অতি সম্প্রতি একটি বিষয় মানুষের আলোচনার টেবিলে উঠে এসেছে। যদিও বিষয়টি নতুন কিছু নয় তবুও বলা যায় এর আগে মাযহাবী ও লামাযহাবী বনাম হানাফী ও লামাযহাবী সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে কোন সেমিনার আলোচনা সভা, বাহাস অনুষ্ঠান কিংবা জাতীয় পত্রিকায় এসব নিয়ে লেখালেখি আমার চোখে তেমন পড়েনি। স্মরন কালের কয়েকটি ঘটনা ঢাকার কেন্দ্র বিন্দু থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেভাবে শুরু হয়েছে তাতে মনে হল এবিষয় কিছু তথ্য নির্ভর ও বাস্তব সম্মত কথা মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার।
এসত্যতা আজ দিবালোকে ন্যায় স্পষ্ট যে, তথাকথিত আহলে হাদিস সরল প্রান মুসলমানদের, যারা দ্বীনী শিক্ষায় অনভিজ্ঞ বা অল্প শিক্ষিত এদের পিছনে বিভিন্ন সংসয় ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বক্র পথে ঘোলা পানিতে মৎস শিকারে তৎপর। তাদের টার্গেটের শিকার আজ লাখো মুসলিম।বিষয়টি উলামায়ে কেরামের চোখ এড়াতে পারেনি।
বহুদিন উপেক্ষা আর অবজ্ঞা করলেও কুরআন সুন্নাহর চেতনায় আজ তারা দিকপাল। ঢাকার কেরানীগঞ্জের আইস্থা খেলার মাঠে ২৮ জানুয়ারী ২০১২ ইং রোজ শনিবারে বাহাস অনুষ্ঠানের আহবান, কাকরাইল ভি-আই-পি রোডস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিষ্টিটিউটে মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়ার পক্ষ থেকে ১৭মার্চ ১২ইং তারিখে ওয়াহদাতুল উম্মাহ ওয়া ইত্তিবাউসসুন্নাহ শীর্ষক বিশেষ সেমিনারের আয়োজন এবং ঢাকার ঐতিহাসিক ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিষ্টিটিউটে ০৩/০৫/১২ইং তারিখে আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআত পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজিত জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠান তার উৎকৃষ্ট উদাহরন।
এখন মূল আলোচনায় ফিরে আসি....
রসুল (সঃ) এর সর্নোজ্বল যুগ থেকে তের শত বৎসর পর্যন্ত ইসলামের হাজারো উত্থান পতন ও সমস্যা থাকা সত্ত্বেও একটা বিষয়ে সবাই ছিল আপোষহীন ও ঐক্যমত।
তাহলো ধর্মীয় ব্যাপারে ধর্ম বিশারদ তথা মুজতাহিদ আলেমদের শরাপন্ন হয়ে তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে সর্বসাধারনের দৈনন্দিন ধর্মীয় জীবন পরিচালিত হত। বিজ্ঞজন থেকে অজানাদের জেনে নেওয়ার এই সিলসিলা, খোদ আল্লাহ ও রসুল (সঃ)-এর নির্দেশেই রসুলের যুগ থেকে শুরু হয়ে তা আজ অবধি চলমান। পূর্বে এর উপর কেউ আপত্তি উত্থাপন করেননি। না কোন মুহাদ্দিস, না কোন ফকীহ, না কোন মুফাসসির, না কোন বিদ্যান, না কোন জন সাধারন, কেউ না । আর কোন সঙ্গত কারনেই তা করেননি। কারন প্রত্যেকটা বিবেকবান মানুষই জানে, কোন বিষয়ে বিজ্ঞ অভিজ্ঞজনদের অনুসরন করা একটি সৃষ্টিগত স্বভাব জাত ধর্ম। সর্ব জন অনিবার্য বিষয় কারও অনুসরন ব্যতিত জীবন যাত্রার গাড়ী এক কদমও অগ্রসর হতে পারে না।
ক্ষেত, খামার, ব্যবসা, কারিগরী, শিক্ষা, দিক্ষা সবই
অভিজ্ঞদের অনুসরনে নিয়ন্ত্রিত। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান চিকিৎসা জগত সহ সকল ক্ষেত্রেই একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির সঠিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে চলতে হলে অবশ্যই তাকে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির অনুসরন করতে হবে। অন্যথায়
যে অবস্থা ঘটবে তার উদাহরন দিচ্ছি-
যেমনঃ দুই বন্ধু দূরে কোথাও ভ্রমনে গেল, উভয়ের শরীর ভ্রমন জনিত কষ্টে জর্জরিত, বমি বমি ভাব । তখন এক বন্ধু বলে চলো ডাক্তারের কাছে যাই, চিকিৎসা নিয়ে আসি, অপর বন্ধু বলে আমি ডাক্তার মানি না। ঐ দোকানে ডাক্তারি বই আছে চলো কিনে নিয়ে পড়ে পড়ে চিকিৎসা নেই। ১ম বন্ধু অপারগ হয়ে একাই চলে গেল। কিছুক্ষন পর চিকিৎসা নিয়ে যখন ফিরল তখন তার চোখ চড়ক গাছ! দেখে এ বন্ধুর মুখ বাকা, শরীরে প্রচন্ড ঘাম, ঠান্ডা নিথর হয়ে পড়ে আছে। দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসালয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পর পরিস্থিতি একটু ভাল হল। পরে জানতে পারল, বই পড়ে যে ঔষধ খেয়েছিল তাতে সাময়িক সুস্থ হয়েছিল। কিছুক্ষন পর দেখে মুখ বাকা হয়ে যাচ্ছে, চোখে ধাধা লাগছে, শরীরে কম্পন, সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে।
একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ব্যপারটা শুনে বলল দশ টাকার বই পড়ে যদি ডাক্তার হওয়া যায়, তাহলে দশ লক্ষ টাকা খরচ করে ডাক্তারী পড়ার কোন অর্থই হয়না। ঠিক অনুরুপ ভাবে কুরআন সুন্নাহর গবেষনালব্ধ বিষয়ে অক্ষম ব্যক্তির অভিজ্ঞ দ্বীন বিশারদদের তাকলীদ বা অনুসরন ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
বলা বাহুল্য এই ধর্ম বিশারদ বা মুজতাহিদগণের কথা মেনে অনুসরনের নামই তাকলীদ। আর তাদের প্রনীত ও প্রদর্শিত কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক পথ ও নীতিমালার নামই মাযহাব এবং ঐ নীতিমালা অনুযায়ী চলার নাম মাযহাব মানা
বা তাকলীদ করা । যারা এই মাযহাব মানেন, তাদের আরবীতে বলে মুকাল্লিদ বা (অনুসারী) যাদের মানা হয় তারা হলেন মুজতাহিদ বা ইমাম।
উপরের আলোচনার দ্বারা সুস্পষ্ট যে, ইমাম ও মুকাল্লিদের সম্পর্ক শুধু এতটুকু যে আমি দ্বীনের কোন বিষয়, মাসআলা বা ফাতওয়া সরাসরি কুরআন সুন্নাহ থেকে সমাধান করতে সক্ষম নই। ইমামগণ আমাদের থেকে অধিক বিদ্যান ও পারদর্শী। তাই কুরআন হাদীসের আলোকে আমি তার থেকে সমাধান নিব। তিনি কুরআন হাদীস গবেষনা করে সমাধান এনে দিবেন। আমি উহাকে সুন্নাহ ভিত্তিক সঠিক সমাধান মনে করে মেনে নিব। তাই বলা হয় মুজতাহিদগন শরীয়ত প্রনেতা নন বরং তারা কুরআন হাদীসের আলোকে শরীয়তের ব্যখ্যা দাতা।
প্রিয় পাঠক : আক্ষেপের সাথে বলতে হয় রসুল (সঃ) এর সোনালী যুগ থেকে প্রায় তেরশত বছর পর ভারতের মৌলভী হুসাইন বাটালভী (মৃতঃ ১৩৩৮) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও বৃটিশ ইংরেজ কর্তৃক নাম এলাট কৃত “আহলে হাদীস”নামে একটি সম্প্রদায়ের আত্ম প্রকাশ ঘটে।
তারা মাযহাবী ও প্রথিতযশা ইমামগণের উপর বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচার, গালি গালাজ, অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে উপমহাদেশের বহু মুসলমানকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
তদানিন্তন ব্রিটিশরা যখন ভারতের মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চালাচ্ছিল আর মুসলমানরা তাদের মান সম্মান ইজ্জত, ধর্ম বিশ্বাস ও জীবন নিয়ে টানাটানি করছিল, তখন আহলে হাদীসরা কে জোরে আমীন বলল আর কে জোরে বলল না, কে নামাজে হাত উঠালো আর কে উঠালো না এ নিয়েই ব্যস্ত ছিল। এর জন্য তারা দাঙ্গা হাঙ্গামা ও ইংরেজ আদালতে বহু মামলা পর্যন্ত করেছিল।
আর ইংরেজরা প্রতিটি মামলায় তাদের পক্ষে রায় দিয়েছিল। আজও মুসলিম জাতির এ শোচনীয় ক্রান্তিলগ্নে দুর্বার ঐক্য ও আত্মত্যাগি হওয়ার পরিবর্তে তারা প্রতারণা বেছে নিয়েছে গলা বাজি, লিফলেট, মিথ্যা বিবৃতি।
তারা বলে ওদের নিয়ম ছাড়া কারও নামাজ হয় না, ওরা ছাড়া সবাই কাফের মুশরিক ইত্যাদি সংসয় প্রদানের মাধ্যমে মুসলিম জাতি আর স্বত্বার মধ্যে বিরাট ফাটল ধরিয়ে, ইসলামের শত্রু তথা ওদের বিদেশী প্রভুদের আগমনের পথ সুগম করতে ব্যস্ত।
যার জাজ্বল্য প্রমান তথা কথিত এই আহলে হাদীসরা ২০০৪ সালের শুরুর দিকে তাদের সংগঠন জেএমবি এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাপী সিরিজ বোমা ও বিভিন্ন জেলায় আত্মঘাতি হামলা সহ সহিংস চরম পন্থী আচরন। যার ফলশ্রুতিতে ঐ বছরের মধ্য হতেই যে সমস্ত আলেম ওলামাগণ ছিলেন আস্থা ও বিশ্বাসে জাতীর প্রতীক তাদের অনেককে মনে করা হতে লাগল সন্দেহের মূল টার্গেট।
নিম্নে তাদের অভিযোগ ও আমাদের জবাব তুলে ধরা হল :
তাদের ১নং অভিযোগঃ- তাকলীদ (মুজতাহিদ ইমামগনকে মান্য করা) হারাম। কারো তাকলীদ করা যাবে না।
এর মূল জওয়াবের আগেই একটা উদাহরণের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করবো। এক লামাযহাবী বন্ধু তর্কের এক পর্যায়ে আমাকে বলেন আমি তাকলীদ করিনা ইমাম মানিনা আমি হাদিস মানি। আমি বললাম এটা আপনার ভূল কথা, আপনি তাকলীদ করেন, আপনার পূর্ব পুরুষ ও তাকলীদ
করেছেন। আপনার উস্তাদ ও করেন, আপনারা যাদের মানেন তারাও করে। ইমাম বুখারী ও করেন ছিহাহ ছিত্তার লেখকগনও করেন। আর আপনি কিছু সংখক হাদীস মানেন বেশীর ভাগই মানেন না। তিনি রাগতঃ স্বরে বলেন তার মানে?
আমি বললাম আপনি কি আরবী জানেন? না! তাহলে আপনার সামনে এই বংলা বুখারীর অনুবাদকের উপর প্রথম তাকলীদ করেছেন কারন সে আরবী হাদীসের সঠিক তরজমা করছে কিনা আপনি জানেন না, ভুল লিখলে ও ধরতে পারবেন না।
নিছক এই ভেবে মেনে নিয়েছেন যে, সে আলেম। সে সঠিক অনুবাদ করছে। ভুল করতে পারে না। এটাকেই তাকলীদ বলে।
দ্বিতীয়তঃ মুদ্রনকারীর উপর সে সঠিক ভাবে ছাপিয়েছে কিনা তাও আপনি জানেন না। তার ছাপা মূল কপির সাথে ত্রুটিপূর্ন হলেও আপনি বলতে পারবেন না। এখানেও তার উপর অন্ধ বিশ্বাস করে (তাকলীদ) করেছেন।
তৃতীয়তঃ এই বুখারী যে ইমাম বুখারীর লিখিত সেই কিতাব, এটা আপনি স্বচক্ষে দেখেননি। শুধু মানুষের কাছে শুনেছেন। এখানে আপনি মানুষের তাকলীদ করেছেন।
চতুর্থতঃ ইমাম বুখারী একটি হাদীসও সরাসরি রসুল (সঃ) থেকে শুনেন নাই সবগুলি শুনেছেন মানুষের কাছ থেকে। এরপর তিনি এটাকে সঠিক মনে করেছেন ও কিতাবে লিখেছেন। এখানে ইমাম বুখারী (রহঃ) মানুষের তাকলীদ করলেন, আর আপনি ইমাম বুখারীর তাকলীদ করলেন, যে তিনি যেটাকে সঠিক মনে করেছেন তা সঠিক!
এরুপ ভাবে আপনি যত মাসআলায় বুখারীর হাদীসকে সহীহ (সঠিক) বলবেন তত হাদীসে ইমাম বুখারীকে তাকলীদ করলেন এবং ঐ সকল হাদীসে ইমাম বুখারী মানুষের তাকলীদ করেছেন।
বাকী ছিহাহ ছিত্তাহ (তার কথা অনুসারে) সবার পর্যায় একই অর্থাৎ তারা সবাই মানুষের থেকে শুনেই কিতাবে লিখেছেন। আর আপনি বলেছেন শুধু রসুলের কথাই (হাদীস) মানব, কোন মানুষের কথা মানব না।
এ কথার উত্তরও এর মাঝে এসে গেছে। যদি না মানেন তাহলে বলব যে গোটা হাদীসের ভান্ডার থেকে মাত্র একটি হাদীস বা রসুলের (সঃ) কথা দেখান যেখানে বলা হয়েছে বুখারী মানো, বা এতে যা হাদীস আছে সবই সহীহ, আমার হাদীস। দেখি বন্ধুবর চুপ করে বসে আছে নিরুত্তর!!
এখানে তাকলীদ বা মাযহাব মানা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব যাতে এব্যাপারে একটা মৌলিক ধারনা এবং অনেক অভিযোগের জবাব হয়ে যায়।
প্রতিটি মুসলমানের একটাই কথা তাহল মুলতঃ আনুগত্য হবে একমাত্র আল্লাহর। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য এজন্যই করতে হয় যে, তিনি আল্লাহর হুকুমের বাহক এবং ব্যাখ্যা দাতা, তাঁকে ছাড়া আল্লাহর হুকুম আমাদের কাছে আসবেও না বুঝবও না তাই আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরন করা ফরজ।
আল্লাহ বলেন: হে ঈমানদারগন তোমরা আল্লাহর অনুগত্য কর আর আনুগত্য কর রসুল (সঃ) এর। (সুরা নিসা-৫৯)।
রসুল(সঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে গেলাম যতক্ষন তা আঁকড়ে রাখবে পথ ভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব অপরটি তাঁর রসুলের (সঃ) এর সুন্নাত। তাই যে আল্লাহ ও রসুল ব্যতীত যে কোন কারও আনুগত্য করে বা তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা গোষ্টিকে বাস্তব আনুগত্যের হকদ্বার মনে করে সে আর মুসলমান থাকে না।
শরীয়াতের যাবতীয় বিধি বিধানের ক্ষেত্রে কেবল কুরআন ও সুন্নাহর বিবরনই হল মুসলমানদের অনুসরনীয় ও অনুকরনীয় এব্যাপারে ভিন্নমত পোষনের কোন অবকাশ নাই।
তবে এখানে একটি কথা বিশেষভাবে অনুধাবন যোগ্য যে কুরআন সুন্নাহে বর্নিত আহকাম দুই ধরনেরঃ-
(১) কিছু আহকাম এমন আছে যে গুলোর উদ্দেশ্য ও মর্ম এতই স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট।যে, উহা আলিম এবং সাধারণ লোক সবাই বুঝতে সক্ষম। এতে অস্পষ্টতা, সংক্ষিপ্ততা ও বাহ্যিক বিরোধ কোনটাই নেই।
যেমন কুরআনে আছে “তোমাদের মধ্যে যে রমযান মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে”। "নামায কায়েম কর যাকাত আদায় কর”। তোমাদের কেউ যেন কারো দোষ চর্চা না করে” (সুরা হুজরাত)
উক্ত আয়াত গুলো যে কোন পাঠক পড়া মাত্রই বুঝে ফেলবে যে নামায পড়া, যাকাত দেওয়া, রমযান এলে রোযা রাখা আল্লাহর হুকুম তথা ফরজ। হাদীসে আছে -জগত বাসীর উপর দয়া কর আসমান ওয়ালা তোমাকে দয়া করবেন।
(তিরমিযি হাদীস নং ১৯২৪)।
কোন আরব কোন অনারবের চেয়ে শ্রেষ্ট নয়।
হাদীস দ্বয় যে কোন মানুষ শুনলেই উদ্দেশ্যে বুঝে নিতে পারবে।
(২) পক্ষান্তরে বহু আহকাম এমনও রয়েছে যে গুলোর উদ্দেশ্যে ও মর্ম বুঝা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। যাতে আছে সংক্ষিপ্ততা,অস্পষ্টতা, জটিলতা, বাহ্যিক দ্বন্দ্ব ও সুত্র জনিত দ্যর্থতা।যেমনঃ
(১) কুরআনুল কারীমের ইরশাদ হয়েছে তালাক প্রাপ্তা নারী তিন “কুরু”পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। (বিবাহ বসতে পারবে না) এই আয়াতটিতে তালাক প্রাপ্তা নারীদের ইদ্দত সীমা তিন কুরু বলা হয়েছে।
কিন্তু আরবী ভাষায় এই কুরু শব্দটি নারীদের হায়েজ ও পবিত্র অবস্থা উভয় অর্থে ব্যবহার হয়। সুতরাং প্রথম অর্থে ইদ্দতের সময় সীমা হবে তিন হায়েজ!!
এবং দ্বিতীয় অর্থে সে সময় দাড়াবে তিন পবিত্র কাল। এখন প্রশ্ন হল আমরা কুরু শব্দটি কোন অর্থে নেব ।
(২). অনুরুপ ভাবে এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে নামাজ পড়বে, ইমামের ক্বেরাতই তার ক্বেরাত হবে। (মুয়াত্তা মুহাম্মদ, তহাবী, আহমদ শরীফ)।
তদ্রুপ ইমাম যখন ক্বেরাত পড়বে তোমরা চুপ করে থাকবে। (মুসলিম,নাসাঈ)
এসমস্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়, ইমামের কেরাত পাঠ করা অবস্থায় মুক্তাদী চুপ থাকবে কিছুই পড়বে না।
অথচ অন্য হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি সুরা ফাতেহা
পড়বে না তার নামাজ হবে না। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে নামাযে প্রত্যেকেরই সুরায়ে ফাতেহা পড়তে হবে।
লক্ষ করুন! এ দুটি হাদীস বাহ্যিকভাবে পরস্পর সাংঘর্ষিক। এ ধরনের হাজারো হাদীস আছে যার বাহ্যিক বিরোধ নিরসন করে বিভিন্ন ধরনের সমাস্যা ও জটিলতা রয়েছে। তাছাড়া এক এক আয়াত ও এক এক হাদীসে সমাস্যা এক এক ধরনের। সমস্যাও বহু স্তরের, সমাধানও অনেক প্রকারের। বিজ্ঞ ওলামাগণ এ কথার উজ্জল স্বাক্ষী, আমাদের চিন্তা করা উচিত যে কুরআন সুন্নাহ থেকে বিধান আহরনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের জটিলতা দেখা দিলে এর সমাধান কল্পে আমরা কি করব? আমাদের জ্ঞান, বিবেচনা ও উপলপদ্ধির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করব? না কুরআন সুন্নাহর এসব বিষয়ে আমাদের প্রথিতযশা মহান পুর্বাসুরীদের মতামত
অবলম্বন করব? বিবেক ও ইনসাফের দৃষ্টিতে বলতে গেলে প্রথম পন্থাটি ঝুঁকি পুর্ন ও বিপদ জনক।দ্বিতীয়টি অত্যন্ত নিরাপদ ও বাস্তব সম্মত।
কেননা ইলম হিকমত খোদাভিরুতা ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে তারা শতভাগ সফল। এবং সব ক্ষেত্রে আমাদের রিক্ততা নিঃস্বতা এতই প্রকট যে ঐ সমস্ত মহা মনীষীগনের সাথে নিজেদের তুলনা করাও এক গভীর অজ্ঞতা।
তদুপরি প্রথম তিন যুগের মহান আলিমগন ছিলেন পবিত্র কুরআন অবতরনের সময় ও পরিবেশের নিকটতম প্রতিবেশী। এর সুবাদে কুরআন সুন্নাহর উদ্দেশ্য ও মর্ম অনুধাবন করা ছিল তাদের সহজ সাধ্য। পক্ষান্তরে নবুওয়াত ও অহীর যুগ থেকে আমাদের দীর্ঘ ব্যবধানের কারনে কুরআন সুন্নাহর পটভুমি, অবতরনের অবস্থা এবং সে যুগের রিতিনীতি ভাব, ভাষা ও বর্ননাধারা সম্পর্কে নির্ভূল ও স্বচ্ছ ধারনা লাভ করা বর্তমানে অসম্ভব না হলেও যেমন কষ্ট সাধ্য তেমনঝুকি পূর্ণ ও বিপদ সংকুল।
তাই জটিল,দ্ব্যর্থপুর্ন, ও সুক্ষ আহকামের ক্ষেত্রে নিজেদের ইলম ও প্রজ্ঞার উপর নির্ভর না করে খায়রুল কুরুন তথা তিন স্বর্ন যুগের (সাহবা,তাবেঈন,ও তাবে তাবেইন গনের যুগ) মহান আলিম গনের ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সে মোতাবেক আমল করাই হল নিরাপদ ও যুক্তিসম্মত । এটাই হল তাকলীদ, এরই নাম মাযহাব মানা ।
আশা করি আপনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন, যে প্রথম শ্রেনীর আহকাম সাবলীল, জটিলতামুক্ত তার জন্য কোন ইমাম মুজতাহিদ বা তাকলীদের কোন প্রয়োজননেই।
কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণীর আহকাম যা জটিল এবং অস্পষ্ট ওলামা মাত্রই তা অনুধাবন করতে সক্ষম । শুধু সেক্ষেত্রেই মাত্র মুজতাহিদের তাকলীদ জরুরী।
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে প্রিয় বন্ধুগন অবশ্যই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন যে, কোন মুজতাহিদ ইমামের তাকলীদ করা মানে তাকে আইন প্রনেতা মনে করা নয়। সে শুধুমাত্র আইনের বাখ্যা দাতা এ জন্যেই তো সুস্পষ্ট ও অকাট্য আহকামের ক্ষেত্রে কোন মুজতাহিদ ইমামের তাকলীতদ জরুরী নয়। এই সত্য ও বাস্তবতা টুকু লামাযহাবী ভাই গন মোটেই বুঝতে চান না। তাই অকথ্য ভাষা হাঙ্গামার ময়দান উত্তপ্ত করহলর কাছে জিজ্ঞাসা কর । (অর্থ্যাৎ তাদের কাছ থেকে জেনে নাও এবং তদানুযায়ী আমল কর)।
এ আয়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কেউ কোন বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ কিংবা অনবিজ্ঞ হলে তার উচিৎ যে, সে বিষয়ে বিজ্ঞ জনের শরনাপন্ন হওয়া। ও তার থেকে জেনে সে অনুযায়ী কাজ করা।
এরই আলোকে সাহাবাগন রসুলের (সঃ) থেকে জেনে নিতেন। সাধারন সাহাবাগণ বড় বড় এবং ফকীহ সাহাবা থেকে জেনে নিতেন। তাবেঈগন সাহাবীগন থেকে। এবং সকল পরবর্তীগন পুর্ববর্তি বিদ্যানগন হতে মাসআলা বা ফতোয়া আকারে জেনে নিতেন, হাদীসের কিতাব গুলিতে তার শত সহস্র প্রমান রয়েছে। আলেম মাত্রই জানেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা এই জেনে নিয়ে আমল করার নামই তাকলীদ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,, হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা “উলিল আমর ”তথা ফকীহ ও মুজতাহিদ তাদের”। এখানে প্রায় সকল তাফসীর কারকের মতে
মুজতাহিদগণের আনুগত্য কথা বলা হয়েছে এবং তা ওয়াজিব বলা হয়েছে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেনঃ রসুল (সঃ) একসময় দেখেন কোন কোন সাহাবীগণ নামাজে একটু পিছে আসছেন তখন তাদের বলেন সামনে অগ্রসর হও। (প্রথম কাতারে এসে দেখে দেখে) আমার অনুসরন কর আর তোমাদের পরবর্তীরা যেন তোমাদের অনুসরন করে।
হাদীস বিসারদ আল্লামা ইবনে হাজার আসকলানী লিখেন, হাদীসের মর্মার্থঃ তোমরা আমার কাছ থেকে(দেখে দেখে) শরীয়াতের বিধিবিধান শিখে নাও এবং তোমাদের পরবর্তীরা তোমাদের থেকে শিখতে থাকবে। (ও অনুকরন করবে) ফাতহুল বারী ২ঃ১৭১মিবিয়া এডিশন)।
হযরত জাবের (রঃ) বলেনঃ আমরা একদা সফরে ছিলাম। আমাদের একজনের মাথা প্রস্তরাঘাতে ক্ষত হয়। পরে তার গোসল ফরজ হল। তিনি সাথীদের জিজ্ঞাসা করেন আমি তায়াম্মুম করতে পারি কি? তারা বলেন না তুমি পানি ব্যবহারে সক্ষম। তিনি গোসল করেন এতেই তার মৃত্যু হয়। সফর শেষে যখন রসুল (সঃ) একথা জানতে পারেন তখন বলেন, তার সাথীরা তাকে হত্যা করেছে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। তারা না জানলে (আলেমদের কাছে) কেন জিজ্ঞাসা করলো না? অজ্ঞদের চিকিৎসাই তো (বিজ্ঞদের কাছে) জিজ্ঞাসা করা।
এ হাদীসে অনভিজ্ঞ মানুষকে বিজ্ঞদের কাছে জেনে নেওয়ার ব্যপারে কঠোর তাকিদ করেছেন। জেনে না নেওয়ার ব্যপারে তীব্র নিন্দা করেছেন।
উল্লেখ্য এখানে যাদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা অবশ্যই কিছু শিক্ষিত ছিলেন। একারনেই বলেছিলেন তুমি যেহেতু পানি ব্যবহারে সক্ষম, তাই তায়াম্মুম জায়েয হবে না। অর্থাৎ তারা জানতেন পানি ব্যবহারে পুর্ন অক্ষম হলেই তবে তায়াম্মুম করা যায়েয। এটাও জানার একটা দলীল বুঝা গেল। তারা জানতেন তবে পূর্ন পারদর্শী ছিলেন না।
অতএব প্রমানিত হল অনভিজ্ঞ বা অল্প শিক্ষিতরা শরীয়ত সম্পর্কে কোন সমাধান পেশ না করে অবশ্যই শরীয়ত বিশেষজ্ঞদের শরনাপন্ন হবে। তারা নিজেরা কখনোই
সমাধান দিতে যাবে না।
পক্ষান্তরে হাল যামানার অবস্থা হল, যদি কোন রকম বাংলা বুখারী দেখে পড়তে পারে, তাহলে এক এক আহলে হাদীস কেমন যেন এক এলাকার মুফতী হয়ে যায়।
পাঠক বন্ধুরাঃ কুরআন ও হাদীস থেকে যৎসামান্য উদ্ধৃতির পর খোদ লামাযহাবী আলেমগণও এ সত্যতা স্বীকার করেছেন তার কিছু নমুনা দেখুন।:
(১) ভারতবর্ষে আহলে হাদীসের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী মৌলভী হুসাইন আহমদ বাটালবী (মৃত:১৩৩৮) কর্তৃক সম্পাদিত ইশাআতুস্সুন্নাহ পত্রিকায় তিনি লিখেন পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার একথা বুঝে এসেছে যে, যারা
দ্বীনের পর্যাপ্ত পরিমান ইলম ব্যতিরেকে পূর্ণ মুজতাহিদের (গবেষক হওয়ার) দাবি করে এবং তাকলীদ ছেড়ে বসে তারা শেষ পর্যন্ত ইসলামকেই বিদায় দেয়।
কুফরী ধর্মদ্রোহীতা এবং ফাসেকীর বহু কারণ যদিও পৃথিবীতে বিদ্যমান কিন্তু ধার্মিক লোকদের অধার্মিক হয়ে যাওয়ার সর্বাপেক্ষা বড় কারন হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমান ধর্মীয় জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তাকলীদ ছেড়ে দেয়া।
আহলে হাদীসের মধ্যে যারা পর্যাপ্ত পরিমান ধর্মজ্ঞান রাখে না অথবা যৎসামান্য জ্ঞান রেখে পূর্ন ভাবে তাকলীদ ছেড়ে দেয়ার দাবীদার তারা যেন উক্ত পরিনতির ভয় করে।
সাধারনতঃ উক্ত দলের সাধারন সদস্যরা স্বাধীন ও সেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। (রেসালা ইশায়াতুসসুন্নাহ সংখ্যা ২য় খন্ড ১১ পৃঃ ১৮৮৮)।
(২) আহলে হাদীস মতবাদের অন্যতম পুরোধা ইমাম নবাব ছিদ্দিক হাসান খান (মৃঃ ১৩১৯) যখন নিজ মতবাদের অনুসারীদের এসব অবস্থা দেখেন, যে তাদের ধর্মীয় উদাসীনতা ও সেচ্ছাচারিতা প্রায় ধর্মহীনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তখন এ যুগে একটি যশলিপ্সু রিয়াকার দাবী করে যে তারা নির্দিষ্ট মাজহাব না মেনে ও কুরআন সুন্নাহর উপর সরাসরি আমল করে থাকে।
মুলত তারা মোটেও ইলম আমল ও আল্লাহর পরিচয়ের ধার ধারে না। অবাক কান্ড!
কিভাবে তারা নিজেদের একতবাদী ও নিষ্ঠাবান পরিচয় দেয়। এবং অন্যদের মুশরিক বলে অথচ তারাই ধর্মের প্রতি চরম হটকারী ও চরম সীমা লড়ঘন কারী। এসব আচরনের নাম কখনও দ্বীন হতে পারে না। বরং এগুলি দুনিয়ার মধ্যে বড় ধরনের ফিতনা।
এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে আহলে হাদীসের দুই মুখপাত্রের কথাই মাত্র উল্লেখ করা হল।
অন্যথায় তাদের পূর্বসরীদের বহু আলেমের কথা এটাই। যার বিস্তারিত বিবরন যুগ যুগ ধরে নির্ভরযোগ্য বই পুস্তকে সংকলিত হয়ে আসছে।
পরিশিষ্টঃপরিশেষে পাঠকের সামনে তাদের কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর পেশ করা হল।
প্রশ্নঃ এক লামাযহাবী ভাই এক কথার পর্যায়ে আমাকে বলল আচ্ছা আবু হানীফাকে মানতে হবে এ মর্মে হাদীস দেখান।
উত্তরঃ আমি বললাম তিনি একজন মুজতাহিদ এবং সেরা মুজতাহিদ । পরবর্তী লক্ষ লক্ষ মুজাতাহিদ ওলী আল্লাহ সালেহীনগণও তাকে শুধু মুজতাহিদ নয়, ইমামে অজম হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর মুজতাহিদ কে মান্য করা
কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ তাই রসুল (সঃ) এর কথায় তাকে মানতে হবে।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললেন অতশত কিছু বুঝিনা, আপনি সরাসরি হাদীস দেখান যে রসুল (সঃ) বলেছেন আবু হানিফাকে মানো। আমি মনে মনে ভাবলাম এটাই ওদের পরিচয়। তাই অন্য পথে যেয়ে বললাম, আচ্ছা আপনি
একটা হাদীস দেখান যেখানে রসুল (সঃ) বলেছেন বুখারী মানতে হবে। সিহাহ সিত্তা মানতে হবে। তিনি বলেন এগুলো হাদীস আর রসুল (সঃ) হাদীস মানতে বলেছেন। আমি বললাম উনারা মুজাতাহিদ রসুল (সঃ) মুজতাহিদ মানতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ- আপনারা আবু হানিফার নামে মাজহাব বানিয়েছেন। আবু বকর উমরের (রাঃ) নামে কি একটা মাজহাব বানানো যায় না?
উত্তরঃ (আমি ভাবলাম এটা তাদের বিতরনকৃত লিফলেট থেকে ধারনকৃত) বললাম কেন যাবে না, অবশ্যই ওটাই তো উত্তম ও সর্ব শ্রেষ্ট। তবে আপনি এনে দিন তাদের লিখিত, জীবনে প্রায় সকল সমাস্যার দ্বীনি সমাধান যুক্ত কিতাবটি আনুন, যাতে আমার চলার পথে প্রতিটি মাসআলার (বিষয়ের সমাধান তারা লিখে গেছেন।
দেখবেন আমি একা নই দুনিয়ার প্রতিটি হক তলবী মানুষ, চার মাজহাব সবাই ঐ মাজহাবের দিকেই প্রত্যবর্তন করবে।
এসব মাজহাব সবই পিছে ছুড়ে ফেলবে। তবে আশা করি দুই রাকাত নামাজ পড়ার মাসআলা গুলিও ইনাদের থেকে সংকলিত পাবেন না।
প্রশ্নঃ তথাকথিত আহলে হাদীসদের মধ্যে এক ভাই আমাকে বললেন কুরআন বলেছে! আর হাদীস তো কুরআনের ব্যাখ্যা? বললাম হ্যাঁ, তাই! তখন বললেন কি বলে নাই যে তার মধ্যে সব সমাস্যার সমাধান আছে? আমি বললাম হ্যাঁ
তাহলে কুরআন হাদীস যখন সয়ং সম্পুর্ন তাহলে ইমাম মানতে হবে কেন?
উত্তরঃ আপনার এ প্রশ্ন ঠিক তেমনই যেমন কোন ব্যক্তি বলল কুরআন হাদীস তো স্বয়ং সম্পূর্ন তাহলে নামাজ পড়তে হবে কেন? কুরআন তো স্বয়ং সম্পূর্ন তাহলে রোযা রাখতে হবে কেন? বা যাকাত বা হজ্ব করতে হবে কেন?আসলে এগুলি যেমন কুরআন হাদীসের নির্দেশেই করতে হয়। ইমামকে তেমন কুরআন হাদীসের নির্দেশেই মানতে হয়। যার বিস্তারিত আলোচনা উপরে অতিবাহিত হয়েছে।
প্রশ্নঃ এক মসজিদে নামাজ আদায় করছি শেষে এক মুসল্লি এসে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা আল্লাহ এক, নবী এক, কুরআন এক, মাযহাব কেন চারটি?
উত্তর : (বুঝলাম এটা তাদের শেখানো বুলি তাই) বললাম এটা আপনি ঠিক বললেন না। আল্লাহ এক তাই নবী এক তা কেমন করে হয় । আমি তো দেখি নবী বহু। বড় বড় নবী চারজন, কুরআন এক তাই কুরআনের হুকুম কি এক?
কোথাও নামাযের হুকুম কোথাও রোজার হুকুম কোথাও হজ্বের হুকুম ইত্যাদি।
বরং আমি যদি এখন বলি আল্লাহ এক কুরআন এক কিন্তু কুরআনের আদেশ নিষেধ এত কেন? ওগুলি ও একটি হওয়া চাই তাহলে কি বলবেন?
আসল কথা হল প্রত্যেক মাযহাব কুরআন হাদীস থেকে উৎসরিত কুরআন হাদীসের মধ্যে বহু হুকুমে প্রশস্ততা রাখা হয়েছে। কোন কোন আমল দুই বা তিন ধরনের পদ্ধিতে করার সুযোগ রেখেছে। এখন যে মুজতাহিদ যেটাকে
অধিক উত্তম হিসাবে বাছাই করেছেন তিনি ঐটার উপর আমল করেছেন।এবং ঐটাই ঐ মুজাতাহিদের মাযাহাব হিসাবে প্রসিদ্ধতা লাভ করেছে।
আলেম মাত্রই একথা জানেন বা আপনার যদি হাদীসের জ্ঞান থাকে তাহলে বলুন যে হাদীসের কিতাবে যেমন জোরে আমীন বলার কথা আছে তেমন আস্তে আমীন বলার কথা কি নেই? যেমন বুকে হাত বাধার কথা আয়েছ, নাভির নীচে হাত বাধার কথা কি নেই? ইমামের পিছে সুরা ফাতিহা পড়ার কথা আছে, আবার না পড়ার কথা নাই?
নামাযের ভিতরে হাত উত্তলন করার কথা আছে, আবার না করার কথাও আছে। হাত কতদূর উঠাতে হবে? কোন হাদীসে আছে কাধ বরাবর, কোনটিতে কানের লতি বরাবর কোনটিতে কানের উপর বরাবর । আপনার যদি হাদীসের সামান্য জ্ঞান ও থাকে তাহলে বলুন এগুলি প্রত্যেকটি হাদীস নাই?দেখি তিনি কেমন ইতস্তত ভাব দেখাচ্ছেন।
বললাম আসুন ছিহাহ সিত্তার কিতাব এ মসজিদে বাংলা থাকলেও আনুন দেখিয়ে দিই। আস্তে বললেন আছে। তখন বললাম আল্লাহ, নবী, কুরআন সবই তো এক তবে হাদীস এতগুলো কেন? এর জবাব দিন তার পরে মাযহাবের জবাব নিবেন, এখন বাস্তব জগতে চলে এসেছেন। হাদীসের ভিন্নতার দরুন-ই মাজহাবের ভিন্নতা প্রত্যেক মাযহাবেরই দলীল এই হাদীস, এই কুরআন।
পাঠক বন্ধুরাঃ এক্ষুদ্র পরিসরে যতটুকু সম্ভব তাকলীদ ও মাজহাব সম্পর্কে আলোকপাত করা হল, বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন!
১. মাজহাব ও তাকলীদ কি ও কেন? তাকী ওসমানী দাঃ বাঃ
২. মাযহাব মানি কেন? মুঃ রফিকুল ইসলাম।
৩. দলীলের আলোকে হানাফীদের নামাজ ৪. তোহফায়ে আহলে হাদীস শায়খুল হিন্দ (রঃ)।
এছাড়া বাংলা বাজার লাইব্রেরী সমুহে এ ধরনের বহু বই প্রকাশিত হয়েছে। পড়ুন, জানুন অপরকে পৌছিয়ে দিন। বাতিল এক সময় দূরিভূত হবেই। ইনশাআল্লাহ
إرسال تعليق