শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি: ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরার নির্দেশ

The International Criminal Tribunal has issued an arrest warrant against Sheikh Hasina.

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরু করার পরই চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ পরোয়ানা জারি করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাকে আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

বিচার প্রক্রিয়ার শুরু


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ১১টায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনেই চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত গণহত্যা, গুম এবং নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড।

অভিযোগের বিবরণ

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে অন্তত ৭০টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ছাত্র আন্দোলনের সময় নির্বিচারে গণহত্যার অভিযোগ প্রধান। সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠন করে।

জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপকভাবে শক্তি প্রয়োগ করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বহু মানুষকে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারের তৎকালীন নেতাদের নির্দেশেই এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ

শেখ হাসিনা এবং আরও ৪৫ জন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গুম, হত্যা, এবং গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এ নেতারা সরকারকে শক্ত হাতে আন্দোলন দমনে নির্দেশনা দেন, যার ফলে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়।

৫ আগস্ট, ২০২৪-এ শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে, যখন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতন হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয় এবং বিচারের উদ্যোগ নেয়।

গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং ইন্টারপোলের সহায়তা

শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের অনেকেই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের প্রেক্ষাপট

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে বিচার ও শাস্তি কার্যকর হয়েছে। বর্তমানে নতুন প্রসঙ্গ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে, যা দেশব্যাপী গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আরও অভিযুক্তদের মুখোমুখি করার পাশাপাশি এই বিচারের ফলে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন