٰ هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ
বাংলা অনুবাদঃ তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।(সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৫৯)
যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করো এবং তোমাদের ঘরে মেয়েও থাকে ছেলেও থাকে কোন কিছু নিয়ে গেলে শরীয়তের মাসায়ালা হচ্ছে মেয়ের হাতে জিনিসটা তুলে দাও.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিন ব্যক্তির ব্যাপারে বলেছেনحرّم عليهم الجنه (অর্থাৎ তাদের উপর জান্নাত হারাম)। সেই তিন ব্যক্তি হলো...
(১) যে ব্যক্তি মদ পানে অভ্যস্ত।
(২) পিতা-মাতার সাথে খারাপ ব্যবহার কারী।
(৩)ديوس হল ঐ ব্যক্তি যে তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বহীন হয়।
অর্থাৎ পরিবারের লোকজন খারাপ কাজে জড়িত থাকলেও সে বাধা দেয় না। অর্থাৎ স্ত্রী বেপর্দায় থাকে মেয়ে বেপর্দায় থাকে অথচ সে তাদের পর্দা করতে আদেশ করে না।
বাধা না দেওয়ার অর্থ হল সমর্থন করা, এবং এ ধরণের ব্যক্তির ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ভাষ্য হলো জান্নাত তাদের জন্য হারাম করা হয়েছে।
গায়রে মাহরাম মহিলা থেকে সাবধান.. আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে যে সমস্ত মহিলাদের দিকে তাকানো নিষেধ করেছেন। আমরা ঘসা খাওয়ার চেষ্টা করি। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন শুকর নাপাক তার ওপর যদি আরো নাপাক দেওয়া হয়, এর সাথে ঘষা খাওয়া যেমন নিকৃষ্ট, এর চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট হল মহিলার সাথে ঘষা খাওয়া..
আমরা আমাদের মেয়েদেরকে খালাতো চাচাতো ভাইদের সাথে ছেড়ে দেই, ছেড়ে তো দেই,এবং চিন্তা ফিকির করি না। যখন তাকে নিয়ে ভেগে যায়, তখন মেয়ের বাবা বলে আমার তো ওর উপর বিশ্বাস ছিল, দুইজন একসাথে মিলিত হবে, আর কিছুই হবে না। এরা দুজন এটা কিছুতেই এমনটা করতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জাকারিয়া (আঃ) এর ছেলে ইয়াহিয়া (আঃ) ও ঈসা (আঃ) এর মা মারিয়াম (আঃ) যাদের কোন একে অপরের প্রতি আকর্ষণ ছিল না। তবুও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, এরা দুইজন যদি একত্রিত হয় আমি ভয় করি, না জানি কি হয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করলেন কোন মহিলা সবচেয়ে উত্তম?
এক একজন সাহাবী একেক রকম উত্তর দিলেন, কেউ বললেন যে তার স্বামীর অনুগত্য করে। কেউ বললেন যে ঘরের কাজ ভালোভাবে করে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে উত্তর দিতে লাগলো।
হযরত আলী (রাঃ) পিলারের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁকে পিছন থেকে ফাতেমা (রাঃ) বললেন সবচেয়ে উত্তম মহিলা হলো যেকোনো গায়রে মাহরাম কে দেখে নাই এবং তাকেও কোন গায়রে মাহরাম দেখে নাই। আলী (রাঃ) বের হয়ে বললেন আমার মনে হয় ওই মহিলা উত্তম, যাকে কোন গায়রে মাহরাম দেখে নাই এবং সেও কোন গায়রে মাহরাম দেখে নাই।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ফাতেমা হলো আমার শরীরের একটি অংশ। সাহাবায়ে কেরাম বললেন উত্তর দিলেন আলী (রাঃ) কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রশংসা করলেন ফাতেমা (রাঃ)! তখন আলী (রাঃ) বললেন আমি মূলত এই উত্তর দেইনি, এই উত্তর ফাতেমা (রাঃ) ভেতর থেকে আমাকে বলে দিয়েছে সেটাই আমি তোমাদের সামনে শুনিয়েছি...
মহিলা সাহাবীগণ কি পরিমাণ পর্দা করছেন..
একবার এক সাহাবীর ছেলে রাসূলের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন যুদ্ধ শেষে সকল সাহাবায়ে কেরাম সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসলেন। কিন্তু ঐ সাহাবীর ছেলে ফিরে আসেনি? তখন ওই ছেলের মা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে গেলেন এবং রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন আমার ছেলে কোথায়? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন তোমার ছেলে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছে।
তখন ওই মহিলা বাড়িতে গেল এবং অনেক সময় নিয়ে বোরকা পড়লো তারপর বের হলো। লোকেরা তাকে বলল তোমার ছেলে মারা গেছে অথচ তুমি এতক্ষণ লাগিয়ে বোরকা পরেছো তোমার ছেলের প্রতি কি কোন দরদ নেই? তখন ওই মহিলা জবাব দিলো আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি কিন্তু আমিতো আমার লজ্জা হারাইনি। সুবহানাল্লাহ
হযরত ফাতেমা (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন যে, আমার মৃত্যুর পর যেন আমাকে রাতে দাফন করা হয়। বেশি লোক কে ডাকার প্রয়োজন নেই, এবং আমার কবরটা এমন ভাবে দিবে, কবর যেন না থাকে। কেননা স্বাভাবিক ভাবে তো কবরের মাটি একটু উচু হয়, তবে আমার কবর সমান করে দিবে, যাতে করে মানুষ বুঝতে না পারে আমার কবর কতটুকু ছিল এতোটুকু পর্দা ও আমি লঙ্ঘন করতে চাই না। আল্লাহু আকবার
আমাদের আকাবিরদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা বালেগ হওয়ার পর তার নিজের বোনের চেহারাও দেখেননি? যেটা দেখা বৈধ ছিল। তারপর ও দেখেননি, কারণ বোনের চেহারা দেখার কারণে যদি কোন সময় কামনা বাসনা চলে আসে। সেজন্য তারা তাদের বোনকে দেখেন নাই।সুবহানাল্লাহ
এই জন্য পর্দার ব্যাপারে যদি আমরা আমাদের পরিবারকে বাধা দিতে না পারি? তাহলে মনে করতে হবে, আমিও حرم الله عليهم الجنه (আল্লাহ তাদের উপর জান্নাত হারাম করেছেন) এর কাতারে।
إرسال تعليق