নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত ১১ কোটির বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২০ হাজার কোটি টাকায় এ তথ্য বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ডিসি মিডিয়া মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। এ ঘটনায় ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ১১ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির ঘটনায় সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নাম উঠে এসেছে। এই অভিযোগ অনুযায়ী, তারা একটি সংগঠিত চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যারা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ডেটা বিক্রি করেছে। এই ডেটা থেকে নাগরিকদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং সেটি দেশি ও বিদেশি ১৮২টি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের সাইবার অপরাধ আইন অনুসারে একটি গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হয়।
তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায়, ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ তারেক এম বরকতুল্লাহ নামে নির্বাচন কমিশনের ডেটা সেন্টারের সাবেক পরিচালককে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ অনুসারে, তিনি ৪৬ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যের কপি তৈরি করে তা বিক্রি করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। এছাড়াও, অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদেরও এই চক্রে জড়িত থাকার সন্দেহ রয়েছে।
এই তথ্য বিক্রির ঘটনায় জনগণের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, এবং এই বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
১. কিভাবে ও কোথায় তথ্য বিক্রি হয়েছে:
বিক্রিত তথ্যগুলো মূলত দেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়েছে। এই তথ্য বিক্রির প্রক্রিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ডেটাবেজ থেকে ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের ৪৬ ধরনের ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এসব ডেটার মধ্যে নাগরিকদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, এনআইডি নম্বরসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ডেটা বিক্রির ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন হয়েছে, যা সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশাল উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
২. তথ্য কিনে তারা কী করবে: যারা এই তথ্যগুলো কিনেছে, তারা মূলত বাণিজ্যিক ও অপরাধমূলক কাজে এটি ব্যবহার করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন, ফিশিং আক্রমণ, ব্যক্তিগত পরিচয় চুরি, এবং জালিয়াতির মতো অপরাধমূলক কার্যক্রম। এছাড়াও, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও এই তথ্য ব্যবহার করে অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে, যেমন নির্বাচন প্রভাবিত করা বা জনগণের আচরণ বিশ্লেষ।
৩. তথ্য বিক্রির মূল কারণ: ডেটা বিক্রির পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করা। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে এই তথ্য বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও, এই ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
১. তথ্য বিক্রি অপরাধ কিনা? : হ্যাঁ, তথ্য বিক্রি করা অপরাধ। বাংলাদেশে তথ্য সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আইন রয়েছে, যেমন সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এই আইনের আওতায় ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য বিক্রি বা ফাঁস করা একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। যারা এই অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
২. আইনগত শাস্তি: সাইবার নিরাপত্তা আইন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী, যারা ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস বা বিক্রির সাথে জড়িত, তাদের জরিমানা, কারাদণ্ড এবং অন্যান্য আইনগত শাস্তি হতে পারে। অপরাধের প্রমাণ হলে ১০ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড এবং বড় অঙ্কের অর্থদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ধরনের অপরাধ দেশের সাইবার নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে ফেলে, যার ফলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হতে পারে।
৩. বাংলাদেশের নাগরিকদের করণীয়:
- ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাঃ নাগরিকদের উচিত তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সচেতন থাকা। সন্দেহজনক বা অপরিচিত প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করা।
- সাইবার সচেতনতা বৃদ্ধিঃ সাইবার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় করা এবং সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত আপডেট সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
- প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ: যদি কোনো নাগরিক তার তথ্যের অপব্যবহার হতে দেখেন, তাহলে দ্রুত **আইনি পদক্ষেপ** গ্রহণ করা উচিত। সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করা এবং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাহায্য নেওয়া উচিত ।
এছাড়াও, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত তথ্য সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, এবং জনগণকে সচেতন করা যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।
إرسال تعليق