শবে বরাত একটি গুরুত্বপূর্ণ রজনী, এই রাত সম্পর্কে হাদিসে অনেক ফজিলতের কথা বর্নিত হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাতে আমাদের আর্টিকেল পড়ে শবে বরাত সম্পর্কে মোটামুটি সব জেনে বয়ান লিখতে পারেন।
শবে বরাত বা মধ্য-শা'বান (আরবি: نصف شعبان) মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ রাত। এটি শা'বান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে উদযাপিত হয়। বিশেষত উপমহাদেশে এটি "শবে বরাত" নামে পরিচিত। ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করেন।
শবে বরাত এর অর্থ কি?
শবে বরাত বা “লাইলাতুল বরাত” ইসলামের এক মহিমান্বিত রাত, যা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পালিত হয়। আরবি শব্দ "শব" অর্থ রাত এবং "বরাত" অর্থ মুক্তি বা নাজাত। এই রাতকে পাপমুক্তি, তওবা কবুল এবং ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। পবিত্র কোরআনে শাবান মাসের বিশেষত্ব সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও কিছু ব্যাখ্যায় "লাইলাতুল মুবারাকাহ" (ধন্য রাত) হিসেবে এই রাতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যখন শাবান মাসের ১৫তম রাত আসে, তখন আল্লাহ পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতীর্ণ হন এবং বনী কিলাব গোত্রের পশমের সংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ,)
এ রাতে মুমিনরা অধিক ইবাদত, তাওবা-ইস্তিগফার এবং বিশেষ দোয়া করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।
এ বছর ২০২৫ সালে শবে বরাত কবে?
২০২৫ সালে শবে বরাত পালিত হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার দিবাগত রাতে। তবে আরবি মাসের হিসাব অনুযায়ী, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তারিখ এক-দুই দিন আগে বা পরে হতে পারে।
এই রাতের মহিমা সম্পর্কে জানা এবং এর সুযোগ গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর কাছে তাওবা, ক্ষমা প্রার্থনা, এবং ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণ কামনা এই রাতের বিশেষ ইবাদতের অংশ।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস
وَعَنْ أَبِىْ مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ عَنْ رَسُولِ اللّهِ ﷺ قَالَ: «إِنَّ اللّهَ تَعَالى لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِه إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের পনের তারিখ রাত্রে অর্থাৎ ‘ শবে বরাত ে’ দুনিয়াবাসীর প্রতি ফিরেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া তাঁর সৃষ্টির সকলের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (ইবনু মাজাহ) মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৩০৬ হাদিসের মান: হাসান হাদিস
عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ " .
আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৯০।
শবে বরাত কি পালন করা কি বিদআত?
শবে বরাত সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে, এবং এটি বিদআত কিনা তা নিয়ে অনেক আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত বিদ্যমান।
যারা শবে বরাত পালনকে বিদআত মনে করেন:
১. কুরআন ও সহীহ হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই: শবে বরাতের ফজিলত বা নির্দিষ্ট ইবাদতের বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদিসে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
২. বিদআত হওয়ার শর্ত: নবী (সা.) এবং সাহাবাদের যুগে এই রাতে কোনো বিশেষ ইবাদত পালন করার নজির পাওয়া যায় না। তাই অনেক আলেম মনে করেন, এটি একটি নতুন প্রথা যা ইসলামিক বিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
যারা শবে বরাত পালনকে বিদআত মনে করেন না:
১. কিছু দুর্বল হাদিস: এমন কিছু হাদিস পাওয়া যায়, যেগুলোতে শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতের গুরুত্বের কথা উল্লেখ আছে। যদিও সেগুলোর অনেকই দুর্বল (যয়ীফ) বা হাসান (মধ্যম মানের)।
২. ইবাদতের রাত: এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ক্ষমা ও দানশীলতা বর্ষণ করেন বলে বর্ণনা রয়েছে। তাই অনেক আলেম এ রাতে সাধারণ নফল ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত এবং দোয়ার অনুমোদন দেন।
শবে বরাত পালন করলে এটি হবে ব্যক্তিগত ইবাদত। কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দলবদ্ধ ইবাদত বা বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা চালু করা বিদআতের আওতায় পড়তে পারে। কুরআন ও সহীহ হাদিসের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়া নতুন কোনো আমল বা রীতি প্রতিষ্ঠা না করাই উত্তম।
যেহেতু শবে বরাত সম্পর্কে স্পষ্ট দলিল নেই, তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং এটি পালন বা অস্বীকার উভয় ক্ষেত্রে কারো প্রতি কঠোর মনোভাব না দেখানোই উত্তম। তবে প্রত্যেক ইবাদতে বিশুদ্ধ নিয়ত এবং ইসলামের মূলনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি।
বর্তমানে মানুষ এই রজনীতে অতিরঞ্জন করে ফেলে যেটা মোটেও ঠিক নয়। অনেক এলাকাতে দেখা যায় এই রাতে বিভিন্ন ফটকা ফানুস ছাড়া হয়।
কেউ কেউ আরেকবু বাড়িয়ে এই রাতের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মে নামাজ ও আমল ও বর্ণনা করে থাকে। তিনশ রাকাত নামাজ, সুরা ইখলাস এতোবার পাঠ করতে হবে বলেও বয়ান করে থাকে।
ইসলাম সহজ। তবে কেউ যদি ইবাদত করতে চাই তাহলে অন্যান্য রাতেই মতোই আমল করবে নামাজ সাধারণ ভাবে নফল নামাজের মতোই পড়বে। আল্লাহ তায়ালা আমল করার তৌফিক দান করুন।
Post a Comment