২০২৪ সালের কত তারিখে রমজানের রোজা রাখা শুরু হবেঃ
২০২৪ সালে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হবে ১১মার্চ রোজ সোমবার এবং ৯ এপ্রিল ৩০ রমজান শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।
পবিত্র মাহে রমজান গুরুত্ব ও ফজিলতঃ
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেনঃ
الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ وَمَا بَیۡنَہُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ
অর্থঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমগ্র বিশ্ব জগত কে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সুরা ফুরকান-৫৯)।
সৃষ্টি জগতের মধ্যে একটিকে অপরটির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যেমন- মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য সৃষ্টি জীবের উপর।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-আমি আদম সন্তান কে শ্রেষ্ঠ সম্মানে ভূষিত করেছি। (সুরা বনি ইসরাঈল-১৭)।
অনুরুপ ভাবে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) কে সমস্ত নবী ও রাসুলগনের উপর, মক্কা মদীনাকে অন্যান্য স্থানের উপর এবং রমজান মাস কে অন্যান্য মাসের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
এজন্যই বিশ্ব নবী (সঃ) রমজান মাস কে পবিত্রতম, বরকতময়, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত, সহমর্মিতা ও ধৈর্যের মাস বলে অভিহিত করেছেন। (মেশকাত-১৭৩ পৃঃ)।
রমজান শব্দের অর্থঃ
রমজান শব্দটি রমজ্ থেকে নির্গত। শাব্দিক অর্থঃ পুড়ে যাওয়া, ভষ্ম হওয়া, নিঃশেষ হওয়া।আর সিয়াম শব্দটি সওমুন এর বহু বচন। আভিধানিক অর্থঃ বিরত থাকা।
পারিভাষিক অর্থঃ সুবহি সাদিক তথা পূর্বাকাশে সাদা আভা বিস্তৃত হয়ে উঠা থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস পরিত্যাগ করতঃ সংযম সাধনা করার নাম সওম বা রোজা।
অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে পানাহার, যৌনাচার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে পারলে আল্লাহ তায়ালা তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। (বুখারী, মেশকাত -১৭৩ পৃঃ)।
উল্লেখ্য কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ, উদরপুর্তি ও লালসার যে অংশ টুকু হালাল ছিল রোজা অবস্থায় তাও হারাম করা হয়েছে। তাহলে সুদ-ঘুষ, হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত-শেকায়েত, মিথ্যাচার, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস-রাহজানী, মারা-মারী, কাটা-কাটি, হানাহানি, গর্ব-অহংকার, আমানতের খেয়ানত, নর-নারীর অবৈধ মিলন যা সব সময়েই হারাম তা যে এমাসে অধিকতর ঘৃণিত ও গুনাহের কাজ তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই।
এজন্যই তো আল্লাহর নবী (সঃ) বলেছেনঃ হে কল্যানকামী, নেক আমলকারী ! তুমি অগ্রসর হও। আর হেপাপাচারী! তুমি তোমার পাপাচার বন্ধ কর। (তিরমিযি-১ম খন্ড ১৪৭ পৃঃ,মেশকাত-১৭৩ পৃঃ)।
এমনকি রোজার সম্মানে রোজাদারের সামনে বে-রোজাদারের খাওয়া-দাওয়া, অনৈতিক আচরন সঠিক নয়। হোটেল রেস্তোরা বন্ধ রাখা উচিৎ। এতে ধর্মীয় নিদর্শনের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে বর্ণনা করেন-
وَمَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰہِ فَاِنَّہَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ
অর্থঃ- ধর্মীয় নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অন্তরে খোদাভীতি থাকার পরিচয়”। (সূরা হজ্ব -৩২)।
এজন্য ধর্মীয় নিদর্শন কুরআন-হাদীস, দাড়ি-টুপি, নামাজ-রোযা, হজ্ব-যাকাত, মাদরাসা, মসজিদ, ইত্যাদীর প্রতি সম্মান বজায় রাখা জরুরী। রমজানের রোজা পাগল ও নাবালেগ ব্যতিত সকলের উপর ফরজ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ۙ
হে ঈমানদারগণঃ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পার। (সূরা বাকারা -১৮৩)।
নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব, দরিদ্র, অন্ধ-বধির, শ্রমিক সকলকেই রোযা রাখতে হবে। তবে মা’জুর, অসুস্থ ব্যক্তি সুস্ততার পরে রাখলেও চলবে।উল্লেখিত আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, রোজার দ্বারা মানুষকে অনাহারে রাখা উদ্দেশ্য নয় ।
উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত পালনে বান্দার তাকওয়া অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভ করা। অনাহারে রাখাই যদি উদ্দেশ্য হত তবে সাহরী বিলম্বে এবং সময় হলেই ইফতার করার মাহাত্ম বর্ণনা করা হত না।
বুখারী মুসলীম শরীফের হাদীসের মধ্যে আছেঃ হযরত রাসূল (সাঃ) বলেন- তোমরা সাহরী খাও উহাতে বরকত রয়েছে, মানুষ ততদিন কল্যানের সাথে থাকবে যতদিন সময় হলেই ইফতার করবে। (মেশকাত -১৭৫)।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে- ইফতারের সময়ের দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। তদরুপ শবে কদরে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে রাত্রি যাপন করে ইবাদাত করার দ্বারা পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
রমযানের পরিপূর্ন শুদ্ধতা ও এ মাসে অধিক পরিমান সওয়াব প্রাপ্তির জন্য যা করনীয়-
(১) পরিশুদ্ধ নিয়ত করা।
(২.) আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টির আশায় রোযা রাখা ।
(৩.) রাতের শেষ প্রহরে পরিমিত সাহরী খাওয়া ।
(৪) সময় হলেই হালাল বস্তু দ্বারা ইফতার করা ।
(৫) চোখ কান মুখ ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যথাযত হেফাজত করা, অর্থাৎ এই সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা যে সব কাজের গুনাহ হতে পারে যেমন নাচ, গান, গীবত,চোগল খুরি, কুটনামী করা ও শুনা ইত্যাদী থেকে বিরত থাকাই উল্লেখিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের হিফাজত।
(৬) অধিক পরিমানে নফল ইবাদাত করা, কারন এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের কমপক্ষে ৭০ গুন সওয়াব দান করা হয়।
(৭) অধিক পরিমানে কোরআন তেলাওয়াত করা, কারন এমাস কোরআন নাজিলের মাস, আল্লাহ তায়ালা বলেন রমযান মাস কোরআন নাজিলের মাস। (সূরা বাকারা-১৮৫)।
এমাসে বিশেষতঃ তারাবীহ নামাযে কোরআন খতম করা সুন্নাত।
(৮)হযরত রাসূল (সঃ) বলেনঃ এমাসে অধিক পরিমানে রাত্রি জাগরন, নামাজ ও অন্যান্য জিকির করা, আল্লাহর নিকট গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে জান্নাত কামনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রার্থনা করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
(৯) যে সব ব্যক্তি বর্গের নিকট জিবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা কিছু স্বর্ণ ও কিছু রৌপ্য যা দ্বারা নেছাব পূর্ন হয় (৭ই তোলা স্বর্ণ বা ৫২ই তোলা রুপা হয়)
তদ্রুপ ঐ পরিমান স্বর্ন, রোপ্যের মূল্যের নগদ টাকা, ব্যাংক ব্যলেন্স, ব্যবসার মাল, ঘরে প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাব পত্র (যা বসরে কোন কাজে প্রয়োজন হয় না) ইত্যাদী মওজুদ থাকে, তার উপর যাকাত ফরজ।
উক্ত সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ অংশ যাকাত হিসাবে আদায় করতে হবে। রমজানে আদায় করিলে ৭০ গুন সওয়াব বেশী যাবে । (হেদায়া ১ম খন্ড- ২০৮-১১পৃঃ)।
উল্লেখ্য উহা অসহায় গরীব মিসকিন কে প্রদান করিবে। বিশেষভাবে দ্বীনি ইলম শিক্ষারত অসহায় গরীব তালিবে ইলমদেরকে যাকাত ফেতরা দান করলে, প্রাপ্য হিসাবে হকদার ও ধর্মীয় খেদমতের সহযোগীতার কারনে দ্বিগুন সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায় ।
এখানে একটি বিষয় প্রনিধানযোগ্য যে যাকাত, নামাজ, রোজার ফরজের ন্যায় একটি ফরজ ইবাদাত।
কোরআন শরীফে অনেক স্থানে আল্লাহ তায়ালা নামাজের পাশাপাশি যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল যাকাত ফরজ হওয়া সত্বেও বিত্তবান লোকেরা সঠিক ভাবে যাকাত আদায় করে এমন সংখ্যা খুবই কম।
অথচ যারা যাকাত আদায় করে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- “হে নবী ! যারা সম্পদ জমা করে আর উহা আল্লাহর রাস্তায় দান করে না (যাকাত দেয় না) তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও”। (সূরা তওবা -৩৫)
হযরত নবী (সঃ) বলেনঃ যাকাত আদায় বিহীন সম্পদ কিয়ামতের দিন বিশাল অজগর সাপ হয়ে তাকে দংশন করবে, আর ঐ সাপ বলবে আমি তোমার মাল, আমি তোমার সম্পদ। (সহীহ ইবনে হিব্বান)। আল্লাহ বিত্তবান ভাইদের রমজানেই সঠিক ভাবে হিসাব করে যাকাত আদায় করার তাওফীক দান করুন।
(১০) উপরোল্লিখিত মাল কিংবা তার সমমূল্য যদি কাহারো নিকট ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর মওজুদ থাকে তাহার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।
mashallah. Shundor likhechen
ReplyDeletePost a Comment