প্রসঙ্গঃ ইসলামি শরিয়তের আলোকে ভোট এবং এর প্রসাঙ্গিক অত্যন্ত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা।
● ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট এবং ভোটারের শরঈ অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিন এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় আপনার পবিত্র এই আমানত কে রক্ষা/হিফাযত করুন!!
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট এবং ভোটারের শরঈ অবস্থান হচ্ছে, ভোট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়! বিশেষ করে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই ভোটের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় এবং এর জন্য জাতীর কর্নধার নির্বাচিত হয়। তাই পবিত্র ইসলামের দৃষ্টিতে ভোটের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
●আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং দেশের বর্তমান অবস্থাঃ
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে সরকারী দল এবং তাদের মিত্র কিছুসংখ্যক দল মিলে সাধারণ বা জাতীয় নির্বাচন করছেন। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী (যার কারণে) বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তপশীল ঘোষণা করেছে এবং আগামী ০৭ জানুয়ারী-২০২৪ রবিবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখন চলছে তাদের ভোট চাওয়ার প্রচার এবং প্রচারণা! অন্য দিকে বেশ কিছুসংখ্যক দল এই নির্বাচন বয়কট করছেন এবং এই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং এর জন্য তারাও নানা ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন! যা সকল পাঠক সহ দেশ-বিদেশের সকলেই অবগত আছেন! সুতরাং আমরা কোন ধরণের রাজনৈতিক কোন কথা আলোচনা করবো না এবং কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন ধরণের আলোচনা করবো না! আমরা শুধুমাত্র ইসলামের আলোকে ভোট কি এবং ভোটের ইসলামী বিধান সম্পর্কে এবং আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তবতার আলোকে কিছু কথা তুলে ধরবো ইন শা আল্লাহ!
০১] ভোট সম্পর্কে ইসলামী বিধান!
মুফতী মুহাম্মাদ শফী(রহঃ) লিখেছেনঃ ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি। যথাঃ
▪(১) সাক্ষ্য প্রদান।
▪(২) সুপারিশ এবং
▪(৩) প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান। (জাওয়াহিরুল ফিকহঃ ৫/৫৩৩)।
(১) সাক্ষ্য প্রদানঃ
কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলোঃ একথার সাক্ষ্য প্রদান যে, অমুক লোকটি যোগ্য এবং ভালো! কাজেই অযোগ্য কোন লোককে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া! যা শরীআতের দৃষ্টিতে অনেক বড় গু|নাহ! যা গু|নাহে কবীরা! পবিএ কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ
হে ঈমানদারগন! তোমরা ন্যয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যয়সঙ্গত সাক্ষ্য দান কর।"(সূরা নিসাঃ ১৩৫)অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছেঃ
وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ
"তোমরা আল্লাহর ওয়াস্তে সঠিক সাক্ষ্য দান কর।" (সূরা তালাকঃ ২)
●এ বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিন বার উপস্থিত সাহাবী (রাঃ) গণকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ "আমি কি তোমাদের কে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব?" সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) গণ হ্যাঁ বললেন! তখন তিনি বললেনঃ "আল্লাহর সাথো কাউকে শরীক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্যতা।" এর পর তিনি হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসে বললেনঃ "শুনে নাও, মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গুনাহ।" (*সহীহ বুখারীঃ ২৬৫৪)
(২) সুপারিশঃ
ভোটের দ্বিতীয় অবস্থান হল তা সুপারিশ। অর্থাৎ কেউ কোন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অর্থ হল, সে উক্ত প্রার্থীকে নির্বাচিত হওয়ার জন্য এবং যোগ্য হওয়ার সুপারিশ করছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
مَنْ يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُنْ لَهُ نَصِيبٌ مِنْهَا وَمَنْ يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُنْ لَهُ كِفْلٌ مِنْهَا
যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে ম|ন্দ কাজের জন্য, সে তার বোঝারও(মন্দ কাজ বা পাপের জন্য( একটি অংশ পাবে। (সূরা নিসাঃ ৮৫)
● সৎকাজের সুপারিশ হল, যোগ্য দ্বীনদার লোকের জন্য সুপারিশ করা। যিনি মহান আল্লাহ তা'আলার, তাঁর রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের এবং বান্দার সকল হক সমূহ যথাযথভাবে আদায় করেন। অনুরূপ ভাবে ম|ন্দ কাজের সুপারিশ হলো, অযোগ্য কোন ফা|সিক বা কোন জা|লিমকে ভোটের মাধ্যমে জাতীর উপর বোঝা ও য|ন্ত্রনা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া!
উপরোক্ত এআয়াতের দ্বারা স্পষ্ট ভাবে বুঝে আসে যে, আমাদের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত প্রার্থী ভালো-মন্দ যা কিছু করবে, তা আমাদের আমল নামায় যুক্ত হবে এবং আমরাও তাতে শরীক হিসেবে গণ্য হবো এবং এর ফলে আমাদের সমর্থিত ব্যক্তি বা ভোট দেওয়া নির্বাচিত ব্যক্তির সকল নেক ও বদ/ম|ন্দ কাজের সমান অংশীদার হিসেবে গণ্য হবো এবং তার কৃত সকল পাপ ও পূণ্যের সমান অংশীদার হবো!
(৩) প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদানঃ
ভোটের তৃতীয় আর একটি দিক হলো প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান। অর্থাৎঃ যেন ভোটার, কোন প্রার্থীকে জাতীর সেবার প্রতিনিধি বানাচ্ছেন। আর এই প্রতিনিধিত্ব যদি শুধুমাত্র ব্যক্তিবিশেষে সীমাবদ্ধ থাকে তবে তার দায়ভার ব্যক্তির উপর বর্তায়। অথচঃ এখানে বিষয়টি ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়! বরং এখানে তার প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি পূরো জাতীর সাথে সম্পৃক্ত! কাজেই সে যখন কোন অযোগ্য, জা|লিম বা পা|পাচারীকে প্রতিনিধি বানাবে তথা ভোট দিবে, তখন উক্ত প্রতিনিধি দ্বারা যাদের হক নষ্ট হবে, তার গু|নাহের একটি অংশও তার(ভোট দাতার) উপর বার্তাবে।
ভোট দেওয়া কি জরুরী?
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভোট মূলতঃ সাক্ষ্য দেওয়া। আর যেমনিভাবে কোন মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হা|রাম, তেমনিভাবে প্রয়োজনের সময় সাক্ষী গোপন কারাও হা|রাম! আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ
"তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। আর যে সাক্ষ্য গোপন করে তার অন্তর গুনাহগার!" (সূরা বাকারাঃ ২৮৩)
রসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ "কাউকে সাক্ষীর জন্যে ডাকা হলে সে তা গোপন করলে তা মিথ্যা সাক্ষীর ন্যয়!(তাবারানী আওসাতঃ ২৭০)
অর্থাৎঃ ভোট না দেওয়া সাক্ষ্য গোপন করার ন্যয়! যা স্পষ্ট হা|রাম! কাজেই ভোট দেওয়া জরুরী।
উল্লেখ্য যে, ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে, ব্যক্তি ও ব্যক্তির সমর্থিত দল উভয়ের জন্য উপরোক্ত সকল হুকুম সমান ভাবেই প্রযোজ্য হবে!!!
যে সব ক্ষেত্রে ভোট বর্জন করাও জরুরীঃ
উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি ভোট একটি আমানত, সাক্ষ্য এবং প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব অর্পণ করা! এক্ষেত্রে আল্লাহ ওয়ালা, দ্বীনদার, আমানতদার এবং চরিত্রবান লোককেই ভোট দেয়া কর্তব্য! অনুরূপ ভাবে কোন ফা|সিক ও জা|লিমকে ভোট প্রদান করা হা|রাম! সুতরাং যদি এমন হয় যে, কাউকে ভোট প্রদান করলে অমুক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যাবে এবং অমুক দল ক্ষমতায় আরোহন করবে! ফলে দেশের ও দেশের নাগরিকদের সার্বিক অবস্থা আরো ক্ষতিকর হবে! তাহলে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকা সর্বোত্তম! কারণ, এর দ্বারা অযোগ্য ব্যক্তি এবং তার দলকে সরাসরি অস্বীকার করা হয় এবং অযোগ্য ব্যক্তি ও তার দল কে হা|রাম ভোট প্রদান করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ পালন করা হয়!
ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নেতিবাচকঃ
মানসিকতার কুফলঃ এক্ষেত্রে অনেকে এমন ধ্যান-ধারণা পোষণ করেন যে, রাজনীতি ও ভোট এগুলোতো চরম গান্দা জিনিস! ভালো মানুষ এগুলোর সংস্পর্শে আসতে পারে না!" অথচঃ এই ধারণার পরিণাম অত্যন্ত ভায়াবহ! যে ভয়াবহতা পূরো জাতীকে বহন করতে হয়। কেননা ভালো মানুষ যদি ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, তবে খারাপ মানুষের ভোটে খারাপ মানুষ গুলোই নির্বাচিত হবে! তাহলে তো ঐ অঙ্গন চিরদিন খারাপই থেকে যাবে। আর এই খারাবীটা শুধুমাত্র তার একার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না! বরং সামগ্রীকভাবে তা অভিশাপরূপে ছওয়ার হয় গোটা জাতির উপর!
আবার অনেকে হয়তো মনে করেন, আমার একটি ভোটের দ্বারা কি আসে যায়!? অথচঃ একথা সবার জানা আছে যে, প্রচলিত গনতন্ত্রে একটি ভোটের গুরুত্বও অনেক বেশী! যখন ভাল ও মন্দ দু'জন প্রতিদ্বন্দী সমান সমান ভোট পায়, তখন মাত্র একজন ভোটারই (চাই সে সবচে নিকৃষ্ট হোক বা সবচে উত্তম ) পূরো জাতীর ভাগ্য নির্ধারণ করেন! তারা মাযলুম এবং নিপিড়ীত হবেন নাকি তাদের সকল অধিকার সংরক্ষিত হবে!? সুতারাং একজন ভোটার বা একটি ভোট গনতন্ত্রে অনেক বড় ভুমিকা পালন করে!!
● তাছাড়া সমস্ত ভালো মানুষ যদি মনে করে যে, আমার একজনের ভোটের দ্বারা আর কি হবে? তাহলে তো খারাপ মানুষের রায় প্রাধান্য পাবে! এর দ্বারা সমাজের পরির্তন কোন দিন সম্ভব নয়! বরং প্রত্যেকে তার রায়কে (ভোটকে) প্রকাশ করে অযোগ্য লোকের অভিশাপ থেকে জাতীকে রেহাই দিবেন। আর প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন লোক যদি তাদের ভোটারাধিকার যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করেন, তবে অযোগ্য লোক নির্বাচিত হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে আরো একটি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে! তা হলো, গণতন্ত্র একটি কুফরীতন্ত্র! আর নির্বাচন গ|ণতন্ত্রের একটি অংশ! কাজেই ভোট দেওয়া হলো গণতন্ত্র সমর্থনের নামান্তর। এর জবাব হলঃ " নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রে একটি কুফরীতন্ত্র! কিন্ত এতে ভোট দেওয়া আর গণতন্ত্রের সমর্থন করা এক জিনিস নয়! বরং গণতন্ত্রের প্রতি ঘৃণা রেখেই জাতীয় কল্যণের দিকে লক্ষ্য করে যোগ্য লোককে বসানোর চেষ্টা করবে হবে! যেমন কেউ অনন্যপায় অবস্থায় মরা পশুর গোশত খেলে সে মরা পশুকে পছন্দ করে, তা বলা যায় না! অনুরূপভাবে শুধুমাত্র ভোট প্রদানই গণতন্ত্রের উপর সন্তুষ্টি বুঝায় না!"
এখানে আরেকটি আপত্তি আসতে পরে, যারা নির্বাচনে দাড়ায় তাদের মধ্যে তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজনও যোগ্য হয় না! এর জবাব হলঃ "যখন কারো সামনে দু'টো ক্ষতির দিক আসে, তখন শরীআতের মূলনীতি হলো, যার মধ্যে তুলনামুলক ক্ষতি কম তা ইখতিয়ার করতে হয়! কাজেই যার দ্বারা ইসলামের ক্ষতি হবে তার বিপরীত জোগ্য লোকটিকে মূল্যবান ভোট দিয়ে তাকে প্রতিহত করতে হবে!"
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সকল কে তার ভোটারাধিকার বাধ্যতামূলক ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আবার কোন ধরণের ক্ষতির আশংকা থাকলে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে! এর কারণ, কোন ভালো মানুষকে ভোট না দেওয়ার কারণে কিংবা ভোট দেবার জন্য কোন অযোগ্য লোক নির্বাচিত হলে এর দায়ভারই শুধু তার উপর বার্তাবে না! বরং সমগ্র জাতীর যে ক্ষতি হবে এসবের জন্যও সে দায়ী হবে!
মোটকথাঃ
ভোট দেওয়া প্রত্যেকের জন্য জরুরী! না দেওয়াটা যেমন হা|রাম! ঠিক অনুরূপ ভাবে অযোগ্য লোক এবং তার দলকে নির্বাচিত করাও হা|রাম! আর কোন অযোগ্য লোক নির্বাচিত হলে ভোট না দেওয়ার বা ভোট দেবার ভ|য়াবহতা আরো কয়েকগুনে বেড়ে যায়! আর পূর্বেই তা উল্লেখ করা হয়েছে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষ্য না দেওয়া বা গোপন করাকে মিথ্যা সাক্ষীর সাথে তুলনা করেছেন! যা জঘন্যতম অন্যায়! অনুরূপ ভাবে অযোগ্যকে নির্বাচিত করা নিষিদ্ধ! সুতরাং বরং সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম পন্থাটি হলো, তার কাছে সাক্ষ্য চাওয়ার পূর্বেই সে সাক্ষ্য দিয়ে দিবেন।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ"আমি কি তোমাদেরকে উত্তম সাক্ষী দানকারীদের সম্পর্কে বলব না? যে তার সাক্ষ্য তার কাছে তলব করার পূর্বেই আদায় করে।" (মুসলিম শরীফঃ ১৭১৯)
কিন্ত এ ক্ষেত্রে জানার ও বোঝার বিষয় হলো, সাক্ষ্য দেবার জন্য উপযুক্ত লোক আবশ্যক! কারণ, সাক্ষ্য প্রদান করার দ্বারা ক্ষতির আশংকা থাকলে, সাক্ষ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকা উত্তম! কারণ, অযোগ্য লোককে ভোট দেওয়া অনেক বড় গুনাহের কাজ। অনুরূপভাবে টাকার বিনিময়ে বা অন্য কোন পার্থিব জিনিসের কারণে সাক্ষ্য বিক্রি করাও জঘন্যতম অন্যায়!!
শেষ কথাঃ সকল ভোটারদের প্রতি।
সুতরাং সকল দেশবাসীর কাছে আমার অনুরোধঃ যারা মনে করেন, বর্তমান সময়ের এই জাতীয় নির্বাচন এবং ভোট দেশ ও দেশবাসীর জন্য কল্যাণকর। তারা আগামী ০৭ জানুয়ারী ২০২৪ রবিবার কোন ভাবেই কোন ভোটার তাঁদের এই ভোট বর্জন বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন না! তবে প্রার্থিত প্রার্থী এবং দলগুলোর মধ্যে তুলনামুলক ভাবে সবচেয়ে ভালো দলকেই সবার মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন! কেননা, আপনার ভোট বর্জন বা ভোট প্রদান না করা বা না দেওয়ার ফলে কিংবা সঠিক লোক ও দলকে ভোট না দিলে অসৎ লোক বা দল নির্বাচিত হলে এর জন্য আপনাকে মহান আল্লাহ তা'আলার দরবারে জবাবদিহি করতে হবে!
● অনুরূপ ভাবে যারা মনে করেন, বর্তমান সময়ের এই নির্বাচন এবং ভোট দেশ ও দেশবাসীর জন্য অকল্যাণকর! তারা এই নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন! কিন্ত এর জন্য আপনাদের ভাবতে হবে, এর দ্বারা দেশ ও দেশবাসীর কতোটা উপকার হবে! সুতরাং দেশ ও দেশবাসীর উন্নয়নের জন্য তারা বিকল্প কোন পন্থা গ্রহণ করতে পারেন!
সকল প্রার্থী এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত দলের নেতা-নেত্রী, কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি।।
আগামী ০৭ তারিখের নির্বাচনে সকল ভোটারদেরকে তাঁদের মূল্যবান ভোট প্রদানের জন্য বা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য কিংবা ভোটের বিরোধীদেরকে সকল প্রকার ভয়ভীতি, জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে এবং বিপক্ষ দল বা প্রার্থী ও তাদের নেতা-নেত্রী, কর্মী এবং সমর্থকদের নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করার এবং ভোট দেবার জন্য সমান সুযোগ প্রদান করে আপনাদের উপর মহান আল্লাহ তা'আলার অর্পিত দায়িত্ব পরিপূর্ণ ভাবে পালন করুন। অন্যথায় মহান আল্লাহ তা'আলার দরবারে কঠিন শা|স্তি পেতে হবে!
নির্বাচন কমিশন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহল ও ব্যক্তি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনী এবং তাঁদের সকল সদস্যদের প্রতিঃ
আগামী ০৭ তারিখের নির্বাচনে সকল ভোটার যাতে তাঁদের ভোট নির্বিঘ্নে, আনন্দময় এবং উৎসবমূখর পরিবেশে প্রদান করতে পারেন এবং ভোটের বিরোধীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে যাতে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারেন, তার জন্য নিরপেক্ষ ভাবে সকল প্রকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে আপনাদের উপর মহান আল্লাহ তা'আলার দেওয়া কঠিন দায়িত্ব সঠিক, সুন্দর এবং পরিপূর্ণ ভাবে পালন করুন এবং মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট থেকে এর উত্তম বিনিময় গ্রহণ করুন!!
০২] ভোট প্রসাঙ্গিক কিছু কথা!
(ক) উচিত কথা বললে সবার গায়ে লাগে তারপরও বলতে হয....!!
★ নেতারা সবাই দিন শেষে একজন অপর জনের পরম আত্মীয় হয়ে যান! কিন্তু মূর্খ জনগণ শুধুমাত্র একে অপরের সাথে কামড়া-কামড়িই করে এবং একজন অপর জনের শত্রুতে পরিনত হয়!
সাধারণ জনগণ ঝগড়া করলে লাভ হয় শুধুমাত্র ওই নেতাদের! আর দিন শেষে সাধারণ জনগণের ভাগ্যে মেলে বড় জোর রিলিফের কিছু চাল!!
তাই,কোনও নেতার কথায় উত্তেজিত হয়ে যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশী কিংবা এলাকাবাসীর উপর হামলা চালাচ্ছেন কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বা কোন মামলা- হামলা, অত্যাচার ও উৎপীড়ন করছেন বা আপনার মুখের নোংরা ভাষায় গালাগালি কিংবা ঝগড়া-বিবাদ করে কষ্ট দিচ্ছেন!
অথচঃ প্রকৃত পক্ষেই সেই প্রতিবেশী কিংবা এলাকাবাসীই হলো আপনার সুখে-দুঃখের প্রকৃত অংশীদার!!
●কেননা, নির্বাচনের পর নেতা-নেত্রী কিন্তু আপনার খবর নিবেন না! শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে নেতা যখন ভোগ-বিলাসে মত্ত হবেন, জীবন সংগ্রামে আপনি হয়তো তখন ক্ষুধার্তই থাকবেন!!
আর আপনি মারা গেলে আপনার প্রজন্মকে আপনি এলাকাবাসীর কাছেই রেখে যাবেন, কোন নেতার কাছে নয়! আপনার মৃত্যুর পর এলাকাবাসী আপনার জানাজা, দাফন কাফন ও মাটি দিবেন!
● নেতারা কিন্তু তাদের সন্তানকে বিদেশে নিরাপদে রেখে আপনার হাতে অস্ত্র তুলে দেয়! তাই নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন নেতার বা এমপির কথায় কেন আপনি আপনার এলাকাবাসীর ক্ষতি করছেন!হা|মলা, ভাংচুর, অ|গ্নিসংযোগ কিংবা হতাহত করছেন?
●● ভোট কিন্তু পাঁচ বছর পরে শুধুমাত্র একদিন! কিন্তু সব এলাকাবাসী চিরদিন!
সুতরাং সকলেই সঠিক আইন মেনে চলুন এবং অন্যের ভোটাধিকারকে সম্মান করুন! পেশী শক্তি, মামলা- হামলা ও টাকার কাছে বিক্রি না হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিন! ভোট একটি পবিত্র আমানত! তাই আমাদের সবার উচিত হলো পবিত্র এই আমানাতের হিফাযত করা! আপনার ভোট আপনি দিবেন, যাকে খুশি তাকে দিবেন! কিন্তু তুলনামুলক ভাবে ভালো লোক এবং দলকে ভোট দিন!!
●● মন্তব্যঃ আহা! মানুষগুলো যদি বুঝতো...!
(গ) আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তবতার আলোকে একটুখানি ভোট রঙ্গরস.....
● এক বৃদ্ধ চাচা ভোট দেওয়ার পর বাইরে এসে সংশ্লষ্ট পোলিং এজেন্টকে জিজ্ঞেস করলেনঃ "বেটা! তোমার চাচী কি ভোট দিয়ে চলে গেছেন?’’
পোলিং এজেন্ট তার কাছে থাকা লিস্ট চেক করে দেখে বললোঃ ‘’হ্যাঁ চাচা! চাচী কিছুক্ষণ আগেই ভোট দিয়ে চলে গেছেন।"
● তখন চাচা গভীর দুঃখের সাথে হতাশাজনক কন্ঠে বলেলনঃ "ইস! যদি একটু তারাতারি আসতে পারতাম, তবে ওর সাথে আজ আমার দেখা হতো!’’
পোলিং এজেন্ট অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ "কেন চাচা? চাচী কি আপনার সাথে থাকেন না?
● বৃদ্ধ চাচা খুবই আক্ষেপ করে বলেলনঃ"বেটা! আজ ১১ বছর হয়ে গেছে তোমার চাচী মারা গেছেন! কিন্তু প্রতিবারই ভোটের সময় এসে ভোট দিয়ে চলে যান, কিন্তু কোনদিনই আমার সাথে দেখা হয় না!"
বিঃদ্রঃ সব ধরণের বিতর্কিত, উস্কানিমূলক, হিংসাত্মক, অবৈধ ও অসৌজন্য মূলক এবং অনৈক কথা এবং মন্তব্য অগ্রহনীয়! সুতরাং এ ধরণের সকল কথা ও মন্তব্য করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো! সবাই কে আন্তরিক ধন্যবাদ! শুভ কামনা সবার জন্য! আল্লাহ হাফিয।
লেখকঃ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
মডারেটর, বিশিষ্ট কলামিস্ট, কলম চলবে সত্য প্রকাশে গ্রুপ
إرسال تعليق