সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ: মুজাহিদদের সংগ্রাম ও আসাদ সরকারের পতনের গল্প

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ: বাশার আল-আসাদের শাসন এবং ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস:

বাশার আল-আসাদ, একজন স্বৈরাচারী শাসক, ২০০০ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিরিয়াকে একাধিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে অত্যাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১১ সালের মার্চ মাসে আরব বসন্তের ছোঁয়া সিরিয়ায় পৌঁছালে সাধারণ জনগণ গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু আসাদ সরকার এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে, যা পরবর্তীতে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।
  • গণহত্যা ও ধ্বংস
  • আসাদের শাসনে ৬ লাখেরও বেশি সিরিয়ান নিহত হয়েছেন।
  • প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
  • এর মধ্যে ৫ মিলিয়ন মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
  • সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাকে বোমা মেরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে।
  • নারকীয় শাসনব্যবস্থা
আসাদ সরকার একটি দমনমূলক পুলিশি রাষ্ট্র চালু করে, যেখানে বিরোধীদের নির্বিচারে হত্যা করা হতো। সংস্কার দাবি জানানো জনগণকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সিরিয়ার কলোনি

আসাদ সরকার সিরিয়ার স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেশটিকে রাশিয়া ও ইরানের মতো বিদেশি শক্তির উপর নির্ভরশীল করে তোলে। এর ফলে সিরিয়া কার্যত রাশিয়া ও ইরানের কলোনিতে পরিণত হয়।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি

যুদ্ধের কারণে দেশটি রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন, এবং ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ক্ষত মেরামত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে।

বাশার আল-আসাদের শাসন সিরিয়ার ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় অধ্যায় হিসেবে থাকবে। তার শাসন শুধু লাখো মানুষের জীবন কেড়ে নেয়নি, বরং একটি জাতিকে ধ্বংসস্তূপে ফেলে দিয়েছে। সিরিয়ার জনগণ এখন একটি নতুন সূচনার অপেক্ষায়।

মুজাহিদদের সংগ্রাম ও সিরিয়া বিজয়ের কাহিনি

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের দীর্ঘ ইতিহাসে মুজাহিদরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১১ সালে বাশার আল-আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে যখন গণআন্দোলন শুরু হয়, তখনই ইসলামি বিশ্বাসের ভিত্তিতে গঠিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল গণমানুষের সমর্থন নিয়ে একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

মুজাহিদদের পরিচয়

মুজাহিদরা ছিল বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:

1. ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (FSA): গণতান্ত্রিক এবং জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহী দল।

2. আল-নুসরা ফ্রন্ট: আল-কায়েদার সহযোগী, ইসলামি শাসনের প্রবক্তা।

3. আহরার আল-শাম: একটি শক্তিশালী ইসলামি গোষ্ঠী, যারা শারিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল।

বিজয়ের পথ যেভাবে সুগম হয়েছে

মুজাহিদরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কয়েকটি কৌশল গ্রহণ করেছিল:

জনগণের সমর্থন: তারা স্থানীয় গ্রাম ও শহরগুলোর জনগণের সমর্থন লাভ করে।
কৌশলগত যুদ্ধ: সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল এবং সীমান্ত এলাকায় নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি।
আন্তর্জাতিক সহায়তা: অস্ত্র ও অর্থের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসের ওপর নির্ভর করা।
অবিচল বিশ্বাস: তাদের একনিষ্ঠতা এবং ইসলামি আইনের প্রতি অঙ্গীকার তাদের দৃঢ় করে তোলে।

চ্যালেঞ্জ এবং ফলাফল

মুজাহিদদের প্রচেষ্টা সিরিয়ার কিছু অংশে সফল হলেও ভেতরে বিভাজন এবং মতাদর্শগত ভিন্নতার কারণে তাদের সামগ্রিক বিজয় বিলম্বিত হয়। এর মধ্যেই তারা সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

মুজাহিদদের সংগ্রাম সিরিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাদের ভূমিকা দেশটির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, এবং ন্যায়ের দাবির একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

সিরিয়ার নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ ও বিবৃতি।

সিরিয়ার নতুন সরকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ ও বাশার আল-আসাদের পতনের পর তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তাদের ঘোষণায় মূল প্রতিশ্রুতি ছিল:

1. সার্বভৌমত্ব রক্ষা: সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করা।

2. নাগরিক সুরক্ষা: রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা।

3. শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন: বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীদের নিরাপদভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা।

4. ন্যায়বিচার: যুদ্ধাপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিত।

5. প্রশাসনের পুনর্গঠন: ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে নতুন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।

এই সরকার পুনর্মিলন এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মুজাহিদদের সংগ্রাম সিরিয়ার স্বাধীনতা, শাসনের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে, গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মতাদর্শগত ভিন্নতা ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তাদের সফলতা কিছুটা সীমিত হয়েছিল। সিরিয়ার ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত, তবে মুজাহিদদের কার্যক্রম দেশটির ইতিহাসে অমোচনীয় দাগ রেখে গেছে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন