যুবকদের ভিতরে ঈমান উজ্জীবিত করার কোন দায়িত্ব বর্তমান সময়ের অধিকাংশ পিতামাতা পালন করেন না! চার পাঁচ বছর পর্যন্ত খুব আদর করেছেন! সাত আট বছরে স্কুলে ছেড়ে দিয়েছেন! বারো তেরো বছর হলে আর কোন খোঁজই নেন না! কি জানে আমার ছেলে পড়ে? কে কে তার বন্ধু? নামাযের জন্য মসজিদে যায় কিনা? নামায আদৌ পড়ে কিনা? এসবের কোন খোঁজ নেয় না!
যখন পনের, ষোল, সতের, আটারো বছর তার বয়স হয়, তখন বাবাও জানে, মাও জানে, "আমার ছেলের অমুক মেয়ের সাথে Affair আছে!" কি যেন বলে? রিলেশন আছে! শোনেন না এগুলো? মা বাবা জানে না? অবশ্যই শোনেন এবং জানেন!
এটা মেয়ের বাবাও জানে এবং ছেলের বাবাও জানে! মেয়ের মাও জানে ও ছেলের মাও জানে এবং তারা ভাবেন যে, "এই বয়সে তো এতোটুকু করবেই! আরে এতে কিছু হবে না!"
এটাই তো কথা! আচ্ছা! এই যে ছেলে মেয়ে রিলেশন করে, এটা ফরয? না ওয়াযিব? না সুন্নাত? নাকি মুস্তাহাব? এটা কি? এটা সরাসরি হারাম! স্পষ্ট হারাম! হারাম এবং হারাম!
এই হারাম কাজ যদি কেউ মেনে নেয় এবং এর ফলে সন্তান হারাম করে, আর বলে 'NO PROBLEM, IT’S OK! বড় হলে সেরে যাবে! তার কি ঈমান থাকে!?
শরীয়তের পরিভাষায় তাকে বলা হয় "দাইয়ূস!" এটাই হলো বর্তমান সময়ের অধিকাংশ পিতামাতার বাস্তব অবস্থা!
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়! ঐ যে যুবক-যুবতী, ওদের ভিতরে ঈমান আছে! ওর মা শেখায়নি, বাবাও শেখায়নি, বোন শেখায়নি, ভাই শেখায়নি, স্কুলে ঈমান শেখানো হয় না, প্রতিষ্ঠানে নেই, সমাজে নেই, টিভিতে নেই.....!
তারপরেও ফিতরাতি, ন্যাচারাল ঈমান ওর (সন্তান) ভিতরে নড়ে! তাইতো, এই যে ছেলে মেয়ের সম্পর্ক অবৈধ হলে গুনাহ হবে! কিন্তু মন যে টানে, সম্পর্ক হয়ে গেছে তাই একে অপরের কাছে আসতে চায়! আবার পাপের ভয়েও বলেঃ "হুজুর! মোবাইলে প্রেম করলে কি গুনাহ হবে?" এর সহজ জবাব হলোঃ "গুনাহ হবে!"
পাল্টা প্রশ্নঃ "এখন কি করবো?" ওরা তখন ঈমানের তাড়নায় কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে! এতকাল হারাম কাজ করছিলো, তাতে বাবামা'র কোন আপত্তি ছিলো না!
●● বিয়ে করার পরও কি হারাম? নাকি হালাল? হালাল! এইবার বাবা মা আকাশ পাতাল ভেঙে ফেলে দিবে! এই বিয়ে আমরা মানি না! ব্যপারটা এমন যে, "হারাম করছিলি করছিলি! তুই হালাল কাজটা কেন করলি?"
আমার কথা শুনে আপনারা হয়তো হাসছেন?? বড় আফসোস লাগে প্রিয় ভাইয়েরা! বড়ই আফসোস লাগে!
● আমার পরিচিত এক ছাত্র বুয়েটে পড়ে! ইঞ্জিনিয়ারিং এ খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র! বাবা-মা খুব দ্বীনদার! হিফজখানায় তাকে দিয়েছিল, হাফিজও হয়েছিল! এরপর আলিম পাশ করে বুয়েটে গিয়েছে! দাড়ি আছে! আমার সাথে তার "প্রশ্ন উত্তর" শিক্ষার একটা অসাধারণ সুন্দর সম্পর্ক আছে! আমাকে একবার বলতেছেঃ
"স্যার! এবার ফোর্থ ইয়ার শেষ করবো! এতোদিন পাপের ভয় হতো স্যার! খুব চেষ্টা করেছি সকল পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার! এখন পাপ ঘটে যাচ্ছে! কিন্তু বাড়িতে যখন বিয়ের কথা বলি, মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর আসমান ভেঙে পড়েছে! তাদের কথা হলোঃ বুয়েট থেকে কেবলমাত্র অনার্স পাশ করেছে, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে, এখন বিয়ে কেন? আরো দশ বছর যাক! তুই আরো ডিগ্রি কর! পিএইচডি কর! প্রতিষ্ঠিত হ! এরপর ৩৫-৪০ এ বিয়ে শাদি করবি!"
যখন আর বিয়ের দরকারই থাকবে না! তাহলে এখন কি হবে? এখন যিনা করবি! এই হলো দ্বীনদার সামজের বর্তমান অবস্থা!
আপনার ছেলে বা আপনার মেয়ে বিয়ে করতে চাইলে আপনার কষ্ট লাগে! আর ওরা অবৈধ রিলেশন করে, তাতে আপনার কষ্ট লাগে না! আপনি ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের ষোল আনাই আধিপত্য মেনে নিয়েছেন! আপনি হয়ত ঠিকই নামায পড়ছেন, রোযা রাখছেন, আপনি শবে বরাত করছেন,
আপনি হুজুরদের ওয়াজ শুনছেন! মনে করছেন, মাশা'আল্লাহ! আমি কতবড় মুসলমান! কিন্তু সন্তানের প্রতি দায়িত্বের এই অবহেলার কারণে আপনাকে আল্লাহর কাছে পাকড়াও হতে হবে! আল্লাহ আমাদের সবাই কে হিফাযত করুন (আ-মীন)!!
মনে রাখবেন আপনার প্রতিটি ভালো কাজের প্রভাব আপনার সন্তানের ওপর গিয়ে পড়ে!!
শুধুমাত্র বিয়ের পরই নয়! বরং বিয়ের আগে যখন সন্তানের কোন চিহ্নমাত্র থাকে না, তখনকার ভালো সব কাজগুলোও অনাগত সন্তানের জন্য আগাম "নূর ও হেদায়াত"হয়ে সঞ্চিত এবং গচ্ছিত থাকে। সূরা কাহফে মুসা (আঃ) ও খিজির (আঃ)-এর ঘটনায় দুই এতিম বালকের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়ছেঃ
وَكَانَ أَبُوهُمَا صَـٰلِحࣰا
"তাদের পিতা নেককার ছিলেন!" (সূরা কাহফঃ ৮২) এই দুই বালকের পিতা সেই কবে মারা গেছেন। দুই অবোধ এতিমপুত্রের জন্য কোনো বিশ্বস্ত অভিভাবক রেখে যেতে পারেননি। শুধু নিজের নেক আমলের প্রভাব রেখে গেছেন। আল্লাহ তা'আলা কী করলেন? তৎকালীন সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ দু'জন মানুষকে পাঠিয়ে দিলেন দুই এতিমের সম্পদ রক্ষার জন্য!
আমার কুরআন তিলাওয়াত, আমার দীর্ঘ সময় ধরে সলাত আদায়, ছাতিফাটা গরমে রোযা রাখা, অভাব থাকা সত্ত্বেও গোপনে দান-খয়রাত করা, হাঁটতে চলতে আল্লাহর জিকির করার ফল এবং প্রভাব শুধু আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? জ্বি না! আমার সব প্রতিটি নেকআমলের সুপ্রভাব আমার সন্তানের ওপর গিয়েও পড়বে। কারো কারো তাদের পূর্বপুরুষের সুকৃতি-সদাচারের প্রভাব ও সুফল পরবর্তীতে অধঃস্তন সাত পুরুষ পর্যন্ত ভোগ করে।
আমি ভালো মানে, আমার সন্তানও ভালো। নাতি ভালো! আমার পুতি ভালো! পতির পুতিও ভালো ইন শা আল্লাহ। আমি ভালো হওয়ার পরও সন্তান ব্যতিক্রম হলে, সেটা হতে পারে "আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা!" রাব্বে কারীম আমাদেরকে ‘সালিহ’ হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমাদের সন্তানদেরও ‘সালিহ’ বানিয়ে দিন (আ-মীন)।
লেখকঃ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
Post a Comment