রজব মাসের ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ আমল


ইসলামের প্রতিটি মাসেই রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য ও শিক্ষণীয় বিষয়। তবে চারটি মাসকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিশেষ সম্মান দিয়েছেন। এই মাসগুলোকে "হারাম মাস" বলা হয়। রজব মাস সেই চারটি সম্মানিত মাসের একটি। এটি বরকত, রহমত ও গুনাহ মাফের বিশেষ সুযোগ নিয়ে আসে। রজব মাস মুমিনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে নিজেদের আমল বৃদ্ধি এবং আত্মশুদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।

রজব মাসের ফজিলত

১. হারাম মাসের অন্তর্ভুক্ত

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন:
"আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারোটি, তার মধ্যে চারটি সম্মানিত।"
(সূরা তাওবা: ৩৬)
রজব মাস এই চারটি সম্মানিত মাসের একটি। এই মাসগুলোতে অন্যায় ও পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) ব্যাখ্যা করেছেন যে এই মাসগুলোতে নেক আমলের সওয়াব বৃদ্ধি পায় এবং গুনাহের শাস্তিও বেশি কঠিন হতে পারে। তাই মুমিনদের উচিত এই মাসে গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পরিশ্রম করা।

২. মেরাজের প্রস্তুতি

রজব মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, এই মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজের ঘটনা ঘটে। মেরাজের রাতে উম্মাহর জন্য নামাজ ফরজ করা হয়। মেরাজ শুধু একটি ঘটনা নয়, এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয়।

৩. গুনাহ মাফের সুযোগ

রজব মাসকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রহমতের মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই মাসে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের তাওবা কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
"যে ব্যক্তি হারাম মাসে আল্লাহর পথে ইবাদত করে, তার জন্য আল্লাহ বিশেষ পুরস্কার রাখেন।"
এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করলে আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত এবং গুনাহ মাফের আশাবাদ রাখা যায়।

রজব মাসে করণীয় আমল

রজব মাসে আমলের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে যাওয়া যায়। নিচে রজব মাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলের তালিকা দেওয়া হলো:

১. ইবাদতে মনোযোগ বৃদ্ধি

রজব মাসে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা এই মাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

২. গুনাহ থেকে বিরত থাকা

রজব মাসে গুনাহ করা অত্যন্ত বড় অপরাধ। তাই আমাদের উচিত মিথ্যা, পরনিন্দা, অহংকার, হিংসা এবং অন্য যে কোনো প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

৩. রোজা রাখা

রজব মাসে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে নফল রোজা রাখতেন। তিনি বলেছেন:
"রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস, এবং রমজান হলো আমার উম্মাহর মাস।"
রোজা রাখা আত্মশুদ্ধির একটি অন্যতম মাধ্যম। এটি আমাদের আত্মাকে শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের এক অনন্য সুযোগ দেয়।

৪. ইস্তিগফার করা

রজব মাসে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা উচিত। ইস্তিগফার আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের মাধ্যম।
পাঠ করতে পারেন:
"আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি যাম্বিন ওয়াতুবু ইলাইহি।"
এছাড়া "আস্তাগফিরুল্লাহ" বারবার পাঠ করা আমাদের অন্তরকে শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর দয়া প্রাপ্তির পথ সুগম করে।

৫. বিশেষ দোয়া করা

রজব মাস শুরু হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া পড়তেন:

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শা'বান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।"
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাস বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।”

৬. দান-সদকা করা

রজব মাসে দান-সদকার মাধ্যমে নেকি অর্জনের সুযোগ অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"দান গুনাহকে এভাবে দূর করে দেয় যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।"

৭. জিকির ও দোয়ার মধ্যে সময় ব্যয় করা

রজব মাসে নিয়মিত দোয়া ও জিকির করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। আল্লাহর ৯৯টি নামের জিকির, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস বেশি বেশি পাঠ করুন।

রজব মাসে পালনীয় সতর্কতা

১. এই মাসে কোনো ধরনের বিদআত বা ভিত্তিহীন আমল থেকে বিরত থাকা উচিত।
২. নেক আমলের মধ্যে ostentation (লোক দেখানো) পরিহার করতে হবে।
৩. কোনো প্রকার বিতর্কিত বা অনৈতিক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

রজব মাস একটি বরকতময় মাস। এই মাসে নিজের আমল বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আমরা পরবর্তী মাসগুলোতেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারি। রমজানের প্রস্তুতি শুরু করার জন্য রজব মাস সবচেয়ে উত্তম সময়। আল্লাহ আমাদের এই মাসের ফজিলত বুঝার এবং এর বরকত অর্জন করার তৌফিক দিন।

إرسال تعليق