উপরে আপলোড করা ছবিটি একটি গিরগিটির (Garden Lizard) ছবি। এটি অরিয়েন্টাল গার্ডেন লিজার্ড বা Calotes versicolor নামে পরিচিত। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এটি বিশেষ করে উদ্যান ও বাগানে বাস করে এবং গাছ বা দেয়ালের উপরে আরোহন করতে দক্ষ।
গিরগিটির বৈশিষ্ট্য:
1. রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা: গিরগিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা। এটি নিজের তাপমাত্রা বা চারপাশের পরিবেশের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রঙ ধারণ করতে পারে।
2. লম্বা দেহ ও লেজ: এর দেহ বেশ লম্বা, সাধারণত ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। লেজের দৈর্ঘ্য দেহের থেকে বড় হয় যা এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
3. খাদ্যাভ্যাস: এটি মূলত পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। যেমন মাকড়সা, মৌমাছি, তেলাপোকা ইত্যাদি।
4. প্রতিরক্ষা কৌশল: শিকারির আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য গিরগিটি তার রঙ দ্রুত পরিবর্তন করে, যাতে আশপাশের পরিবেশের সাথে নিজেকে মিশিয়ে ফেলতে পারে।
গিরগিটির আশ্চর্যজনক বিষয়:
1. ফ্যানের মতো মাথা ও গলার অংশ: পুরুষ গিরগিটিদের গলায় এক ধরনের ফ্যানের মতো অংশ থাকে, যা শত্রুর সামনে প্রসারিত হয়ে তাদের ভয় দেখায়।
2. আচরণের পরিবর্তন: মিলনের সময় পুরুষ গিরগিটির শরীর উজ্জ্বল লাল বা কমলা রঙ ধারণ করে, যা অন্যান্য গিরগিটিদের মধ্যে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম।
গিরগিটি দ্বারা মানুষের উপকার:
1. পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ: গিরগিটির প্রধান উপকারিতা হলো এটি ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে, যা ফসলের ক্ষতি করে এবং বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। ফলে এটি প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে।
2. বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষা: পোকামাকড়ের ওপর নির্ভরশীল খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গিরগিটিরা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
গিরগিটির দ্বারা মানুষের ক্ষতি:
1. বাগান বা উদ্যানের ক্ষতি: যদিও গিরগিটি পোকামাকড় খায়, তবে কখনও কখনও বাগানে ছোট গাছের পাতা বা ফুল নষ্ট করতে পারে।
2. গৃহস্থালির বিরক্তি: অনেক সময় গিরগিটিকে বাড়ির ভেতরে দেখা যায়, যা কিছু মানুষকে বিরক্ত করে এবং তাদের জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে।
গিরগিটি আল্লাহ তায়ালার একটি চমৎকার সৃষ্টি, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও মাঝে মাঝে এটি কিছু ক্ষতি করতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে এটি মানুষের উপকার করে থাকে। এমন প্রাণীগুলোকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রতিপালন করলে তারা আমাদের প্রকৃতির জন্য উপকারী হয়ে উঠবে।
Post a Comment