১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবস৷ বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনন্দের দিন৷ আমাদের মহান স্বাধীনতার বিজয় দিবস৷ মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হল, তার ভূখন্ড ও মাতৃভূমিকে ভালবাসা৷ আর এটাই প্রিয় নবীজীর সা.-এর উত্তম আদর্শ। বিজয় আমাদের জন্য এবং যে কোন জাতির জন্যই অত্যন্ত আনন্দ এবং খুশির বিষয়।
বিজয় দিবসে আমাদের কর্মসূচী কী হবে?
এজন্য আমি সূরা নাসর তিলাওয়াত করেছি।
দেশপ্রেম এটা স্বীকৃত একটি বিষয়, রাসূল স. কে মক্কার কাফেররা ইসলাম প্রচারের অপরাধে নানান ধরণের নির্যাতন করে যাচ্ছিল, সাহাবায়ে কিরাম রাযি. কাফেরদের জ্বালা যন্ত্রনা সইতে না পেরে নিজেদের মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন, প্রথমে তারা হাবশা বর্তমান ইথিওপিয়াতে হিজরত করলেন।
অত:পর কাফেরদের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার দরুন ব্যাপকভাবে তারা সকলেই ইয়াসরিব তথা মদীনায় হিজরত করলেন। অবশেষে কেবল মাত্র তিনজন মানুষ বাকি রইলেন, আর সবাই হিজরত করেছেন।
রাসূল স., আবু বকর রাযি. আলি রাযি.।
আলি রাযি. কে রাসূলের স. কাছে রাখা কিছু আমানতের দায়িত্ব দিয়ে তিনি নিজেও হিজরত করলেন।
মাতৃভূমির ভালবাসা ইসলাম বিরোধী নয়..
১ম উদাহরণ: এই হিজরতের সময় রাসূল স. বারবার নিজের মাতৃভূমির দিকে তাকান, বাইতুল্লার দিকে তাকান, আর চোখ দিয়ে
ঝড়ঝড় করে অশ্রু ঝড়ছে এভাবে বারবার পেছনের দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন আর বলছেন, যা মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত হয়েছে:-
حدثنا عبد الرزاق، حدثنا معمر، عن الزهري، عن أبي سلمة بن عبد الرحمن، عن أبي هريرة قال: وقف النبي صلى الله عليه وسلم على الحزورة، فقال: "أما والله اني لأخرج منك وإني لأعلم أنك أحب البلاد إلى الله وأكرمها على الله ولولا أن أهلك أخرجوني منك ما خرجت. رواه أحمد وغيرهم 212 نفر: ۱۸۷۱۷
হে মক্কা! আল্লাহর কসম আমাকে তোমার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, আমি জানি তুমি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও সম্মানিত স্থান, তোমার বাসিন্দারা আমাকে বের না করলে আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে চলে যেতাম না।
আহ্! তোমার পেটে আমার জন্ম, তোমার শহরে আমার পূর্বপুরুষদের বসবাস, তোমার বুকে বাইতুল্লাহ, তোমার পেটে যমযম কুয়া, তোমার এলাকাতেই সাফমারওয়া পাহাড়, মাকামে ইবরাহিম।
আজকে কাফেরদের নির্যাতনের কারণে আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে ছাড়তে আজকে বাধ্য হলাম।
আল্লাহ তার রাসূলকে সান্তনা দিয়ে বলেন,
إن الذي فرض عليك القرءان لرادك إلى معاد
আপনার রব আপনাকে আবার আপনার জন্মভূমিতে ফেরত নিয়ে আসবেন।وঘটনা বলা উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হল এই কথাটা বুঝানো যে, যেই মাতৃভূমিতে আমার জন্ম, যেখানে আমার বেড়েউঠা, যেখানে খেয়েদেয়ে আমি বড় হচ্ছি, যার আলো বাতাস আমি গ্রহণ করছি। যার সাথে মিশে আছে আমার অস্তিত্বের প্রতিটা কনা। এই
মাতৃভূমির প্রতি আমার প্রেম ভালবাসা প্রদর্শন করা ইসলাম বিরোধী নয়।
দ্বিতীয় উদাহরণ: নবীজী যখন মদীনায় হিজরত করে বসবাস করতে লাগলেন, মদীনা হয়ে গেল রাসূলের সেকেন্ড হোম তথা দ্বিতীয়
বসবাসের স্থান।
রাসূল যখন কোন দাওয়াতী জিহাদী সফরে মদীনার বাহিরে যেতেন, তখন তার কী অবস্থা হতো তা বুখারী সহ হাদিসের কিতাবে এসেছে-
أنس بن مالك يقول: طلع علينا أحد ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: حدثنا قتيبة حدثنا يعقوب عن عمرو عن «هذا جبل يحبنا ونحبه» رواه البخاري: 3367، مصنف عبد الرزاق: ۱۷۱۷۰
হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূল স. দূর থেকে মদীনার উহুদ পাহাড় দেখেই তিনি তার বাহনের গতি বাড়িয়ে দিতেন। এবং খুশিতে আনন্দিত হয়ে বলতেন: ঐ তো দেখা যায় আমাদের উহুদ পাহাড়, এই পাহাড়কে আমরা ভালবাসি, সেও আমাদেরকে ভালবাসে।
উল্লেখিত দুটি ঘটনা দ্বারা সরাসরি রাসূল স. থেকে মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা এবং মুহাব্বত প্রদর্শন করা প্রমাণিত হল।
মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আমাদের এই মাতৃভূমি ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত বৃটিশদের দখলে ছিল, ১৯৪৭-১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানিদের দখলে ছিল।
বৃটিশরা প্রায় দুইশ বছর পর্যন্ত আমাদেরকে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ রেখেছিল । প্রথমে তারা সেবার নামে বিভিন্ন এনজিও কোম্পানি
গড়ে তুলে । এরই ভিত্তিতে আজ থেকে ৪০০ বছর আগে তারা সেবার নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি করে । এবং বর্তমান তামিলনাড়ুতে সর্বপ্রথম কোম্পানির নামে জমি ক্রয় করে। অত:পর কলকাতা আন্তর্জাতিক বন্দর দখল করে। এবং এভাবেই পর্যায়ক্রমে তারা ইদুরের ন্যায় তলা কাটতে কাটতে পুরো ভারতবর্ষ তাদের দখলে নিয়ে নেয়।
১৯৪৭ ইং সালে হিন্দু মুসলিম বিশাল দাঙ্গার পর বৃটিশদের ইশারাতেই দুটি দেশ ভাগ হল, একটি ভারত আরেকটি পাকিস্তান।
ভারতের অধিকাংশ বাসিন্দা ছিল হিন্দু। পাকিস্তানের অধিকাংশ বাসিন্দা মুসলিম ছিল। বৃটিশদের কুটনৈতিক চালের মাধ্যমেই পাকিস্তানকে আবার দুইভাগে বিভক্ত করা হয়, একটি পশ্চিম পাকিস্তান আর দ্বিতীয়টি পূর্বপাস্তিািন যেটিকে আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ
হিসাবে চিনি।
অথচ পাশ্চিম আর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাঝে কোন দিক থেকেই মিল ছিল না। ভাষায় মিল ছিলনা, তাদের ভাষা ছিল আমাদের ভাষা ছিল বাংলা, খাদ্যে মিল ছিল না, তারা খাইতো রুটি আর আমরা খাই মাছভাত। পোষাকে মিল ছিল নানানদিকে মিল ছিলনা।
১৯৪৭ ইং সালে পর দেশ হিসাবে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান সমানাধিকার হওয়া সত্ত্বেও আস্তে আস্তে পশ্চিম পাকিস্তানের
শাসকগোষ্ঠীরা পূর্ব পাকিস্তানের উপর জুলুম শুরু করে, তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার অপচেষ্ঠা করতে থাকে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বাংগালীদের উপর তাদের মনগড়া তৈরি বিভিন্ন নীতিমালা চাপিয়ে দিতে থাকে। এমনকি তারা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলার পরিবর্তে উর্দূ ঘোষণা করে। যার ফলে ৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয় এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা ঘোষনা করতে বাধ্য হয়।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এখানেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা আরো বিভিন্নভাবে পূর্বপাকিস্তানের নাগরিকদেরকে তাদের পাওনা অধিকার
থেকে বঞ্চিত করতে থাকে। এমনকি তারা নিজেদেরকে পশ্চিম-পূর্ব পাকিস্তানের মালিক আর পূর্বপাকিস্তানের নাগরিকদেরকে তারা
গোলাম ভাবতে থাকে।
এভাবে আসতে আসতে ১৯৭০ সালে পূর্বপাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে তখনকার আওয়মী মুসলিমলীগ নিরঙ্কুশ
বিজয় অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের জালিম শাসকগোষ্ঠী সেই বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়। এবং পূর্বপাকিস্তানের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এরই জের ধরে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বলি । দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর লক্ষ লক্ষ শহীদের তাজা রক্ষের বিনিময়ে এবং লাখো মা-বোনের ইজ্জতের নজরানায় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার পর থেকেই এই ঐতিহাসিক দিনটি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে পালিত ও উদযাপিত হয়ে আসছে।
৭০ এর নির্বাচনী ইশতেহার
৭০ এর নির্বাচনী ইশতেহার ছিল কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন হবেনা.…....
যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের একটি কারণ ছিল কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন হবেনা, তাই আসুন জেনে নেই আজকে আমরা কুরআন সুন্নাহ
মুতাবেক ঐতিহাসিক এই দিনটি কিভাবে পালন করবো?
বিজয় সম্পর্কে কুরআনের দুটি সুরা আমাদের সামনে রয়েছে৷ একটি সুরাহ ফাতহ (বিজয়) এবং অপরটি সুরাহ নাসর (সাহায্য)।
সুরা নাসর-এ মহান আল্লাহ বলেন, “যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদেরকে ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রশংসার সাথে তাসবীহ পড়ুন এবং আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করুন৷
এখানে চারটি কর্তব্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে :
১. বিজয় এবং সাহায্য কেবল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়। সুতরাং বিজয়ের কৃতিত্বকে নিজেদের দিকে সম্পৃক্ত না করে বরং আল্লাহ তাআলার দিকে ন্যাস্ত করা।
৭১ সালে যুদ্ধে জয়ের জন্য আমাদের তেমন বাহ্যিক অস্ত্রশস্ত্র, শক্তি সামর্থ ছিলনা, পাকিস্তানীদের হাতে ছিল, ভারী অস্ত্রশস্ত্র, গোলা বারুদ, বোমা ছিল, আর বাংগালীদের হাতে ছিল দা খন্তি কুড়াল, আর কিছু বন্দুক। হঠাত করে আল্লাহর সাহায্যে বিজয় চলে আসছে যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, এত বড় শক্তির সাথে এত তাড়াতাড়ি যুদ্ধে জিতা যাবে।
তবে হ্যা বিজয়ে কারো বড় অবদান থাকলে তাও স্বীকার করা, কারণ তখন তার কৃতজ্ঞতা মানেই হল আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। হাদিসে আছে-
২. এই দিনে বিজয়ের জন্য আল্লাহর মহত্ত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা।
৩. আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা৷
من لم يشكر الناس لم يشكر الله
আমরা এই দুটি আমল একসাথে এভাবে করতে পারি, যেটি সহীহ বুখারীর সর্বশেষ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
حدثني أحمد بن إشكاب، حدثنا محمد بن فضيل، عن عمارة بن القعقاع، عن أبي زرعة، عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: "كلمتان حبيبتان إلى الرحمن، خفيفتان على اللسان، ثقيلتان في الميزان: سبحان الله وبحمده، سبحان الله العظيم
৪. মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আত্মনিবেদন ও ইস্তিগফার করা৷ এখন প্রশ্ন আসতে পারে বিজয় তো ভাল কাজ তাহলে ইস্তিগফার পড়তে হবে কেন?
ইস্তিগফার পড়া হয় দুই কারণে:-
১. গোনাহের কারণে, বিজয় অর্জিত হয় যুদ্ধের পর আর যুদ্ধের দীর্ঘ সময় ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অনেক গোনাহের কাজ ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে যায়। এই জন্য আল্লাহ তাআলা তাওবাহ ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে সেই ত্রুটি ও গোনাহের ক্ষমা চাইতে বলেছেন। (সাআদ ইবনে উবাদার ঘটনা...)
২. ইস্তিগফারের দ্বারা শুধু গোনাহ মাফ হয় শুধু তাই নয় বরং এরদ্বারা আরো বহু উপকার রয়েছে- কুরআন কারীমে এবং হাদীস শরীফে ইসতিগফারে ৯ টি উপকারের কথা এসেছে। কুরআনে ছয়টি উপকারের কথা এসেছে-
ইস্তিগফারের দ্বারা ৬টি উপকার পাওয়া যায়-
১. আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
২. আকাশ থেকে উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করেন।
৩. ধন-সম্পদে বরকত দান করেন।
8. নেক সন্তান দান করেন।
৫. সবুজ শ্যামল বাগান-উদ্যান ফসল দান করেন।
৬. নদী নালা প্রবাহিত করেন।
সবগুলোই মানুষের জন্য খুবই উপকারী বস্তু ।
হাদীসে এসেছে নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে তিনটি উপকার পাওয়া যায়।
হযরত ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়বে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক্ব দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না । [১৫১৮] সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫১৮
বিজয় দিবসে আমাদের জন্য শিক্ষা এবং কর্মসূচী কী?
আমাদের মনে রাখা উচিত যে, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নবীজীর কর্মপদ্ধতী কী ছিল?
যে নবীকে তার জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হল সে নবী ১০ বছর পর হাজার হাজার সাহাবার বিশাল বহর নিয়ে নিজ মার্তভূমিতে প্রবেশ করলেন। কিন্তু কোন গর্ব অহংকার প্রদর্শন করলেননা, বিজয় মিছিল কিংবা শোভাযাত্রা করেননি কিছুই করেননি, বাদ্য-বাজনা বাজাননি। নবীজীর অবস্থা তখন কেমন ছিল, আসুন হাদিস থেকে জেনে নেই-
عن أنس قال : أن النبي صلى الله عليه وسلم جاء يوم فتح مكة على ناقته التي تُسمى القصواء، وذقنه على رحله"، أي: من شدة تواضعه صلى الله عليه وسلم خفض رأسه حتى أن لحيته مشت رحله؛ فلم يرفع رأسه متكبرا
عن أم هاني، حدثث «أن النبي صلى الله عليه وسلم دخل بيتها يوم فتح مكة، فصلى ثماني ركعات، ما رأيته صلى صلاة فظ أخف منها، غير أنه كان يتم الركوع والسجود». صحيح مسلم 336
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন, আল্লাহর নবী একটি উষ্ট্রীর উপর আরোহণাবস্থায় ছিলেন, তাঁর চেহারা ছিল নিম্নগামী। অর্থাৎ বিনয়ের সাথে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন। এরপর সর্বপ্রথম তিনি উম্মে হানীর ঘরে প্রবেশ করেন। সেখানে আট রাকাত নফল নামায আদায় করেন। এই নামাযকে বলা হয় ‘বিজয়ের নামায’ । এতে বিজয় দিবসে মহান আল্লাহর দরবারে শুকর আদায়ে এভাবে নফল নামায পড়া ইসলামের শিক্ষা বলে পরিগণিত হয়। এরপর নবীজী সা. মসজিদুল হারামে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন।
الحمد لله الذي صدق وعده ، ونصر عبده ، وهزم الأحزاب وحده ، يا معشر قريش، ويا أهل مكة، ما ترون أني فاعل بكم؟ قالوا: نقول خيرا ونظن خيرا، نبي كريم ، وأخ كريم ، وابن أخ كريم ، وقد قدرت . فقال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - «فإني أقول كما قال أخي یوسف : لا تثريب عليكم اليوم يغفر الله لكم وهو أرحم الراحمين ؟ [يوسف ٩٢] «اذهبوا فأنتم الطلقاء، (سيرة ابن هشام: ج2 صـ 412)
তিনি বলেন, হে মক্কার কাফের সম্প্রদায় ! তের বছর ধরে আমার উপর, আমার পরিবারের উপর, আমার সাহাবাদের উপর নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালিয়েছ, এর বিপরীতে আজকে তোমাদের কি মনে হয়, তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা কঠিন অপরাধী । কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, আপনি উদার নবী, আপনি আমাদের উদার ভাই, উদার সন্তান, আমাদের সাথে উদারতা, মহানুভবতা প্রদর্শন করবেন। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তখন আল্লাহর নবী সা. বললেন-- হ্যাঁ, আমি আজ তোমাদের সকলের জন্য হযরত ইউসুফ আ.-এর মত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম। যাও তোমাদের প্রতি আজ কোন অভিযোগ নেই। তোমাদের থেকে কোন প্রতিশোধ নেয়া হবেনা। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, ৪১২ পৃষ্ঠা)
সুবহানাল্লাহ! কী চমৎকার আদর্শ নবীজী স. এর!
এভাবেই আমাদেরকে ইসলামের শিখানো পদ্ধতি অনুযায়ী বিজয় দিবস পালন করা দরকার। এদিনে আমাদের প্রথম করণীয় হল- বেশি করে নফল নামায আদায় করা। আল্লাহর মহত্ত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা, আল্লাহ তাআলা হামদ তথা প্রশংসা করা, আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আত্মনিবেদন ও ইস্তিগফার করা৷
মহান বিজয় দিবসে বর্জণীয় বিষয়:
১. শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে কিংবা তাদের সমাধিতে পুষ্প অর্পন।
২. একমিনিট নীরবতা পালন ইত্যাদি এগুলো পাশ্চাত্য বিধর্মী কালচার। খ্রীস্টানদের ধর্মে কবর যিয়ারত নেই, কুরআন পাঠ নেই। তাই তারা কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
৩. গান বাজনা নৃত্য করা।
এইগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীতে গজব আসে, দেশের অকল্যাণ হয়, বরকত নষ্ট হয়ে যায়। দেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত শাসকগোষ্ঠী কুরআন সুন্নাতে বর্ণিত করণীয় কাজ না করে বর্জণীয়গুলো করার কারণে দেশে শুধু অশান্তি এবং অকল্যাণই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মানুষ মানুষ আজ চরম সংকটময় মুহুর্ত অতিক্রম করছে। এসব কিছুই নিজেদের হাতের কামাই বৈ কিছুই নয়।
আল্লাহ তাআলা আমদেরকে সঠিকভাবে স্বাধীনতা এবং বিজয় উদযাপন করার তাওফীক দান করুন, বর্জনীয় বিষয়গুলো বর্জন করে চলার তাওফীক দান করুন।
জুমার আলোচনা: (১৫-১২-২০২৩ ইং)
বান্দাঃ রশীদ আহমাদ কাসেমী
খাদেম:- জামিয়া আল-হেরা টাঙ্গাইল
إرسال تعليق