সুরা ফালাক ও সুরা নাস, জাদু ও শয়তানের প্রভাব থেকে সুরক্ষার দোয়া (আরবি-বাংলা উচ্চারণ)


পবিত্র কোরআনের শেষ দুটি সূরা, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস, ইসলামী জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোকে একত্রে "মুআওয়িজাতাইন" বলা হয়, যার অর্থ হলো "আশ্রয়ের সূরাগুলো।" এগুলো আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার এক বিশেষ মাধ্যম, যা মানুষকে সব ধরনের অশুভ শক্তি, জাদু, বদনজর, হিংসা এবং শয়তানের প্রভাব থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

এ দুটি সূরা ছোট হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে নিয়মিত এই সূরাগুলো পাঠ করতেন এবং উম্মতকেও পাঠ করার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে সুরা ফালাক ও সুরা নাস আমাদের জন্য অনন্য। এই দুটি সূরার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি আমাদের নির্ভরতা ও বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করি।

এই নিবন্ধে আমরা সুরা ফালাক ও সুরা নাসের পাঠ, অর্থ, উচ্চারণ, এবং এর ফজিলত ও উপকারিতা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। 
নিচে সুরা ফালাক এবং সুরা নাসের বাংলা নাম্বার বাম পাশে এবং আরবি নাম্বার ডান পাশে দেওয়া হলো:

সুরা ফালাক (সূরা ১১৩) আয়াত (৫) 

بسم الله الرحمن الرحيم
 قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (১)
 مِن شَرِّ مَا خَلَقَ (২)
 وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (৩)
 وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ (৪)
  وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (৫)
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
১. কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক।
২. মিন শররি মা খালাক।
৩. ওয়া মিন শররি গাসিকিন ইজা ওয়াকাব।
৪. ওয়া মিন শররি নাফফাসাতি ফিল উকাদ।
৫. ওয়া মিন শররি হাসিদিন ইজা হাসাদ।

অর্থ: শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় দয়ালু।
১. বলুন, আমি আশ্রয় চাই ভোরের প্রতিপালকের কাছে।
২. সব সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে।
৩. অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়।
৪. গ্রন্থিতে ফুঁ দেওয়া জাদুকরীর অনিষ্ট থেকে।
৫. এবং হিংসুকের খারাপি থেকে যখন সে হিংসা করে।

সুরা নাস (সূরা ১১৪) আয়াত (৬)

بسم الله الرحمن الرحيم
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (১)
مَلِكِ النَّاسِ (২)
إِلَهِ النَّاسِ (৩)
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ (৪)
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ (৫)
مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ (৬)
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
১. কুল আউজু বিরাব্বিন নাস।
২. মালিকিন নাস।
৩. ইলাহিন নাস।
৪. মিন শররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস।
৫. আল্লাজি ইউওয়াসওসু ফি সুদূরিন নাস।
৬. মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।

অর্থ: শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় দয়ালু।
১. বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে।
২. মানুষের অধিপতির কাছে।
৩. মানুষের উপাস্যের কাছে।
৪. গোপন কুমন্ত্রণা দানকারী শয়তানের অনিষ্ট থেকে।
৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়।
৬. জিনদের মধ্য থেকে কিংবা মানুষের মধ্য থেকে।

সুরা ফালাক ও সুরা নাসের উপকার ও ফজিলত

১. শত্রুর অনিষ্ট থেকে রক্ষা:
এ দুটি সূরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দোয়া। এগুলো নিয়মিত পাঠ করলে জাদু, হিংসা, বদনজর, এবং সব ধরনের শত্রুতার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২. মানসিক শান্তি:
এগুলো নিয়মিত পাঠ করলে মন শান্ত থাকে এবং দুশ্চিন্তা, ভীতি ও অস্থিরতা দূর হয়।

৩. দৈহিক ও আধ্যাত্মিক সুরক্ষা:
এই সূরাগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে দৈহিক ও আধ্যাত্মিক সুরক্ষা লাভ করতে পারি। এগুলো সব ধরনের জাদু, শয়তানের প্রভাব ও ক্ষতিকর শক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়।

৪. রোগমুক্তির দোয়া:
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন অসুস্থ হতেন, তিনি এই দুটি সূরা পড়তেন এবং নিজের ওপর ফুঁ দিতেন।

হাদিসের প্রমাণ: হযরত আয়েশা (রা.) বলেন,
"যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হতেন, তিনি সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন এবং নিজেকে দম করতেন।" (সহিহ বুখারি: ৫৭৩৫)
৫. রাতের ঘুমের আগে পাঠ:
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ঘুমানোর আগে তিনবার সুরা ফালাক, সুরা নাস, এবং সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। এরপর নিজের হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে মুছে নিতেন। এটি বিপদ-আপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে সুরক্ষা দেয়।

হাদিস: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
 "তোমরা প্রতি রাতে ঘুমানোর পূর্বে সুরা ইখলাস ও সুরা ফালাক এবং সুরা নাস তেলাওয়াত করো। এগুলো তোমার জন্য পর্যাপ্ত হবে।" (তিরমিজি: ২০৫৮)
৬. শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা:
সুরা নাসে আমরা শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং জিন ও মানুষের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা চাই। এটি অন্তরের বিশুদ্ধতা এবং আত্মার সুরক্ষায় সহায়তা করে।

৭. পাপমুক্তির উপায়:
এ দুটি সূরা পড়া গুনাহ মাফের কারণ হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।

সুরা ফালাক ও সুরা নাস আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নির্ভরতার শিক্ষা দেয়। এগুলোর নিয়মিত পাঠ আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনে সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিয়ে আসে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে, ঘুমানোর আগে, এবং বিপদে-আপদে এগুলো পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা লাভের জন্য এগুলো আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত।

Post a Comment

أحدث أقدم
icon যে কোন প্রয়োজনে টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেসেজ দিন