বিশ্ব ইজতেমা ইসলামের একটি অনন্য বৈশ্বিক আয়োজন, যা মুসলিম উম্মাহর ইমানি শক্তি পুনরুজ্জীবিত করা এবং আল্লাহর পথে জীবন গঠনের লক্ষ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। এটি হজের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে স্বীকৃত, যেখানে লাখো মুসলিম একত্রিত হয়ে ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ, দোয়া ও তাওবার মাধ্যমে নিজেদের শুদ্ধ করেন। বিশ্ব ইজতেমার মূল লক্ষ্য দাওয়াত ও তাবলিগের কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। দাওয়াত ও তাবলিগের মূলনীতি হলো নবীজির (সা.) সুন্নাহ অনুসরণ করে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া, যা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠার দীক্ষা দেয়।
বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস শুরু হয় ১৯২৬ সালে, যখন ভারতের মেওয়াতে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) দাওয়াত ও তাবলিগের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করেন। পরে ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা হয়। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে এটি এখন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে মাত্র কয়েক হাজার মানুষ অংশ নিলেও বর্তমানে ৩০ থেকে ৫০ লাখ মুসলিম এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। ১৫০টিরও বেশি দেশের মুসল্লিরা এখানে এসে ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।
বিশ্ব ইজতেমায় দাওয়াত ও তাবলিগের কাজগুলো ৬টি মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়: ১) কালিমা, ২) নামাজ, ৩) ইলম ও জিকির, ৪) ইকরামুল মুসলিমিন (মুসলিমদের প্রতি সম্মান), ৫) ইখলাস নিফাক দূর করা এবং ৬) দাওয়াত ইলাল্লাহ। এখানে আলেমরা ইসলামি জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বয়ান করেন এবং মুসল্লিদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন। ইজতেমায় ইমানি চেতনা জাগ্রত করতে সময় লাগানো, আল্লাহর পথে জীবন গঠনের পরিকল্পনা এবং দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়।
২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে সাদ পন্থিদের একটি বিতর্কিত ঘটনার কারণে তাদের অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। তবে আলমি শুরার পক্ষ থেকে ইজতেমার আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা শুরু হবে ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার জুমার নামাজের পর এবং শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকাল ১১টায় মোনাজাতের মাধ্যমে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ইজতেমার মাঠে চলাচল সহজ করার জন্য একটি বিশেষ ম্যাপ প্রকাশ করেছে। এই ম্যাপে প্রবেশ ও নির্গমন পথ, ওজুখানা, শৌচাগার এবং নামাজের স্থানগুলো চিহ্নিত করা আছে।
বিশ্ব ইজতেমা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়; এটি মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের প্রতীক। এখানে ইসলামের মূল শিক্ষা ও আল্লাহর পথে পরিচালিত জীবনের দীক্ষা দেওয়া হয়। দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানো এবং নিজেদের ইমানকে শক্তিশালী করার এই উদ্যোগ মুসলিম জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইজতেমায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুসলিমরা জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন হন এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের শিক্ষা পান।
আপনার যাত্রা সহজ করতে আমরা ইজতেমার ম্যাপ প্রকাশ করতেছি। ম্যাপটি ডাউনলোড করতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
Warning!২০২৫ সালের ইজতেমার ম্যাপ এখনো প্রকাশ হয়নি। নতুন ম্যাপ প্রকাশ হওয়া মাত্রই আমরা পোস্ট আপডেট করে নিবো ইনশাআল্লাহ।
তাই ২০২৪ সালের ম্যাপ দেখুন। খিত্তাহ নাম্বার পরিবর্তন হতে পারে। তবে অন্যান্য সব কিছুই মিলবে ইনশাআল্লাহ।
নতুন ম্যাপ সবার আগে পেতে আমাদের কওমি কলম ওয়েবসাইটের টেলিগ্রাম চ্যানেল যুক্ত থাকুন। গ্রুপে পিডিএফ আকারে শেয়ার করা হবে। ইনশাআল্লাহ।
ইজতেমায় অংশগ্রহণের আহ্বান: প্রতিটি মুসলিমের জন্য বিশ্ব ইজতেমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যম। তাই আসুন, সকলে মিলে এই মহতী আয়োজনকে সফল করি এবং ইসলামের দাওয়াতকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেই।
বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অনন্য দাওয়াতি কার্যক্রম এবং ইসলামের অন্যতম বৃহৎ ঐতিহ্য। এটি কেবল একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়, বরং বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য, ভালোবাসা এবং ইসলামের শিক্ষা প্রচারের এক মহাসম্মিলন। ইজতেমার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের ইমানকে দৃঢ় করতে পারেন, আল্লাহর পথে পরিচালিত হওয়ার অনুপ্রেরণা পান, এবং ইসলামের সুমহান শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেন। এই আয়োজন বিশ্ব মুসলিমদের জন্য দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে অংশগ্রহণ এবং আত্মশুদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।
বিশ্ব ইজতেমার প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের সুযোগ এনে দেয়। এখানে লক্ষাধিক মানুষের একত্রে দোয়া ও তাওবা আল্লাহর রহমতকে আকর্ষণ করে এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এটি এমন একটি আয়োজন, যেখানে আমরা আমাদের পার্থিব জীবনের ভুলগুলো সংশোধন করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার সুযোগ পাই। তাছাড়া, ইজতেমার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ইসলামের মূলনীতি এবং দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব উপলব্ধি করার শিক্ষা লাভ করা যায়।
তাই, মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত এই মহতী আয়োজনে অংশগ্রহণ করা এবং নিজের ইমানি অবস্থানকে দৃঢ় করার পাশাপাশি ইসলামের দাওয়াতকে আরও বিস্তৃত করা। ইজতেমা আমাদের একটি দিক নির্দেশনা দেয় যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কীভাবে একটি সুশৃঙ্খল, ধর্মপরায়ণ এবং শান্তিময় জীবন গঠন করা যায়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পৃথিবীর মোহময় জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর পরকালের চিরস্থায়ী জীবনই আমাদের আসল গন্তব্য।
বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করা মানে শুধু আল্লাহর পথে নিজেকে উৎসর্গ করা নয়, বরং তা হলো সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই আয়োজনকে সফল করি এবং দাওয়াত ও তাবলিগের মহান কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন এবং ইজতেমার মাধ্যমে আমাদের জীবনে কল্যাণ নিয়ে আসুন।