যাকাত ও কুরবানির নেসাব, কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে কুরবানি দিতে হবে?

যাকাত ও কুরবানির এ বিষয় গুলো যেহেতো ইসলামের মৌলিক ও শিআরে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। তাই এগুলো নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। আজকে শুধু দুুটি বিষয়ের নেসাব নিয়ে আলোচনা করবো। 
কুরবানির নেসাব মুলত যাকাতের নেসাবের মতোই তবে একটু পার্থক্য আছে,
যাকাতের নেসাব এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত,
কিন্তু কুরবানির নেসাব এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। যদি কুরবানি দিন (জিলহজ্জের ১০,১১,১২ তারিখ) গুলোতে নেসাব পরিমান সম্পদ কারো কাছে থাকে তাহলে তার উপর কুরবানি আবশ্যক। 

নোটঃ যাকাতের নেসাব নির্ধারণে স্বর্ণ-রুপা, টাকা পয়সা,ব্যবসায়ী সম্পদ ধরা হবে। 
আর কুরবানির ক্ষেত্রে এই তিনটির সাথে আপনার অতিরিক্ত যে সব জিনিস আছে সেগুলোও ধরা হবে। যেমন, ঘরের আসবাব পত্র, অতিরিক্ত জামা কাপড়, ব্যবহৃত অন্য সকল জিনিস।  


এবার নেসাব নিয়ে আলোচনা করা যাক।
নেসাব এটি আরবি শব্দ যার অর্থ হল: পরিমান, নির্দিষ্ট, মাপকাঠি ইত্যাদি নেসাব ইসলামি শরিয়তের বিভিন্ন বিষয় সাবস্ত করার জন্য মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।  

নেসাবের মূল সম্পর্ক হচ্ছে স্বর্ণ রূপার সাথে।  যেহেতো বর্তমানে এগুলোর প্রচলন কম তাই এর হিসাব অন্যান্য কারেন্সির সাথে মিলিয়েই ( টাকা পয়সা অন্যান্য সম্পদ) নেসাব নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।  

এবার চলুন যাকাত ও কুরবানির নেসাব নিয়ে জেনে নেই। 

যাকাতের নেসাব নির্ধারণ মূলত দুই ধরনের সম্পদের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়: সোনা ও রুপা। সাধারণত, যাকাত প্রদান করতে হলে একজন মুসলিমের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে এবং তা এক বছর তার কাছে সংরক্ষিত থাকতে হবে।

নেসাবের হিসাব সোনার ওজন অনুযায়ী:
1. সোনার জন্য নেসাব: 87.48 গ্রাম (প্রায় 7.5 তোলা)।
2. রুপার জন্য নেসাব: 612.36 গ্রাম (প্রায় 52.5 তোলা)।


যাকাতের নেসাবের হিসাব কিভাবে করবেন:

1. প্রথমে আপনার সমস্ত সোনা, রুপা, নগদ অর্থ, ব্যবসার পণ্য এবং অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের মোট মূল্য নির্ধারণ করুন।
2. যদি এই মোট মূল্য সোনা বা রুপার নেসাবের সমান বা তার বেশি হয় এবং এটি এক বছর আপনার কাছে সংরক্ষিত থাকে, তবে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।
3. যাকাতের পরিমাণ হলো সেই মোট সম্পদের 2.5%। অর্থাৎ শতকরা পার্সেন্টেজে ২.৫% 

উদাহরণ:
ধরা যাক, আপনার সমস্ত সম্পদের মোট মূল্য ১,০০,০০০ টাকা এবং এটি এক বছর ধরে আপনার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে যাকাতের হিসাব হবে:
\[ 1,00,000 \times 2.5\% = 2,500 \]
তাহলে আপনাকে ২,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

যাকাতের নেসাব সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে সঠিক বাজারমূল্য জানা জরুরি। নেসাবের পরিমাণ সময় সময় পরিবর্তিত হতে পারে বাজারমূল্যের ওপর নির্ভর করে।

কুরবানির নেসাব নির্ধারণ করা হয় সম্পদের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে, যা সোনা, রুপা, নগদ অর্থ, এবং অন্যান্য সম্পদ যেমন জমি, সম্পত্তি, ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদির মোট মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে হয়। কুরবানির জন্য নেসাবের পরিমাণ হলো সোনার নেসাবের সমান:

1. **সোনা:** 87.48 গ্রাম (প্রায় 7.5 তোলা)
2. **রুপা:** 612.36 গ্রাম (প্রায় 52.5 তোলা)

কুরবানির নেসাব নির্ধারণের নিয়ম:

1. আপনার মোট সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করুন। এর মধ্যে সোনা, রুপা, নগদ অর্থ, ব্যবসার পণ্য, এবং অন্যান্য সম্পদ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
2. যদি আপনার মোট সম্পদের মূল্য সোনার নেসাব (87.48 গ্রাম সোনা) অথবা রুপার নেসাব (612.36 গ্রাম রুপা) এর সমান বা তার বেশি হয়, তাহলে আপনি কোরবানি দেয়ার জন্য নেসাবের অন্তর্ভুক্ত।
3. এই সম্পদ আপনাকে এক বছরের জন্য রাখার দরকার নেই, কুরবানির দিন গুলোতে থাকলেই কুরবানি করতে হবে। 


উদাহরণ:
ধরা যাক, ঈদ-উল-আযহার সময় আপনার মোট সম্পদের মূল্য ৩,০০,০০০ টাকা। এই মূল্য যদি সোনার নেসাবের সমান বা তার বেশি হয়, তাহলে আপনাকে কোরবানি দিতে হবে।

কুরবানি দেয়ার জন্য নেসাবের হিসাব সঠিকভাবে করতে বাজারমূল্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। সোনার এবং রুপার বর্তমান বাজারমূল্য জানা থাকতে হবে যাতে সঠিকভাবে নেসাব নির্ধারণ করা যায়। 

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন