রাত-দিন, চন্দ্র-সূর্য, নক্ষত্ররাজীসহ সব কিছুই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে কারীমে বলেন.
وَهُوَ الَّذِى خَلَقَ الَّيلَ وَالنَّهارَ وَالشَّمس وَالقَمَرَؕ
তিনি যিনি রাত দিন, চন্দ্র সূর্য, সৃষ্টি করেছেন”।(সুরা আম্বিয়াঃ ৩৩)।
সৃষ্টিগত বিবেচনায় সব রাত দিনই আল্লাহর নিকট সমান। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে তার নৈকট্যবান করার জন্য কোন সময়কে অন্য সময় থেকে, কোন দিন কে অন্যদিন থেকে, কোন নির্দিষ্ট রাত কে অন্যরাতের তুলনায় করেছেন সম্মানীত ও অধিক মর্যাদাময়।
যাতে বান্দা ইবাদাত করলে স্বল্প সময়ে অনেক সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। এমন একটি রাতের নাম শবে বরাত (শাবানের ১৫ তারিখ রাত)।
শবে বরাত শব্দটি ফার্সী ভাষায় অনুদিত। শাব্দিক অর্থ মুক্তির রাত। অর্থাৎ এ রাতে ইবাদাতকারী অসংখ্য বান্দাকে আল্লাহ তায়ালা তাদের গুনাহ মাফ করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন।
হাদিস শরীফে বর্নিত আছেঃ এই রাত্রে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানের প্রতি প্রসন্ন হন এবং সুবহে সাদিক পর্যন্ত বান্দাদেরকে আহবান করতে থাকেন- কে আছ গুনাহ মাফের প্রত্যাশী? আমার কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাও আমি তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিব। কে আছ রোগাক্রান্ত? আমার কাছে আরোগ্যের প্রার্থনা কর আমি তোমাদের রোগ আরোগ্য করে দিব। কে আছ রিযিকের প্রার্থনাকারী? প্রার্থনা কর আমি তোমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। (মিশকাত শরীফ)।
বায়হাকী শরীফে একটি হাদিসে বর্ণিত আছেঃ হযরত রাসুল (সঃ) এই রাত্র সম্পর্কে বলেন, শাবনের ১৫ তারিখ রাতে পরবর্তী বছরে যত আদম সন্তান জন্ম গ্রহন করবে এবং মৃত্যু বরন করবে, তাদের সংখ্যা লিপিবদ্ধ করা হয়। এ
রাতেই মানুষের আমলনামা উঠাইয়া লওয়া হয়। রিযিক বন্টন করা হয়।
হযরত রাসুল (সঃ) আরও বলেন, শাবনের ১৫ তারিখ তোমরা রাত্রি জাগরন কর এবং পর দিনে রোজা রাখ।(ইবনে মাজা শরীফ)
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেনঃ আমি এক রাতে হযরত নবী (সঃ) কে হারিয়ে ফেললাম অর্থ্যাৎ তিনি কোথাও চলে গেলেন। আমি তাকে খোঁজ করতে গিয়ে পেলাম এবং বললাম হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আমার ধারনা ছিল আপনি হয়তো অন্য কোন বিবির নিকট গিয়েছেন। হুজুর (সঃ) বললেন হে আয়েশা তুমি কি জান? আজ কোন রাত। আল্লাহ পাক শাবানের পনের তারিখ রাতে প্রথম আসমানে অবতির্ন হন এবং বনী কালবের বকরী সমসংখ্যক বকরীর পশমের চেয়েও অধিক গুনাহগারকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরীফ)।
উল্লেখ্য বনী কালব গোত্রে বকরীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত. রাসুল (সাঃ) বলেন শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দান করেন। এবং প্রার্থনাকারী সকলকে তিনি মাফ করে দেন। কিন্তু যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে তাকে ক্ষমা করেন না।
অনুরুপ বিভিন্ন হাদীসে পাওয়া যায়:
যারা গনক, গায়েবের খবর দাবীদার, অন্যায় ভাবে হত্যাকরী, হিংসা বিদ্বেষ কারী, গায়ক,আত্মীয়তা ছিন্নকারী, জালিম শাসক ও তার সাহায্য কারী, মদ্যপায়ী, যেনাকারী, অযথা নিন্দাকারী, অন্যায় ভাবে শুল্ক আদায়কারী ও মিথ্যাবাদী কে আল্লাহ তায়ালা তওবা ব্যতিত মাফ করবেন না।
শবে বরাতে আমাদেের করণীয় বিষয়াবলী :
১. শাবানের ১৫ তারিখ রাত অর্থ্যাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্র, নফল নামায,যিকির, কোরআন তেলাওয়াত, উমরী কাজা সহ ইবাদাত বন্দেগীর মধ্যে যাপন করা।
২. সকল প্রকার গুনাহ থেকে তওবা করা এবং বেশী বেশী করে দোয়া করতে থাকা।
৩. দলবদ্ধতা ব্যতিত একাকী কবর স্থানে গিয়ে মৃত মাতা পিতা ও মুসলমান নর নারীর জন্য দোয়া করা।
৪. আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য দান খয়রাত করা।
৫. এ রাতে গোসল করা মোস্তাহাব।
৬. পরের দিন অর্থ্যাৎ ১৫ই তারিখ দিনে রোজা রাখা উত্তম।
শবে বরাতে আমাদের বর্জনীয় বিষয়াবলী :
১. শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটি এবং বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা।
২. ঘরবাড়ী, অফিস আদালত, ইবাদাত গাহে অতিরিক্ত আলোক সজ্জা করা।
৩.আতোশবাজি, পটকা ফোটানো বিদআত ও গুনাহের কাজ।
৪.মাজারে হৈ হুল্লা, সিজদা ও তাওয়াফ সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী শিরকি কাজ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করতঃ এসব শরীয়ত বিবর্জিত কাৰ্য্যাবলী থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করেন।
إرسال تعليق