পবিত্র মাহে রমযানের শেষ দশকের ফজিলত। যে কারণে রাসূলুল্লাহ সাঃ রমযানের শেষ দশক গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন।


হজরত জিবরাইল (আঃ) এসে রাসূল সাঃ-কে বললেনঃ ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমযান মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না। তখন নাবীজী সাঃ বললেনঃ আ-মীন!"-(মুসতাদরাকে হাকেম)।"

রহমত, বরকত এবং নাযাত। এ মাসের প্রতিটি দশকে রোযাদারদের জন্য মহান আল্লাহ তা'আলার বিশেষ উপহার রেখে দিয়েছেন। রহমত ও বরকত শেষ হয়ে ২১ রমযানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে যাবে নাযাত প্রাপ্তির বিশেষ দশদিন। নাযাতের অর্থই হচ্ছে পরিত্রাণ কিংবা মুক্তি। যেহেতু সিয়াম সাধনা তথা ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে বান্দা গুনাহ থেকে মুক্তি পান, পরকালে কঠিন শাস্তি তথা দোজখ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন, এজন্যই মাহে রমযানকে নাজাতের মাস বলা হয়েছে। মাহে রমযানের যত ফযীলত রয়েছে তার শেষ কথাই হচ্ছে নাযাত। এই একমাসে ইফতার, সাহরি, সিয়াম সাধনা, নামায, দু'আ, ইবাদত-বন্দেগি, দান-সাদকা এবং সকল ভালো কাজের সফলতাই হচ্ছে মহান আল্লাহ রব আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি তথা এই নাযাত।

রমযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই গোটা সময়টি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবুও এ মাসের শেষ দশক বা শেষ দশ দিনকে গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি এ সময় ইতিকাফসহ বিভিন্ন প্রকার ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন। পবিত্র রমযানকে মহানাবী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ "এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফেরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।" (মিশকাত)। 

একটি হাদীসে হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ "রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমযানের শেষ দশ দিনে আমল- ইবাদতে অধিক পরিশ্রম করতেন। (মুসলিম)। 
অপর বর্ণনায় হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ "রমযানের শেষ দশ দিনে প্রবেশ করে রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম রাত জাগরণ করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং পূর্ণভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। (মুসলিম)। 

রমযানের শেষ দশ দিনে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম রাত জাগরণ করতেন এই হাদীসের এ অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় বা বোঝা যায়, প্রথম বিশ দিনে রাসুল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণ রাত জাগরণ করতেন না; বরং রাতের কিছু সময় ইবাদত করতেন এবং কিছু সময় ঘুমিয়ে কাটাতেন। শেষ দশ দিনে এমনকি তিনি বিছানায়ও গমন করতেন না। রাতের পুরোটা সময় ইবাদতে কাটাতেন। 

অন্য একটি হাদীসে এসেছেঃ রাসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এত বেশি চেষ্টা-সাধনা করতেন, যা অন্য মাসে করতেন না! (মুসলিম)। 

আরো বর্ণিত আছেঃ "শেষ দশক চলে এলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে লাগতেন। নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারের লোকদের জাগাতেন।" (বুখারী ও মুসলিম)। 

উম্মুল মু'মেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ "যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নাবী কারীম সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।" (সহিহ বুখারী)। 
এ ছাড়া হজরত আয়েশা(রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত রয়েছেঃ "প্রথম বিশ দিনে রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম ও ইবাদতে কাটাতেন। শেষ দশ দিনে পূর্ণভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ইবাদতে নিমগ্ন হতেন।" (মুসনাদে আহমদ)। 

🔸যে কারণে রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের শেষ দশক অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেনঃ

● রমযানের শেষ দশকটি যেসব কারণে অত্যন্ত বেশী গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর রয়েছে। আর এটি এমন একটি রাত, যাকে হাজার মাসের তুলনায়ও শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। রমযানের শেষ দশকের কোন রাতটি "লাইলাতুল কদর" তা নির্দিষ্ট নয়। এজন্যই রমযানের শেষ দশক জুড়েই মুমিন বান্দারা এ রাতের খোঁজে থাকেন। 
রাসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "রমযানের শেষ দশকে বা শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা লাইলাতুল কদর তালাশ করো।" (বুখারী ও মুসলিম)। 

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ অত্যন্ত মহিমান্বিত এই রাতটিতে আমল-ইবাদতে কাটানোর মাধ্যমে পারলৌকিক সফলতা অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত রমযানের শেষ দশককে অত্যন্ত বেশী গুরুত্ব দেয়া। হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এ রাত ইবাদতে কাটানো বিরাট বড় একটি সুযোগ। এ ছাড়া রমযানের শেষ দশকে আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত রয়েছে, আর তা হলো ইতিকাফ। পাপমোচন ও পুণ্য বৃদ্ধির অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল হলো ইতিকাফ। রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের শেষ দশকে আমৃত্যু ইতিকাফ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)। 

সুতরাং পবিত্র রমযান মাসের বিদায়লগ্ন শেষ দশকে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত বেশী বেশী করে নেক আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে সময় কাটানো এবং জীবনের কৃত পাপ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির চেষ্টা চালানো এবং পারলৌকিক সফলতা অর্জনের পথকে সহজ করার প্রার্থনায় মনোযোগী হওয়া।  

অতএব, পবিত্র মাহে রমযানের এই পবিত্র নাযাতের দিনগুলোতে ইবাদত বন্দেগি করে, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে নিজের ইহ এফং পারলৌকিক মুক্তি অর্জন করতে না পারলে সে প্রকৃত অর্থেই সবচেয়ে বড় দুর্ভাগা মুসলমান! কারণ, সে জীবনে এই মাহে রমযান আর নাও পেতে পারে, এটিই তার শেষ রমযান হতে পারে! তাই প্রত্যেক বান্দার উচিত এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগানো। কারণ এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ "হজরত জিবরাইল(আঃ) এসে নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন, ধ্বং|স হোক ওই ব্যক্তি, যে রমযান মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না। তখন নাবীজী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আ-মীন।" (মুসতাদরাকে হাকেম)। 

তাই সকল বান্দার উচিত পবিত্র রমযানের শেষ দশদিনে আগের যত গাফিলতি এবঃ ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে তা দূর করে একাগ্রচিত্তে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করার মধ্য দিয়ে নাযাত প্রাপ্ত হওয়া। কোনভাবেই যেন আমরা মাহে রমযানের মতো আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামতকে হেলায়-ফেলায় শেষ করে না দেই! আল্লাহ তা'আলা এ মাসের প্রতি রাত্রে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের সবার কর্তব্য হলো, বেশী বেশী করে নেক আমল এবং তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদের এই শাহী ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। 

এ প্রসঙ্গে একটি হাদীসে হজরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা রমযান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে।" (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৬৪৩, মুসনাদে আহমদঃ ২২২০২, তবারানীঃ ৮০৮৮. বায়হাকীঃ ৩৬০৫)। 

🔸রমযানের শেষ দশকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো, সাদকাতুল ফিতর আদায় করা! 

আর ঈদুল ফিতরের আগেই সিদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। সাধরণতঃ রমযানের শেষ দশকেই মুসলমানরা সাদকাতুল ফিতর আদায় করে থাকেন। সাদাকাতুল ফিতর নারী-পুরুষ এবং স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সব জীবিত মুসলিমের জন্য প্রদান করা ওয়াজিব। দ্বিতীয় হিজরিতে উম্মতে মুহাম্মদী সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামেল ওপর রমযান মাসের রোযা ফরয করার সঙ্গে সঙ্গে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের জন্য "সাদাকাতুল ফিতর" আদায় করার নির্দেশ দেন। একে সাধারণত রোযার "ফিতরা" বলা হয়। এটা মূলতঃ মাহে রমযানেরই নির্ধারিত সাদকা বা দান। বহু হাদীস দ্বারা সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। 

হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ "রমযান মাস লাভকারী ব্যক্তি যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম(রোযা, তারাবি ও অন্যান্য আমল) পালন করে-তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমযান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।" (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাঃ ৮৯৬৬)।

মিশকাত শরীফের হাদীস আমাদেরকে নিশ্চিত করে, রমযানের তিন দশক তিনটি ভাগে বিভক্ত। যথাঃ রহমত, মাগফিরাত এবং নাযাত। আর তুলনামূলকভাবে রহমত ও মাগফিরাতের চেয়ে নাযাতের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী। বাকি দুই দশকের সাথে নাযাতের পার্থক্য কী? নাযাতের বিশেষত্ব কী? নাযাতের বিশেষত্ব নিয়েই আমাদের এখনকার আলোচনা।

পবিত্র ও মহিমান্বিত শবে কদরের নেয়ামত প্রাপ্তির সুযোগ রমযানের শেষ দশক তথা নাযাতের দশ দিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ববহ হবার প্রধান কারণ শবে কদর। রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিচ্ছেনঃ "তোমরা রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল- কদর তালাশ করো।" (বুখারী শরীফঃ ২০২০) 

আরও স্পষ্ট করেছেন অন্য বর্ণনায়ঃ "তোমরা রমযানের শেষ দশকের বে-জোড় রাতসমূহে লাইলাতুল-কদর তালাশ করো।" (বুখারী শরীফঃ ২০১৭)
বুখারী শরীফের বর্ণনার মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের জবান থেকে খোশ-খবর শোনা যায়ঃ “যে ব্যক্তি লাইলাতুল-কদরের রাতে ইমান এবং সোয়াবের আশা নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী করবে তাঁর অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।"

হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, শবে কদরের রাত নির্দিষ্ট নয়। তবে কোন কোন রাত শবে কদর হবার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কীভাবে তা তালাশ করবো? কবে কদর তালাশ করতে হবে? তবে আমাদের সবার রমযানের শেষ দশকে অধিকতর একনিষ্ঠতার সহিত বিরতিহীনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করা জরুরী। আরও স্পষ্ট করে বললে, রমযানের শেষ দশকের প্রতিটি বে-জোড় রাত্রিতে আমাদের ইবাদতে লিপ্ত থাকা এক প্রকার আবশ্যক! সেজন্য, শবে কদরের মহা-মর্যাদাবান রাতের পূর্ণ ফযীলত হাসিল করতে আমাদেরকে অবশ্যই রমযানের শেষ দশকে বেশী বেশী করে ইবাদত এবং একনিষ্ঠতায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া ব্যতীত গত্যান্তর নেই!

শেষ দশকে অধিক বেশী ইবাদত করা সূন্নাতঃ
রমযানের শেষ দশকে রসূল সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য দশকের তুলনায় অধিক বেশী পরিমাণে ইবাদত করতেন। একাধিক হাদীস শরীফ থেকে রসূলে খোদা সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ সূন্নাত প্রমাণিত। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেনঃ "রমযানের শেষ দশকে প্রিয় নবী যত পরিশ্রম করতেন, অন্য দশকে তা করতেন না!" অর্থাৎঃ তিন দশকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি পরিশ্রম করতেন শেষ দশকে, আর তা অবশ্যই ইবাদতের মাধ্যমে। (মুসলিম শরীফঃ ১১৭৫) 

আম্মাজান আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা অন্য বর্ণনায় ইরশাদ ফরমানঃ "শেষ দশক আরম্ভ হলে প্রিয় নাবী পূর্ণরাত জেগে থাকতেন, পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে দিতেন এবং নিজে কোমর-বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন।" (বুখারী শরীফঃ ২০২৪)

●উক্ত দু’টি হাদিস শরীফ থেকে অত্যন্ত প্রকট যে, শেষ দশকে অধিক পরিমাণে ইবাদত করা সূন্নাত। আর প্রিয় নবী যা করেছেন তাতে যে বিশেষ মঙ্গল নিহিত আছে এ ব্যাপারে মুসলমান-মাত্রই নিঃসন্দিহান। আমাদের অবশ্যই রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে শেষ দশকে ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং পরিবারের সদস্যদেরকে ও এ সুন্নতের বরকত অর্জনে শামিল করা উচিত।

নাযাতের সওগাত পেতে রমযানের শেষ দশকে মহান আল্লাহ তা'আলা অধিক পরিমাণে গুনাহগার বান্দাদেরকে ক্ষমা তথা নাযাত দেন বলেই মূলত এ দশকের নামকরণ "নাযাত" হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা তো মাধ্যম বা কারণ ছাড়া কিছু করেন না। এ সূত্রে আমাদেরকে অবশ্যই নাযাত পাবার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। রমযানের শেষ দশকে নাযাতী বান্দার পরিমাণ বেশি থাকে বলেই এ দশকে আমাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং কায়মনো বাক্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

আর এ দশকের মধ্য দিয়েই রমযান আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তী এক বছর পূর্বে আর রমযানের দেখা আমরা পাই না। আর পরবর্তী রমযান পর্যন্ত বেঁচে থাকবো কি-না সে নিশ্চয়তাও কারোরই নেই! তাই সব মিলিয়ে রমযানকে বিদায় দেওয়ার দিনগুলোতে রমযানের প্রতি এক ধরণের আপ্লুতকর, মর্মস্পর্শী অনুভূতি আমাদের ধর্মবোধে প্রগাঢ় হয়। এ প্রগাঢ় মর্মস্পর্শী অনুভূতির দাবিতেই পবিত্র রমযানকে সর্বোচ্চ একনিষ্ঠতাপূর্ণ ইবাদতের মাধ্যমে বিদায় জানানো উচিত।
মুসনাদে আহমদের হাদীসে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে খোশ-খবর দেনঃ "রমযান কেয়ামতে রোযাদারের জন্য সুপারিশ কারী হবে।" মুসনাদে আহমদ)।

শেষ কথাঃ
পবিত্র মাহে রমযান একদম মাঝখানে! যা ধীরে ধীরে শেষ পথের দিকে চলছে! আর মাত্র কয়েকটি দিন এবং কয়েকটা রাত অবশিষ্ট আছে। এর পরে আমাদের নিকট থেকে পবিত্র রমযান চলে যাবে! আমরা কেউ জানি না, আমারা আর কখনো রমযান পাবো কিনা! তাই আমাদের সবার উচিত, রমযানের বাকী সময়টাতে একাগ্রতা এবং আন্তরিকতার সাথে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া এবং মহান আল্লাহ তা'আলার প্রিয় বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত হবার চেষ্টা করা!

●ইয়া আল্লাহ তা'আলা! আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার তাওফীক দিন ও আমাদের সবাইকে পবিত্র রমযানের ও পবিত্র শব-ই ক্বদরের পরিপূর্ণ ফযীলত ও বরকত এবং নাযাত দান করুন ও আমাদের সবাইকে আপনার প্রিয়া বান্দা হিসেবে কবুল করুন(আ-মীন)!

2 تعليقات

إرسال تعليق

أحدث أقدم
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন