হানাফী মাযহাবের কিছু বৈশিষ্ট্য
ইমামে আযম আবু হানিফা নো'মান ইবনে সাবেত (রহ.) কর্তৃক রচিত ফিকহী সংকলন হানাফী ফিকহ ও হানাফী মাযহাব নামে পরিচিত।
বর্তমানকাল পর্যন্ত ফিকহ শাস্ত্রের ব্যাপকতা ও স্থায়ীত্বপ্রাপ্ত চারটি সংকলনের মধ্যে হানাফী ফিকহের অনুসরণ করি বলে আমরা হানাফী নামে পরিচিত।
ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.) কমপক্ষে তিনজন সাহাবীর সাক্ষাত প্রাপ্ত একজন তাবেঈ। তিনি একজন বিজ্ঞ মুজতাহিদ, উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর ঐশী প্রতিভা ও অপূর্ব গবেষণা পদ্ধতির ফলে এ মাযহাব অন্যান্য মাযহাবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তাই আজ সারা বিশ্বে দুই তৃতীয়াংশেরও বেশী মুসলমান ও মাযহাবের অনুসারী।
যে সকল গুণাগুণ বৈশিষ্ট্যের কারণে এ মাযহাব শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করে আছে, তার কিছুটা বৈশিষ্ট্য এখানে তুলে ধরা হলো।
বৈশিষ্ট্য গুলো হল এই....
বৈশিষ্ট্য(১): কুরআনের অগ্রাধিকার।
ইসলামী শরীয়তের মূলভিত্তি হলো কুরআন। তাই কোন বিষয়ের দলীল প্রমাণ কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হলে কুরআনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এ মাযহাবে।
বৈশিষ্ট্য (২): হাদীসের যথাযথ মূল্যায়ন।
হানাফী আলেমগণ যখনই কোন বিষয়ে মাসআলা ইস্তেম্বাত করেন, প্রথমে সে বিষয়ের সকল হাদীস সামনে রাখেন, এবং তাতে গভীরভাবে গবেষণা করেন। যথাসম্ভব সকল হাদীসের সমন্বয়ে মাসআলা প্রদান করেন।
সব হাদীস সমন্বয় করা সম্ভব না হলে সহীহ্ হাদীসকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর কোন বিষয়ে সহীহ্ হাদীস না পাওয়া গেলে হাসান ও যয়ীফ হাদীস যা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য তার দিকে মনোনিবেশ করেন।
বৈশিষ্ট্য(৩): সঠিক ও নির্ভুল দলীল প্রমাণের প্রাধান্যদান।
হানাফী মাযহাব সঠিক ও নির্ভুল দলীল প্রমাণেরই একটি অনন্য সম্ভার। কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবাগণের উক্তির মোকাবেলায় কেয়াস ও রায়ের কোন স্থান এই মাযহাবে নেই। সুস্পষ্ট ও আমলযোগ্য সহীহ হাদীসের উপস্থিতিতে দুর্বল হাদীসের প্রয়োগ নেই।
সুতরাং অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ ও নির্ভুল দলীল প্রমাণের প্রাধান্য ও অগ্রাধিকারই এই মাযহাবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই নীতির আলোকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কুরআন দ্বারা প্রমাণিত বিধানকে ফরয আর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত বিধানকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন।
বৈশিষ্ট্য (৪): সতর্কতা অবলম্বন।
মাসআলা সংকলন ও নীতিমালা প্রবর্তনে হানাফী মাযহাবে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নিকট বড় বড় অনেক আলেমের নিয়মিত সমাগম ঘটত। তাঁদের মধ্যে চল্লিশ জন আলেম ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী ও বিচক্ষণ।কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি তাঁদের সাথে পরামর্শ করতেন।
বৈশিষ্ট্য (৫): দলিল ভিত্তিক সুবিন্যস্ত মাসআলার বিশাল সম্ভার।
কোন মাযহাব অনুসরণীয় হতে হলে শরীয়তের ছোট-বড় সকল সমস্যার সমাধান লিপিবদ্ধ আকারে সর্ব সাধারণের নাগালে থাকা অতি জরুরী, আর ইসলামী শরীয়তের প্রায় সকল বিষয়ই হানাফী মাযহাবে হানাফী ইমামগণ উম্মতের খেদমতে গ্রন্থকারে রেখে গেছেন।যা আজও আমাদের মাঝে বিদ্যমান।
তার মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হলো আস-সিয়ারুস-সগীর, আস-সিয়ারুল কাবীর, আল-জামিউস সগীর, আল-জামিউল কাবীর, আল-মাবসূত, আযযিয়াদাত, আল-ফাতাওয়াল হানাফিয়্যা ও মুয়াত্তা ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য (৬): সকল সমস্যার যুগোপযোগী সমাধান।
সর্বকালের সকল সমস্যার সমাধান কুরআন সুন্নাহর মাঝে বিদ্যমান আছে। কিন্তু সবার জন্য তা খুঁজে বের করা সম্ভব নয়, বরং এটা বিজ্ঞ ও গবেষক আলেমদের কাজ। ইমাম আবু হানীফা (রহ) এ গবেষণার জন্য সর্ব মহলে স্বীকৃত। তাই তার মাযহাবও সর্ব মহলে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত।
বৈশিষ্ট্য(৭): মুসলিম বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সমাদৃত।
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর যুগ থেকে আজ অবধি যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ ও বিজ্ঞ আলেমগণই হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করে আসছেন।
তাদের মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ).ইমাম মুহাম্মদ (রহ) ইমাম যুফার (রহ). ইমাম আবু নুআইম (রহ).ইমাম ইয়াহইয়া ইবনুল জাররাহ (রহ). ইমাম ত্বাহাবী (রহ.) প্রমুখ।
বৈশিষ্ট্য(৮): আল্লাহর কুদরতী নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত।
নবী ও ওহীর দরজা বন্ধ হলেও ইলহামের দরজা আজও খোলা আছে। হানাফী মাযহাবের বিশুদ্ধতা ও উৎকৃষ্টতা সম্পর্কে অনেক মনিষী ইলহাম প্রাপ্ত হয়েছেন, যা এই মাযহাবকে আরো সুসংহত ও সুদৃঢ় করেছে।
আমাদের সবাইকে ভ্রান্ত লা-মাযহাবীদের থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন।এবং মাযহাব মেনে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করেন। আমীন
মাশাল্লাহ সুন্দর উপস্থাপন করেছেন !
ردحذفإرسال تعليق