বিশ্ব ইজতেমা ম্যাপ ২০২৫ দ্বিতীয় পর্ব ও জেলা ভিত্তিক খিত্তাহ নাম্বার।


বিশ্ব ইজতেমা, মুসলিম উম্মাহর একতা ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামিক সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। এখানে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম একত্রিত হয়ে আল্লাহর রাহমত, হেদায়েত ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা গ্রহণ করেন। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে যে তীব্র অনুভূতি ও ইমানি জজবা জাগ্রত হয়, তার ধারাবাহিকতায় শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এটি শুধু একটি সমাবেশ নয়; বরং ইসলামের দাওয়াত ও আমল শিক্ষার এক অপূর্ব সুযোগ। ২০২৫ সালের ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দেশি-বিদেশি মুসলমানরা একত্রিত হয়ে ইসলামের শিক্ষায় নিজেদের সমৃদ্ধ করবেন।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে যাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তাঁদের জন্য দ্বিতীয় পর্ব হলো আত্মশুদ্ধি, ঈমানের উন্নতি এবং ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা গ্রহণের আরেকটি বড় সুযোগ। এই পর্বটি মূলত মুসলিমদের দায়িত্ব ও আমল সংক্রান্ত শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে আয়োজিত হয়।

২০২৫ সালের ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় পর্বে দেশি-বিদেশি মুসলমানদের সমাগম হবে। এটি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, সহযোগিতা ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো পুনরুজ্জীবিত করার একটি মহতী উদ্যোগ।

দ্বিতীয় পর্ব হওয়ার কারণ

বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে আয়োজন করার অন্যতম কারণ হলো জনসংখ্যার চাপ কমানো এবং ব্যবস্থাপনাকে সহজ করা। দ্বিতীয় পর্ব আয়োজনের কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে:

  1. বিশাল জনসংখ্যার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা:
    প্রথম পর্বে যারা অংশ নিতে পারেননি, তাঁদের জন্য দ্বিতীয় পর্ব আয়োজন করা হয়। এতে উভয় পর্বে অংশগ্রহণকারীদের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা সহজ হয়।

  2. বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সুযোগ সৃষ্টি:
    বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাথীদের মধ্যে অংশগ্রহণের সমতা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিতীয় পর্ব আয়োজন করা হয়। এটি মুসলিম উম্মাহর আরও বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।

  3. দায়িত্ব ও আত্মশুদ্ধি সংক্রান্ত আলোচনা:
    দ্বিতীয় পর্বে মুসলমানদের আমল, দায়িত্ব পালন এবং আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত বয়ান ও আলোচনা করা হয়, যা ইজতেমার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

  4. আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের ব্যবস্থাপনা:
    বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের জন্য দ্বিতীয় পর্বটি একাধিক সুযোগ তৈরি করে। এতে বিদেশি মেহমানদের সাথে মুসলিমদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়।

দ্বিতীয় পর্বে যেসব জেলা অংশগ্রহণ করবে। 

দ্বিতীয় পর্ব: ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার), ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার), ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) এ পর্বে ২১টি জেলা অংশগ্রহণ করবে। 
জেলার নামের তালিকা।  (১) গোপালগঞ্জ, (২) কিশোরগঞ্জ, (৩) মাদারীপুর, (৪) মানিকগঞ্জ, (৫) মুন্সিগঞ্জ, (৬) নরসিংদী, (৭) শরীয়তপুর, (৮) মেহেরপুর, (৯) জামালপুর, (১০) জয়পুরহাট, (১১) নওগাঁ, (১২) পাবনা, (১৩) সিরাজগঞ্জ, (১৪) সিলেট, (১৫) বরগুনা, (১৬) ঝালকাঠি, (১৭) বান্দরবান, (১৮) কক্সবাজার, (১৯) খাগড়াছড়ি, (২০) নোয়াখালী, (২১) রাঙ্গামাটি।

ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বের ম্যাপ ডাউনলোড

দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণকারীদের জন্য টঙ্গী ইজতেমা মাঠ এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট ম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ময়দানের প্রতিটি অংশ যেমন বিদেশি মেহমানদের থাকার জায়গা, ওয়াজ-মাহফিলের স্থান, খাদ্য বিতরণ অঞ্চল, শৌচাগার, পার্কিং স্পেস এবং প্রবেশ-প্রস্থান পথগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমা ম্যাপ ২০২৫ প্রথম পর্ব

নোটঃ ম্যাপ বুঝার জন্য সহজ পদ্ধতি হলো প্রথমে আপনার কেবলা নির্ধারণ করুন, এরপর ম্যাপে দেওয়া পশ্চিম দিক (ক্বেবলা) অনুযায়ী ম্যাপের সাথে মিলিয়ে নিন। তারপরে আপনার প্রবেশ পথ বাহিরে করুন। 

দ্বিতীয় পর্ব শেষে মুসলমানদের করণীয়

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হওয়ার পর মুসলমানদের জন্য এটি আত্মশুদ্ধি ও আমল বৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়। ইজতেমায় শোনা প্রতিটি বয়ান ও দাওয়াতি শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজের গুরুত্ব বুঝে সময়মতো তা আদায় করা, তাওবা করা এবং ইসলামের মৌলিক বিধিবিধানগুলো মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

পরিবারে দ্বীনের পরিবেশ গড়ে তোলা ইজতেমার অন্যতম একটি শিক্ষা। তাই ইজতেমা শেষে পরিবারের সদস্যদের ইসলামের সঠিক পথে চলতে উৎসাহিত করা প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর দায়িত্ব। স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ইসলামের শিক্ষাগুলো শেয়ার করা এবং তাদেরও আমল বৃদ্ধিতে সাহায্য করা উচিত।

তাবলিগের ৪০ দিনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে ইমানকে আরও মজবুত করা যায়। যারা এর আগে দাওয়াতের কাজে অংশ নেননি, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। তাবলিগে অংশগ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষের হেদায়েতের জন্য কাজ করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক।

ইজতেমা থেকে ফিরে নিজের পাড়া-প্রতিবেশী ও এলাকার মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে সমাজে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয় এবং ইসলামের সৌন্দর্য আরও প্রসারিত হয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ। ইজতেমায় বারবার আখিরাতের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। তাই মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য সৎ আমল, তাওবা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে দৃঢ় থাকা অত্যন্ত জরুরি।

অন্যদিকে, সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ইজতেমায় প্রাপ্ত শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে। অন্যায়, অশান্তি ও পাপ কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইসলামের নীতিমালা অনুসারে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

ইজতেমার শিক্ষা যদি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায়, তবে এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এক অনন্য পরিবর্তন আনতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইজতেমার শিক্ষাগুলো বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন। আমিন।

About the author

Qawmi Kolom
কওমি কলম ইসলামিক এবং টেকনোলজি বিষয়ক লেখালেখি করতে পছন্দ করে। বেফাক আপডেট, রেজাল্ট পাবলিশ, পিডিএফ বই, অ্যাপস রিভিউ ও টেলিগ্রাম লাইভ সাপোর্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন