সাহাবিদের জীবন থেকে গায়রতের শিক্ষা: বর্তমান প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত

গায়রত এমন এক মহৎ গুণ, যা একজন মানুষের চরিত্রের পরিচয় বহন করে। বিশেষত একজন মুসলিম পুরুষের জীবনে গায়রতের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি এমন এক ধরনের আত্মসম্মানবোধ ও নৈতিক সত্তা যা একজন পুরুষকে তার পরিবার, নারীর মর্যাদা এবং সামাজিক শালীনতার প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে। গায়রতহীনতা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং একটি সামাজিক ও আধ্যাত্মিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গায়রতের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

ইসলামে গায়রত এমন এক গুণ, যা ব্যক্তিকে ন্যায় ও শালীনতার পথে পরিচালিত করে। সাহাবিদের জীবনে গায়রতের অসাধারণ উদাহরণ রয়েছে। তাদের আচরণ ও বচনে প্রমাণিত হয়, একজন প্রকৃত মুসলিম কখনোই পরনারীর প্রতি কু-দৃষ্টি রাখবে না, এবং নিজের পরিবারের সম্মান রক্ষায় সর্বদা সচেতন থাকবে।

সাহাবিদের উদাহরণ

একজন সাহাবির কাছে তার স্ত্রী কেমন আছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছিলেন:
"যদি তোমার রক্ত আমার জন্য হালাল হতো, তবে আমি তরবারি দিয়ে তোমার মাথা কেটে ফেলতাম।"
(ইবনে কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া)

সাহাবিদের এতটাই গায়রত ছিল যে, তারা কখনো তাদের স্ত্রীর নাম পর্যন্ত অপরিচিত কাউকে বলতেন না। কারণ তারা জানতেন, এটি শালীনতার ও মর্যাদার একটি বড় অংশ।

মুশরিকদের গায়রতের উদাহরণ

মক্কার এক মুশরিক তার উট জবাই করছিলেন। জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন,
"এই উটের ওপর আমার পরিবারের নারীরা বসতেন। এটি বিক্রি করলে অন্য কোনো পুরুষ এই উটের ওপর বসবে, যা আমি সহ্য করতে পারি না।"
একজন মুশরিক হয়েও তার মধ্যে গায়রতের এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা যায়।

গায়রতের অভাব: বর্তমান সময়ের করুণ চিত্র

বর্তমান যুগে গায়রতের অভাব আমাদের সমাজকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। অনেক পুরুষ নিজের স্ত্রী বা পরিবারের নারীদের বেপর্দা ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে, যা ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। স্ত্রীকে অন্য পুরুষদের সামনে নিয়ে হাসি-তামাশায় মগ্ন থাকা, এমনকি বিয়ের সময় বন্ধুকে নিজের স্ত্রীর সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করা—এসবই গায়রতের অভাবের করুণ চিত্র।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
"গায়রতহীন পুরুষরা (দাইয়ুস) জান্নাতে তো যাবেই না, এমনকি জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না।"

নারীদের প্রতি দায়িত্ব ও গায়রত

গায়রত শুধু পুরুষের জন্য নয়, নারীর ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম নারীকে পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছে, যা তাকে অপমানজনক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু আজকের সমাজে নারীরা নিজেরা পর্দার গুরুত্ব ভুলে গিয়ে চাকচিক্যময় জীবনের দিকে ঝুঁকছে। তারা এমন পুরুষদেরই পছন্দ করে, যাদের মধ্যে গায়রতের অভাব রয়েছে। এটি এক গভীর আত্মঘাতী প্রবণতার লক্ষণ।

গায়রতের অনুপস্থিতি ও তার পরিণতি

গায়রতহীন পুরুষরা পরিবারের মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা শুধু তাদের নিজেদের নয়, বরং সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের একটি প্রধান কারণ। রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট বলেছেন যে, দাইয়ুসদের জন্য জান্নাত হারাম। এটি আমাদের জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা।

উপসংহার

গায়রত এমন একটি গুণ, যা আমাদের উম্মাহর জন্য অপরিহার্য। এটি কেবল ব্যক্তিগত নৈতিকতার বিষয় নয়, বরং সামাজিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতিরও মূল চাবিকাঠি। তাই আমাদের সবার উচিত গায়রতের গুরুত্ব বোঝা এবং এটি আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এই মহৎ গুণ অর্জন

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন