পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন আল্লামা আরশাদ মাদানী দাঃবাঃ (সফর সুচি)


বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতিমান ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন (মহাপরিচালক) এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি, আল্লামা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী (হাফিজাহুল্লাহ) বাংলাদেশে পাঁচ দিনের সফরে অবস্থান করছেন। ইসলামের প্রচার, ইসলামি শিক্ষা, এবং উলামায়ে কেরামের সাথে মুলাকাতের উদ্দেশ্যে তার এই সফরকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন দেশের আলেম সমাজ।

তিনি আজ (২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১১:৪৫ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। ঢাকায় তার আগমন উপলক্ষে ইসলামি অঙ্গনে উচ্ছ্বাস ও আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে।

ঢাকা বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব এবং মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানী মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মুফতী ইমরানুল বারী সিরাজীসহ বিশিষ্ট আলেম-ওলামা। প্রথম দিনেই তিনি উত্তরা জামিয়াতুন নুর আল ইসলামিয়াতে পৌঁছেন এবং সেখানে দুপুরের খাবার ও বিশ্রামের পর খতমে বুখারী মাহফিলে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান প্রদান করেন।

আল্লামা আরশাদ মাদানীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

আল্লামা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী ভারতের বিখ্যাত ইসলামি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন (মহাপরিচালক)। তিনি জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আল্লামা মাদানী একজন প্রখ্যাত আলেম, যিনি কোরআন, হাদিস এবং ফিকহশাস্ত্রে উচ্চতর পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন।

তিনি তার জ্ঞানের মাধ্যমে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম উম্মাহকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে চলেছেন। তার দাদাজান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.), উপমহাদেশের ইসলামি আন্দোলনে এক অবিস্মরণীয় নাম। তার পরিবার দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ইসলামের খেদমতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পাঁচ দিনের সফরের বিস্তারিত সময়সূচি

আল্লামা মাদানীর এই সফর বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য একটি বড় সুযোগ। সফরসূচি অনুযায়ী তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খতমে বুখারী মাহফিল ও বাইয়াতের মতো ইসলামি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।

২২ জানুয়ারি (বুধবার):

বাংলাদেশে পৌঁছার পর তিনি উত্তরা জামিয়াতুন নুর আল ইসলামিয়াতে যান। সেখানে দুপুরের খাবার ও বিশ্রামের পর বাদ আসর বাইয়াত অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন এবং খতমে বুখারী মাহফিলে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করবেন। প্রথম দিন তিনি বসুন্ধরা এলাকায় মুফতি গাজী জহিরুল ইসলামের বাসায় রাতযাপন করবেন।।

২৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার):

সকালে নাস্তার পর তিনি বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে খতমে বুখারী মাহফিলে অংশ নিবেন এবং বয়ান প্রদান করবেন। এরপর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় আরেকটি খতমে বুখারী মাহফিলে যোগ দিবেন।

সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় মাদরাসায় যাবেন। সেখানে দুপুরের খাবার ও বিশ্রামের পর বাদ আসর সংক্ষিপ্ত নসিহত দিবেন। এরপর মাদানী নগরে রওনা দিয়ে সেখানে রাতের বয়ান, বাইয়াত এবং রাত্রিযাপন করবেন।

২৪ জানুয়ারি (শুক্রবার):

সকালের নাস্তা শেষে পরীবাগে মরহুম হাজী আব্দুল মান্নান সাহেবের বাসায় যাবেন। এরপর তিনি কোলাপাড়া শ্রীনগর মুন্সিগঞ্জে যাবেন। সেখানে খতমে বুখারী মাহফিলে অংশ নেবেন এবং জুমার নামাজ পড়বেন। নামাজ শেষে তিনি বয়ান প্রদান করে এবং দুপুরের খাবার ও বিশ্রামের পর ধানমন্ডিতে এক ব্যক্তিগত তাজিয়াতে অংশ নেবেন।

সন্ধ্যায় তিনি আরজাবাদ মাদরাসায় যাবেন। সেখানে একটি বিশাল মাহফিলে তিনি বয়ান প্রদান করবেন, দারুল উলুম দেওবন্দ প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বাইয়াত কার্যক্রম পরিচালনা করে রাত্রিযাপন করবেন আরজাবাদ মাদরাসায়।

২৫ জানুয়ারি (শনিবার):

সকালে আরজাবাদ মাদরাসায় নাস্তা শেষে তিনি বাগবাড়ী ইলমুল ইলাহী মাদরাসায় যাবেন এবং দোয়া করবেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারযোগে কাপাসিয়া খিরাটি মাদরাসায় পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি খতমে বুখারী মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এরপর বি-বাড়িয়ার দারুল আরকাম মাদরাসা ও জামিয়া ইউনিসিয়ার মাহফিলে যোগ দিবেন।

সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে উত্তরা এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় মাহফিলে অংশ নিবেন। রাতে তিনি আরজাবাদ মাদরাসায় ফিরে রাত্রিযাপন করবেন।

২৬ জানুয়ারি (রবিবার):

এই দিনে তার সফর শেষ হবে। সকালে তিনি ঢাকার কয়েকটি ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ও আলেমদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে দিল্লির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন।

সফরের গুরুত্ব

আল্লামা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানীর এই সফর বাংলাদেশের ইসলামি অঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তার বয়ান এবং দিকনির্দেশনা আলেম-ওলামা এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। বিশেষত বিভিন্ন মাহফিল, খতমে বুখারী অনুষ্ঠান এবং বাইয়াতের মাধ্যমে ইসলামের মূল চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার তার এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে।

আল্লামা মাদানী তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ জীবন এবং গভীর প্রজ্ঞার মাধ্যমে গোটা মুসলিম বিশ্বে একটি শ্রদ্ধেয় নাম। তার এই সফর কেবলমাত্র ইসলামের প্রচার ও প্রসারেই নয়, বরং বাংলাদেশে ইসলামি ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।

এটি আলেম সমাজের জন্য যেমন আনন্দের তেমনি সাধারণ মানুষের জন্য একটি সুমহান দৃষ্টান্ত।

About the author

Qawmi Kolom
কওমি কলম ইসলামিক এবং টেকনোলজি বিষয়ক লেখালেখি করতে পছন্দ করে। বেফাক আপডেট, রেজাল্ট পাবলিশ, পিডিএফ বই, অ্যাপস রিভিউ ও টেলিগ্রাম লাইভ সাপোর্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন